সূর্যের রোশনীতে প্রেমের জয়
সূর্যের রোশনীতে প্রেমের জয়
মোঃ রায়হান কাজী
--------------------------
কিছু লিখতে গেলেই যদি ভুল ধরো।সাথে বলতে থাক এমন গল্প হয় নাকি। তবে জেনে রাখতে পারো আমি কিছুতেই পিছু হটতে রাজি নয়। যদি লিখার প্রসঙ্গে আসো, তাহলে দুনিয়ার দৃশ্যপটে নিয়ে প্রতিনিয়ত কত কি যে ঘটে? সবই কী আর জানি নাকি? তাহলে চাইলেই এই উপাখ্যান পড়তে পারো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এতে করে তোমার লাভ না হলেও ক্ষতি হবে না। এই কাহিনিতে প্রধান ভূমিকায় জয় ও রোশনী।
জয়। তোমায় কেন এতো আমার কাছে ভালো লাগে? আমি তা বুঝতে পারছি না।
সত্যি বলতে কী? ভালো লাগার বিষয়টা বুঝানো যায় না। কখনো কখনো প্রকাশ করতে চাইলেই প্রকাশ করা যায় না। উল্টো নানামুখী বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। তাই আমার মতে এই প্রশ্নটা পৃথিবীর কঠিন প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও প্রশ্নটি শুনতে নিছকই সাদাসিধা মনে হয়।
রোশনী। তোমার বেপরোয়া মতিগতি আমার কাছে ভালো ঠেকছে না। এমন এলোমেলো অগোছালো ছেলেদেরকে মেয়েরা দেখতে পারে না। এসব বিষয়ে বলতে গেলে সংক্ষেপে ব্যক্তিত্বের সার্টিফিকেটের সাথে তুলনা চলে। অথাৎ কেউ মানুষ বলে পরিচয় দিলে হয় না। তারমধ্যে কতটুকু মনুষ্যত্ববোধ আছে সেটাই দেখার বিষয়।
জয়। প্রতিউত্তরে বললো জানো না, রাশেদ কথায় কথায় কাজের ফাঁকে হুলস্থুল বাঁধিয়ে ফেলে। এতে করে সকলের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে৷ কিছুদিন আগে আমি রাশেদকে একটা কাজের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেও সে গন্ডগোল পাকিয়ে তার মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়ে এসেছে। তারপর আবার শুনলাম নিজেই নাকি এগুলোর কারণ খুঁজে বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা শুনে আমি খানিকটা সময় ধরে হা করে রইলাম। বলতে লাগলাম এখন রাশেদের উপর কেন জানি ভক্তি হচ্ছে।
রোশনী। আমার কথা শুনে কারণটা জানতে চাইলো।
জয়।কাছের মানুষ যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ভ্রষ্ট করে তাকি তুমি জানো। অথচ আমরা বোকার মতো বিশ্বস্ত ভেবে নিশ্চিন্ত হয়ে তাদের কাছে সবকথা বলে ফেলি। ফলাফল পাওয়া যায় কিছুক্ষণ পড়ে একই কথা অন্য কেউ এসে বললে।
রোশনী। তাহলে একটা উপায়ন্ত বা উদাহরণ দেখাও দেখি।
জয়। যেমন তুমি কখনো কাছে থাকো, কখনো আবার আমায় রেখে আড়ালে লুকাও। নিশ্চিন্ত মনে যে বাসায় গিয়ে ঘুমবো তার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমার কাছে বিষয়গুলো নিত্যি নূতন বলে মনে হয়।
রোশনী। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো। আমার জন্য তোর ঘুমের সমস্যা হবে কেন?
জয়। আমি শুধু বললাম তুই বুঝবি না। আমিও এসবের উত্তর কখনো খুঁজে পাবো না। সাথে আক্ষেপের নিঃশ্বাসটা দীর্ঘয়াতি করি। সেই সাথে চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে থাকে। তাড়াতাড়ি করে চোখের কোণে ময়লা জমার অজুহাত দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।
রোশনী। বিষয়টা বুঝতে পেরে কিছুটা সময় চুপচাপ থেকে নিজেও কেঁদে দিলো।
জয়। তুই কেন কাঁদছিস?
রেশনী। বুঝিবি না।
জয়। মানে কী? তারপর বিষয়টা বুঝতে পেরে হাত দিয়ে অভয় দিয়ে সেদিনের মতো চুপচাপ চলে গেলাম।
রোশনী। দুই তিনদিন পরে, হঠাৎ সামনে এসে বলতে শুরু করলো তোর কর্মকান্ডগুলো মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
জয়। আমি আবার কী করলাম?
রোশনী। কেন জানোনা বুঝি? নাকি সব বুঝেও নেকামি করো। এই যে সারাক্ষণ তুই আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকিস। আচ্ছা সত্যি করে বলোতো তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?
জয়। তুই থেকে তুমি হয়ে গেলো যে, কিছু চলতেছে নাকি।
রোশনী। কেন তুই বুঝিস না?
জয়। আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হলো না।তখন চারদিকের সবকিছু কেন জানি ঝাপসা মনে হচ্ছিল? একপর্যায়ে রোশনীর চোখ দিয়ে ঝরঝরিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
রোশনী। আচ্ছা তোর, সেই পুরনো দিনের কথা মনে আসে।
জয়। কোন কথার কথা বলছিস! আমার না ঠিক মনে পড়ছে না।
রোশনী। সেই যে আমি তোমার জন্য গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তুমি বোকার মতো চুপ করে বসে থাকতে।
জয়। হুমমম একদিনতো ভার্সিটির পরীক্ষার সময় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি সব দেখেও না দেখার চেষ্টা করছিলাম। তাছাড়া তুমি কাছে আসতেই আমি কেমন জানি হয়ে পড়ি?
রোশনী। যৌবনের প্রথম ধাপটিতে পা দিয়ে জগত সংসারটাকে এমনভাবে দেখতে হয় যে, শুধু নিজের দুটি চোখে একাকি সবটুকু মাধুর্য উপভোগ করতে পারা যায় না। তার জন্য মনের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বেলে কেউ একজনকে খুব করে চাই। যাকে বিশ্বাস করা যায়, ভলোবাসা যায়, নিজের মতো করে রাখা যায়। অবশ্য তোমাকে বলে কাজের কাজ কিছু হবে বলে তো মনে হয় না।
জয়। এসব কী বলো? স্বার্থকতা তখনি আসে যখন মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রিয় মানুষটার কানে পৌঁছে। একথা বলা শুরু করতেই রোশনীর চোখে জল চলে আসে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে আবার?
রোশনী। কই কিছু নাতো।
জয়। তাহলে কাঁদছ কেন?
রেশনী। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলে উঠলো। আজকে আমি কিছু বলতে পারবোনা। যা বলার তুমি আমাকে বলবা।
জয়। সবকিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কী বলবো বুঝতে পারছি না?
রোশনী। অনেকদিন আগের কথা, তুমি সেদিন নদীর কাছে বসে খালি গলায় গান গাইতেছিলে।
জয়। যাও আমি আবার গান গাইতে পারি বুঝি।
রোশনী। তখনতো পাড়তে। সেদিনের পর থেকে তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম। তোমার দর্শণ পাওয়ার পর থেকে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তোমার জন্য পথ চাওয়া আর কল্পনাতে প্রশান্তি খুঁজে পেতাম। আবার হঠাৎ করে তোমার সাথে আমার দেখা হলো কিন্তু কথা হলো না৷ আক্ষেপের আগুনে নিজেই ভিতরে ভিতরে পুড়তে ছিলাম। কেন জানি আবার তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে? তারপর অনেক দিন পাড় হয়ে গেছে তোমার দেখা পাওয়াটাই ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বলো পরিশেষে আমার কাছে কেনইবা ফিরে এলে!
জয়। কারণটা হচ্ছে তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে।
রোশনী। আচ্ছা, তুমি ঠিক কী বুঝাতে চাইছো শুনি? নাকি নতুন ধান্দা বাজি করতে আসছেন হুমমমম। বিষয়টা কী?
জয়। না, শুধু তোমাকে ভালোবাসতে এসেছি। অবশ্যই তুমি যদি চাও। কারণটা জোর করে কিছু হয় না।
রোশনী। আচমকা তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই বলে কাঁদতে লাগলো।
জয়। কাঁদছ কেন? আমি আছিতো,একথা বলে চোখের পানি হাত দিয়ে মুছতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমিও কিছু না ভেবে হাত দিয়ে আড়ষ্ট করে আপন করে নিলাম৷ আর বলতে লাগলাম পাগলি একটা।
রোশনী। চক্ষু আবার ভিজে গেল। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো তুমি আমাকে আবার ছেড়ে যাবে নাতো। আরে না, সবসময় তোমার কাছাকাছি থাকবো পাগলি একটা।
তারপর দুজন দুজনের চোখের দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে হচ্ছিল সময়টা বুঝি থমকে আছে। জয় হালকা কাশি দিয়ে বললো কী দেখছো?
রোশনী। তোমাকে দেখছি। আজব নাকি, আমাকে দেখার আবার কী আছে? ওসব তোমার বুঝে আর লাভ নেই।
জয়। তাই বুঝি। তো কারণটা কী জানতে পারি মিস? এমনিতেও মেয়েদের মন বুঝা অনেক কষ্টের।
রোশনী। হুমমম, কী বললি?
জয়। কয়, কিছু নাতো।
রোশনী। এখন বুঝতে পারলাম।
জয়। তাহলে নেকামি করলি কেন?
রোশনী। এমনি ভাল্লাগে। এই কথা বলে হাসতে লাগলো।
জয়। আমি অপলক দৃষ্টিতে রোশনীর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম মেয়েটা কিছুক্ষণ আগেও কাঁদতে ছিলো। কাঁদার সময় চেহারাটা যতটা না ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিলো। হাসির সময় ঠিক ততটাই রোমাঞ্চকর অনুভূতি শিহরিত হচ্ছিলো হৃদয়ে। এই ক্ষুদ্র হাসির মাঝে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব সুখ অন্তঃ নিহত আছে।
রোশনী। তখন বললো এমনভাবে কী দেখেছো?
জয়। তোমাকে দেখছি।
রোশনী। লজ্জা পেয়ে চোখগুলো আড়ালে লুকালো।
জয়। আমার রাজ্যটা ফাঁকাফাঁকা লাগছে।একটা রানির বদ্ধ অভাব মনে হচ্ছে।
রোশনী। তাহলে এখন কী করতে চাচ্ছো শুনি?
জয়। মানে তোমার মতো একটা রানি থাকলে আমার রাজ্যেটা পরিপূর্ণ হতো। এই আর কী?
রোশনী। কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বললো দেখ আমার বিবাহের প্রবৃত্তি নেই। কিন্তু তোমার যদি সত্যিই একজন সাথীর প্রয়োজন হয়ে থাকে তো,
জয়। তো কী?
রোশনী। তাহলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি।
জয়। হাঁ নিশ্চয় খুব মজা হবে। দুজনে সুখে দুঃখে একসাথে দিন কাটাবো। মনে মনে বলতে লাগলাম, পাগলিটাকে নিজের অজান্তেই বিবাহের কথা বলে দিলাম। এখনো তো নিজের দায়িত্বই নিতে শিখিনি। এর মধ্যে আবার রোশনীর দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রোশনী। এতো কী ভাবতেছ?
জয়। কই কিছু নাতো।
রোশনী। কী ভাবতেছিলে সত্যি করে বলো? তা না হলে খবর আছে।
জয়। আচ্ছা তুমি আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তো।
রোশনী। হুম, খুব পারবো। তুমি আমাকে বিবাহ কর তোমার মুখ চেয়ে আমার সব সইবে।
সূর্যের রোশনী ছড়িয়ে প্রেমের জয় অবশেষে আসছে জীবন রাঙ্গাতে।
তারপর তাদের জীবন চলছে দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ ছাড়িয়ে.........!
মোঃ রায়হান কাজী
--------------------------
কিছু লিখতে গেলেই যদি ভুল ধরো।সাথে বলতে থাক এমন গল্প হয় নাকি। তবে জেনে রাখতে পারো আমি কিছুতেই পিছু হটতে রাজি নয়। যদি লিখার প্রসঙ্গে আসো, তাহলে দুনিয়ার দৃশ্যপটে নিয়ে প্রতিনিয়ত কত কি যে ঘটে? সবই কী আর জানি নাকি? তাহলে চাইলেই এই উপাখ্যান পড়তে পারো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এতে করে তোমার লাভ না হলেও ক্ষতি হবে না। এই কাহিনিতে প্রধান ভূমিকায় জয় ও রোশনী।
জয়। তোমায় কেন এতো আমার কাছে ভালো লাগে? আমি তা বুঝতে পারছি না।
সত্যি বলতে কী? ভালো লাগার বিষয়টা বুঝানো যায় না। কখনো কখনো প্রকাশ করতে চাইলেই প্রকাশ করা যায় না। উল্টো নানামুখী বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। তাই আমার মতে এই প্রশ্নটা পৃথিবীর কঠিন প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও প্রশ্নটি শুনতে নিছকই সাদাসিধা মনে হয়।
রোশনী। তোমার বেপরোয়া মতিগতি আমার কাছে ভালো ঠেকছে না। এমন এলোমেলো অগোছালো ছেলেদেরকে মেয়েরা দেখতে পারে না। এসব বিষয়ে বলতে গেলে সংক্ষেপে ব্যক্তিত্বের সার্টিফিকেটের সাথে তুলনা চলে। অথাৎ কেউ মানুষ বলে পরিচয় দিলে হয় না। তারমধ্যে কতটুকু মনুষ্যত্ববোধ আছে সেটাই দেখার বিষয়।
জয়। প্রতিউত্তরে বললো জানো না, রাশেদ কথায় কথায় কাজের ফাঁকে হুলস্থুল বাঁধিয়ে ফেলে। এতে করে সকলের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে৷ কিছুদিন আগে আমি রাশেদকে একটা কাজের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেও সে গন্ডগোল পাকিয়ে তার মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়ে এসেছে। তারপর আবার শুনলাম নিজেই নাকি এগুলোর কারণ খুঁজে বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা শুনে আমি খানিকটা সময় ধরে হা করে রইলাম। বলতে লাগলাম এখন রাশেদের উপর কেন জানি ভক্তি হচ্ছে।
রোশনী। আমার কথা শুনে কারণটা জানতে চাইলো।
জয়।কাছের মানুষ যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ভ্রষ্ট করে তাকি তুমি জানো। অথচ আমরা বোকার মতো বিশ্বস্ত ভেবে নিশ্চিন্ত হয়ে তাদের কাছে সবকথা বলে ফেলি। ফলাফল পাওয়া যায় কিছুক্ষণ পড়ে একই কথা অন্য কেউ এসে বললে।
রোশনী। তাহলে একটা উপায়ন্ত বা উদাহরণ দেখাও দেখি।
জয়। যেমন তুমি কখনো কাছে থাকো, কখনো আবার আমায় রেখে আড়ালে লুকাও। নিশ্চিন্ত মনে যে বাসায় গিয়ে ঘুমবো তার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমার কাছে বিষয়গুলো নিত্যি নূতন বলে মনে হয়।
রোশনী। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো। আমার জন্য তোর ঘুমের সমস্যা হবে কেন?
জয়। আমি শুধু বললাম তুই বুঝবি না। আমিও এসবের উত্তর কখনো খুঁজে পাবো না। সাথে আক্ষেপের নিঃশ্বাসটা দীর্ঘয়াতি করি। সেই সাথে চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে থাকে। তাড়াতাড়ি করে চোখের কোণে ময়লা জমার অজুহাত দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।
রোশনী। বিষয়টা বুঝতে পেরে কিছুটা সময় চুপচাপ থেকে নিজেও কেঁদে দিলো।
জয়। তুই কেন কাঁদছিস?
রেশনী। বুঝিবি না।
জয়। মানে কী? তারপর বিষয়টা বুঝতে পেরে হাত দিয়ে অভয় দিয়ে সেদিনের মতো চুপচাপ চলে গেলাম।
রোশনী। দুই তিনদিন পরে, হঠাৎ সামনে এসে বলতে শুরু করলো তোর কর্মকান্ডগুলো মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
জয়। আমি আবার কী করলাম?
রোশনী। কেন জানোনা বুঝি? নাকি সব বুঝেও নেকামি করো। এই যে সারাক্ষণ তুই আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকিস। আচ্ছা সত্যি করে বলোতো তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?
জয়। তুই থেকে তুমি হয়ে গেলো যে, কিছু চলতেছে নাকি।
রোশনী। কেন তুই বুঝিস না?
জয়। আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হলো না।তখন চারদিকের সবকিছু কেন জানি ঝাপসা মনে হচ্ছিল? একপর্যায়ে রোশনীর চোখ দিয়ে ঝরঝরিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
রোশনী। আচ্ছা তোর, সেই পুরনো দিনের কথা মনে আসে।
জয়। কোন কথার কথা বলছিস! আমার না ঠিক মনে পড়ছে না।
রোশনী। সেই যে আমি তোমার জন্য গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তুমি বোকার মতো চুপ করে বসে থাকতে।
জয়। হুমমম একদিনতো ভার্সিটির পরীক্ষার সময় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি সব দেখেও না দেখার চেষ্টা করছিলাম। তাছাড়া তুমি কাছে আসতেই আমি কেমন জানি হয়ে পড়ি?
রোশনী। যৌবনের প্রথম ধাপটিতে পা দিয়ে জগত সংসারটাকে এমনভাবে দেখতে হয় যে, শুধু নিজের দুটি চোখে একাকি সবটুকু মাধুর্য উপভোগ করতে পারা যায় না। তার জন্য মনের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বেলে কেউ একজনকে খুব করে চাই। যাকে বিশ্বাস করা যায়, ভলোবাসা যায়, নিজের মতো করে রাখা যায়। অবশ্য তোমাকে বলে কাজের কাজ কিছু হবে বলে তো মনে হয় না।
জয়। এসব কী বলো? স্বার্থকতা তখনি আসে যখন মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রিয় মানুষটার কানে পৌঁছে। একথা বলা শুরু করতেই রোশনীর চোখে জল চলে আসে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে আবার?
রোশনী। কই কিছু নাতো।
জয়। তাহলে কাঁদছ কেন?
রেশনী। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলে উঠলো। আজকে আমি কিছু বলতে পারবোনা। যা বলার তুমি আমাকে বলবা।
জয়। সবকিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কী বলবো বুঝতে পারছি না?
রোশনী। অনেকদিন আগের কথা, তুমি সেদিন নদীর কাছে বসে খালি গলায় গান গাইতেছিলে।
জয়। যাও আমি আবার গান গাইতে পারি বুঝি।
রোশনী। তখনতো পাড়তে। সেদিনের পর থেকে তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম। তোমার দর্শণ পাওয়ার পর থেকে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তোমার জন্য পথ চাওয়া আর কল্পনাতে প্রশান্তি খুঁজে পেতাম। আবার হঠাৎ করে তোমার সাথে আমার দেখা হলো কিন্তু কথা হলো না৷ আক্ষেপের আগুনে নিজেই ভিতরে ভিতরে পুড়তে ছিলাম। কেন জানি আবার তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে? তারপর অনেক দিন পাড় হয়ে গেছে তোমার দেখা পাওয়াটাই ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বলো পরিশেষে আমার কাছে কেনইবা ফিরে এলে!
জয়। কারণটা হচ্ছে তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে।
রোশনী। আচ্ছা, তুমি ঠিক কী বুঝাতে চাইছো শুনি? নাকি নতুন ধান্দা বাজি করতে আসছেন হুমমমম। বিষয়টা কী?
জয়। না, শুধু তোমাকে ভালোবাসতে এসেছি। অবশ্যই তুমি যদি চাও। কারণটা জোর করে কিছু হয় না।
রোশনী। আচমকা তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই বলে কাঁদতে লাগলো।
জয়। কাঁদছ কেন? আমি আছিতো,একথা বলে চোখের পানি হাত দিয়ে মুছতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমিও কিছু না ভেবে হাত দিয়ে আড়ষ্ট করে আপন করে নিলাম৷ আর বলতে লাগলাম পাগলি একটা।
রোশনী। চক্ষু আবার ভিজে গেল। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো তুমি আমাকে আবার ছেড়ে যাবে নাতো। আরে না, সবসময় তোমার কাছাকাছি থাকবো পাগলি একটা।
তারপর দুজন দুজনের চোখের দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে হচ্ছিল সময়টা বুঝি থমকে আছে। জয় হালকা কাশি দিয়ে বললো কী দেখছো?
রোশনী। তোমাকে দেখছি। আজব নাকি, আমাকে দেখার আবার কী আছে? ওসব তোমার বুঝে আর লাভ নেই।
জয়। তাই বুঝি। তো কারণটা কী জানতে পারি মিস? এমনিতেও মেয়েদের মন বুঝা অনেক কষ্টের।
রোশনী। হুমমম, কী বললি?
জয়। কয়, কিছু নাতো।
রোশনী। এখন বুঝতে পারলাম।
জয়। তাহলে নেকামি করলি কেন?
রোশনী। এমনি ভাল্লাগে। এই কথা বলে হাসতে লাগলো।
জয়। আমি অপলক দৃষ্টিতে রোশনীর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম মেয়েটা কিছুক্ষণ আগেও কাঁদতে ছিলো। কাঁদার সময় চেহারাটা যতটা না ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিলো। হাসির সময় ঠিক ততটাই রোমাঞ্চকর অনুভূতি শিহরিত হচ্ছিলো হৃদয়ে। এই ক্ষুদ্র হাসির মাঝে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব সুখ অন্তঃ নিহত আছে।
রোশনী। তখন বললো এমনভাবে কী দেখেছো?
জয়। তোমাকে দেখছি।
রোশনী। লজ্জা পেয়ে চোখগুলো আড়ালে লুকালো।
জয়। আমার রাজ্যটা ফাঁকাফাঁকা লাগছে।একটা রানির বদ্ধ অভাব মনে হচ্ছে।
রোশনী। তাহলে এখন কী করতে চাচ্ছো শুনি?
জয়। মানে তোমার মতো একটা রানি থাকলে আমার রাজ্যেটা পরিপূর্ণ হতো। এই আর কী?
রোশনী। কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বললো দেখ আমার বিবাহের প্রবৃত্তি নেই। কিন্তু তোমার যদি সত্যিই একজন সাথীর প্রয়োজন হয়ে থাকে তো,
জয়। তো কী?
রোশনী। তাহলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি।
জয়। হাঁ নিশ্চয় খুব মজা হবে। দুজনে সুখে দুঃখে একসাথে দিন কাটাবো। মনে মনে বলতে লাগলাম, পাগলিটাকে নিজের অজান্তেই বিবাহের কথা বলে দিলাম। এখনো তো নিজের দায়িত্বই নিতে শিখিনি। এর মধ্যে আবার রোশনীর দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রোশনী। এতো কী ভাবতেছ?
জয়। কই কিছু নাতো।
রোশনী। কী ভাবতেছিলে সত্যি করে বলো? তা না হলে খবর আছে।
জয়। আচ্ছা তুমি আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তো।
রোশনী। হুম, খুব পারবো। তুমি আমাকে বিবাহ কর তোমার মুখ চেয়ে আমার সব সইবে।
সূর্যের রোশনী ছড়িয়ে প্রেমের জয় অবশেষে আসছে জীবন রাঙ্গাতে।
তারপর তাদের জীবন চলছে দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ ছাড়িয়ে.........!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/০৩/২০২২ভাল লাগল।
-
মোঃ বুলবুল হোসেন ১৪/০৩/২০২২অপূর্ব
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৪/০৩/২০২২নিপুনতায় পূর্ণ অপূর্ব
-
ফয়জুল মহী ১৩/০৩/২০২২অনবদ্য সৃজন নিপুণ লেখনী