www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

লাটোট টুহিক

-
জায়গাটায় আছি অনেকদিন হল । কিন্তু এই নদীর তীরে এখনো ঘুরে দেখা হয়নি । বলতে কি আসলে সময়ই তেমন একটা পাইনি। আজ যখন পেয়ে গেলাম ঠিক করলাম আজ সারাটা দিন শুধু এই নদীতীরে ঘুরব আর প্রকৃ্তির এই অপার সৌন্দর্যকে উপভোগ করব।
যাই হোক ভেবেছিলা্ম অনেক মানুষই হয়ত দেখব। কিন্তু জায়গাটা পুরোপুরি জনশুন্য। এমন কি একটি পাখি পর্যন্ত নেই নদীতীরে। ইস আমার ঘুরতে আসাটাই বুঝি বৃথা গেল। যখন আর কিছুটা হাটলাম তখন দেখলাম তীর থেকে কিছুটা দূরে একটা জঙ্গল । দু একটি পাহাড়ও চোখে পড়ল । একদিকে অরণ্য অন্যদিকে নদী দু’দিকেই চোখ রেখে চলছিলাম ।
হঠাৎ দেখলাম নদীতীরে কিছু্টা রক্ত । জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে গেছে । আশ্চর্য হয়ে গেলাম এখানে রক্ত এল কোথ্থেকে ? কিছুটা ভাবলাম এটা নিয়ে । তারপর ভাবনাটা বাদ দিয়ে দিলাম মন থেকে, কারন আমি এসেছি সৌন্দর্য উপভোগ করতে । অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে নয় ।
চমৎকার রোদ আকাশে, তার উপর হিমেল হাওয়া । শরীরটা জুড়িয়ে যাচ্ছে । কিন্তু তারপরও কিছুটা যেন অতৃপ্তি রয়ে গেছে ।নদী মানেই তো রমণীরা কলসি কাঁখে করে জল নিয়ে যাবে, জেলেরা মাছ ধরবে, মাঝিরা মনের সুখে গান করবে, মাছরাঙ্গা ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ ধরবে আর ছেলেমেয়েরা সাঁতার কাটবে নদীর জলে। কিছুই নেই এখানে । কিন্তু এসব থাকলে সবকিছু কত সুন্দর ই না হত । তারপরও নদীর মৃদু ঢেউ এবং বনের একরাশ সবুজ খুবই চমৎকার । এসব দেখতে দেখতে চলছিলাম।
হঠাৎ কিছু একটা দেখে থমকে দাড়িয়ে গেলাম । এক ঠান্ডা শিহরণ নেমে গেল মেরুদন্ড বেয়ে । নদীর পানির একটু উপরেই রয়েছে একটি কাটা হাত । হ্যা মানুষেরই । আর একবারে তাজা । আশ্চর্য ! এটা এখানে এল কিভাবে? পরে ভাবলাম হয়ত নদীর পানির সাথে কোথাও থেকে ভেসে এসেছে । হঠাৎ মনে হল ওই রক্তের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই তো? অবাক হলাম যখন দেখলাম হাতের তালুতে লেখা আছে ‘লা’ ।কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম হাতটার কাছে । কি জানি কেউ দেখে ফেললে শেষে কিনা খুনের দায়ে জেল খাটতে হয় তাই তাড়াতাড়িই ওটার কাছ থেকে সরে পড়লাম ।
যখন আরো কিছুক্ষণ হাটলাম তখন আর একটা হাত দেখতে পেলাম । একি! নদীর পাড়ে এত হাতের ছড়াছড়ি কেন? ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত ঠেকছে । আরো অবাক হলাম যখন দেখলাম এই হাতের উপরও কিছু একটা লেখা রয়েছে । সেটা হল ‘টো’ । এর মানে কি? প্রথম হাতে লেখা দেখলাম ‘লা’ এটায় ‘টো’। এগুলো কি একজনেরই হাত নাকি ভিন্ন ভিন্ন দুজনের? এই হাতটা বাম হাত । তবে কি আগেরটা ডানহাত ছিল ? মনে করার চেষ্টা করলাম । হ্যা তাইতো, ওটাতো ডানহাতই ছিল । তার মানে একজনেরই দুই হাত । কিন্তু ‘লা’ আর ‘টো’ কি? এই দুটির মাঝে কোন সম্পর্ক আছে কি? দুটি মিলিয়ে হয় ‘লাটো’ বা ‘টোলা’ । এরকম কোন শব্দ আছে বলে তো আমার জানা নেই ।এসব ভাবতে ভাবতেই এগুতে লাগলাম । দেখা যাক তৃতীয় কোন হাত দেখা যায় কিনা?
আর খানিকটা চলার পর আবারও কিছু একটা দেখতে পেলাম । কিন্তু এটা কোন হাত নয় । হাটু পর্যন্ত কাটা একটা পা । এবং এই পায়ের উপর লেখা ‘ট” । অবাক হলাম ।এগুলি কি তাহলে কোন সংকেত? এই পর্যন্ত যে সংকেতগুলো পেলাম তাতে হয় ‘লাটোট’ বা ‘টটোলা’ ।
এবার আমি নিশ্চিত হলাম কিছুদূর গেলেই আরেকটা পা দেখতে পাব । কিন্তু না অনেকদূর হেটেও দ্বিতীয় পায়ের কোন সন্ধান পেলাম না । তখন মনে হল হয়তো ভদ্রলোকের এক পা ছিলই না । কিন্তু আমার এই ধারণাটা আর কিছুদূর যেতেই মিথ্যে প্রমাণিত হল । দ্বিতীয় পায়ের দেখাও মিলল । আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম এই পায়ের উপর কি লেখা আছে তা দেখার জন্য । এবং পেয়েও গেলাম । এখানে লেখা আছে ‘টু’ ।তার মানে সব মিলিয়ে হল ‘লাটোটটু’ বা ‘টুটটোলা’। একসাথে তিনটাই পেয়ে গেলাম ‘ট’ দিয়ে । এবার কি তবে ‘টি’, ‘টা’ কিংবা এইজাতীয় কিছু একটা দেখব? কিন্তু দুটি হাত দুটি পাতো দেখলাম । এবার কি তবে বাকি দেহটা দেখব?
আরো কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম একটা মাথা । সামান্য রক্তাক্ত ।চোখ দুটি বোজা । চেহারাটা সুন্দর ই বলতে হবে । কপালের উপর কিছু একটা লেখা রয়েছে । কিন্তু এবার আর ‘ট’ দিয়ে নয় ‘হ’ দিয়ে লেখা আছে ‘হি’ । তার মানে সবমিলিয়ে হল ‘লাটোটটুহি” বা ‘হিটুটটোলা’ ।
এবার নিশ্চয়ই শেষ দেখা হিসেবে বাকি দেহটা পাব । কিছুক্ষন যাবার পর পেয়েও গেলাম । মাথা, হাত-পা বিহীন একটা দেহ চিৎ হয়ে আছে । ভীষণ বীভৎস দেখাচ্ছে ওটাকে । দেহটার বুকের উপর লেখা আছে ‘ক’ ।তাহলে সর্বমোট সংকেতগুলোকে একত্রিত করলে হয় ‘লাটোটটুহিক’ বা ‘কহিটুটটোলা’ । কিন্তু এর কোন অর্থই তো নেই । তবে কি এটা লোকটার নাম? ভাবতে ভাবতে হাটতে লাগলাম । ভেবেছিলাম আর কিছুই হয়তো দেখব না । কিন্তু লাটোটটুহিকের দেখাই যে শেষ পর্যন্ত পেয়ে যাব তাই বা কে ভেবেছিল ।
যাই হোক ভেবেছিলাম এরপর আর বীভৎস ব্যাপারের মুখোমুখি হব না, বরং আমি একান্তে নদীর সৌন্দর্যকে উপভোগ করব । কিন্তু সৌন্দর্য দেখার বদলে আমি শুধু ভাবতে লাগলাম লাটোটটুহিককে নিয়ে ।নদীর সৌন্দর্য আমাকে আর টানছিল না । এক অজানা আকর্ষণে আমি সামনের দিকে এগুচ্ছি । হঠাৎ দেখলাম একটা লাশ পড়ে রয়েছে জলের ধারে । গলিত লাশ নয়, একেবারে তাজা । ভড়কে গেলাম ভীষণ । এটার চেহারাও ঠিক লাটোটটুহিকের মত । একি এটার কপালেও ‘হি’ লেখা । তারপর একে একে হাত-পা, বুক পরীক্ষা করলাম । কাটা হাত, পা, বুকে যা লেখা দেখেছিলাম এটার হাত, পা , বুকে একই লেখা ।
লাটোটটুহিক!
হঠাৎ চোখ মেলে তাকালো লাটোটটুহিক । উঠে বসলো ও । এটা কি করে সম্ভব? ভীষণ ভয়ে কাঁপতে লাগলাম । পরক্ষণেই ঝাড়া দৌড় দিলাম পিছন দিকে ।
দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম । পিছু চেয়ে দেখলাম কেউ নেই । তবে আমার সামনেই পরে রয়েছে সেই প্রথম কাটা হাতটি । একি এতো তাড়াতাড়ি এখানে আসলাম কি করে? ভাবতে ভাবতে হাটতে লাগলাম । কিন্তু একি কছুক্ষণ পরেই দ্বিতীয় হাতটি দেখলাম । তার মানে আমি বেশিদূর যাইনি । কিন্তু এখানে তো মাথাটা থাকার কথা ছিল ।
যাই হোক ফিরে আসতে আসতে আগের সবকিছুই দেখতে পেলাম । কিন্ত ওলট-পালট । আগেরটা শেষে আরে শেষেরটা আগে । তার মানে ‘কহিটুটটোলা’ নয় ‘লাটোট টুহিক’ ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৭৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • একনিষ্ঠ অনুগত ১৮/০৯/২০১৪
    শেষে এসে বুঝতে পারলাম কাহিনীটা ভুতুরে ছিল। শেষ বাক্যের পরে আরও কিছুটা শেষ কথার হয়ত দরকার ছিল।

    বেশ ভালো লাগলো।
  • গা ছম ছমে ... ভাল লাগলো ।
  • ঘটনাটা কি ঘটলো?
  • মল্লিকা রায় ১৭/০৯/২০১৪
    বাহ্ কি চমত্কার কাহিনী--মনগড়া অবশ্যই,বেশ রহস্যময়,গা ছমছমে।
 
Quantcast