ভয়ংকর পরীক্ষার রাত্রি
রাত তখন দুইটা । বাইরে জোনাকি পোকা উড়ছে । শীতে আমার শরীর হিম হয়ে গেছে । আর মাত্র কয়েক মিনিট পরেই আমি মুখোমুখি হতে যাচ্ছি তার । কথাটা মনে হতেই শরীরটা কেমন জানি ঝাকি দিয়ে উঠল । চারিদিক নিরব নিঃস্তব্দ । পৃথিবীটা যেন ঘুমিয়ে আছে । শুধু আমিই জেগে আছি ।চারিদিকে ঘন কুয়াশা । আমি শীতে ঠকঠক করে কাঁপছি । নাকি ভয়ে? কি জানি ভয়ের সময় হয়তো শীত বেশি লাগে । শীতে বরাবরই আমার ঠোট ফেটে যায় । নানা রকম এটাসেটা লাগিয়েও ঠোট ফাটা থেকে রক্ষা পাইনা । ঠোটের কারনে কিছুটা বিস্বাদ নিয়েই শীতের দিনগুলি অতিবাহিত করি । কিন্তু সেটা এখন চিন্তার বিষয় নয় । এখন চিন্তার বিষয় হল আর কিছুক্ষন পর কি ঘটতে যাচ্ছে সেটা । নির্জন রাত একটু খেয়াল করলেই শোনা যায় নানা পোকা-মাকড়ের ডাকার নিরব একটা শব্দ । অনেক জোছনা রাতে একাকী বাইরে বেড়িয়ে এই শব্দ বহুদিন শুনেছি । কিন্তু এই শব্দই যেন এখন আমার কাছে সিংহের গর্জনের মত মনে হচ্ছে । সিংহ কিংবা সিংহের গর্জনকে আমি যে ভয় পাই তা নয় । সিংহের ডাককে ভয় না পেলেও অসহ্য মনে হয় । কান ফেটে যায় । ইচ্ছে করে সিংহটাকে ছিড়ে দু’ভাগ করে ফেলি । সিংহের গর্জনের সাথে আমার শত্রুতা এতটুকুই । গুলি গায়ে না লাগলেও গুলির শব্দে মানুষ যেমন আতঙ্কিত হয়ে পরে আমিও সেরুপ । তবে সম্রাট আলেকজান্ডারের মত যে আমার সাহস আছে তাও নয় । এইতো আমার বুকটা কাঁপছে ।শরীরের প্রতিটি রোম বর্শার ফলার মত দাড়িয়ে গেছে । তবে আমার মনে হয় সম্রাট আলেকজান্ডারও যদি আজ আমার অবস্থানে থাকতেন তিনিও ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপতেন ।
আমি পৃথিবী বিখ্যাত লেখকদের অনেক ভয়াল কাহিনী পড়েছি ।যার কোনটা পড়লে রাতে বাইরে বেরুনো যায় না । আশেপাশে কেউ থাকলে তাকে ডাইনী বলে মনে হয় । আমিও আজ তেমনি একটি বাস্তব উপন্যাসের নায়ক ।
হঠাৎ একটি দমকা বাতাস এসে আধখোলা জানালাটা খুলে ফেলল । দেয়ালে ঝুলানো কিছু একটা পড়ে গিয়ে বিকট শব্দে ভেঙ্গে গেল । আমার হাতের মৃদু প্রজ্জ্বলিত মশালটা মুহুর্তের মধ্যেই ধপ করে নিভে গেল । বাতাসটা যেন হিসহিস গর্জন করে সবকিছু উড়িয়ে নিতে চাইছে । কে যেন আমাকে ফিসফিস করে বলল, “তার আসার সময় হয়েছ । প্রস্তুত হও”।
আমি আগে থেকেই সম্পুর্ণ প্রস্তুত তাই নতুন করে প্রস্তুত হবার প্রয়োজন অনুভব করলাম না ।তবু শরীরের ভিতর কেমন যানি একটা শিরশিরে অনুভূতি হল । সারা ঘরটা তখনও থরথর করে কাপছে । কোথা থেকে একপাল নেকড়ে যেন ডাকছে । আমি একই ভাবে দাড়িয়ে আছি । হঠাৎ করেই যেন ভয়-টয় উধাও হয়ে গেছে আমার মন থেকে ।
একসময় নেকড়ের ডাক বন্ধ হয়ে গেল । দেখলাম কেমন জানি হিসহিস শব্দ হচ্ছে । জানালা দিয়ে যে আবছা চাদের আলো আসছে তাতে দেখলাম আমার চারপাশে কিলবিল করছে অসংখ্য সাপ । সাপগুলো সারাটা ঘর তোলপাড় করতে লাগল ।এমনকি আমার গায়েও কয়েকটা সাপ উঠে পড়ল । কিছুক্ষনেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড় হল । আমার সারা শরীর জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সাপ ।
একসময় সবগুলো সাপ উধাও হয়ে গেল । হঠাৎ আমার কানে এসে লাগল খিল খিল করে হাসার শব্দ । কারা যেন হাসছে । ডাইনীরা নাকি এমনি করে হাসে । ডাইনী বলে যে কিছু আছে তা আগে তেমন একটা বিশ্বাস করতাম না ।
দেখলাম কতগুলো কঙ্কাল সারা ঘর জুড়ে নাচছে । আর ওদের চোখ দুটি আগুনের মত জ্বলছে । আমার কেমন জানি ভয় হল ।পরক্ষনেই ভয়টাকে মুছে ফেললাম মন থেকে । আমাকে তো পরীক্ষায় পাশ করতে হবে ।
জীবনের কোন পরীক্ষাই আমাকে আটকাতে পারেনি । মশাল জেলে গভীর রাত পর্যন্ত পড়িনি সত্যি তবুও পরীক্ষায় ভালভাবেই পাশ করেছি । কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরীক্ষা । যে পরীক্ষার প্রতিযোগী আমি একাই ।কলম কিংবা কালি কোনটাই দরকার নেই এই পরীক্ষায় ।
কঙ্কালগুলো সারা ঘর তছনছ করতে লাগল । সবকিছু ছড়িয়ে দিতে লাগল মেঝেতে । ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে ছোড়াছুড়ি করছিল । একখন্ড আমার মুখের উপর পরে তিনটা দাত ভেঙ্গে গেল ।গল গল করে রক্ত ঝড়তে লাগল সেখান থেকে । গভীর যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠলাম আমি । একসময় মনে হল দরজাটা খুলে বেরিয়ে যাই । দরকার নেই আমার এ পরীক্ষায় পাশ করার ।
কিন্তু গেলাম না আমি । কাতরাতে কাতরাতেই দাড়িয়ে রইলাম । রক্তে ভিজে যাচ্ছিল আমার সারা গা , গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল মেঝেতে । ডাইনীরা জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে রক্তগুলি খাচ্ছিল । উহ কি বীভৎস ।
হঠাৎ ডাইনীগুলি কোথা থেকে একঘটী তেলাপোকা নিয়ে এল ।তারপর আমাকে জোর করে ধরে তেলাপোকাগুলি ঢেলে দিল আমার দাঁতভাঙ্গা রক্তমাখা মুখের ভিতর । ভীষণ বদ গন্ধে আমার শরীর ঘিন ঘিন করে উঠল ।বমি আসছে ভীষণ ।নাড়ীভুড়ি যেন সব বেরিয়ে আসতে চাইছে ।তেলাপোকাগুলো সারা পেট জুড়ে রাজত্বি করতে লাগল ।
এবার কি আমার পরীক্ষা শেষ? নাকি আরো মুখোমুখি হতে হবে এমন জঘণ্য ব্যাপারের ।
হ্যা তাইতো । শেষ হয়নি আমার পরীক্ষা । জানিনা কখন শেষ হবে । ওরা কি আজ আমাকে মেরেই ফেলবে ।
ডাইনীরা তখন টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেলছিল আমার চুলগুলি । সেই চুলের সাথে উঠে যাচ্ছিল মাথার চামড়াগুলিও । দু’একটা চুল যদি কোথাও থেকে যায় ওরা বিশাল বিশাল নখ দিয়ে খুটে খুটে উঠিয়ে নিচ্ছিল । ভীষণ যন্ত্রনায় কাটা মুরগির মত ছটফট করছিলাম আমি । এরপর ওরা টেনে হিচড়ে খুলে ফেলল আমার গায়ের সবটুকু কাপড় ।তারপর ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত কিছু (সম্ভবত কোন জানোয়ারের বিষ্ঠা) মেখে দিল আমার সারা গায় । ছিঃ ছিঃ কি হচ্ছে এসব? এরকম বদ গন্ধে মানুষ কেন কোন প্রানীও কি থাকতে পারে ? কিন্তু আমাকে সেই দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস থেকেই নিতে হচ্ছিল নিঃশ্বাস ।
এবার চলে গেল ডাইনিগুলি । বুঝি আমার পরীক্ষাও শেষ হল ।
চেয়ে দেখলাম আমার সারাগায়ে দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে । সেখানে কিলবিল করছে অসংখ্য পোকা ।
সারাগায়ে ভীষণ যন্ত্রণা নিয়ে বসে বসে ককাচ্ছিলাম । আমার যেন এখন উঠে দাড়াবারও ক্ষমতা নেই ।জানিনা এবার কি দেখা পাব তার?
কই? কতক্ষণ বসে রইলাম । সে তো এল না ।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম বিশালদেহী দু’জন লোক এসে দাড়িয়েছে । একজনের হাতে একটা ধারালো চাকু ।
চাকু! চাকু কেন? ওরা কি মেরে ফেলতে চায় আমায় ?
ছিনতাইকারীরা সাধারণত এরকম চাকু নিয়ে মানুষের সঃর্বস্ব কেড়ে নেয় । কিন্তু আমার কাছে নেবার মতো কিছু নেই । বাকি আসে শুধু প্রানটা । সেটা যদি ওরা নিয়ে যেতে চায় নিক । পোকাভরা একটা দেহ নিয়ে বেচে থাকতে চাইনা ।
মৃত্যুর আগে মানুষের মনে নানারকম ইচ্ছা জাগে ।কিন্তু আমার কোন ইচ্ছা জাগছে না ।আর ইচ্ছা থাকলেই কি পূরন করার সুযোগ আছে?
আমার মত অবস্থায় পড়লে সবাই ভয়েই অর্ধমৃত হয়ে যায় । কি করে সবকিছুর বিনিময়ে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে সেই চিন্তা করে । কিন্তু আমার কোন ভয় করছে না । কিছুক্ষণ পর যে আমার কর্তিত মাথাটা মেঝেতে গড়াগড়ি করবে তা বেশ বুঝতে পারছি । আমার মুক্তির উপায় তো খুব সোজা কোনরকমে ওই দরজাটার কাছে যেতে পারলেই হল । কিন্তু আমার সে চিন্তা নেই । ব্যাথা থাকলেও ভয় নেই আমার ।
জল্লাদসম লোক দুটির একজন আমাকে শক্ত করে ধরল । আমি সামান্য নড়চড়ও করলাম না । অন্য লোকটি চাকু হাতে এগিয়ে এল আমার দিকে । তারপর ছুরিটা বসিয়ে দিল আমার ডানচোখে । উহ কি যন্ত্রণা । বাবাগো ।
ছুরিটা আমার চোখের চারপাশে বারবার বসিয়ে দিতে লাগল । রক্তলাল হয়ে গেল ছুরিটা । আর আমার গাল বেয়ে পা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল রক্ত । লোকটি একটানে তুলে ফেলল আমার চোখটি । আমার প্রান বুঝি যায় যায় । কাটা মুরগির মত ছটফট করতে লাগলাম আমি । এবার কি বাকি চোখটিও তুলে নেবে ওরা । না বাকি চোখটি আর তুলল না । চলে গেল বিশালদেহী লোক দুটি ।
একি আমি কি এখনও বেচে আছি? সন্দেহ হচ্ছে আমি কি জীবিত না মৃত ।
হঠাৎ আমার চারপাশে বিকট কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গেল । ধোয়ায় ভরে গেল সারা ঘর । চোখ বুজে ফেললাম আমি ।
যখন চোখ খুললাম তখন দেখলাম ধোয়ার মধ্যে একটি সোনার সিংহাসন ।তাতে বসে আছে সাদা ধবধবে সৌম্য আকৃতির একটি লোক । কী সুন্দর তার দেহাবয়ব ।কি মায়াবী তার চোখ দুটি । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে । সকল যন্ত্রণা যেন চলে গেছে আমার শরীর থেকে । সৌম্য লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন । বললেন, “You have passed the exam”. বলে তার মাথা থেকে সোনার মুকুটটি পরিয়ে দিলেন আমার মাথায় ।
আমি পৃথিবী বিখ্যাত লেখকদের অনেক ভয়াল কাহিনী পড়েছি ।যার কোনটা পড়লে রাতে বাইরে বেরুনো যায় না । আশেপাশে কেউ থাকলে তাকে ডাইনী বলে মনে হয় । আমিও আজ তেমনি একটি বাস্তব উপন্যাসের নায়ক ।
হঠাৎ একটি দমকা বাতাস এসে আধখোলা জানালাটা খুলে ফেলল । দেয়ালে ঝুলানো কিছু একটা পড়ে গিয়ে বিকট শব্দে ভেঙ্গে গেল । আমার হাতের মৃদু প্রজ্জ্বলিত মশালটা মুহুর্তের মধ্যেই ধপ করে নিভে গেল । বাতাসটা যেন হিসহিস গর্জন করে সবকিছু উড়িয়ে নিতে চাইছে । কে যেন আমাকে ফিসফিস করে বলল, “তার আসার সময় হয়েছ । প্রস্তুত হও”।
আমি আগে থেকেই সম্পুর্ণ প্রস্তুত তাই নতুন করে প্রস্তুত হবার প্রয়োজন অনুভব করলাম না ।তবু শরীরের ভিতর কেমন যানি একটা শিরশিরে অনুভূতি হল । সারা ঘরটা তখনও থরথর করে কাপছে । কোথা থেকে একপাল নেকড়ে যেন ডাকছে । আমি একই ভাবে দাড়িয়ে আছি । হঠাৎ করেই যেন ভয়-টয় উধাও হয়ে গেছে আমার মন থেকে ।
একসময় নেকড়ের ডাক বন্ধ হয়ে গেল । দেখলাম কেমন জানি হিসহিস শব্দ হচ্ছে । জানালা দিয়ে যে আবছা চাদের আলো আসছে তাতে দেখলাম আমার চারপাশে কিলবিল করছে অসংখ্য সাপ । সাপগুলো সারাটা ঘর তোলপাড় করতে লাগল ।এমনকি আমার গায়েও কয়েকটা সাপ উঠে পড়ল । কিছুক্ষনেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড় হল । আমার সারা শরীর জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সাপ ।
একসময় সবগুলো সাপ উধাও হয়ে গেল । হঠাৎ আমার কানে এসে লাগল খিল খিল করে হাসার শব্দ । কারা যেন হাসছে । ডাইনীরা নাকি এমনি করে হাসে । ডাইনী বলে যে কিছু আছে তা আগে তেমন একটা বিশ্বাস করতাম না ।
দেখলাম কতগুলো কঙ্কাল সারা ঘর জুড়ে নাচছে । আর ওদের চোখ দুটি আগুনের মত জ্বলছে । আমার কেমন জানি ভয় হল ।পরক্ষনেই ভয়টাকে মুছে ফেললাম মন থেকে । আমাকে তো পরীক্ষায় পাশ করতে হবে ।
জীবনের কোন পরীক্ষাই আমাকে আটকাতে পারেনি । মশাল জেলে গভীর রাত পর্যন্ত পড়িনি সত্যি তবুও পরীক্ষায় ভালভাবেই পাশ করেছি । কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরীক্ষা । যে পরীক্ষার প্রতিযোগী আমি একাই ।কলম কিংবা কালি কোনটাই দরকার নেই এই পরীক্ষায় ।
কঙ্কালগুলো সারা ঘর তছনছ করতে লাগল । সবকিছু ছড়িয়ে দিতে লাগল মেঝেতে । ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে ছোড়াছুড়ি করছিল । একখন্ড আমার মুখের উপর পরে তিনটা দাত ভেঙ্গে গেল ।গল গল করে রক্ত ঝড়তে লাগল সেখান থেকে । গভীর যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠলাম আমি । একসময় মনে হল দরজাটা খুলে বেরিয়ে যাই । দরকার নেই আমার এ পরীক্ষায় পাশ করার ।
কিন্তু গেলাম না আমি । কাতরাতে কাতরাতেই দাড়িয়ে রইলাম । রক্তে ভিজে যাচ্ছিল আমার সারা গা , গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল মেঝেতে । ডাইনীরা জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে রক্তগুলি খাচ্ছিল । উহ কি বীভৎস ।
হঠাৎ ডাইনীগুলি কোথা থেকে একঘটী তেলাপোকা নিয়ে এল ।তারপর আমাকে জোর করে ধরে তেলাপোকাগুলি ঢেলে দিল আমার দাঁতভাঙ্গা রক্তমাখা মুখের ভিতর । ভীষণ বদ গন্ধে আমার শরীর ঘিন ঘিন করে উঠল ।বমি আসছে ভীষণ ।নাড়ীভুড়ি যেন সব বেরিয়ে আসতে চাইছে ।তেলাপোকাগুলো সারা পেট জুড়ে রাজত্বি করতে লাগল ।
এবার কি আমার পরীক্ষা শেষ? নাকি আরো মুখোমুখি হতে হবে এমন জঘণ্য ব্যাপারের ।
হ্যা তাইতো । শেষ হয়নি আমার পরীক্ষা । জানিনা কখন শেষ হবে । ওরা কি আজ আমাকে মেরেই ফেলবে ।
ডাইনীরা তখন টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেলছিল আমার চুলগুলি । সেই চুলের সাথে উঠে যাচ্ছিল মাথার চামড়াগুলিও । দু’একটা চুল যদি কোথাও থেকে যায় ওরা বিশাল বিশাল নখ দিয়ে খুটে খুটে উঠিয়ে নিচ্ছিল । ভীষণ যন্ত্রনায় কাটা মুরগির মত ছটফট করছিলাম আমি । এরপর ওরা টেনে হিচড়ে খুলে ফেলল আমার গায়ের সবটুকু কাপড় ।তারপর ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত কিছু (সম্ভবত কোন জানোয়ারের বিষ্ঠা) মেখে দিল আমার সারা গায় । ছিঃ ছিঃ কি হচ্ছে এসব? এরকম বদ গন্ধে মানুষ কেন কোন প্রানীও কি থাকতে পারে ? কিন্তু আমাকে সেই দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস থেকেই নিতে হচ্ছিল নিঃশ্বাস ।
এবার চলে গেল ডাইনিগুলি । বুঝি আমার পরীক্ষাও শেষ হল ।
চেয়ে দেখলাম আমার সারাগায়ে দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে । সেখানে কিলবিল করছে অসংখ্য পোকা ।
সারাগায়ে ভীষণ যন্ত্রণা নিয়ে বসে বসে ককাচ্ছিলাম । আমার যেন এখন উঠে দাড়াবারও ক্ষমতা নেই ।জানিনা এবার কি দেখা পাব তার?
কই? কতক্ষণ বসে রইলাম । সে তো এল না ।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম বিশালদেহী দু’জন লোক এসে দাড়িয়েছে । একজনের হাতে একটা ধারালো চাকু ।
চাকু! চাকু কেন? ওরা কি মেরে ফেলতে চায় আমায় ?
ছিনতাইকারীরা সাধারণত এরকম চাকু নিয়ে মানুষের সঃর্বস্ব কেড়ে নেয় । কিন্তু আমার কাছে নেবার মতো কিছু নেই । বাকি আসে শুধু প্রানটা । সেটা যদি ওরা নিয়ে যেতে চায় নিক । পোকাভরা একটা দেহ নিয়ে বেচে থাকতে চাইনা ।
মৃত্যুর আগে মানুষের মনে নানারকম ইচ্ছা জাগে ।কিন্তু আমার কোন ইচ্ছা জাগছে না ।আর ইচ্ছা থাকলেই কি পূরন করার সুযোগ আছে?
আমার মত অবস্থায় পড়লে সবাই ভয়েই অর্ধমৃত হয়ে যায় । কি করে সবকিছুর বিনিময়ে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে সেই চিন্তা করে । কিন্তু আমার কোন ভয় করছে না । কিছুক্ষণ পর যে আমার কর্তিত মাথাটা মেঝেতে গড়াগড়ি করবে তা বেশ বুঝতে পারছি । আমার মুক্তির উপায় তো খুব সোজা কোনরকমে ওই দরজাটার কাছে যেতে পারলেই হল । কিন্তু আমার সে চিন্তা নেই । ব্যাথা থাকলেও ভয় নেই আমার ।
জল্লাদসম লোক দুটির একজন আমাকে শক্ত করে ধরল । আমি সামান্য নড়চড়ও করলাম না । অন্য লোকটি চাকু হাতে এগিয়ে এল আমার দিকে । তারপর ছুরিটা বসিয়ে দিল আমার ডানচোখে । উহ কি যন্ত্রণা । বাবাগো ।
ছুরিটা আমার চোখের চারপাশে বারবার বসিয়ে দিতে লাগল । রক্তলাল হয়ে গেল ছুরিটা । আর আমার গাল বেয়ে পা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল রক্ত । লোকটি একটানে তুলে ফেলল আমার চোখটি । আমার প্রান বুঝি যায় যায় । কাটা মুরগির মত ছটফট করতে লাগলাম আমি । এবার কি বাকি চোখটিও তুলে নেবে ওরা । না বাকি চোখটি আর তুলল না । চলে গেল বিশালদেহী লোক দুটি ।
একি আমি কি এখনও বেচে আছি? সন্দেহ হচ্ছে আমি কি জীবিত না মৃত ।
হঠাৎ আমার চারপাশে বিকট কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গেল । ধোয়ায় ভরে গেল সারা ঘর । চোখ বুজে ফেললাম আমি ।
যখন চোখ খুললাম তখন দেখলাম ধোয়ার মধ্যে একটি সোনার সিংহাসন ।তাতে বসে আছে সাদা ধবধবে সৌম্য আকৃতির একটি লোক । কী সুন্দর তার দেহাবয়ব ।কি মায়াবী তার চোখ দুটি । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে । সকল যন্ত্রণা যেন চলে গেছে আমার শরীর থেকে । সৌম্য লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন । বললেন, “You have passed the exam”. বলে তার মাথা থেকে সোনার মুকুটটি পরিয়ে দিলেন আমার মাথায় ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জমাতুল ইসলাম পরাগ ২৩/০৯/২০১৪জাহিদুল ইসলাম, সহমত।
-
শরীফুল ইসলাম আরশ ১৬/০৯/২০১৪হ্গ্জ্ঘ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৬/০৯/২০১৪কুশ্রী কি সব জিনিস ছিলো সত্যি বিশ্রী।
-
একনিষ্ঠ অনুগত ১৬/০৯/২০১৪ভালোলাগাঃ গল্পের মূল বিষয়বস্তু (ধৈর্য) অবশ্যই শিক্ষণীয়।
মন্দলাগাঃ কাহিনীকে বেশী পরিমাণ ভৌতিক করার জন্য খুব বেশী রকম অশরীরী সত্তার আগমন ঘটেছে কিন্তু কিন্তু সে তুলনায় তাদের ক্রিয়া কলাপ এবং যন্ত্রণা দেয়ার মাত্রা তেমনটা প্রকাশিত হয়নি। এরুপ অতিরিক্ত চরিত্রকে বাহুল্য বলেই মনে হল। -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৬/০৯/২০১৪এতটা ভৈাতিক হবেন না। একটু মানবিক ও হবেন।
-
স্বপন রোজারিও(১) ১৫/০৯/২০১৪ভৌতিক
-
আহমাদ সাজিদ ১৫/০৯/২০১৪স্বপ্ন ভয়ংকার"