www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্পর্শকাতরতাই আলোকবর্ষণ বই রিভিউ

🔰 কবিতার বই রিভিউ

➡️ স্পর্শকাতরতাই আলোকবর্ষণ - কবি মোঃ রায়হান কাজী।

পাহাড়ের বুক চিঁড়ে ঝর্ণার তীব্র ধারাতে,
বিমুগ্ধ আমি অপরূপ জলরাশীর ছোঁয়াতে।
গাছে গাছে ফুল ফুটে সৌরভ ছড়াতে,
আমি ওতো পাগল প্রায় সুগন্ধির আভাতে।

কবিতা হচ্ছে ছন্দ, দোলা এবং স্পন্দন নিয়ে রচিত একগুচ্ছ শব্দমালা। অথবা, কবিতা বা পদ্য হচ্ছে শব্দের ছন্দোময় বিন্যাস; যা একজন কবির আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি চিন্তাকে সংক্ষেপে এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে উদ্ভাসিত করে আর তা শব্দের ছন্দায়িত ব্যবহারে সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে।

কবিতা। তিনটি অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ অথচ এর বিশালতা আর গভীরতা অকল্পনীয়। হ্যাঁ সত্যিকার অর্থেই অকল্পনীয়। জীবনের প্রত্যেকটি উপাদান আর উপাত্ত নিয়েই কবিতা। একটি জীবনের আলোকে সামগ্রিক জীবন নিয়ে লেখা হয় কবিতা। কবিতা হাসায়, কবিতা কাঁদায়। কবিতা আনন্দ দেয়, কবিতা বেদনা শেখায়। তাই একজন কবির কাছে তার কবিতা নিজের সন্তানের মতো, নিজের সহধর্মিণীর মতো যে তাকে ভালোবেসে পাশে থাকে দুঃখের সময়েও।

২০২২ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সপ্তক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হবে কবি মোঃ রায়হান কাজীর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "স্পর্শকাতরতাই আলোকবর্ষণ" শিরোনামে। বইটির প্রচ্ছদ করেছে প্রবাল দে। প্রচ্ছদ বেশ মানানসই হয়েছে কাব্যগ্রন্থের কাব্যগুলো অনুসারে।

খুবই সাদামাটা না আবার খুব বেশি ঝমকালো নয়; যতটুকু অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার ততটুকুই যেন। বইটির পেইজ, বাইন্ডিং বেশ স্ট্যান্ডার্ড মানের। আর যেহেতু কাব্যগ্রন্থ তাই হোয়াইট পেপারের ব্যবহার যেন বইটির আউটলুককে আরও পরিপূর্ণ করেছে।

অফুরন্ত ভালোবাসা তোমায় দিলাম,
আকাশে বাতাসে তা রটিয়ে দিলাম।
খুঁজে নিও শুভ্র ফুলের নির্যাসের মাঝে,
আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার ফেরা নিয়ে।

কবিতা এমন একটা ব্যাপার যেটা আসলে পড়ে, অনুভব করে অন্যকে ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর নয়। তবুও কিছু কথা জড়ো হয় যে কোন কাব্যগ্রন্থ পাঠ শেষেই। এই বইটি পাঠ শেষেও তেমন কিছু কথাই জড়ো হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থে অর্ধশতেকের বেশি কবিতা স্থান পেয়েছে। সবগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করলে এই পর্যোলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে আর পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। তাই যেসব কবিতা ভাবনার খোরাক যোগাতে সক্ষম হয়েছে সেগুলো নিয়েই বরং আলোচনা করা যাক।

কবিতা লিখেন কে? একজন কবি। পাঠকের মনের অজানা কথাগুলোই যেন ভেসে উঠে পঙক্তি হয়ে কবির কবিতার। পাঠক নিজের না বলা কথাগুলো গুচ্ছ আকারে লিপিবদ্ধ দেখে আনন্দে হয় আত্মহারা; ঐ দূর দিগন্তের নীলের মাঝে পরিব্যক্ত! সেই আক্ষেপটাই যেন কবিতায় তুলে ধরেছেন কবি। যেখানে তিনি বলেন –

ঐ দূর দিগন্ত নীলের মাঝে পরিব্যক্ত,
কুয়াশার চাদরের আবরণ আদিগন্ত।
ধূসর ছায়ায় হয়েছে মলিন নীলাভ্র,
গগনচুম্বী অবারিত শিহরণে ভূমিপ্রান্ত।

কবির আক্ষেপটাই যেন নীলের মাঝে পরিব্যক্ত ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে আকাঙ্ক্ষায় প্রতিফলিত হয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষায় যেন কবিকে প্ররোচিত করে বিশাল আকাশের রূপে শিহরণ জাগায় হৃদয়ে। তখন কবি বলেন –

স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড় বাড়ন্ত,
এই পথ চলাতে অভিলাষ ক্লান্ত।
সবুজ সজীবতায় আশ্বাসের স্পর্শে,
ইচ্ছেরা ডানা মেলে নীল অফুরন্ত।

কবি মানেই রোমান্টিক আর কবিতা মানেই রোমান্টিকতা। হোক না তা দ্রোহের কবিতাগুচ্ছ সেখানেও চুপিসারে রয়ে যায় কবির অজানার প্রেমের কথা। কবির অজানায় হারিয়ে যাবার কথা। এমনই হারিয়ে যাবার উপাখ্যানে কবি বলেন –
কিছুটা আশা আজ সঞ্চয় করি মনে,
প্রেম ভালোবাসা জমিয়ে রাখি গোপনে।

হাজার মানুষের ভীড়ে ছুটে চলা মানুষটার একাকীত্ব ভীড়ে চঞ্চলতার মাঝে নানা অজুহাতের শূন্যতায় কবি যেন এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন খুঁজে পান। সেই মানুষটা কিংবা সেই অবুঝ মনের যে ভালোবাসার মানুষটাকে পাবার আকাঙ্ক্ষা তাই ফুটে উঠেছে এই কবিতায়। কবির ভাষ্যে-

তোমার চঞ্চল অবুঝ মনখানা,
অকুল নদীতে স্রোতস্বিনী হয়ে বহিয়া।
এসে দাঁড়িয়েছিলে রাত্রিকালে একেলা,
আমি চুপ করে ছিলাম নানা অজুহাতে।
আবেগঘন কথাবার্তার ফুলঝুরিতে তুমি
ছুটিয়ে আমি শুনছিলাম খানিকটা দূরে বসে।

তথাকথিত সমাজের ভালোবাসা মানেই যেন জৈবিক চাহিদার এক আঁতুড়ঘর। আসলেই কি তাই? ভালোবাসা তো মনের সঙ্গে মন বুনার এক কাজ। ভালোবাসা সে তো অশরীরী – না ধরা যায় না ছোঁয়া যায়। ভালোবাসার সেই অকথিত কথাই কবি বলেছেন ভালোবাসা "তোমার প্রেমে পড়ে" কবিতাটিতে। কবি বলেন –

তোমার প্রেমে পড়ে,
হয়েছে আমার হৃদয় হরণ।
কোন সে মধুর আলসে হাওয়ায়,
বুকে হচ্ছে অমৃত ক্ষরণ।

সকলের আনন্দ মিছিল যেন একই সূত্রে গাঁথা দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। শব্দমালা যেন কবিতার মতো। প্রতিবার পড়ার সময় তা নিজেকে আরো মেলে ধরে, নিজের আরো বিস্তৃতি বাড়ায়। আর মিছিল!! সকলের আনন্দ হোক কিংবা মিছিল সে তো শুরু করে একজনই। কিন্তু তার কি কোনো শেষ আছে? হয়তোবা নিজের মধ্যেখানে ক্রন্দনের সুর ভাসে। কিন্তু সেসব নিয়ে আপনার জন্য আপেক্ষ করার লোক খুবিকম পাওয়া যায়। তাই কবি বলেন –

সকলের আনন্দ গানে আমি দিব সুর,
কিছু জানি শব্দমালা প্রীতি-সুমধুর।
ছন্দের তালে বাজিয়ে কন্ঠের ধ্বনি,
দুঃখের ক্রন্দনে ভাসে বিষাদের মুত্তি।

প্রেম। প্রকৃতির অদ্ভুত এক সৃষ্টি। প্রেমের বন্ধন যে কতটা গাঢ় তা তো যুগে যুগে ইতিহাসই প্রচার করে এসেছে। কিন্তু সেই গাঢ়ত্ব যেন বসন্ত এলেই কয়েক গুণে বেড়ে যায়।ফাল্গুনের প্রথম দিবসে হাজারো তরুণ-তরুণী ছুটে ভালোবাসা নিবেদন করতে। তাই কবি নিজের ভাষায় বলেন –

ফাল্গুনীর প্রথম দিবসে,
রজনীগন্ধা আর বেলি ফুলের শুভ্র ঘ্রাণে,
তোমাকে সাজাইয়া লই একশো রকম সাঁজে।
কিছুটা সময় পাশে থাকি দুজন একান্ত বিলাসে।

কথার কোনো ক্ষয় আছে কিংবা শেষ আছে? কথা স্রোতস্বিনী নদীর মতো; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মাতরে, যুগ থেকে যুগান্তরে। কথার কোনো ক্ষয় নেই কিংবা শেষ নেই তবে কথা থাকে অপেক্ষায়। সেই অপেক্ষায় পালা শেষ হয় কিন্তু কথা তবু ফুরোয় না। যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের মনের ভাষা প্রকাশের মাধ্যমে হিসেবে কথাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।তাই কবি বলেন –

প্রিয়সম্ভাষণ এসো আমার কাছে,
কথা বলো তুমি জীবনসঙ্গী আপন সুরে।
আচ্ছাদিত গগনতলে প্রেমের কথা বলে,
লোকবিশ্রুত সদা অখিল ভুবনের কর্ণদ্বারে

অনেক মহান ব্যক্তি আছেন যারা মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু এখনো জীবিত আছেন মানবের মনে স্মৃতিচিহ্ন হয়ে।এসব সম্ভব হয়েছে তার কাজকর্ম জীবনদর্শন এবং গুণাবলির কারণে। সে জন্য কবি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আক্ষেপ পোষণ করেছেন।তাইতো কবি তার নিজের ভাষায় এভাবে বলেন-

একদিন হয়তো বিদায় নিবো,
এই ধূসর প্রান্তের কাছ থেকে চিরতরে।
কোনো এক অচেনা অজানা দেশে বিস্ময় জাগিয়ে,
জানিনা থাকবো কিনা মানবের মনে স্মৃতি হয়ে।

কবি মোঃ রায়হান কাজী চাঁদপুর জন্মগ্রহণ করেন তবে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। স্কুলের গণ্ডি পেড়িয়ে কলেজ জীবনে প্রবেশ করেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই কবিতার প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসা এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ২০২১ সালের প্রথম কবি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পায় "উচ্ছ্বসিত গোধূলি"।সর্বশেষে তার আরেকটি কাব্যগ্রন্থ " স্পর্শকাতরতাই আলোকবর্ষণ" প্রকাশ পায়।

কবিতার বই পড়ার সবচেয়ে ভালো সুবিধা হলো একরাশ মুগ্ধতায় ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায়। অবাধ্য শৈশবকে যেমন অনুভব করা যায় তেমনি সমাজের রূঢ় বাস্তবতাকে চোখের সামনে স্পষ্ট দেখা যায়। এভাবেই কবি নিজের গান গেয়ে অন্যকে করে প্রভাবিত। আর কবিতার বই একরাশ মুগ্ধতায় রয়ে যায় পাঠকের মনে হয়তোবা ক্ষণিকের জন্যে কিংবা হয়তো আজীবনের জন্যে। যেমনটা কবিও যেতে যেতে বলে যান –

অর্ঘ্য বিরচন ঋতুর রজন ফুটেনি এখনো শাখে,
মাধবী কুঁড়ির গন্ধ না মাখি এখন পরম আবেশে।

বই: স্পর্শকাতরতাই আলোকবর্ষণ
লেখক: মোঃ রায়হান কাজী
প্রচ্ছদ: প্রবাল দে
প্রকাশনী: সপ্তক প্রকাশন
মূল্য: ১৮০ টাকা মাত্র
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ২৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শাওন সিংহ ০১/০৩/২০২২
    🌷🌷🌷
  • সুন্দর
  • ভালো।
  • ফয়জুল মহী ১২/১১/২০২১
    পড়ে ভালো লাগলো।
  • ভালো লাগলো।
 
Quantcast