ভূতুড়ে জানালা (৩)
যেইনা খুলব জানালাটা ঠিক তখনি দরজার করাঘাতের শব্দ । ‘ফয়েজ সাহেব দরজাটা খুলুন ।’
আমি জানালাটা না খুলে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম । ঘরে ঢুকলেন সোবহান সাহেব ।জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি করছিলেন ফয়েজ সাহেব ?’
মিথ্যে করে বললাম, ‘এই তো শুয়ে পড়েছিলাম ।’
‘ও তাই । আর বলবেন না । আজ পথে বেরুতেই এক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা । বন্ধু আমাকে ধরে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল ।আর কি ছাড়তে চায় ? গল্প-গুজব করতে করতেই রাত ন’টা বেজে গেল ।অবশ্য আপনার সাথে গল্প করার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন মনে করেছিলাম । বাতি জ্বালানো দেখে ভাবলাম, যাই গল্পটা করেই আসি । তা বাতি জ্বলিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নাকি?’
‘না মানে ঠিক ঘুমিয়ে ছিলাম না । একটা বই পড়ছিলাম শুয়ে শুয়ে ।’
বলেই বুঝলাম ভুল করেছি । আমার ধারে-কাছে কোথায়ও একটি বই নেই । কিন্তু সোবহান সাহেব এই নিয়ে আর কথা বললেন না । বললেন, ‘ঠিক আছে অনেক রাত হয়েছে এবার বরং শুয়ে পড়ুন আমিও যাই ।’ বলে চলে গেলেন সোবহান সাহেব ।আজও শোনা হলনা তার কাহিনী ।
পরের দিন ভদ্রলোক একটু আগেই আসলেন । বললেন, ‘আজ আপনাকে আমার সব কাহিনী শোনাব আপনার শরীর ভালতো?’
‘হ্যা ভালো । আপনি বলেন ।’
‘তার আগে এককাপ চা হলে মন্দ হতনা । আমি চা নিয়ে আসতে বলছি ।’
‘আপনার বলতে হবেনা আমিই তৈরি করে নিচ্ছি । বেশি সময় লাগবে না ।’
তাড়াতাড়ি দু’কাপ চা বানালাম ।
‘বাহ । আপনি তো খুব ভালো চা বানাতে পারেন ।’ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন সোবহান সাহেব । ‘আমার মেয়েটাও খুব ভাল চা বানেতে পারত । বেঁচে থাকতে প্রতিদিন আমাকে চা তৈরি করে খাওয়াত ।’
বলতে বলতে ভদ্রলোকের চোখ জলে চিকচিক করে উঠল ।
‘আমার মেয়ের নাম ছিল পারুল । ও তখন ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী । ছাত্রী হিসেবে মোটামুটি ভাল ছিল ও । এরই মাঝে একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ওর । দেখলাম চলাফেরায় বেশ পরিবর্তন ঘটেছে । সেই ভোরে উঠে কলেজে যায় । দেরি করে ফিরে আসে । সবসময় কি নিয়ে যেন ভাবে । গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে । প্রথম প্রথম ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি ।একদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে আসছি রিকশা দিয়ে । এমন সময় দেখি পারুল একটি ছেলের সাথে রিকশা দিয়ে কোথায়ও যাচ্ছে । আমাকে অবশ্য ওরা দেখতে পারেনি । আমি রিকশাওয়ালাকে ওদের অনুসরণ করতে বললাম । ওদের পিছে যেতে যেতে দেখি ওরা পার্কে ঢুকে পরল । আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল ।ওখানে আর কিছু না বলে ফিরে আসলাম । বাড়িতে আসলে ওকে খুব বকাঝকা করলাম । সেই সাথে ওর কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম । দরজায় তালা আটকে ওকে বন্দী করে রাখলাম । আমার স্ত্রী আমাকে হাজারো অনুরোধ করল । কিন্তু আমাকে টলাতে পারল না । আমি ভাবলাম বিয়ে দিয়ে দিলেই বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে । আমি ওকে বন্দী রেখেই পাত্র দেখা শুরু করলাম । ও ভিতর থেকে চিৎকার করতে লাগল, দরজা খোল বাবা দরজা খোল আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না ।’
কিন্তু আমার পাষাণ মন তাতে গলল না । ওদিকে মেয়েটা খাওয়া- দাও্য়া ছেড়ে দিল । এরপরের ঘটনা অতি করুণ । তা ফয়েজ সাহেব আপনার আবার বিরক্তি লাগছে না তো?’
‘না না আপনি বলে যান ।’
‘ঠিক আছে, তাহলে শুনুন । কি যেন বলছিলাম ? ও হ্যা মেয়েটি না খেয়ে-দেয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল ।আমি হঠাৎ একদিন ওকে দেখে চমকে উঠি । ও সেদিন আমাকে বলেছিল, বাবা তুমি কি আমার সুখ দেখতে চাও না?’
‘চাই বলেই তো ভালো ছেলে দেখে তোর বিয়ে দিচ্ছি ।’
‘না বাবা সুমনকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না । সুমনই আমার সুখ । সুমনই আমার………।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ছেলেটার নাম সুমন ছিল বুঝি?’
‘হ্যা । আমি পারুলকে বললাম এই যদি তোর শেষ কথা হয় তবে আমি তোর উপর জোর করতে বাধ্য হব । বলে আমি পাষাণের মত চলে এলাম । মেয়েটি অঝোড়ে কাঁদতে লাগল । আমি ভাবতে লাগলাম, কাজটা কি আমি ঠিক করছি? জীবনটা তো মেয়েটার । ওর সুখ তো ওই খুঁজে নেবে । আমি আবার এর মধ্যে কে? আবার অন্যদিকে ভাবলাম, ও আমার মেয়ে । ওকে ভাল ছেলের হাতে তুলে দেওয়া আমার কর্তব্য । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমারই পরাজয় হয় । মেয়েটিক করুণ মুখের কথা মনে হতেই চোখ জলে ভিজে যেতে লাগল । তখন রাত । ওকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে সুমনের হাতে তুলে দেব এই খবরটা দিতে ওর রুমের দিকে এগুলাম । তালা খোলার পরও খুলল না দরজাটা । ভেতর থেকে আটকানো হয়েছে । কয়েকবার করাঘাত করলাম দরজায় আর পারুল পারুল বলে চিৎকার করতে লাগলাম । কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া পেলাম না । আমি আর আমার স্ত্রী মিলে অনেকক্ষন ডাকাডাকি করলাম । কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পেলাম না । অবশেষে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকলাম । ঘরেও পারুলকে দেখলাম না । তবে কোথায় গেল মেয়েটা? হঠাৎ দেখি জানালার দুটি শিক ভাঙ্গা আর একটি শিকের সাথে বাধা শাড়ির একপ্রান্ত ।
(চলবে..............)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
চিরন্তন ২১/০১/২০১৫golpo seser opkahi thaklam ..
-
সুব্রত দাশ আপন ২০/০১/২০১৫ভালো লাগলো। ভূতের নাম শুনলেই শরীর যেন কেমন করে ........ শুভেচ্ছা কবি আপনাকে।
-
এফ সাকি ২০/০১/২০১৫অপেক্ষা.............. কিসের জন্য?
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২০/০১/২০১৫ভিতরে একটা লাইন একটু রিপিট আই মিন মিসিং আছে একটু চেক করে নেবেন প্লিজ। ভালো হচ্ছে। চালিয়ে যান।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২০/০১/২০১৫দারুণ গলপ
শুভেচ্ছা নিবেন। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল । -
রাফি বিন শাহাদৎ ১৯/০১/২০১৫চরম হইছে
-
স্বপন রোজারিও(১) ১৯/০১/২০১৫চমৎকার হয়েছে।