একটি দুর্ঘটনা
ইমন খুবই চঞ্চল একটি ছেলে । প্রতিবারই বায়না ধরে বইমেলায় যাবে । আমি বলি বইমেলার তুমি কি বুঝ ? প্রতিউত্তরে সে জবাব দেয় বইমেলা হল প্রানের মেলা। যে স্থানে আমরা আমাদের মাতৃভাষা কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি এবং মাতৃভাষায় রচিত প্রতিটি বই যেন একেকটি করে স্তম্ভ । যার উপর দাঁড়িয়ে আছে আমার প্রিয় মাতৃভাষা । সে চারলাইন কবিতাও বলে ফেলল –
‘আমি চাইগো , চাইগো তোমারে
প্রতিক্ষন থেকো পাশে , ওগো থেকো,
আমার মনের কোণে,প্রতিক্ষণে
ভালবাসি শুধুই তোমায়,ওগো প্রিয় ।’
যে ছেলে ভাষাকে এত সুন্দর করে বুঝাতে পারে তাকে তো প্রানের মেলায় যেতে দেওয়ায় লাগে। কেননা, আমি তো জেনে শুনে তার স্বাধীন চলাফেরায় বাধা দিতে পারি না । কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম ঠিক আছে তুমি বইমেলায় যাবে কিন্তু যেদিন যাবে,আমায় বলে তারপর যাবে । না বলে যেও না কিন্তু । সে বলল ঠিক আছে ।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারী , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । বাঙ্গালীর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ঘিরে এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে । সুন্দর সকাল,ঘুম ভাঙল ‘আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ গানটি শুনে । প্রতিটি স্কুল কলেজের মাইক থেকে আরও বিভিন্ন ধরনের চেতনামূলক গানও শোনা যাচ্ছে ।
উঠতে না উঠতেই ইমন দৌরে এসে বলল, মামা আজ যাব বইমেলায় । কিছু টাকা দাওতো ।প্রথমে এক হাজার টাকা দিলাম , ওর চেচামেচিতে আরও দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য হই । সে মহাখুশি হয়ে বেরিয়ে যেতে লাগল । কিন্তু আমি ওকে আবার ডাকলাম এবং পাশে বসিয়ে সকালের নাস্তা খাওয়ালাম । কেন যেন ইমনের প্রতি আমার একটু বেশীই মায়া লাগে সবসময় !
ইমনকে কয়েকটি উপদেশ দিয়ে বললাম এখন যাও , মেলা থেকে ঘুরে আস ।ইমন মেলার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়ল ।আমি আবারও যেন একা হয়ে গেলাম । ছেলেটা থাকলে অনেক মজা হত আজকে । ছেলেটা অনেক অনেক মজা করতে পারে যা সবাই পারে না । সারাটা দিন ওর কথা অনেক মনে পরবে । বিশেষ করে দুপুরের খাবার সময় কেননা ও কখনই ঠিক সময়ে দুপুরের খাবার খেত না । সারাদিন শুধু খেলাধুলার নেশায় মেতে থাকত । প্রায়ই আমি জোর করেই খাওয়াতাম।
ইমন মেলায় প্রবেশ করল । সে প্রতিটি স্টল ভালভাবে ঘুরে ঘুরে দেখল এবং কিছু বইও কিনল । হঠাৎ, অপরিচিত একটি ছেলে ইমনকে ডাকল ।ছেলেটি ইমনের ছোটবেলার বন্ধু । ছেলেটিকে নিয়ে ইমন আরো কিছু স্টল ঘুরে দেখল ।ছেলেটি বলল এসেছ যখন চল যাই শহীদ মিনার দেখে আসি । সেও রাজি হল কেননা সে কোনওদিন শহীদ মিনার দেখেনি । ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হল , এবং মিনিট দশেক পর তারা শহীদ মিনার দেখতে পেল এবং সে তার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আবেগের সাথে কাঁদতে লাগল । বাহিরে এসে তারা দুজন কিছু খাবার খেল এবং বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠল । সে বাসের জানালার পাশে বসেছিল আর অপর পাশে তার বন্ধু বসেছিল । তার বমি বমি লাগতে শুরু হল এবং সে বমি করছিল , এমতাবস্থায় সে প্রচন্ড চিৎকার দিল এবং অজ্ঞান হয়ে বাসের সিটে হেলে পড়ল । তার বন্ধু তাকে দ্রুত হাসপাতলে নেয়ার ব্যবস্থা করল । কিছুক্ষন পরে আমার কাছে একটি ফোন আসল এবং আমায় হাসপাতালে যেতে বলা হল। কারন হিসেবে বলল ইমন একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে ।আমি দ্রুত রওনা হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ।
আমি এখন হাসপাতালে , ইমনের পাশে বসে আছি । পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে তার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে । সে আর দেখতে পারবে না। যেতে পারবে না কখনও কোথাও ,বইমেলায় অথবা, মাতৃভাষা শহীদদের সৃতিস্তম্ভ দেখতে । কি এমন অপরাধ ছিল এই ছোট ছেলেটির ? বইমেলা দেখতে যাওয়া কি কোন অপরাধ? তবে কেন বইমেলা ,আর কেনই বা শহীদ মিনার । আমরা কি পারিনা এসকল অপরাধ রুখতে , আমরা কি পারি না আবারও একটি জীবনের জন্য এতটুকু সচেতন হতে । আমরা তো বাঙ্গালী , আমাদের রক্তের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা। তাহলে কেনই বা এই স্বাধীন দেশে এত রক্ত ঝড়ছে । আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , আমরা না বাঙ্গালী । আমাদেরকেই তো রুখে দাঁড়াতে হবে , জেগে উঠতে হবে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে তবেই না আমরা আদর্শবান মানুষ ও গর্বিত বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব এবং বহু প্রানের বিনিময়ে গড়া এই দেশকে নিজের দেশ হিসাবে পরিচয় দিতে পেরে ও নিজেকে একজন সুষ্ঠ নাগরিক হিসেবে বিশ্ব মহলে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারব ।
‘আমি চাইগো , চাইগো তোমারে
প্রতিক্ষন থেকো পাশে , ওগো থেকো,
আমার মনের কোণে,প্রতিক্ষণে
ভালবাসি শুধুই তোমায়,ওগো প্রিয় ।’
যে ছেলে ভাষাকে এত সুন্দর করে বুঝাতে পারে তাকে তো প্রানের মেলায় যেতে দেওয়ায় লাগে। কেননা, আমি তো জেনে শুনে তার স্বাধীন চলাফেরায় বাধা দিতে পারি না । কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম ঠিক আছে তুমি বইমেলায় যাবে কিন্তু যেদিন যাবে,আমায় বলে তারপর যাবে । না বলে যেও না কিন্তু । সে বলল ঠিক আছে ।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারী , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । বাঙ্গালীর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ঘিরে এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে । সুন্দর সকাল,ঘুম ভাঙল ‘আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ গানটি শুনে । প্রতিটি স্কুল কলেজের মাইক থেকে আরও বিভিন্ন ধরনের চেতনামূলক গানও শোনা যাচ্ছে ।
উঠতে না উঠতেই ইমন দৌরে এসে বলল, মামা আজ যাব বইমেলায় । কিছু টাকা দাওতো ।প্রথমে এক হাজার টাকা দিলাম , ওর চেচামেচিতে আরও দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য হই । সে মহাখুশি হয়ে বেরিয়ে যেতে লাগল । কিন্তু আমি ওকে আবার ডাকলাম এবং পাশে বসিয়ে সকালের নাস্তা খাওয়ালাম । কেন যেন ইমনের প্রতি আমার একটু বেশীই মায়া লাগে সবসময় !
ইমনকে কয়েকটি উপদেশ দিয়ে বললাম এখন যাও , মেলা থেকে ঘুরে আস ।ইমন মেলার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়ল ।আমি আবারও যেন একা হয়ে গেলাম । ছেলেটা থাকলে অনেক মজা হত আজকে । ছেলেটা অনেক অনেক মজা করতে পারে যা সবাই পারে না । সারাটা দিন ওর কথা অনেক মনে পরবে । বিশেষ করে দুপুরের খাবার সময় কেননা ও কখনই ঠিক সময়ে দুপুরের খাবার খেত না । সারাদিন শুধু খেলাধুলার নেশায় মেতে থাকত । প্রায়ই আমি জোর করেই খাওয়াতাম।
ইমন মেলায় প্রবেশ করল । সে প্রতিটি স্টল ভালভাবে ঘুরে ঘুরে দেখল এবং কিছু বইও কিনল । হঠাৎ, অপরিচিত একটি ছেলে ইমনকে ডাকল ।ছেলেটি ইমনের ছোটবেলার বন্ধু । ছেলেটিকে নিয়ে ইমন আরো কিছু স্টল ঘুরে দেখল ।ছেলেটি বলল এসেছ যখন চল যাই শহীদ মিনার দেখে আসি । সেও রাজি হল কেননা সে কোনওদিন শহীদ মিনার দেখেনি । ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হল , এবং মিনিট দশেক পর তারা শহীদ মিনার দেখতে পেল এবং সে তার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আবেগের সাথে কাঁদতে লাগল । বাহিরে এসে তারা দুজন কিছু খাবার খেল এবং বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠল । সে বাসের জানালার পাশে বসেছিল আর অপর পাশে তার বন্ধু বসেছিল । তার বমি বমি লাগতে শুরু হল এবং সে বমি করছিল , এমতাবস্থায় সে প্রচন্ড চিৎকার দিল এবং অজ্ঞান হয়ে বাসের সিটে হেলে পড়ল । তার বন্ধু তাকে দ্রুত হাসপাতলে নেয়ার ব্যবস্থা করল । কিছুক্ষন পরে আমার কাছে একটি ফোন আসল এবং আমায় হাসপাতালে যেতে বলা হল। কারন হিসেবে বলল ইমন একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে ।আমি দ্রুত রওনা হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ।
আমি এখন হাসপাতালে , ইমনের পাশে বসে আছি । পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে তার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে । সে আর দেখতে পারবে না। যেতে পারবে না কখনও কোথাও ,বইমেলায় অথবা, মাতৃভাষা শহীদদের সৃতিস্তম্ভ দেখতে । কি এমন অপরাধ ছিল এই ছোট ছেলেটির ? বইমেলা দেখতে যাওয়া কি কোন অপরাধ? তবে কেন বইমেলা ,আর কেনই বা শহীদ মিনার । আমরা কি পারিনা এসকল অপরাধ রুখতে , আমরা কি পারি না আবারও একটি জীবনের জন্য এতটুকু সচেতন হতে । আমরা তো বাঙ্গালী , আমাদের রক্তের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা। তাহলে কেনই বা এই স্বাধীন দেশে এত রক্ত ঝড়ছে । আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , আমরা না বাঙ্গালী । আমাদেরকেই তো রুখে দাঁড়াতে হবে , জেগে উঠতে হবে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে তবেই না আমরা আদর্শবান মানুষ ও গর্বিত বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব এবং বহু প্রানের বিনিময়ে গড়া এই দেশকে নিজের দেশ হিসাবে পরিচয় দিতে পেরে ও নিজেকে একজন সুষ্ঠ নাগরিক হিসেবে বিশ্ব মহলে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারব ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রফিক রায়হান ১৬/০৩/২০১৫বাস্তবতার প্রতিঘর
-
রূপক বিধৌত সাধু ০৬/০৩/২০১৫আবেক হারিয়ে কাঁদার বিষয়টা বোধগম্য হলোনা । জনসচেতনতামূলক লেখা । ভালো লাগলো ।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ০৬/০৩/২০১৫অনেক ভালো লাগলো