www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অব্যক্ত স্বপ্নের ভাঁজে

ঘুম কাতর চোখে মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকিয়েই চমকে ওঠে। অাটটা বাঁজে? তাড়াতাড়ি করে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি ফাইলে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। অাজও একটা ইন্টারভিউয়ের জন্য বেড়িয়েছে।ওর নাম নাশমিয়া নিশাত নিশু, বাবার মৃত্যুর পর সংসারের অবস্থা চিন্তা করে ছুটছে চাকরীর খোঁজে অথচ কি অদ্ভুত কোথাও চাকরী হচ্ছেনা, সবখানেই বলে- ঠিক অাছে অাপনি অাসুন, সময় হলে অামরা অাপনাকে ডেকে পাঠাবো। বাচ্ সময়ও অার হয়না কোন প্রতিষ্ঠানের, তাই জানাতেও ভুলে যায়।
যথা সময়ে অফিসে পৌছে নিশু, প্রার্থীরা সবাই বসে অাছে। ফাঁকা একটা চেয়ার দেখে নিশু বসে। কিছু সময় পর একজন পিয়ন এসে নিশুকে ভিতরে যেতে বলে, নিশু ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যের মাঝে একজনকে দেখে অাতঁকে ওঠে। এযে সেই রাহাত!
প্লিজ টেক ইয়োর সিট!
ও হ্যা, থ্যাংক ইউ স্যার,
নিশু বারবার রাহাতের দিকে তাকায়, সেই মুখ, সেই চোখ, সেই রাহাত, কি করে এতো বদলে গেল?
কি হলো বলুন?
জ্বী, মানে স্যার, চাকরীটা অামার খুব দরকার।
ঠিক অাছে, অাপনি অাসতে পারেন, সময় হলো অামরা অাপনাকে জানাবো।
নিশু বের হবার পূর্বে রাহাতকে অারেকবার দেখে নিল।
কিছুতেই রাতে ঘুম অাসছেনা নিশুর, চোখে অাঙ্গিনায় ফেলে অাসা স্কুল জীবনের কথা ভেসে উঠছে।
১৯৯৩ সাল। নিশু তখন ক্লাস নাইনে পড়তো। হঠাৎ একদিন একটি ছেলেকে হেড স্যার ক্লাসে নিয়ে অাসে, পড়নে অাধময়লা পোশাক, হেড স্যার পরিচয় করিয়ে দেয় ওর নাম সম্রাট রাজা রাহাত, তোমাদের নতুন বন্ধু, নতুন ভর্তি হয়েছে।
হেড স্যার চলে যাবার পর অামরা সবাই নামটা নিয়ে বেশ হাসি তামাশা করেছিলাম কিন্তু রাহাতের ভাব দেখে মনে হলো ওর এসব মনেই হচ্ছেনা। ওকে নিয়ে অামরা বান্ধবীরা খুব মজা করতাম, একদিন ক্লাসে অামরা কয়েক বান্ধবী মিলে ওকে নিয়ে খেলেছিলাম, নিপা, রোজি, অামি অার শাম্মী ওকে স্কুল থেকে তাড়ানোর বুদ্ধি করলাম, টিফিনের সময় অামরা একটা প্রেম পত্র লিখলাম অামার নামে, ইতির জায়গা খালি রেখে। সেই চিঠিটা অাবার নিপা অার রোজি মিলে রাহাতের কাছে নিয়ে যায়। রাহাতকে বলে চিঠিটা তোমার হাতে লিখে দিবা, প্রথমে রাহাত রাজি হয়নি পরে ওরা ভালোবাসার সুরে অাদর করে বলাতে রাজি হয়, রাহাত সেদিন বলেছিল চিঠিতে যা লেখা হুবহু তাই লিখে দিব না দু-এক কথা বাড়িয়ে লিখব? নিপা বলেছিল তোমার মতো করে লিখো, নিশুর নামে কিন্তু! ভুল যেন না হয়।
পরদিন ক্লাসে সবার সামনে রাহাত সরল মনে নিপার কাছে চিঠিটা দেয় অার নিপা সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে- অামাকে কেন যার চিঠি তাকে দিতে পারো না? রাহাত বোকার মতো সেদিন সবার সামনেই চিঠিটা অামায় দিতে গেলেই এক বন্ধু ছোঁ মেরে নিয়ে যায়, ব্যপারটা অার কয়েকজনের মাঝে থাকেনা, স্যারদের কানেও চলে যায়, অামরা সবাই মিলে নালিশ করি অার বিচারে ওকে স্কুল থেকে বের করে দেয়। ওকে অার কোন ক্লাস করতে দেয়া হবেনা, রেজিস্টার হয়েছে বলে এস এস সি পরীক্ষার অাগে শুধু টেষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে দিবে। ও অারো ফেঁসেছিল ওর নিজের মতো করে, খুব সুন্দর করে চিঠিটা লিখেছিল অার ইতিতে বোকাটা সত্যিই নিজের নাম রাহাতই লিখে দিয়েছিল। (যার প্রসংশা বাংলা ম্যডাম করেছিল)
তারপর অার ওর সাথে ক্লাস করতে হয়নি সত্য কিন্তু ওর কথা মনে পড়েনি এমন ক্লাস অার অামি করতে পারিনি। যখন জানলাম লঞ্চডুবিতে ওর বাবা মাকে হারিয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো ও, কম কথা বলতো, একা থাকতে পছন্দ করতো। এস,এস,সি পরীক্ষার সময়ও দেখা করতে পারিনি। রেজাল্টের দিন নিজের রেজাল্ট না দেখে যখন রাহাতের রেজাল্ট দেখলাম, চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, সবাইকে তাঁক লাগিয়ে স্কুলের প্রথম ছাত্র হিসেবে স্টার মার্ক পেয়েছিল। অামি পেয়েছিলাম দ্বিতীয় বিভাগ।
কয়েকদিন পর ফোনে জানতে পারে নিশুকে ওরা সিলেক্টেড করেছে। অফিসে এসে পেপারস গুলো দেখে নিতে বলেছে। নিশু জয়েন্ট করেই রাহাতের সম্পর্কে সব জেনে নিয়েছে। রাহাত কোম্পানীর মালিকের সাহায্য অনার্স মাস্টার্স শেষ করে তার কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার পদে অাছে অাজ প্রায় চার বছর যাবৎ। অাজ রাহাতের বাড়ী,গাড়ী, ব্যাংক ব্যালেন্স সব অাছে নেই শুধু ভালোবাসার কেউ। নিসঙ্গ জীবন। সেদিন শুক্রবারে নিশু রাহাতের বাসায় গিয়েছিল, রাহাত কত সহজেই সব মেনে নিয়েছে ভাবতেই নিশুর অবাক লাগে। নিশু রাহাতকে নিয়ে এতো ভাবছে কেন তবে কি নিশু......! হ্যা সেদিনের সেই চিঠি অাসলেই রাহাত মনের সব কথা লিখেছিল নিশুকে। যদিও তখন ভালোবাসি বলার শক্তি সামর্থ্য কোনটাই ছিলোনা রাহাতের।
অাজ দুজনের অাবার দেখা করতে এসেছে "রেডিসনে" কথার এক পর্যায়-
তাহলে স্যার অামায় কি মাপ করে দেয়া যায় না?
না! এটা অফিস নয় কিন্তু!
কেন?
মাপ করতে পারি একটা শর্তে।
কি শর্ত বলো?
অামি অার একলা থাকতে পারব না। অাজ থেকে দুজনে এক সাথে থাকব, রাজি?
নিশুর চোখ বেয়ে অানন্দের অশ্রু ঝরতে থাকে। রাহাতের অব্যক্ত স্বপ্নের ভাঁজে ভাঁজে নিশুর জন্য যে প্রেম লালিত ছিল অাজ তা বাস্তবেই ধরা দিলো। রাহাত দু হাত বাড়িয়ে দেয়। নিশু রাহাতের বুকে মুখটা লুকিয়ে কাঁদে। তারপর কোন এক শুভদিনে এডভোকেট মির্জা অালমের উপস্থিতিতে ( রাহাতের কোম্পানীর এমডি) নিশু অার রাহাতের নতুন জীবনের নতুন অধ্যায় রচিত হয়।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/১২/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এম এ সবুর ০৯/১২/২০১৪
    ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়া সহ সকলকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। উৎসহ পেলাম ভালো লেখার চেষ্টা করব।
  • আপনার প্রথম লেখা। আসরে আপনাকে স্বাগতম। দুঃখের লেখা পড়তে পড়তে বোর হয়ে গিয়েছিলাম। বাট সব শেষে আপনার এই মিষ্টি মিলনের কাহিনী পড়ে ভালো লাগলো।
  • আবিদ আল আহসান ০৮/১২/২০১৪
    খুব ভালো লাগলো.
    একটু কনফিউজড এ পড়েছিলাম মাঝখানে..ঐ অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসার জায়গাটায় বুঝতে কষ্ট হয়।
  • ০৮/১২/২০১৪
    ভালো প্রেমের গল্প ।
 
Quantcast