www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বুকের ভাঁজে হেলেন

মামার মুখে শুনেছিলাম।
মূলত,  আমি আর মামা
সমবয়সী।তাই একসাথে
লেখা-পড়া,খানা, আড্ডাবাজী,
সবকিছুই চলতো আমাদের।
প্রাইমারী,সেকেন্ডারি।
হাইয়ার সেকেন্ডারি,বিদ্যাপিঠের
শেষ পর্যন্ত আমি আর  মামা ছিলাম
দু'টি দেহে  একটি প্রাণ। এখনো তাই
আছি,তবে আছি একই পৃথিবীতে
দুইজন দুই প্রান্তে। মন আছে ঠিক
আগেরই মত।কাহিনী শুরু করা
যাক।

ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে আমি আর  মামা একসাথে পড়তাম।মামা,
টিউশনি করত...
শহরের এক অভিজাত ভিলায়।

প্রতিদিন, বিকেল হলে যেত স্টুডেন্ট
পড়াতে।
পড়াতো একটি মেয়েকে। মেয়েটি
সুন্দর স্বভাবের ছিলো রূপে গুণে ও
ছিল অনন্য । কোন অহংকার ছিলনা।

মামা ও ছিলেন খুব সৎ স্বভাবের।
একটু নিজেকে বাঁচিয়ে চলতেন
অন্যের কাছ থেকে। কোন ঝামেলা
পছন্দ করতেন না। কিন্তু মন বলে কথা,
মন থাকলেই মানুষ হয়। অথচ মনের দাম
আমাদের মাঝে কানাকড়ি ও নেই!

হঠাৎ একদিন পড়াতে গিয়ে দেখল
এত সুন্দর একটি মেয়ে ওই বাসাতে
সে আর আগে কখনো দেখেনি।
এই প্রথম দেখা। মামা জিজ্ঞেস করল
তোমার নাম কি? মেয়েটি কোন কথা
না বলে আড়াল হয়ে গেল।
মামা, হতভম্ব! হয়তো লজ্জা পেয়েছে মেয়েটি।
কিন্তু মন থেকে কোন কিছুতেই
সরাতে পারছেনা মেয়েটিকে।

পরের দিন আবারো দেখা, ঠিক
একই প্রশ্ন। কিন্তু মেয়েটি নিরব।
মামা ঘৃণায়,  লজ্জায়..
কিছুই বলল না।
মামা ভাবতে ভাবতে যেন
অংকের ফল মিলাতে পারছেনা।
হয়তো মেয়েটি অনেক সুন্দর
তাই এত অহংকার! আজ মামা
মেয়েটিকে  বলেই বসল কেন এত
অহংকার? মানুষের এত অহংকার
থাকা ভালোনা।

মেয়েটির দু'চোখে নিরবে
অশ্রু বেয়ে পড়লো কিন্তু
কোনো কথাই  বললো না!
মামা হতবাক হয়ে গেল
কিছুইতো বলেনি তাহলে
কেন এই চোখেরজল?

একদিন মামা মনে মনে
ভাবল, এক টুকরো কাগজে
তাকে মনের কথা লিখে জানাবে
ক্ষমা চেয়ে নেবে।
চিঠি খানা লিখে বুক পকেটে ভাঁজ করে
রেখে দিল। আজ যে ভাবেই হউক
হেলেনকে এই চিঠি দিতে হবে।
বলতে ভুলে গেছিলাম মেয়েটির নাম
"হেলেন"মামার ছাত্রীর বড় বোন।


ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মানুষের
জীবনকে ঠেলে দেয় কঠিন জীবনে।
একটি দুর্ঘটনা একটি জীবনকে
সর্বনাশ করে দেয়। বেঁচে থেকেও
বাঁচার সাধ জাগেনা। মনে স্বপ্ন থাকে
সেই স্বপ্ন তছনছ হয়ে চোখের অশ্রুতে,
হৃদয়ের বোবা কাঁন্নায়;

যে দিন চিঠি খানা দেবে ঠিক
সেই দিন ই...
মামার ছাত্রী মামাকে বলল
স্যার,
আমার আপু কথা বলতে পারেনা!
আমার আপু সবকিছুই বুঝে কিন্তু
আপুকে কেউ বুঝেনা!
কথাগুলি শুনতে শুনতে...
মামার চোখে পানি এসে গেল
চোখ মুছে আর জিজ্ঞেস করে
কেন কি হয়েছে?
স্যার...
আপু যখন ক্লাশ নাইনে পড়ত
তখন আপুর একটা অসুখ হয়েছিল,
অনেক চেষ্টা করেও আমরা
আপুকে আগের মত করে
ফিরে পেলাম না।

মামার সেই চিঠি
আমি পড়েছি,
কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে রাখতে
পারিনি।
হেলেন কে কী আর বলব?
হেলেন হয়তো জানেনা চিঠিতে
কি যে লুকিয়ে ছিল।
কিন্তু, তার চেয়ে অধিক কষ্ট
লুকিয়ে আছে হেলেনের বুকে।

হেলেন,
তোমার ভালবাসা বুঝবার লোক
এখনও পৃথিবীতে আছে।
তোমাকে যে বুঝবে সে স্বর্গ পাবে।
মুখে ভাষা নেই,
কিন্তু বুকে আছে অনেক
প্রেম, দরদ;তোমার বোবা
কান্না  আজো আমার
বুকে ভেসে আসে করুণ দীর্ঘশ্বাসে
কারন, আমি উপলব্ধিতে লগ্নী হয়েছি।

বোবার শত্রু নেই।
বুকে যে প্রেম আসে,  সে প্রেম
মনের রং দিয়ে
আল্পনায় সাজিয়ে রাখতে হয়।
তুমি সুখী হও,
তোমার দুঃখে  যে দুখী,
সে সত্যিই ভাগ্যবান।
মামা,
তোমার কোনো  দোষ ছিলনা সেদিন, কিন্তু
হেলেন কেমন আছে
তা কী  জানো?
--------------------------------------------------------------------
রচনাকালঃ ১১/০৫/১৯৯৭ ইং
মিয়াবাজার,কুমিল্লা।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Tanju H ০৮/০৬/২০১৭
    ভালবাসা দিয়ে ভালবাসা বেঁচে থাকুক এ পৃথিবীতে........
    অসাধারন।
  • ফয়জুল মহী ০৮/০৬/২০১৭
    চমৎকার উপস্থাপনা প্রিয়
  • আলম সারওয়ার ০৭/০৬/২০১৭
    অসাধারণ ।শুভেচ্ছা থাকল আমার
  • আব্দুল হক ০৭/০৬/২০১৭
    সুন্দর ! কথা শোবারকবাদ!
  • সাঁঝের তারা ০৭/০৬/২০১৭
    মর্মস্পর্শী অনন্য!
    • এম,এ,মতিন ০৭/০৬/২০১৭
      অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য।এক'হৃদয়পূর্ণ ভালোবাসা এবং এক সমুদ্র শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
 
Quantcast