www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নাফিসের ত্যাগের ঈদ

মাস শেষ হয়েছে। চাকুরী থেকে প্রথম বেতন পেয়েছে নাফিস। আনন্দে চোখে অশ্রু চলে এসেছে। অতীতের স্মৃতিগুলো চোখে ভেসে উঠলো। নাফিস, নাকিব ও নাদিয়া আর বাবা-মা মিলে তাদের ছোট্ট সংসার। নাফিস হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করেছে, ছোট ভাই নাকিব অনার্স ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর নাদিয়া পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। পাঁচ শতকের বাড়ি ছাড়া তাদের আর কোন সম্পত্তি নেই। বাবা অন্যের জায়গায় কৃষি কাজ করেন আর মা বাড়িতে ছাগল, হাঁস ও মুরগ পালন করে পরিবার চালান। বাবা-মা এতো কষ্টের মধ্যেও তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কষ্ট দেখে নাফিসের খুব কষ্ট হতো তাই অনার্স শেষ করেই চাকুরীর পিছনে ছুটতে হয়েছে। অনেক খুঁজাখুঁজির পর একটি প্রাইভেট ব্যাংকে সহকারী অফিসার হিসেবে চাকুরী পেয়েছে। প্রথম ছয়মাস বেতন ১৫ হাজার করে পাবে, তারপর চাকুরী স্থায়ী হলে বেতন বাড়বে। এতেই খুশি নাফিস। চাকুরী পেয়েই বাবা-মাকে বলেছিল, আর তোমাদের কষ্ট করতে হবে না, দেখো আমাদের দুঃখ দূর হয়ে যাবে।
চাকুরী হয়েছে ঈদের একমাস পূর্বে। ঈদের পূর্বে বাড়িতে আসা হবে না। ছোট বোনকে আদর এবং ভাইকে পড়ার তাগিদ দিয়ে আর বাবা-মায়ের দুয়া সাথে নিয়ে  বেড়িয়ে এসেছিল। একমাস হয়ে গেলো বাড়িতে যাওয়া হয়নি। সবার কথা খুব মনে পড়ছে। বাড়িতে যাবার জন্য মন উতলা হয়ে উঠেছে। নাফিস চিন্তা করলো বাড়িতে যাবার সময় মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবী, ভাইয়ের জন্য শার্ট আর ছোট বোনের জন্য লাল জামা কিনে নিয়ে যাবে।
কিন্তু নাফিস কোনদিন এতো কেনাকাটা করেনি। তাই চিন্তা করলো রহিম ভাইকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করবে।
রহিম আর নাফিস একি ব্যাংকে একসাথে চাকুরীতে এসেছে এবং দুজনে মিলে ছোট একটি বাসা নিয়েছে। রহিম খুব ভালো ছেলে। নাফিসের মতো দরিদ্র পরিবারে রহিমের জন্ম। বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন।  মা আর ছোট একটি ভাই রয়েছে তার। রহিম ও নাফিসের মধ্যে একমাসে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। তাদের মধ্যে একে অন্যের সুখ দুখের গল্প হয়েছে অনেক ।
মার্কেটে যাবার জন্য রহিম ভাই ডেকে ডেকে  রহিমের ঘরে ঢুকে পড়লো নাফিস। ঢুকে তো অবাক!  রহিম কাঁদতেছে। কি হয়েছে রহিম ভাই কাঁদতেছো কেন বলে এগিয়ে গেলো নাফিস। রহিম চোখ মুছতে মুছতে বললো ভাই বাড়ি থেকে ফোন এসেছে হঠাৎ করে মা অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে মায়ের পেটে টিউমার হয়েছে এবং দুদিনের মধ্যে অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকা লাগবে কিন্তু আমার কাছে তো এতো টাকা নাই। কাল ঈদ হওয়ায় কারো কাছে ঋন পাচ্ছি না এই কথাগুলো বলে আবার কাঁদা শুরু করলো রহিম। নাফিস বললো রহিম ভাই কেঁদোনা। এই ঘঠনা আমাকে কেন বলনি রহিম ভাই। আপনি তো আমার মতোই নাফিস ভাই, এতো কষ্ট করে চাকুরী পেয়েছেন। বাড়ির সবাই আপনার পথপানে চেয়ে আছে একসাথে ঈদ করবে বলে। তাই আপনাকে  বলে ঈদের আনন্দ কেড়ে নিতে চাইনি।
নাফিসের চোখে অশ্রু ঝরছে। দরিদ্র মানুষ কেন এমন হয়। এতো কষ্টের মধ্যেও অন্যের আনন্দ কেড়ে নিতে চায় না।
নাফিস বললো- রহিম ভাই যদি বেঁচে থাকি তাহলে ঈদ আরো পাওয়া যাবে কিন্তু মাকে হারালে আর কখনো মাকে পাওয়া যাবে না। রহিম ভাই জীবনে তো অনেক ঈদ না খেয়ে পার করেছি।
রহিম ভাই আপনার এই বিপদে সহযোগীতা না করে কিসের ঈদ আনন্দ । আপনার পাশে দাঁড়াইনি একথা বাবা-মা জানলে ভীষন রাগ করবেন । বাবা-মাকে আমি সবকিছু বলে দিচ্ছি আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি আমার বেতনের সব টাকা দিয়ে দিচ্ছি। আপনি খালার অপারেশনের ব্যবস্থা করেন।
খালা সুস্থ হলে একসাথে আগামীতে ঈদ করবো। এবারের ঈদের আনন্দ একজন অসুস্থ মাকে সুস্থ করার জন্য বিলিয়ে দিলাম আর এটাই হচ্ছে আমার ঈদ। রহিম নাফিসকে জড়িয়ে ধরে বললো- আপনার মতো যদি সমাজের সকল মানুষ হয়ে যেতো নাফিস ভাই তাহলে সমাজে কোন দুঃখ থাকতো না। নাফিসের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে তার হৃদয়ে যেন মহা আনন্দের হাওয়া বইছে । আসলে এ আনন্দ তো ত্যাগের আনন্দ। ত্যাগের মধ্যে যেন সকল আনন্দ লুকায়িত।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৯/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পরশ ২১/০৯/২০১৬
    খুব সুন্দর
  • সুকান্ত ১৭/০৯/২০১৬
    চালিয়ে যাও বন্ধু
  • ধন্যবাদ
  • সাইফ রুদাদ ১৬/০৯/২০১৬
    অনবদ্য
  • গল্পটি পড়েছি।
  • সোলাইমান ১৫/০৯/২০১৬
    বেশ ভাল তো।
  • অপূর্ব লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
 
Quantcast