পর্দা
মেয়েটি হাটছিল । এই পৃথিবীতে মা ছাড়া ওর আর আপন কেউ নেই । বাবা অনেক আগেই মারা গেছে । ওর নাম বিন্তি । বয়স কতই বা হবে ? দশ কি বারো ।
ওর দিকে চেয়ে দেখ । গায়ে শতছিন্ন একটি কাপড় । চুলগুলো এলোমেলো । আর চোখ দু’টিতে কিসের যেন এক বেদনা ।
বিন্তির মা এক বাড়িতে কাজ করতো । তাতেই ওদের দু’জনের পরিবার মুটামুটিভাবে চলে যেত । কিন্তু আজ ক’দিন ধরে ওর মা খুব অসুস্থ । বিন্তি জানে না ওর মার কি হয়েছে । টাকার অভাবে ওর মাকে ডাক্তারও দেখাতে পারেনা । ভিক্ষা করে ও কোনরকমে সংসার চালাচ্ছে । ভিক্ষাও কি কেউ দিতে চায়? পায়ে ধরেও কারো কারো কাছ থেকে এক টাকাও বের হয়না । অথচ কতভাবেই না টাকা উড়াচ্ছেন তারা ।বিন্তি যা পায় তা দিয়ে খাবার কিনে মাকে দেয় আর ও খায় । অবশ্য ওর মা এতই অসুস্থ যে বলতে গেলে কিছুই খেতে পারেনা ।
সন্ধ্যা হয়া যাচ্ছে । আরো জোরে পা চালায় বিন্তি । লক্ষ্য কিছুদূরের একটা ভাঙ্গা বস্তি । যেখানে ওর মা ওর জন্য অপেক্ষা করে আছেন । বিন্তির হাতে অল্প কয়েকটা টাকা । কত টাকা ও গুনে দেখেনি । বাড়িতে যাওয়ার আগে মার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেতে হবে ।
গলিটা বেশ অন্ধকার হয়ে আসছে । ও ভীষণ ক্লান্ত । পা আর চলতে চাইছে না । হঠাৎ ও দেখতে পেল তিনজন গুন্ডামত লোক । ভয় পেয়ে গেল ও । ওরা কি ওর এই সামান্য ক’টা টাকা কেড়ে নিয়ে যাবে? তবে তো ওর অসুস্থ মায়ের আজ না খেয়ে থাকতে হবে । লোক তিনটির পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছিল বিন্তি । কিন্তু দু’পাশ থেকে ওর দু’হাত ধরে ফেলল লোকগুলো । বিন্তি চেচিয়ে উঠল, “আমার টাকা নিও না । আমার মার খুব অসুখ ।”
কিন্তু শুনল না ওরা । ওর হাত থেকে কেড়ে নিল টাকাগুলো । একজন আর দু’জনকে চুপিচুপি কিছু একটা বলল । তারপর ওরা টেনে নিয়ে লাগলো ওকে ।
“আমারে কই নেন ? আমি মার কাছে যামু ।” বলে চেচিয়ে উঠল বিন্তি ।
“মায়ের কাছে যাবি যাইস । অহন আমাগো লগে ল” বলল লোক তিনটির একজন ।
বিন্তি এবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো । একজন ওর মুখ চেপে ধরে ।
লোকগুলো ওকে একটি ঘরে নিয়ে গেল । তারপর তিনটি পশু ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ওর দেহের উপর ।পশুদের দেহের নিচে পিষ্ঠ হতে হতে জ্ঞান হারালো বিন্তি ।
যখন ওর জ্ঞান ফিরল তখন সকাল হয়ে গেছে । ও একটা রাস্তার পাশে পড়ে আছে । চারদিক চেয়ে দেখল ও । ওর চারিদিকে অনেক মানুষ । ওর নড়াচড়া দেখে কেউ কেউ বলল , “একি বেঁচে আছে মেয়েটা ?”
উঠে বসতে চাইল ও । পারলোনা । সারাগায়ে অসম্ভব ব্যাথা । গায়ের ছেড়া জামাটা রক্তে লাল হয়ে গেছে ।
একি ওর কি হয়েছিল ? ওকি গাড়ির নিচে পড়ছিল ? মনে করতে চাইছিল ও । কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না । মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে । হঠাৎ আবছা আবছা কিছু মনে পড়তে লাগল । কাল রাতে তিনটা পশু ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল । তারপর পশু জবাই করার মত জাপটে ধরল ওকে । তিনটি পশু ওর সারাদেহে বিচরণ করছিল । তারপর কি হল ? এখানেই বা এল কি করে কিছুই মনে নেই বিন্তির । হঠাৎ ওর মনে পড়ে মায়ের কথা । এক ঝঁটকায় উঠে বসে ও । তারপর অসহ্য ব্যাথা নিয়েই উঠে দাড়ালো ও । ভীড় ঠেলে দৌড়াতে লাগল । দৌড়াতে পারছে না ও । ভীষণ ব্যাথায় সারা শরীর ভেঙ্গে পড়তে চাইছে । কয়েকবার লুটিয়ে পড়ল মাটিতে । তারপরও দৌড়াতে লাগল ও ।
একটা ভাঙ্গা বস্তির সামনে এসে থামলো ও । “মা মা” বলে চিৎকার করতে করতে বস্তির মধ্যে ঢুকে পড়লো । ওর মা তখনো শুয়ে আছে । কোন সাড়াশব্দ নেই । বিন্তি আরো কয়েকবার ডাকল ওর মাকে । একসময় ওর মার গা ধরে ঝাঁকি দেয় । চোখ মেলেনা ওর মা । বুঝিবা আর কোনদিন মেলবেও না । নিশ্চল-নিথর একটা দেহকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল বিন্তি ।
জীবনের দুই কূল হারিয়ে বিন্তি এখন কি করবে বুঝতে পারল না । রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাটছিল বিন্তি । ওদিক থেকে একটা ট্রেন আসছে । হঠাৎ সকল যন্ত্রনামুক্তির একটা পথ যেন চোখের সামনে দেখতে পেল বিন্তি । উঠে এল রেল লাইনের উপর । জীবন – মৃত্যুর দোলায় দুলতে দুলতে নিজের জীবনের কোন সার্থকতা খুজে পেলনা বিন্তি ।
পরদিন খবরের পাতার এক কোনায় ছোট্ট একটা খবর বেরুলো । হাজারো খবরের মাঝে এ খবরটি হয়তো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেল । আমাদের চোখের সামনে যে বিশাল পর্দা তা চিরদিনই আড়াল করে রাখে বিন্তির মত মেয়েদেরকে । বিন্তির মত কত ফুল যে ফোটার আগেই ঝড়ে পড়ে কে তার খবর রাখে ?
ওর দিকে চেয়ে দেখ । গায়ে শতছিন্ন একটি কাপড় । চুলগুলো এলোমেলো । আর চোখ দু’টিতে কিসের যেন এক বেদনা ।
বিন্তির মা এক বাড়িতে কাজ করতো । তাতেই ওদের দু’জনের পরিবার মুটামুটিভাবে চলে যেত । কিন্তু আজ ক’দিন ধরে ওর মা খুব অসুস্থ । বিন্তি জানে না ওর মার কি হয়েছে । টাকার অভাবে ওর মাকে ডাক্তারও দেখাতে পারেনা । ভিক্ষা করে ও কোনরকমে সংসার চালাচ্ছে । ভিক্ষাও কি কেউ দিতে চায়? পায়ে ধরেও কারো কারো কাছ থেকে এক টাকাও বের হয়না । অথচ কতভাবেই না টাকা উড়াচ্ছেন তারা ।বিন্তি যা পায় তা দিয়ে খাবার কিনে মাকে দেয় আর ও খায় । অবশ্য ওর মা এতই অসুস্থ যে বলতে গেলে কিছুই খেতে পারেনা ।
সন্ধ্যা হয়া যাচ্ছে । আরো জোরে পা চালায় বিন্তি । লক্ষ্য কিছুদূরের একটা ভাঙ্গা বস্তি । যেখানে ওর মা ওর জন্য অপেক্ষা করে আছেন । বিন্তির হাতে অল্প কয়েকটা টাকা । কত টাকা ও গুনে দেখেনি । বাড়িতে যাওয়ার আগে মার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেতে হবে ।
গলিটা বেশ অন্ধকার হয়ে আসছে । ও ভীষণ ক্লান্ত । পা আর চলতে চাইছে না । হঠাৎ ও দেখতে পেল তিনজন গুন্ডামত লোক । ভয় পেয়ে গেল ও । ওরা কি ওর এই সামান্য ক’টা টাকা কেড়ে নিয়ে যাবে? তবে তো ওর অসুস্থ মায়ের আজ না খেয়ে থাকতে হবে । লোক তিনটির পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছিল বিন্তি । কিন্তু দু’পাশ থেকে ওর দু’হাত ধরে ফেলল লোকগুলো । বিন্তি চেচিয়ে উঠল, “আমার টাকা নিও না । আমার মার খুব অসুখ ।”
কিন্তু শুনল না ওরা । ওর হাত থেকে কেড়ে নিল টাকাগুলো । একজন আর দু’জনকে চুপিচুপি কিছু একটা বলল । তারপর ওরা টেনে নিয়ে লাগলো ওকে ।
“আমারে কই নেন ? আমি মার কাছে যামু ।” বলে চেচিয়ে উঠল বিন্তি ।
“মায়ের কাছে যাবি যাইস । অহন আমাগো লগে ল” বলল লোক তিনটির একজন ।
বিন্তি এবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো । একজন ওর মুখ চেপে ধরে ।
লোকগুলো ওকে একটি ঘরে নিয়ে গেল । তারপর তিনটি পশু ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ওর দেহের উপর ।পশুদের দেহের নিচে পিষ্ঠ হতে হতে জ্ঞান হারালো বিন্তি ।
যখন ওর জ্ঞান ফিরল তখন সকাল হয়ে গেছে । ও একটা রাস্তার পাশে পড়ে আছে । চারদিক চেয়ে দেখল ও । ওর চারিদিকে অনেক মানুষ । ওর নড়াচড়া দেখে কেউ কেউ বলল , “একি বেঁচে আছে মেয়েটা ?”
উঠে বসতে চাইল ও । পারলোনা । সারাগায়ে অসম্ভব ব্যাথা । গায়ের ছেড়া জামাটা রক্তে লাল হয়ে গেছে ।
একি ওর কি হয়েছিল ? ওকি গাড়ির নিচে পড়ছিল ? মনে করতে চাইছিল ও । কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না । মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে । হঠাৎ আবছা আবছা কিছু মনে পড়তে লাগল । কাল রাতে তিনটা পশু ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল । তারপর পশু জবাই করার মত জাপটে ধরল ওকে । তিনটি পশু ওর সারাদেহে বিচরণ করছিল । তারপর কি হল ? এখানেই বা এল কি করে কিছুই মনে নেই বিন্তির । হঠাৎ ওর মনে পড়ে মায়ের কথা । এক ঝঁটকায় উঠে বসে ও । তারপর অসহ্য ব্যাথা নিয়েই উঠে দাড়ালো ও । ভীড় ঠেলে দৌড়াতে লাগল । দৌড়াতে পারছে না ও । ভীষণ ব্যাথায় সারা শরীর ভেঙ্গে পড়তে চাইছে । কয়েকবার লুটিয়ে পড়ল মাটিতে । তারপরও দৌড়াতে লাগল ও ।
একটা ভাঙ্গা বস্তির সামনে এসে থামলো ও । “মা মা” বলে চিৎকার করতে করতে বস্তির মধ্যে ঢুকে পড়লো । ওর মা তখনো শুয়ে আছে । কোন সাড়াশব্দ নেই । বিন্তি আরো কয়েকবার ডাকল ওর মাকে । একসময় ওর মার গা ধরে ঝাঁকি দেয় । চোখ মেলেনা ওর মা । বুঝিবা আর কোনদিন মেলবেও না । নিশ্চল-নিথর একটা দেহকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল বিন্তি ।
জীবনের দুই কূল হারিয়ে বিন্তি এখন কি করবে বুঝতে পারল না । রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাটছিল বিন্তি । ওদিক থেকে একটা ট্রেন আসছে । হঠাৎ সকল যন্ত্রনামুক্তির একটা পথ যেন চোখের সামনে দেখতে পেল বিন্তি । উঠে এল রেল লাইনের উপর । জীবন – মৃত্যুর দোলায় দুলতে দুলতে নিজের জীবনের কোন সার্থকতা খুজে পেলনা বিন্তি ।
পরদিন খবরের পাতার এক কোনায় ছোট্ট একটা খবর বেরুলো । হাজারো খবরের মাঝে এ খবরটি হয়তো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেল । আমাদের চোখের সামনে যে বিশাল পর্দা তা চিরদিনই আড়াল করে রাখে বিন্তির মত মেয়েদেরকে । বিন্তির মত কত ফুল যে ফোটার আগেই ঝড়ে পড়ে কে তার খবর রাখে ?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইদুর রহমান ১১/০৯/২০১৪
-
একনিষ্ঠ অনুগত ১১/০৯/২০১৪মনটা বেদনায় ভরে গেল। বিন্তিরা এভাবেই ঝরে যায়। আর আমাদের চোখের পর্দাও দিন দিন হয় ভারী।
-
ইমাম ১১/০৯/২০১৪দাদা লেখা তো জটিল হইছে। আমি মুগ্ধ। সালাম তোমায় সালাম তোমার লেখাকে।
-
শিমুল শুভ্র ১০/০৯/২০১৪প্রথম প্রকাশ আমার কাছে বেশ লাগলো
বেশ চমৎকার অনুভুতিময় ।
ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা।