www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ইতিকাফের গুরুত্ব তাৎপর্য ও ফযীলত

মাহে রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করা বা ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আরবি ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশ দিন অথবা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে বা ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফ করার মূল উদ্দেশ্য হলো-
মসজিদে বসে আল্লাহর আনুগত্য করা এবং সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভ, সওয়াব অর্জন ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা। আর এজন্য প্রত্যেক ইতিকাফকারীর আল্লাহর জিকির, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও অন্যান্য ইবাদতে ব্যস্ত থাকা এবং পার্থিব বিষয়ে কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
ইতিকাফের শর্ত সমুহ –
(১) এমন মসজিদে ইতিকাফ হতে হবে যেখানে নামাযের জামাত হয়। জুমআর জামাত হোক বা না হোক। এ শর্ত পুরুষের ইতিকাফের ক্ষেত্রে । মহিলাগণ ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে।
(২) ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে।
(৩) হায়েয অথবা নেফাস শুরু হলে ইতিকাফ ছেড়ে দিবে।
(৪) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া।
(৫) মসজিদে ই‘তিকাফ ।
ইতিকাফের রুকনগুলো-
ইতিকাফের রুকন ২টি : (ক) নিয়ত করা, (খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ইতিকাফ করলে তা শুদ্ধ হবে না।
ইতিকাফ অবস্থায় থাকাকালীন যেসব কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে-
(১) স্বামী স্ত্রীর মিলন, স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা,
(২) মাসজিদ থেকে বের হওয়া। বেচাকেনা, চাষাবাদ, এমনকি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্যও মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।
ইতিকাফের ভঙ্গ হওয়ার কারণসমূহ-
১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে
২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে।
উপরিউক্ত আলোচনা ছাড়াও ইসলামিক জীবনে ইতিকাফের নানাবিধ গুরুত্ব রয়েছে।নিম্নে ইতিকাফের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত এবং প্রয়োজনীয় সমন্ধে আলোচনা করা হলো-
ইতিকাফের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত-
ইতিকাফের গুরুত্ব তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম। রমজানের শেষ ১০ দিন সব বাঁধন ছিন্ন করে আল্লাহর ঘরে রহমত ও মাগফিরাতের আশায় পড়ে থাকার নাম ইতিকাফ। এ ইতিকাফ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে-আমি ইব্র্র্র্র্র্রাহিম ও ইসমাইলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীর জন্য আমার ঘর (বাইতুল্লাহ) পবিত্র রাখতে আদেশ করে ছিলাম। (সুরা বাকারা -১২৫)। ইতিকাফের অশেষ সওয়াব ও সওয়াব সম্পর্কে হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে-ইতিকাফকারী সব গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। সফল সৎ কর্মশীল যত ধরনের সৎ কর্ম করে থাকে, ইতিকাফকারীর জন্য সেসবের অনুরূপ সওয়াব লেখা হয়। (যদি ও সে ইতিকাফের কারণে অনেক নেক কাজ করতে পারেন না)। ইতিকাফ তিন প্রকার ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল। ইতিকাফ মানত করলে তা ওয়াজিব হয়ে যায়। রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। কিছু লোক আদায় করলে দায়মুক্ত হবে। যে কোন সময় অল্প- অধিক যতটুকু সময়ের জন্য হোক ইচ্ছামত মসজিদে প্রবেশের সময় ইতিকাফের নিয়াত করলে নফল ইতিকাফ হয়ে থাকে। এর কোন নির্ধারিত সময়কাল নেই। যে কোন সময় মসজিদে প্রবেশকালে নফল ইতিকাফের নিয়ত করলে মসজিদে অবস্থানের পর নফল ইতিকাফের সওয়াব পাওয়া যাবে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। ওফাত পর্যন্ত তিনি ইতিকাফ করে গেছেন। ওফাতের পর তার সহধর্মীনিরা ইতিকাফ করতেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, হযরত রসুল (সাঃ) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ওফাতের বছর ২০ দিন ইতিকাফ করে গেছেন।রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফের মহান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে শবে কদরের অনুসন্ধান। কেবল ২৭ রমজান রাতে শবে কদর হওয়া সুনিশ্চিত নয়। শেষ দশকের বেজোড় পাঁচ রাতে শবে কদর নিহিত রয়েছে। একজন মানুষ যতক্ষণ ইতিকাফে থাকে তার পুরো সময়টা ইবাদত হিসাবে গণ্য হয়। যারা ইতিকাফে থাকেন তারা ইবাদতের প্রতি অধিক মনোযোগী হয়ে থাকেন। ফলে যে রাতে শবে কদর হয় শেষ দশকে ইতিকাফকারীরা তার ফজিলত পেয়ে থাকেন। শবে কদরের খোঁজে রসুল (সাঃ) ইবাদত করতো বলে হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়। ইতিকাফের একটি বিশেষ উপকারিতা হচ্ছে মসজিদে অবস্থানের মাধ্যমে সব গোনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা। হাদিসেও রয়েছে ইতিকাফকারীরা গোনাহ থেকে বিরত থাকে। ইতিকাফ যেন গোনাহ ও পাপ থেকে আত্মরক্ষার মজবুত বর্ম। পুরুষদের মত মহিলারা ইতিকাফ করতে পারেন। বাসায় বাড়ীতে নামাযের নির্ধারিত স্থান তাদের ইতিকাফ স্থল। রসুল (সাঃ)এর সহধর্মীনিরা নিজ হুজরায় ইতিকাফ করতেন। রমজানে অধিক নেক আমল করা যতনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পাপকাজ থেকে বেঁচে থাকা অধিক গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। আর সে উদ্দেশ্য সফলে ইতিকাফ মুখ্য ভুমিকা রাখে। শবে কদর প্রাপ্তি রমজানের প্রভুত রহমত বরকত ও মাগফিরাত ও নাজাত। অশেষ সওয়াব লাভ এবং পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামসহ যুগে যুগে পীর আওলীয়া তাদের মুরিদ, ভক্ত অনুরক্ত সর্বোপরি পরহিযগার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইতিকাফ করেছেন আশা আগ্রহ নিয়ে। অফুরন্ত সওয়াব অবারিত রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগটি আমাদের কাজে লাগানো দরকার। ইতিকাফ তিন প্রকার এর মধ্যে ওয়াজিব ইতিকাফ হল, নযর মান্নতের ইতিকাফ এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি মনস্থ করে যে, আমার অমুক কাজ সমাধান হলে বা অমুক আশা পূরন হলে আমি ইতিকাফ করব। অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ইতিকাফের নিয়ত করে। তবে তার উপর ইতিকাফ ওয়াজিব হয়ে যায়। এবং নিয়তকৃত মেয়াদপুর্ণ করা তার জন্য কর্তব্য।
রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ এ শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ দিনগুলিতে ইতিকাফ করেছেন। রমজানের বিশ তারিখ সন্ধ্যা অর্থাৎ সুর্যাস্তের সময় থেকে তা শুরু করতে হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এর মেয়াদ। এই ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা- এ - কেফায়া।মুস্তাহাব বা নফল ইতিকাফ ,ওয়াজিব ও সুন্নত ইতিকাফ ছাড়া সব ইতিকাফ মুস্তাহাব।বছরের সকল দিনে এ ইতিকাফ পালন করা যায়। স্বল্প মেয়াদের জন্য হলে ও সকলের ইতিকাফে যাওয়া জরুরী। ইতিকাফের মধ্যে অনেক সওয়াব রয়েছে। খোদ আল্লাহর রসুল ইতিকাফের ব্যাপারে যত্নবান ছিলেন। ইতিকাফের দ্বারা নির্ঝঞ্ঝাটের মধ্যে থেকে এক নিবিষ্ট চিত্তে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা যায়। এ সময়টি মধ্যে কায়মনো বাক্যে কোরআন পাঠ, নফল নামায, যিকির-ফিকির তছবীহ তাহলীল, মুনাজাত ইত্যাদির মধ্য দিয়ে একজন লোক আত্মশুদ্ধির এক এক মহত্তর স্তরে নিজেকে পৌছাতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত অন্য মাসে একটি ফরজের সমতুল্য এবং এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমতুল্য। এসব কিছু নির্ভর করে ইবাদতকালে একাগ্রচিত্রতার উপর। ইতিকাফ মুর্হুতে যেহেতু এ প্রবল থাকে তাই সওয়াব বেশী হওয়া স্বাভাবিক। রমজানে তারাবীহ, নফল নামায, কুরআন অধ্যয়ন,যিকির ফিকির, তাসবীহখানি ইত্যাদি কাজ হুকুমের দিক থেকে অপরিহার্যতার পর্যায়ভুক্ত না হলেও আরও নানান দিকের বিচারে এগুলোর সওয়াবের পরিমাণ রমযান মাসে অধিক হয়ে থাকে। যেমন পবিত্র কুরআনে প্রিয় বান্দার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তারা আপন প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাযে দন্ডায়মান এবং সিজদার মধ্য দিয়ে রাত্রি যাপন করে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৬/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুব ভালো
  • আবুল খায়ের ১০/০৬/২০১৮
    very good
  • সুন্দর বর্ণনা
  • অনেক ভাল।
  • রবিউল হাসান ০৯/০৬/২০১৮
    খুবই গুরত্বপূর্ন লেখা।
 
Quantcast