www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি চাকরি প্রসঙ্গ

-
একটি চাকরির আশায় আদা জল খেয়ে লেগেছে উৎপল । অঘটনঘটনপটিয়সী বলে নাম থাকলেও চাকরির অগ্নিপরীক্ষায় ও এখনো সফল হতে পারেনি । এমন আটকপালে মানুষ কজন হয় ? অবশ্য চাকরি করলে এতদিনে হয়তো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যেতে পারত । কিন্তু সবখানেই বা হাতের কারবার । আগে অনেকের সাথে মানিকজোড় সম্পর্ক ছিল ওর । শনির দৃষ্টি পড়ায় সুখের পায়রারা কেউ এখন পাশে নেই । ষাড়ের গোবর হয়ে অচল পয়সার মত পথে বসে থাকতে পারে ও । কিন্তু চোখের পর্দা বলে কথা আছে না ? চক্ষুলজ্জাওতো থাকা উচিত ।হাতটানে হাত পাকিয়ে এতদিন হয়তো ও টাকার কুমির হয়ে যেতে পারত । কিন্তু ও যেই তালপাতার সেপাই ধরা পড়লে উত্তম-মাধ্যমের চোটে অক্কা পেয়েও যেতে পারে । তাছাড়া আলগা লোককে কেনা ঘৃণা করে ? আগুন নিয়ে খেলাও ঠিক নয় ।
এই মুহূর্তে একটি চাকরি পেলে যেন অকূলে কূল পায় ও । চাকরিই অন্ধের যষ্টি । অপরের গলগ্রহ হয়ে আর কদিন ? কিন্তু চাকরির কর্তারা সব একচোখা । উড়ো চিঠি পেয়ে উলুবনে মুক্তা ছড়িয়ে দেন । ফলে রাঘব বোয়ালদেরই উন্নতি হচ্ছে । এসব জগাখিচুড়ি আর আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে হাজির হল উৎপল । চারদিক অসংখ্য লোকের মেলা যেন হরিঘোষের গোয়াল ।এত লোকের ভীড়ে কার যে একাদশে বৃহস্পতি লেগে যায় তা কে জানে ? চাকরি তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয় । ছঁকড়া নঁকড়া জিনিষ হলে এত লোক ভীড় জমাতো না । আজকালকার দিনে চাকরি তো একেবারে বাঘের দুধ ।
ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রথম প্রশ্নটা শুনে উৎপল যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখল ।সাত-জন্মেও ও এমন সাত সতের প্রশ্ন শোনেনি । অন্ধকারে হাতড়ে ও অন্ধকারে ঢিল মারল । এবারও বুঝি মাঠে মারা গেল উৎপল । ও কেমন বুদ্ধির ঢেকি তা বুঝি ইন্টারভিউ বোর্ড বুঝল । এবার যেন মেঘ না চাইতেই জল পেল উৎপল । প্রশ্নের উত্তরটা ওর নখদর্পণে ছিল ।প্রশ্নটার চুলচেরা বিচার করে দিল ও । পালের গোদার সবকটা প্রশ্নের উত্তরও ভালভাবে দিল ।তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই । ওস্তাদের মার তো শেষ রাতে । যাই হোক তালগাছের শেষ তিনহাত ও ভালভাবেই পার হল । ইন্টারভিউ শেষে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল ওর ।
বাশবনে তো শেয়াল রাজা । কিন্তু এখানে হাজারো মানুষ এসেছে ধনুকভাঙ্গা পণ নিয়ে । সবাইকে টেক্কা দিয়ে কার যে কপাল ফেরে তা কে জানে ? ভাগ্যবানের বোঝা তো ভগবানে বয় ।
যাদের কাঁচা পয়সা আছে তারা বড় গাছে কাছি বেধে চোখবুজে পার হয়ে যাবে ।উৎপলের মত কেওকেটাদের আশা ভেঙ্গে যাবে তাসের ঘরের মত । কপালে নেইকো ঘি ঠকঠকালে হবে কি? আবার কেচে গন্ডুস করতে হবে ।অপেক্ষা করে থাকতে হবে তীর্থের কাকের মত । সবে তো কলির সন্ধ্যা । দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়?
গদাই লস্করি চালে যখন ইন্টারভিউর রেজাল্ট বেরুল তখন ওর বাড়া ভাতে ছাই পড়ল । ও দন্তস্ফুট করল কেষ্টবিষ্টুদের কলকাঠি নাড়ানোর ফলেই এমনটি হয়েছে ।
না চাকরির পিছনে ঘুরে ভূতের বেগার খেটে লাভ নেই । হাল ছেড়ে দেয় উৎপল । ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি । তার চেয়ে বরং নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দুধের সাদ ঘোলে মেটানো যাক ।তাতে নিজের পাঠার লেজে কাটলেও কেউ অনধিকার চর্চা করতে পারবে না ।
লাখ কথার এক কথা নুন আনতে যার পান্তা ফুরায় চাকরি তো তার জন্য বিশ বাও জলে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লার ছোট ভাই.............
    • ১৩/০৯/২০১৪
      ধন্যবাদ ।
      • ১৩/০৯/২০১৪
        এত বাড়িয়ে না বললেও হত ।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ১০/০৯/২০১৪
    বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার বেশ নজরে পড়ার মতো। প্রায় প্রতিটি বাক্যেই একটি করে আছে। এটাই হয়ত রচনার মূল আকর্ষণ।

    খুব সুন্দর লিখেছেন।
    • ১০/০৯/২০১৪
      হ্যা ঠিকই বলেছেন বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচন প্রতিটি লাইনেই অন্তত একটি করে আছে ।
      ধন্যবাদ ।
  • সুজন সারথি ০৯/০৯/২০১৪
    চাকরি!!!!!!দারুন!!!!!!!!!!!!
  • তারেক নেওয়াজ ০৯/০৯/২০১৪
    ধন্যবাদ ভাই
  • বাহ বেশ ভাল লেখনী।
  • শিমুল শুভ্র ০৯/০৯/২০১৪
    ভালো লেখা প্রকাশ করে দিলাম
    আসরে সুস্বাগতম
    প্রথম প্রকাশ বেশ লাগলো ।
    • ০৯/০৯/২০১৪
      ধন্যবাদ দাদা ।
      এটা আমার প্রথম না দ্বিতীয় লেখা ।
 
Quantcast