www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মৃত সসার

-
গুলিটা ঠিক মাথা বরাবর লেগেছিল ।সুতরাং তার বাঁচার সম্ভাবনা কম ।তারপরও আমরা তাকে ডাক্তার গিলবার্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম । ডাক্তার গিলবার্টতো চমকে উঠলেন । বললেন,

‘এটি কি?’

আমরা গিলবার্টকে অনুরোধ করলাম তিনি যেন ব্যাপারটা কারো কাছে না বলেন ।তিনি কিছুক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, ‘যান্ত্রিকভাবে এর নারী-নক্ষত্র কিছুই ধরা পরছে না । তবে এমনিতে মনে হচ্ছে ডেড’ ।

আমি নিকব রচি । ছোটবেলায় দাদুর হাতেই মহাকাশ সম্পর্কে আমার শিক্ষার সূচনা হয় । দাদু টেলিস্কোপ দিয়ে রাতের বেলা আকাশ দেখিয়ে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন । টেলিস্কোপ দিয়ে দূর আকাশের নক্ষত্র আর তারাগুলো দেখে আমি কেমন যেন শিহরিত হয়ে উঠি । প্রবল আকর্ষণ জমে আমার এসবের প্রতি । টেলিস্কোপ দিয়ে তারাগুলো একে একে পর্যবেক্ষণ করতাম । সেই থেকে আমার ধ্যান-ধারণা, সাধনা সবকিছু মহাকাশকে কেন্দ্র করে । একসময় মহাকাশকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণায় নেমে পড়ি । মাঝে মাঝে এ সম্পর্কে পত্রিকায় দু’একটা প্রবন্ধও প্রকাশিত হতে লাগল । বিজ্ঞানী মহলে মোটামুটি পরিচিত হয়ে গেলাম ।

রসি তারারুও আমার মত মহাকাশ পাগল একজন বিজ্ঞানী । ওর বাবাও একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী ছিল । বাবার পথ ধরেই ও এ পথে আসে । আমার দু’জন মিলে মহাকাশে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি । এর মাধ্যমে আমরা নতুন অনেক কিছু জানতে পেরেছি যা আমাদের নতুন উদ্যমে কাজ করার উৎসাহ যুগিয়েছে । আবার অনেক সময় অনেক ভয়ানক সমস্যার মখোমুখিও হতে হয়েছে । একবারতো মঙ্গলে গিয়ে বিকল হয়ে যায় আমাদের স্পেসশিপটি । তারপর সেখানেই মেরামত করে কোনরকম পৃথিবীতে পৌছাই ।তার আগেও একবার এক গ্রহের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওই গ্রহটা আমাদের স্পেসশিপটাকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করছিল । তাড়াতাড়ি স্পেসশিপের গতি বাড়িয়ে তবেই রক্ষা । এরপর নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে পর্যবেক্ষন করতে থাকি ওই গ্রহটাকে । গ্রহটা সম্পর্কে ভাসাভাসা কিছু জানতে পারলাম । কিন্তু কাছাকাছি না গিয়ে কি আর এর সম্পর্কে ভালকিছু জানা যায়? তাই ভাবলাম এমন একটি স্পেসশিপ তৈরি করতে হবে যা ওই গ্রহ দ্বারা আকর্ষিত হবে না ।কিন্তু কোন কোন পদার্থ দ্বারা আকর্ষিত হবে আর কোন কোন পদার্থ দ্বারা হবেনা এই নিয়ে গবেষণা করতেই চলে গেল কয়েকটা দিন । তারপর আমরা নতুন স্পেসশিপ তৈরির কাজে লেগে গেলাম । আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফসল X37RN. যা আলোর চেয়ে বেশি দ্রুতগামী আর ফুয়েল রিসাইক্লিং প্রযুক্তি ও kinetic energy ব্যাবহারের ফলে জ্বালানির প্রয়োজনও হয় কম । ইঞ্জিল বিকল হলে চারটি alternative way আছে । কোন অংশ বিকল হলে এটি সিগন্যাল দিবে এবং automatically অন্য বিকল্প যন্ত্রাংশগুলো কাজ করবে । X37RN দ্বারা আমাদের প্রথম অভিযান ছিল চুম্বক গ্রহে । এ গ্রহ সম্পর্কে আমাদের অবাক অবাক তথ্য চমকে দেয় পৃথিবীবাসীদের ।

বর্তমান বিজ্ঞান বেশ পরিপূর্ণ । গত কয়েক শতক ধরে বিজ্ঞানীদের প্রধান ধ্যান-ধারনাই ছিল মহাকাশে কোন প্রানীর অস্তিত্ব আবিষ্কার । বিজ্ঞানী অরি ইথার সারাজীবন গবেষণা করে ক্ষান্ত হয়ে ঘোষনা দিয়ে দিলেন, মহাবিশ্বে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন গ্রহে প্রাণীর অস্তিত্ব শুধু অসম্ভবই নয় হাস্যকরও বটে । কিন্তু মাঝে মাঝেই আকাশে উড়তে দেখা যায় প্রাণীসদৃশ বস্তুকে । বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই যাকে সসার নামে অভিহিত করেছেন । সসারের আবির্ভাব অরি ইথারের মতবাদের সত্যতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের সৃষ্টির করে । অরি ইথার সসার নিয়ে যে মতবাদ দেন তা হল, সসার আসলে কোন প্রানী নয় । সূর্যের মত তেজষ্ক্রিয় বস্তু হতে সৃষ্ট এক প্রকার দৃশ্যমান গ্যাসমিশ্রন যা শূন্যে খুব দ্রুত চলাচল করে কিন্তু বাতাসের সংস্পর্শে অল্প সময়েই এগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।

সসার জিনিসটাও এরকম, হঠাৎ করে শূ্ন্যে দেখা গেল কয়েকটি সসার । কিন্তু পিছু লাগতেই কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে যায় । তাই অনেকেই বিজ্ঞানী অরি ইথারের মতবাদকে সমর্থন করে । কিন্তু অরি ইথারের মতবাদ নিতান্তই অনুমান নির্ভর । এর কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই ।তেজষ্ক্রিয় বস্তু থেকে সৃষ্ট গ্যাস মিশ্রন কি করে বস্তুর আকার ধারন করে তা নিয়ে নানা বিজ্ঞানী মহলে সমালোচনার ঝড় উঠে । সূর্যকে নিরীক্ষণ করে দেখা গেছে সূর্য হতে এমন কোন তেজষ্ক্রিয় গ্যাস মিশ্রন বের হবার কোন সম্ভাবনাই নেই । আর সূ্র্যের মত তেজষ্ক্রিয় আর কি বস্তু আছে তাও বিজ্ঞানী অরি ইথার স্পষ্ট করে বলতে পারেননি । সুতরাং অরি ইথারের মতবাদ কে হাস্যকর যুক্তি ছাড়া আর কি বলা যায় ? অনেক বিজ্ঞানীদের মতো আমি আর রসি তারারুও অরি ইথারের মতবাদের ঘোর বিরোধী । আমরা দুজন নেমে পরি অরি ইথারের মতবাদকে মিথ্যা প্রমান করার জন্য । X37RN নিয়ে তেজষ্ক্রিয় কোন গ্রহের সন্ধানে নেমে পড়ি । একটার পর একটা অভিযান চলতে থাকে আমাদের । শেষ পর্যন্ত সূর্য থেকে 9.5×10ˆ824 মাইল দূরে খুঁজে পাই সূর্য অপেক্ষা প্রায় পাঁচগুন তেজষ্ক্রিয় একটা নক্ষত্র । আমরা এর নাম দেই রসর । রসর নিয়ে আমাদের গবেষণা চলতে থাকে অবিরত ।খুব সূক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষন করতে থাকি একে । রসর সম্পর্কে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হল এটার একপৃষ্ঠ যেমন তেজষ্ক্রিয় অন্যপৃষ্ঠ তেমনি নিষ্ক্রিয় , নিষ্প্রভ । এটার আকৃতি একটা থালার মত । আর এটা খুব দ্রুত ঘুরছে । এই নিয়ে তো ভীষণ এক ধাঁধাঁয় পড়ে গিয়েছিলাম আমরা । প্রথম দিন আমরা রসরের কাছাকাছি ছিলাম খুব কম সময়ই । ফলে ওটার ঘূ্র্ণন আমাদের কাছে পরিলক্ষিত হলেও ওটার অন্যপৃষ্ঠ সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না । পরে যেদিন যাই সেদিন রসরকে সেখানে না দেখে অবাক হয়ে গেলাম । রসরের জায়গায় নিষ্প্রভ একটা তারা । তবে কি আমরা ভুল পথে চলে এলাম ? নাকি রসরই হঠাৎ নিষ্প্রভ হয়ে গেল ।অবশেষে রসর ঘুরতে ঘুরতে যখন তেজষ্ক্রিয় পৃষ্ঠ দৃশ্যমান হল তখন আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম । আরো অবাক হলাম যখন দেখলাম রসর থেকে সত্যি সত্যিই গ্যাসের মিশ্রণ দ্রুতগতিতে একদিক হারিয়ে যাচ্ছে । তবে তা সসারের আকৃতির নিশ্চয়ই নয় । গ্যাসমিশ্রন নিয়ে আমরা সুক্ষ্ণ গবেষণা চালিয়ে যেতে লাগলাম । পিছু লাগলাম তেজস্ক্রিয় গ্যাস কুন্ডলীর । কিন্তু কথা হল এই গ্যাস কুন্ডলী কি আসলেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে পৌছায় ? তাহলেতো পৃথিবীতে অহরহই সসারদের দেখা পাওয়া যেত । নাকি পৃথিবী ছাড়াও অন্য কোথায়ও বায়ুমন্ডল আছে । গ্যাসকুন্ডলীর আচরণ বেশ রহস্যজনক মনে হল । পিছু নিয়েও এগুলো হঠাৎ যে কোথায় মিলিয়ে যায় তার কোন হদিস পেলাম না । তবে এ ক’দিন পৃথিবীর আকাশে কোন সসারের দেখা পাওয়া যায়নি । তার মানে গ্যাসকুন্ডলী পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আসে নি । হয়ত শূণ্যেই নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবে ।

গ্যাসকুন্ডলীর পিছনে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ দেখলাম গামলা সদৃশ তিনটি বস্তু । তিনটিরই পিছনের ভাগ জাজ্বল্যেমান । আরে এগুলোইতো সসার । আমরা ওদের অনুসরণ করতে থাকি । কিন্তু গ্যাসকুন্ডলীর মত ওরাও হঠাৎ কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে যায় ।

আরও তিনদিন পর আবারও দেখা মেলে দুটি সসারের । আমি চেচিয়ে বলি, ‘গুলি কর রসি’ ।

রসি গুলি করে । কিন্তু কাজ হয়না । গুলি করার অস্ত্র সবগুলি নষ্ট ।

রসি বলে, “এমনতো হবার কথা নয় সব তো ঠিকই ছিল ।”

আমিও অবাক হয়ে যাই । সসার দুটি ততক্ষণে শূণ্যে মিলিয়ে যায় । এবার আমরা নিশ্চিত যে গ্যাসকুন্ডলীই আসলে সসার নয় । তবে সসারগ্রহ হয়তো কাছাকাছিই আছে । তাই আমরা রসর ছেড়ে নেমে পড়ি সসারগ্রহের খোঁজে । ভেবেছিলাম রসরের আশি লক্ষ মাইলের মধ্যে সসারগ্রহের সন্ধান হয়তো পাব । কিন্তু পেলাম না । তবে একদিন আরো দুটি সসারের দেখা পেলাম ।

এবারের অস্ত্রগুলো বিশেষভাবে তৈরি ছিল । আর যাতে সসাররা ওদের আশি মাইল সামনে গুলি করলে ওদের গায়ে লাগবে , যদি ওরা একেবেকে না যায় । আর সত্যিকার অর্থে ওরা একেবেকেই যাচ্ছে । ফলে গুলি লাগার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ । কিন্তু আমাদের অটোমেটিক R-570 খুবই শক্তিশালী । প্রতিটি থেকে একবারে ৪৯টি গুলি বের হয় । আমাদের চারটি R-570 সেট করা আছে । আমি রাডার ‘রোমেক্স’ দ্বারা ওদের গতিবিধি লক্ষ্য করছিলাম । স্ক্রীনে আমাদের সাথে ওদের অ্যাঙ্গল দেখছিলাম । আমার সংকেতের অপেক্ষায় রসি । যেকোন সময় অটোমেটিকের বোতামে চাপ পড়বে ওর আঙ্গুলের ।

ওয়ান । টু । থ্রি ।

মহাশূণ্য কাপিয়ে বিকট এক চিৎকার ।

“কংগ্রাচুলেট রসি ইউ আর সাকসেসফুল ।”

“দুটোই কি কুপোকাত ?”

“ না দুটো নয় একটি । অন্যটি পালিয়েছে ।”

“ওই একটিই অরি ইথারের মতবাদ মিথ্যা প্রমান করার জন্য যথেষ্ট ।”

“লোকটার জন্য দুঃখ হয় , তার গ্যাসকুন্ডলী থিওরি এত তাড়াতড়ি মিছে হয়ে যাবে । আহ বেচারা ।”

“এবার আমাদের AHCAS (Award for highest contribution and achievement in science) পাওয়া কে ঠেকায় ?”

“গত দু’বছর ধরে তো অরি ইথারই পেয়ে যাচ্ছে ।”

“এবার আর তার গ্যাসকুন্ডলী থিওরি আমাদের সসারের কাছে বিকোবে না ।”

হাসতে গিয়েও হাসলাম না আমি । পাশে রাখা অজ্ঞান সসারটির জ্ঞান না আবার সে শব্দে ফিরে আসে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭১০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এতটা সায়েন্টিফিক কেমনে? রিয়েলি ভেরি নাইস.............
  • অসাধারন লাগল।
  • শূন্য ০৮/০৯/২০১৪
    সায়েন্স ফিকশান...... সব সময় অন্যরকম।
  • আবু সাহেদ সরকার ০৮/০৯/২০১৪
    মুগ্ধকরা লেখা। দারুন।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ০৮/০৯/২০১৪
    ফিকশন টি কিন্তু দারুণ লিখেছেন।। মনে হচ্ছে এটি পরিপূর্ণ লেখার একটি অংশ।
  • বিজয় রায় ০৮/০৯/২০১৪
    বেশ ভাল লাগল ।। scienc সম্পর্কিত বিষয়টি
  • শিমুল শুভ্র ০৭/০৯/২০১৪
    বেশ চমৎকার তথ্য মূলক প্রবন্ধ । মুগ্ধ হলাম ।
 
Quantcast