ভূতুড়ে জানালা (১)
শেষ পর্যন্ত চাকরিটা হয়েই গেল । দীর্ঘ নয় মাস ধরে চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে ঘুরেছি । অবশেষে যখন চাকরিটা হয়ে গেল তখন সমস্যা হল থাকা নিয়ে । থাকবো কোথায়? আমি গ্রামে থাকি কিন্তু চাকরিটা হল শহরে । গ্রাম থেকে ছাব্বিশ মাইল দূরে । সুতরাং প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে চাকরি করা অসম্ভব ব্যাপার । আবার বহুকষ্টে পাওয়া এই চাকরি ছাড়তেও পারছিনা । শহরে আমার কোন আত্নীয়ও নেই । আর থাকলেও বিশেষ কোন সুবিধা হত বলে মনে হয়না ।কারণ আমি একটু স্বাধীনচেতা ধরণের মানুষ । কারো গলগ্রহ হয়ে থাকা আমি পছন্দ করিনা । অনেক চিন্তা-ভাবনার পর ঠিক করলাম, আপাতত কোন এক হোটেলেই উঠব । তারপর কোন বাসা ভাড়া পেলে সেখানে থাকব । সেই চিন্তা সেই কাজ ।হোটেলেই থেকে গেলাম কয়েকটা দিন । সারাদিন অফিসের কাজ করে বিকেলবেলা খুঁজে ফিরেছি বাসা, শহরের এই গলি থেকে ওই গলি । কিন্তু কোন লাভ হলনা । কোন বাসাই ভাড়া দেওয়া হবে না কিংবা ভাড়া হয়ে গেছে । সারা বিকেল খোঁজাখুঁজি করে সন্ধেবেলা ফিরে যাই হোটেলে । হোটেল রুমটা অস্বস্তিকর ও অন্ধকার । একটিমাত্র জানালা । সেটা দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করেনা বললেই চলে । আর সারাটা রুম যেন মশাদেরই রাজত্বি ।সারাক্ষণ কেমন জানি একটা দুর্গন্ধ বিরাজ করে ।তবুও সারাদিনের ক্লান্তির পর খেয়েদেয়ে শুয়ে পরলেই চোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম । নাহ এভাবে আর থাকা যায়না । এই নোংরা পরিবেশের মধ্যে থাকলে শরীর খারাপ হয়ে পরবে । তাছাড়া হোটেলের ভাড়া দিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছিনা । একদিন এক সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করলাম , এদিকে কোন বাসা-টাসা ভাড়া পাওয়া যায় কিনা ।
সে বলল, ‘না ফয়েজ সাহেব আশেপাশে কোন বাড়ি-টাড়ি পাবেন বলে মনে হয়না । তবে বেশ দূরে বাসা অবশ্য একটা আছে । শহরের শেষ প্রান্তে । ওদিকটায় কেউ তেমন একটা ভাড়া থাকেনা । আপনি থাকতে চাইলে থাকতে পারেন ।’
আমি বললাম , ‘ঠিক আছে ঠিকানাটা একটু দিনতো । আগে গিয়ে বাসাটা দেখে আসি ।’
কড়া নাড়তেই এক ভদ্রলোক দরজা খুলে দিল । ভদ্রলোকের চুল ও দাড়ি আধাপাকা । চেহারায় কেমন জানি একটা ক্লান্তির ছাপ ।
আমার সালামের জবাব দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, ‘আপনাকে তো ঠিক .………………।’
ভদ্রলোকের মুখের কথা শেষ না হতেই বললাম, ‘না আমাকে চিনবেন না । বাসাভাড়া দেওয়া হবে শুনে।….…।’
‘ও আচ্ছা আপনি বাসাভাড়া নিতে চান, আসুন ।’
ভদ্রলোক আমাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলেন । আমাকে বসতে বলে ভৃত্যকে চা দিতে বললেন । তারপর জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনি কি একাই থাকবেন ? না মানে স্ত্রী-সন্তান……?
লজ্জা পেয়ে বললাম, ‘জ্বী আমি এখনো বিয়েই করিনি ।’
‘ও আচ্ছা আপনার বাসাভাড়া প্রয়োজন্ কেন?’
‘নতুন চাকরি নিয়ে শহরে এসেছি । এখানে কোন আত্নীয়-স্বজন কেউ নেই তো তাই বাসাভাড়া দরকার ।’
‘তা থাকবেন কতদিন?’
‘তার কি ঠিক আছে ? যতদিন চাকরি করি ততদিন তো থাকতে হবে ।’
‘কিছু মনে করবেন না । অনেকে আসে দু’এক মাস থেকেই চলে যায় তো তাই জিজ্ঞেস করছি ।’ কথার মাঝে চা-বিস্কুট এসে গেল ।
ভদ্রলোক বললেন, ‘চা নিন । তারপর বাড়িটা ভালোভাবে দেখুন । পছন্দ হলে থাকবেন ।’ বলে ভদ্রলোক ভদ্রলোক নিজেও এককাপ চা নিলেন । আমি দ্রুত চা শেষ করতে লাগলাম । ভদ্রলোক বাঁধা দিয়ে বললেন, ‘এত তাড়ার কি আছে ? আস্তে আস্তে খান ।’
চা খাওয়া শেষে ভদ্রলোক আমাকে রুম দেখাতে নিয়ে গেলেন ।বেশি বড় রুম বলা যাবেনা । বরং বেশ ছোটই । কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব আছে । দক্ষিনের জানালাটা বন্ধ । ওটা খুললে হয়তো অন্ধকার ভাব কিছুটা দূর হবে । খাটটা বেশ বড়ই । অনায়াসেই দুইজন শোয়া যায় ।দুটি চেয়ার একটি টেবিলও রয়েছে । ফ্যান, লাইট সবই আছে । সবচেয়ে বড় সুবিধা হল বাথরুমটা খুব কাছেই ।
ভদ্রলোক এবার বললেন, ‘রুমটা নিশ্চয়ই পছন্দ হয়েছে ।’
বললাম, ‘হ্যা পছন্দ হয়েছে ।’
ভদ্রলোক এবার ভাড়া প্রসঙ্গে আসলেন, ‘ভাড়া দু’হাজার টাকা । আর আমার দুটি শর্ত আছে ।’
‘কি শর্ত?’
‘না বেশি কঠিন শর্ত নয় । প্রথম শর্ত হল মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাড়াটা দিতে হবে । যদি অপরাগ হন তবে প্রতি সপ্তাহ বিলম্বের জন্য পাঁচশত টাকা করে বেশি দিতে হবে । আর দ্বিতীয়ত, রাত এগারোটার পর বাইরে থাকা যাবেনা ।যদি থাকেন তবে গেটের বাইরেই রাত কাটাতে হবে ।তবে আপনার যদি বিশেষ দরকার থাকে সেক্ষেত্রে আগেই সব বলে রাখবেন ।’
ভদ্রলোকের শর্ত তেমন কঠিন মনে হলনা আমার কাছে । কারণ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাড়া দিতে আমার কোন অসুবিধা থাকার কথা নয় । আর রাত এগারোটা কেন সন্ধ্যা সাতটার সময় গেট আটকালেও আমার কিছু যায় আসেনা । রাজি হয়ে গেলাম ভদ্রলোকের শর্তে । ভদ্রলোক আবার বললেন, ‘ও হ্যা আরেকটা কথা, অবশ্য এটাকে আমি শর্ত হিসেবে গন্য করছি না ।’
‘কি সেটা?’
দক্ষিণের যে বন্ধ জানালাটা দেখলেন ওটা খুলবেন না । কেন সে কৈফিয়ত আমি দিতে পারব না । আপনি যদি খুলেই ফেলেন এবং সে জন্য আপনার কোন ক্ষতি হয় সে জন্য আমি দায়ী থাকব না । আপনি ইচ্ছে করলে অন্ধকার কিংবা গরম দূর করতে লাইট আর ফ্যান সবসময় ব্যাবহার করতে পারেন ।
আমি উঠতে চাইতেই ভদ্রলোক বললেন,‘ও হ্যা আপনার নামটা জিজ্ঞেস করতেই তো ভুলে গেছি ।’
‘আমার নাম ফয়েজ আহমেদ ।’
ভদ্রলোক হেসে বললেন, ‘ফয়েজ আহমেদ । তা নামটা খারাপ না। ফয়েজ (ফয়’স) লেক যেহেতু খারাপ না আপনার নামটাও খারাপ না । কি বলেন? তা আমার নাম জানেন তো?’
‘জ্বিনা ।’
‘আমার নাম সোবহান উদ্দিন ।’
‘ঠিক আছে এখন আমি উঠি । সব জিনিসপত্র নিয়ে কাল এ বাড়িতে উঠব । আর হ্যা এই নিন দুই হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে গেলাম ।’
ভদ্রলোক কিছুটা ইতঃস্তত করে টাকাটা গ্রহন করলেন । ‘তা ফয়েজ সাহেব আমি আবারও বলছি ওই জানালা দয়া করে খুলবেন না ।’
একটা খটকা লেগে গেল আমার মনে । বুঝতে পারলাম না লোকটা ওই জানালাটা নিয়ে এত ভয় পাচ্ছেন কেন? কি আছে ওই জানালাতে ? ভদ্রলোক কেন ওই জানালা সম্পর্কে কিছু বলতে চাইলেন না ? আর কি ক্ষতি হবে ওই জানালা খুললে ? কেনই বা বারবার ওই জানালা সম্পর্কে আমাকে বারবার সতর্ক করে দিলেন ভদ্রলোক? বড় একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি যেন আমি ।
(চলবে...........)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
চিরন্তন ২১/০১/২০১৫
-
রাফি বিন শাহাদৎ ১৯/০১/২০১৫ভাল লাগছে
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১৯/০১/২০১৫অসাধারণ ভাই
-
সাইদুর রহমান ১৭/০১/২০১৫গল্প ও ছবি দুটোই
খু-ব ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা জানবেন। -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৭/০১/২০১৫হমমম রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। চলুক। অপেক্ষায় রইলাম।