‘সাত’ এর সাতকাহন
’সাতের সাত্সতের’ প্রকাশে অবলা সাতকে পেল্লাই রোশনাই দেখাত ঠাওর করি। তবে যাই বলেন না কেন সাতকাহনও মন্দ ঠেকছে না। আর মন্দ লাগবেই বা কেন? সাতের রাজত্ব যে পুরো জগতময়! কোথায় নেই সাত এই বিশ্বব্রম্মান্ডে কবিগুরুর সুরের মায়াজালে অহর্নিশি আপনা-বন্দী? তো সেই সুরের ভুবনে সা রে গা মা পা ধা নি - সাতটি স্বরই তো, তাই না? মহাজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন একদা বলে দিলেন, রঙধনুর রঙ কিন্তু সাতটি। সেই থেকে সাতরঙের কিম্ভুত ‘বেনীআসহকলা’ ঢুকে গেল ফিজিক্স বইতে - তা হৃদয়াঙ্গমে আমাদের কচি কচি জান কুরবান। তাই বই ফেলে দিয়ে মা-মাসিদের সাথে লুডু খেলেছি শত! তখন কি ভেবেছি, লুডুর ছক্কার দুই বিপরীত দিকের সংখ্যা যোগ করলে কত হয়? এখানেও যে সাত।
ঠিক সাত দিনে হয় সপ্তাহ। আর সপ্তাহের সপ্তম দিনে এসেই বিধাতা যান বিশ্রামে, সারা দুনিয়া বানিয়ে দিয়ে। হযরত নূহ (আঃ)কে বলা হয়েছিল তাঁর নৌকায় প্রতিটি শুদ্ধ প্রাণীর ঠিক সাত জোড়া করে উঠিয়ে নিতে। এক্ষণে ভুগোল ঘেটে দেখি - পৃথিবীতে মহাদেশ আছে সাতটি, সমুদ্রও নাকি তাই। ধরণী ছেড়ে আকাশে যাব - সেখানেও আছে সপ্তর্ষি, সাত আসমান। ঐতিহ্যবাহী রোমকে বলে সাত পাহাড়ের শহর। এশিয়া মাইনরের ইস্তাম্বুলও নাকি তাই। অবশ্য নিজে গিয়ে দেখিনি কখনো। তবে ঢাকার মগবাজারের সাত রাস্তার মোড় গুনে দেখেছি। ব্রিটিশ র্যাডক্লিফের কলমের খোঁচায় সেভেন সিস্টার্স ইন্ডিয়ার, নিয়ে গেল সাত রাজার ধন আসাম-ত্রিপুরাও। সর্বযুগের সপ্তাশ্চর্যের একটা কিন্তু আমাদের অতি নিকটে - আগ্রার তাজমহল। সুযলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা ছয় ঋতুর বঙ্গদেশ। সাত ঋতুর দেশও কিন্তু আছে - অষ্ট্রেলিয়ায় ও আমেরিকার কোন কোন জায়গায়। কনফুসিযাসের দেশ চায়নার পবিত্র বংশী-উদ্যানের মহান মুনিঋষিও ছিল ঐ সাতজন।
জনপ্রিয় গোয়েন্দা জেমস বন্ডের নাম্বার জিরো জিরো সেভেন। অন্যদিকে কোকের প্রতিদ্বন্দী কোমল পানীয় - সেভেন আপ। সেভেন ডাউন বলে কিছু আছে কিনা খোদা মালুম। শুনেছি, পুরোনো দিনের মেল ট্রেনে আপ-ডাউন ব্যপারটা ছিল। পাড়ার মোড়ে মোড়ে সেভেন ইলেভেন স্টোর চব্বিশ ঘন্টাই খোলা থাকে পশ্চিমা দেশে। বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানি যাত্রীবাহী বিমান বানায় গন্ডায় গন্ডায়। কিন্তু বিমানের নাম দেয় তিন সংখ্যায়। আশ্চর্য! নামের শুরুতেও সাত, শেষেও কিন্তু ঐ সাত। শক্তিধর আমেরিকা আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলের কান্ট্রিকোড ‘এক’ ছিনিয়ে নিলেও সবচেয়ে চমৎকার কান্ট্রিকোড কিন্তু রাশিয়ার - জ্বী ‘সাত’। দুই পরাশক্তির বাইরে এক ডিজিটের কান্ট্রিকোড পৃথিবীর আর কোন দেশের নাই, আজিব! এই টেলিফোনেই আমরা কত কথা বলি! কথার মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ কথাকে কী বলে? হ্যা, সাত কথার এক কথা। আবার কাউকে বকা-গালি দিবেন - তো ঐ সাত কথা শুনিয়ে দিবেন, তাই না?
জে কে রাওলিং হ্যারি পটার সিরিজের জন্য সাতটি বই লিখেছেন। বইয়ের ছোট্ট হ্যারি জন্ম নিয়েছে জুলাই মাসে, মানে বছরের সপ্তম মাসে। গল্পের হোগওয়ার্ট ম্যাজিক স্কুলের পড়াশুনা মোট সাত বছরের। আর ঐ স্কুলে যাবার জন্য গোপন রাস্তাও ছিল সাতটি। ঐ রাস্তাগুলো গোপন হলেও গান্ধীজি সাতটি সাংঘাতিক ভুলের কথা বলেছেন প্রকাশ্যে। আর এই ভুলের কারণেই পৃথিবীতে এত সহিংসতা হচ্ছে। ভুলগুলো হচ্ছে; শ্রমহীন সম্পদ, বিবেকহীন আনন্দ, চরিত্রহীন জ্ঞান, নৈতিকতাহীন বাণিজ্য, মানবতাহীন বিজ্ঞান, ত্যাগহীন ধর্ম এবং নীতিহীন রাজনীতি। অতি সত্য কথন মাননীয় মহাত্মা!
বিজ্ঞানেও সাতের জয়জয়কার। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বিদ্যমান হাইড্রোজেন মৌল - এর এটমিক নাম্বার কিন্তু সাত। ভূ-ত্বকে সবচেয়ে বেশী আছে যে খনিজ সেটি কোয়ার্টজ। আশ্চর্য! মোহ’স হার্ডনেস স্কেলে কোয়ার্টজের অবস্থান সাত নম্বরে। পোটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন বা পিএইচ নাম্বার দিয়ে কোন তরলের অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব প্রকাশ করা হয়। পানি হচ্ছে অম্ল-ক্ষারের মাঝামাঝি সবচেয়ে নিরপেক্ষ তরল। বিশুদ্ধ পানির পিএইচ কত? হ্যা, সাত। পরিমাপের জন্য এস আই সিস্টেম তথা মেট্রিক পদ্ধতি বহুল প্রচলিত এখন। আমেরিকা বাদে প্রায় সবখানেই চালু আছে এটি। আশ্চর্য! এই পরিমাপের বেইজ ইউনিটও সাতটি - মিটার, কিলোপ্রাম, সেকেন্ড, অ্যাম্পিয়ার, কেলভিন, মোল, ক্যান্ডেলা।
গণিতে সাতের জয় ধুন্দুমার! সাতই হল সর্বনি¤œ সংখ্যা যাকে তিনটি সংখ্যার বর্গের যোগফলে প্রকাশ করা যায় না। ত্রিভুজ আর চতুর্ভূজ হল নিখুঁত জ্যামিতিক চিত্র। তো ত্রিভুজ-চতুর্ভুজের বাহুসংখ্যা যোগ করলে হয় সাত - পারফেক্ট সংখ্যা! জ্বী, পাইথাগোরাস বলেছেন। এখান থেকেই প্রাচীন গ্রিসে এসেছে লাকি সেভেন ধারণাটি! মানুষের স্মরণ রাখার ক্ষমতা কিন্তু অসীম না। মাইলস ল বলে, একজন মানুষ সাধারণত সাতের একটু কম বা বেশী সংখ্যক ঘটনাবলী একসাথে মনে রাখতে পারে। আকাশে মাত্র সাতটি গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবী দেখে খালি চোখে পরিস্কার দেখা যায় - চন্দ্র, সূর্য, বুধ, মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতি আর শনি গ্রহ। যোগ ব্যায়ামের সময় শক্তি সাতটি চক্রে আবর্তিত হয়ে মানুষের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তি ঘটায়।
পবিত্র কোরাণের সুরা ফাতিহার আয়াত মোট সাতটি। সাত সাতটি দোজখের দরজাও সাতটি করে। পবিত্র কাবা তাওয়াফ হয় সাতবার, হজ্জের সময় আল-সাফা আর আল-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে হাঁটাহাঁটিও সাতবার। কোরবানির গরুর সর্বোচ্চ সাত ভাগ হয়, এর বেশী কোনভাবেই নয়। ঢাকার মোহম্মদপুরের বিখ্যাত মসজিদটি সাত গম্ভুজের। এখানের সাত মসজিদ রোড কে না চিনে? হিন্দু ধর্মমতে সাত পাকেই বাঁধা পড়ে। বিখ্যাত হলিউড মুভির নামও সেভেন, কামও সাত পাপের খুনীকে ধরা। জন্মের পরপরই মহামতি বুদ্ধা উত্তর দিকে ফিরে সাতটি পদক্ষেপ দেন মানব মুক্তির জন্য। কারণ সাতটি চরম পাপের কথাই শাস্ত্রে উল্লেখ আছে - লালসা, অতিভোজন, লোভ, আলস্য, ক্রোধ, দ্বেষ, অহংকার। বাইবেলের ওল্ড-নিউ, দুই টেস্টামেন্টেই সাতটি আত্মহত্যার কথা বলা আছে। মানুষের সাতবারই নাকি পূনর্জন্ম হবে কোন কোন ধর্ম মতে।
আদরের চম্পা ঠিক সাত ভাইয়ের পরেই জন্মে ছিল। গুনে গুনে সাত ঘাটের পানি খেয়েই আনাড়ীর বালখিল্য-মুক্তি ঘটে। হ্যান্ডবল খেলে সাত জন মিলে, ওয়াটার পোলোও খেলে সাত জনে। বাংলাদেশ আর নেপালের জাতীয় খেলা কাবাডির প্রতিপক্ষ দলে সাত জন থাকে। সাত চাড়া খেলতে সাতটি চাড়াই লাগে। উন্নত সভ্যতার রোমান সংখ্যা-লেখায় কেবলমাত্র সাতটি অক্ষর আছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীরশ্রেষ্ঠও গুনে গুনে সাত জন। স্টিভেন কোবে সফল মানুষের সাতটি অভ্যাসের কথা বলেছেন। টি এইচ লরেন্স জ্ঞানের সাতটি স্তম্ভের কথা লিখে গেছেন। তিব্বতে সাত বছর থাকা নিয়ে লেখা বইটি হলিউডে মুভি হয়েছে ব্রাড পিটের অভিনয়ে।
সাত মহৎ শিল্পের নন্দনরসে সিক্ত হয়ে বলি, সাত সকালে সাত্তাড়াতাড়ি সাত-পাঁচ ভাবার কী আছে গব্বর সিং? কালিয়ার সাত খুন মাফ করে দাও না। আশ্চর্য! প্রেয়সীকে যেদিন বলেছিলাম, ’তোমাকে ভালোবাসি’ - তখন কিন্তু ভাবিনি এ কথাটিও সাত অক্ষরের! ইংরেজরাও গুনে গুনে সাত অক্ষরে বলে, ’লাভ ইউ’। বেলা শেষের জীবন এখন এমন - সাত চড়েও রা করার জো নেই। ডাক্তাররা বলেন, সাত দিন এন্টিবায়োটিক খেলে তা কার্যকর হয়। শরীরে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠে। সাতের সাথে সহবাস আমাদের চিরন্তন। এন্টিবায়োটিক দিয়ে সাতের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স গড়া যাবে না কোনভাবেই। ছোটবেলার ধাঁধাঁ ছিল; সাতের মধ্যে মা জননী, শেষ কথাটা সবাই জানি - আহ! এ’যে ‘সমাপ্ত‘।
ঠিক সাত দিনে হয় সপ্তাহ। আর সপ্তাহের সপ্তম দিনে এসেই বিধাতা যান বিশ্রামে, সারা দুনিয়া বানিয়ে দিয়ে। হযরত নূহ (আঃ)কে বলা হয়েছিল তাঁর নৌকায় প্রতিটি শুদ্ধ প্রাণীর ঠিক সাত জোড়া করে উঠিয়ে নিতে। এক্ষণে ভুগোল ঘেটে দেখি - পৃথিবীতে মহাদেশ আছে সাতটি, সমুদ্রও নাকি তাই। ধরণী ছেড়ে আকাশে যাব - সেখানেও আছে সপ্তর্ষি, সাত আসমান। ঐতিহ্যবাহী রোমকে বলে সাত পাহাড়ের শহর। এশিয়া মাইনরের ইস্তাম্বুলও নাকি তাই। অবশ্য নিজে গিয়ে দেখিনি কখনো। তবে ঢাকার মগবাজারের সাত রাস্তার মোড় গুনে দেখেছি। ব্রিটিশ র্যাডক্লিফের কলমের খোঁচায় সেভেন সিস্টার্স ইন্ডিয়ার, নিয়ে গেল সাত রাজার ধন আসাম-ত্রিপুরাও। সর্বযুগের সপ্তাশ্চর্যের একটা কিন্তু আমাদের অতি নিকটে - আগ্রার তাজমহল। সুযলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা ছয় ঋতুর বঙ্গদেশ। সাত ঋতুর দেশও কিন্তু আছে - অষ্ট্রেলিয়ায় ও আমেরিকার কোন কোন জায়গায়। কনফুসিযাসের দেশ চায়নার পবিত্র বংশী-উদ্যানের মহান মুনিঋষিও ছিল ঐ সাতজন।
জনপ্রিয় গোয়েন্দা জেমস বন্ডের নাম্বার জিরো জিরো সেভেন। অন্যদিকে কোকের প্রতিদ্বন্দী কোমল পানীয় - সেভেন আপ। সেভেন ডাউন বলে কিছু আছে কিনা খোদা মালুম। শুনেছি, পুরোনো দিনের মেল ট্রেনে আপ-ডাউন ব্যপারটা ছিল। পাড়ার মোড়ে মোড়ে সেভেন ইলেভেন স্টোর চব্বিশ ঘন্টাই খোলা থাকে পশ্চিমা দেশে। বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানি যাত্রীবাহী বিমান বানায় গন্ডায় গন্ডায়। কিন্তু বিমানের নাম দেয় তিন সংখ্যায়। আশ্চর্য! নামের শুরুতেও সাত, শেষেও কিন্তু ঐ সাত। শক্তিধর আমেরিকা আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলের কান্ট্রিকোড ‘এক’ ছিনিয়ে নিলেও সবচেয়ে চমৎকার কান্ট্রিকোড কিন্তু রাশিয়ার - জ্বী ‘সাত’। দুই পরাশক্তির বাইরে এক ডিজিটের কান্ট্রিকোড পৃথিবীর আর কোন দেশের নাই, আজিব! এই টেলিফোনেই আমরা কত কথা বলি! কথার মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ কথাকে কী বলে? হ্যা, সাত কথার এক কথা। আবার কাউকে বকা-গালি দিবেন - তো ঐ সাত কথা শুনিয়ে দিবেন, তাই না?
জে কে রাওলিং হ্যারি পটার সিরিজের জন্য সাতটি বই লিখেছেন। বইয়ের ছোট্ট হ্যারি জন্ম নিয়েছে জুলাই মাসে, মানে বছরের সপ্তম মাসে। গল্পের হোগওয়ার্ট ম্যাজিক স্কুলের পড়াশুনা মোট সাত বছরের। আর ঐ স্কুলে যাবার জন্য গোপন রাস্তাও ছিল সাতটি। ঐ রাস্তাগুলো গোপন হলেও গান্ধীজি সাতটি সাংঘাতিক ভুলের কথা বলেছেন প্রকাশ্যে। আর এই ভুলের কারণেই পৃথিবীতে এত সহিংসতা হচ্ছে। ভুলগুলো হচ্ছে; শ্রমহীন সম্পদ, বিবেকহীন আনন্দ, চরিত্রহীন জ্ঞান, নৈতিকতাহীন বাণিজ্য, মানবতাহীন বিজ্ঞান, ত্যাগহীন ধর্ম এবং নীতিহীন রাজনীতি। অতি সত্য কথন মাননীয় মহাত্মা!
বিজ্ঞানেও সাতের জয়জয়কার। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বিদ্যমান হাইড্রোজেন মৌল - এর এটমিক নাম্বার কিন্তু সাত। ভূ-ত্বকে সবচেয়ে বেশী আছে যে খনিজ সেটি কোয়ার্টজ। আশ্চর্য! মোহ’স হার্ডনেস স্কেলে কোয়ার্টজের অবস্থান সাত নম্বরে। পোটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন বা পিএইচ নাম্বার দিয়ে কোন তরলের অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব প্রকাশ করা হয়। পানি হচ্ছে অম্ল-ক্ষারের মাঝামাঝি সবচেয়ে নিরপেক্ষ তরল। বিশুদ্ধ পানির পিএইচ কত? হ্যা, সাত। পরিমাপের জন্য এস আই সিস্টেম তথা মেট্রিক পদ্ধতি বহুল প্রচলিত এখন। আমেরিকা বাদে প্রায় সবখানেই চালু আছে এটি। আশ্চর্য! এই পরিমাপের বেইজ ইউনিটও সাতটি - মিটার, কিলোপ্রাম, সেকেন্ড, অ্যাম্পিয়ার, কেলভিন, মোল, ক্যান্ডেলা।
গণিতে সাতের জয় ধুন্দুমার! সাতই হল সর্বনি¤œ সংখ্যা যাকে তিনটি সংখ্যার বর্গের যোগফলে প্রকাশ করা যায় না। ত্রিভুজ আর চতুর্ভূজ হল নিখুঁত জ্যামিতিক চিত্র। তো ত্রিভুজ-চতুর্ভুজের বাহুসংখ্যা যোগ করলে হয় সাত - পারফেক্ট সংখ্যা! জ্বী, পাইথাগোরাস বলেছেন। এখান থেকেই প্রাচীন গ্রিসে এসেছে লাকি সেভেন ধারণাটি! মানুষের স্মরণ রাখার ক্ষমতা কিন্তু অসীম না। মাইলস ল বলে, একজন মানুষ সাধারণত সাতের একটু কম বা বেশী সংখ্যক ঘটনাবলী একসাথে মনে রাখতে পারে। আকাশে মাত্র সাতটি গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবী দেখে খালি চোখে পরিস্কার দেখা যায় - চন্দ্র, সূর্য, বুধ, মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতি আর শনি গ্রহ। যোগ ব্যায়ামের সময় শক্তি সাতটি চক্রে আবর্তিত হয়ে মানুষের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তি ঘটায়।
পবিত্র কোরাণের সুরা ফাতিহার আয়াত মোট সাতটি। সাত সাতটি দোজখের দরজাও সাতটি করে। পবিত্র কাবা তাওয়াফ হয় সাতবার, হজ্জের সময় আল-সাফা আর আল-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে হাঁটাহাঁটিও সাতবার। কোরবানির গরুর সর্বোচ্চ সাত ভাগ হয়, এর বেশী কোনভাবেই নয়। ঢাকার মোহম্মদপুরের বিখ্যাত মসজিদটি সাত গম্ভুজের। এখানের সাত মসজিদ রোড কে না চিনে? হিন্দু ধর্মমতে সাত পাকেই বাঁধা পড়ে। বিখ্যাত হলিউড মুভির নামও সেভেন, কামও সাত পাপের খুনীকে ধরা। জন্মের পরপরই মহামতি বুদ্ধা উত্তর দিকে ফিরে সাতটি পদক্ষেপ দেন মানব মুক্তির জন্য। কারণ সাতটি চরম পাপের কথাই শাস্ত্রে উল্লেখ আছে - লালসা, অতিভোজন, লোভ, আলস্য, ক্রোধ, দ্বেষ, অহংকার। বাইবেলের ওল্ড-নিউ, দুই টেস্টামেন্টেই সাতটি আত্মহত্যার কথা বলা আছে। মানুষের সাতবারই নাকি পূনর্জন্ম হবে কোন কোন ধর্ম মতে।
আদরের চম্পা ঠিক সাত ভাইয়ের পরেই জন্মে ছিল। গুনে গুনে সাত ঘাটের পানি খেয়েই আনাড়ীর বালখিল্য-মুক্তি ঘটে। হ্যান্ডবল খেলে সাত জন মিলে, ওয়াটার পোলোও খেলে সাত জনে। বাংলাদেশ আর নেপালের জাতীয় খেলা কাবাডির প্রতিপক্ষ দলে সাত জন থাকে। সাত চাড়া খেলতে সাতটি চাড়াই লাগে। উন্নত সভ্যতার রোমান সংখ্যা-লেখায় কেবলমাত্র সাতটি অক্ষর আছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীরশ্রেষ্ঠও গুনে গুনে সাত জন। স্টিভেন কোবে সফল মানুষের সাতটি অভ্যাসের কথা বলেছেন। টি এইচ লরেন্স জ্ঞানের সাতটি স্তম্ভের কথা লিখে গেছেন। তিব্বতে সাত বছর থাকা নিয়ে লেখা বইটি হলিউডে মুভি হয়েছে ব্রাড পিটের অভিনয়ে।
সাত মহৎ শিল্পের নন্দনরসে সিক্ত হয়ে বলি, সাত সকালে সাত্তাড়াতাড়ি সাত-পাঁচ ভাবার কী আছে গব্বর সিং? কালিয়ার সাত খুন মাফ করে দাও না। আশ্চর্য! প্রেয়সীকে যেদিন বলেছিলাম, ’তোমাকে ভালোবাসি’ - তখন কিন্তু ভাবিনি এ কথাটিও সাত অক্ষরের! ইংরেজরাও গুনে গুনে সাত অক্ষরে বলে, ’লাভ ইউ’। বেলা শেষের জীবন এখন এমন - সাত চড়েও রা করার জো নেই। ডাক্তাররা বলেন, সাত দিন এন্টিবায়োটিক খেলে তা কার্যকর হয়। শরীরে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠে। সাতের সাথে সহবাস আমাদের চিরন্তন। এন্টিবায়োটিক দিয়ে সাতের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স গড়া যাবে না কোনভাবেই। ছোটবেলার ধাঁধাঁ ছিল; সাতের মধ্যে মা জননী, শেষ কথাটা সবাই জানি - আহ! এ’যে ‘সমাপ্ত‘।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।