www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিচিত্র বাঙ্গালী

গল্প : বিচিত্র বাঙ্গালী
‘ফাসেন ইওর সিটবেল্ট, প্লিজ।’
কেবিন ক্রু ক্রমাগত বলেই যাচ্ছে, ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে। ক্রু মেয়েটি বেশ লাস্যময়ী, মুখে ফ্রেমে বাঁধানো জুলিয়া রবার্টস-এর সুন্দর হাসিটা ধরে রেখেছে চমৎকার করে। এদিকে ভদ্রমহিলা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন জুলিয়ার হাসিমুখের দিকে। কিছুই যেন বুঝছেন না। সত্যি সত্যিই বুঝতে পারছেন কিনা একমাত্র তিনি আর অন্তর্যামীই জানেন। ভদ্রমহিলা বসেছেন আমার পাশের সিটে। কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক-মুখ গলানো যাবে না, কোনভাবেই না। বিদেশে থাকার উপজাত হিসেবে পাওয়া এই বিরক্তিকর অভ্যেসটা ঝেড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। একটু বাঁধো বাঁধো লাগছে - দেখি না কী হয়? কৌতূহল বাড়তে থাকে। থার্মোমিটারে পারদের উর্ধ্বগমনের মত কৌতুহূল একশত পাঁচ ডিগ্রী পার হয়ে গেছে অনেক আগেই।
‘প্লিজ, ফাসেন ইওর সিটবেল্ট ম্যাম।’ পুনরায় সেই সুন্দরী ক্রুর কৃত্রিম হাসি। পূর্ব ইউরোপীয় ইংরেজী উচ্চারণ। রোমানিয়া, চেক - এসব কোন দেশের হবে বোধ হয়। বিরক্ত লাগে আমার, মেজাজ বিগড়ে যায়। ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় বিমান সংস্থা। আমাদের বিমান বাংলাদেশের মত। অথচ ক্রু’গুলো সব ইউরোপ-আমেরিকার। মধ্যপ্রাচ্যে না পেলে আমাদের ওখানে ক্রু খুঁজতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষ কি কম আছে? ইউরোপ থেকে আনতে হবে কেন? যত্তসব, রাবিশ! তবে হ্যা, ক্রু মেয়েটার ফর্সা কপালের উপর কালো ভ্রু’জোড়া সত্যিই নজরকাড়া, তীর-ধনুক টাইপের বাঁকানো-টাকানো। ফিনফিনে সাদা মেয়েদের ঘনকালো চুল থাকলেই কেন যেন গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনির কথা মনে পড়ে। আহারে! যুবক বয়সে সাবাতিনি আমাদের অনেকটা জুড়ে ছিল। মেয়েটাকে সাবাতিনি টাইপের লাগছে এখন। তাই চট করেই মায়া পড়ে গেল।
ক্রু বাদ দিয়ে এবার পাশের ভদ্রমহিলার দিকে দৃষ্টি দেই। কালো বোরকায় আপাদমস্তক ঢাকা প্রায়, শুধু মুখটুকু দেখা যাচ্ছে। বোরকায় মুখ ঢাকার জন্য ঢাকনার মত যে কাপড়টা থাকে তা মাথার পিছন দিকে ফেলে দিয়েছেন। শুধুমাত্র মুখ দেখে বয়সের একটা আন্দাজ করা যেতে পারে - মধ্যবয়সী, পঁয়তাল্লিশের আশেপাশে। গায়ের রং তো আর বলা যাচ্ছে না, তবে মুখটা কালোর কাছাকাছি। লিপস্টিক, আইশ্যাডো তো দূরের কথা নাকে নাকফুলও নেই। মেকআপের কোন রকম বালাই নেই। তবে মুখশ্রী মায়াময়, মা-মা, খালাম্মা-খালাম্মা টাইপ। দেখে মনে হয় এখনই আদর করে পাতলা ডাল দিয়ে ভাত খাইয়ে দিবেন। পাশে বসে পাখা দিয়ে বাতাস করবেন আর একটু পর পর আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিবেন। আহারে! ভদ্রমহিলা ভীষণ অপ্রস্তুত এখন।
এয়ার হোস্টেস মুখের ভাষা বাদ দিয়ে শরীরের ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছে - কী করতে হবে। মহিলা এবার আতিপাতি খুঁজছেন সিটবেল্টের দুই প্রান্ত। মুখ দিয়ে অনর্গল নোয়াখালী-চাটগাঁ এরকম ভাষায় বিড়বিড় করেই যাচ্ছেন। কেবিন ক্রু বুঝবে কি, আমিই বুজছি না কিছু!
আশেপাশের যাত্রীদের বিষম কৌতুহূল মহিলার প্রতি। বাঙ্গালী-অভ্যাসে যথারীতি বিভিন্ন মন্তব্য আসছে চারিদিক থেকে।
‘ও চাচী, বেল্ট বাঁইধা ফেলান।’
‘বেল্টটা বান্ধুইননা ক্যারে?’
‘এই বিডির হইছেডা কী? বেল্ট বানপার পারে না, প্লেনে উঠছে ক্যা?’
কমেন্টের মচ্ছব বসেছে যেন! পরিস্থিতি কিন্তু জটিলতর হচ্ছে। আরো দুজন কেবিন ক্রু দৃশ্যেপটে যোগ দিল। একজন অল্পবয়স্কা কালো মেয়ে, কথার টান ক্যারিবিয়ান। নিশ্চিত জামাইকান হবে। বব মার্লের দেশের মানুষ দেখলেই আমি বিষ্মিত হয়ে যাই। ভালবাসায় নিজের অজান্তেই গেয়ে ফেলি, ‘গেট আপ স্ট্যান্ড আপ..’। আরেকজন ক্রু পুরুষ, খাঁটি ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে কথা বলছে; অর্ধেক মুখের ভিতরে রেখে। বেটা ব্রিটিশ, মেজাজ খারাপ হয়। ব্রিটিশ যে একটা গালি আমাদের দেশে!
হট্টগোল ভালই হচ্ছে এখন। কিন্তু প্রব্লেম সল্ভড হচ্ছে না। অগত্যা নিজেই সক্রিয় হই। খেতায় আগুন তোর পারসোনাল স্পেস। মহিলার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপা, দুই হাত সিটের পাশের হ্যান্ডেলটার উপরে রাখেন। এই যে এখানে।’
দু’পাশ থেকে বেল্টের দুই প্রান্ত বের করে ক্লিক করে লাগিয়ে দেই। কেবিন ক্রুদের দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে দেই, ‘ইটস ওভার নাউ।’ ক্রুরা স্বভাবসুলভ ‘থ্যাংক ইউ’ বলে চলে যায়। আর আমি প্লেনের ছোট্ট জানালা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ধু ধু মরুভুমির দিকে তাকাই।
আবুধাবী থেকে ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজের বোয়িং-৭৭৭ এ উঠেছি। বেশ বড় বিমান। তিল-তাল কিছুই ধারণের ঠাঁই নেই, একেবারে হাউজফুল। শ’চারেকের মত যাত্রীতো হবেই। প্রায় সবাই বাঙ্গালী, গর্ব গর্ব লাগছে বেশ। ঢাকার পথে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, চায়না, ব্যংকক থেকে যেসব বিমানে উঠেছি এ পর্যন্ত, এত বড় ছিল না কোনটাই। মুম্বাই, দিল্লী বা করাচীর বড় বড় ফ্লাইটগুলোতে উঠে হিংসে লাগত। আমরা ওদের স্তরে চলে গেছি এখন - ভাবতেই কেমন ভাল ভাল লাগছে। লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী দেশের বাইরে দূরদূরান্তে অনবরত আসাযাওয়া করছে - ভাল লাগবে না!
যথাসময়ে টরন্টো থেকে আবুধাবী নেমেছি। লম্বা ফ্লাইট, তের ঘন্টার মত। ঘুপচিতে বসে থেকে শরীর অবশ হয়ে গেছে যেন। এদিকে ট্রানজিট মাত্র একঘন্টা। তাই নেমেই দৌড়, পড়িমড়ি করে ছুটছি - কানেকটিং ফ্লাইট ধরতে হবে। ডিপারচার লাউঞ্জে এসে চোখ কপালে। লোকে লোকারণ্য, বিচিত্র বাঙ্গালীর হাট বসে গেছে যেন। ‘স্কুল খুইলাছে রে মাওলা’ টাইপের ব্যাপার। সব বয়সের নারী-পুরুষ সম্বলিত, সকলকে নিয়ে দেখার মত। কোলের বাচ্চা থেকে শুরু করে লাঠিভর করা বৃদ্ধও আছেন। পোষাকও বিচিত্র - পুরো বোরকা ঢাকা আবার স্কার্ট-টপসও আছে। স্যুট-টাই থেকে শুরু করে লুঙ্গিও আছে কয়েকজনের। আহারে! প্রিয় লুঙ্গি! কতদিন পরিনি।
মানুষ দেখা আমার নেশার মত। পর্যবেক্ষণ করি? তা বলা যাবে না - কেমন গবেষণা গবেষণা গন্ধ থাকে। আমি গবেষক নই। তাই সরল দু’চোখ ভরে মানুষ দেখি। ক্যারি-অন ব্যাগটা পাশে রেখে একটা ফাঁকা চেয়ারে গিয়ে আরাম করে বসি। পুরো দৃষ্টি অপেক্ষমান যাত্রীদের দিকে। চোখে-মুখে একটা নিস্পৃহ ভাব ঠিকই, কিন্তু ভিতরে লালিত সমস্ত কৌতুহূল যাত্রীদের দিকে। ধীরে ধীরে চোখ বুলাই, টার্মিনেটর মুভির সাইবর্গ রোবটের স্ক্যান করার মত করে।
পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট এখানে। টরন্টোর পিয়ারসন্স এয়ারপোর্টের ডিপারচার লাউঞ্জেও শ’চারেকের মত যাত্রী ছিল। কিন্তু সকলেই চুপচাপ বসেছিল বা কথা বললেও তা ছিল নি¤œস্বরে - অনেকটা ফিসফিসের মত। আর এখানে যেন হট্টগোলের উৎসব বসে গেছে। সবাই কথা বলছে, বেশ উচ্চস্বরেই বলছে। আমি বিস্মিত - প্রত্যেকেই কথা বলছে, তো শুনছে কে? জাতি হিসেবে আমরা আসলেই আওয়াজপ্রিয়। অভিজ্ঞতায় দেখেছি কোন পুলে বাঙ্গালীরা নামলে বাদবাকীরা উঠে চলে যায়। আমাদের চিৎকার-চেচামেচি ওদের বিরক্ত করে নিশ্চয়। তবে আমাদের চেয়েও আওয়াজপ্রিয় জাতি আরো আছে কিন্তু। যেমন নাইজেরিয়ানরা - ওরা সাধারণ কথা বললেও মনে হয় ঝগড়া করছে পরস্পরের সাথে।
বাঙ্গালীর এই মেলায় বিচিত্র সব মানুষের সমাহার এখন! চিপসের প্যাকেট খোলা - খাচ্ছে, গড়িয়ে পড়ছে কিছু নীচে। কমলার খোসা ডাস্টবিনে ফেলার ফুরসৎ নেই যেন। কেউ কেউ পান খাচ্ছে, পিক ফেলার জায়গাও খুঁজছে। লুকিয়ে আঙ্গুলের চুন মুছে দিচ্ছে সিটের কাভারে। পান বস্তুটা কী করে এত আরাম করে খায়, আমার মাথায় ঢোকে না। অবশ্য সকলেই না, সামান্য কিছু মানুষই এরকম করছে। বাকীরা অনেক মার্জিত। তবে হ্যা, চুপ করে নেই কেউ। আমার নিকটে একটা পরিবার আছে। বাবা, মেয়ে আর নাতি - মেয়েজামাই দেশে যেতে চাচ্ছে না বোধ হয়। ভদ্রলোক মেরুণ রঙের স্যুট আর সবুজ টাই পরে আছেন। আবুধাবীর গরমে স্যুট-টাই কোন কাজে লাগবে কে জানে? এয়ারপোর্টে এসির ঠান্ডা থাকলেও তা ঠিক স্যুট-টাই পরার উপযোগী নয়।
ভদ্রলোকের সাদা চুলে কাল রঙ করা ছিল একসময়। জায়গায় জায়গায় সেই রঙ উঠে গেছে। সারা মাথায় কালো আর সাদার ছোপ ছোপ - কেমন বীভৎস লাগছে! চুলে কলপ করার দরকারটা কী? আর লাগাবিই যদি, তো পারমানেন্ট কালি দিয়ে করে ফেলবি। মাথাটা এখন লাগছে পুরোনো আমলের সাদা-কালো ছবির মত। সবচেয়ে বিরক্তিকর হল, উনি দেদারসে পা নাচিয়ে যাচ্ছেন। এরকম একটা পাবলিক প্লেসে সমানে পা নাচিয়ে যাওয়া নিশ্চয় শোভন নয়। মনে মনে ‘খাটাশ’ বলে গালি দিয়ে ফেললাম।
রঙ্গমঞ্চে আরেক স্যুট-টাই এর আগমন আচমকাই। এর আবার চক্রাবক্রা টাই। ভাবখানা ধোপদুরস্ত, পারফিউমের গন্ধ সুদূর ঢাকা থেকে পাওয়া যাবে নিশ্চিত। লাল রংয়ের পাসপোর্টটা এমনভাবে ধরে আছেন যেন সবাই দেখতে পারে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন - দেখো আমারটা সবুজ না। সকলেই যেন বুঝতে পারেন উনি ব্রিটিশ, লন্ডন থেকে এসেছেন। দেশে ঢোকার অব্যবহিত পূর্বের এয়ারপোর্টে এ এক পরিচিত দৃশ্য। লাল, কালো, নীল পাসপোর্ট বাগিয়ে ধরে থাকে। আর সবুজ হলেই পকেটে লুকিয়ে রাখে।
‘আমরা কি মিডল ইস্টের লেবার নাকি? ইউরোপে থাকি, লন্ডন থেকে এসেছি। অথচ, বসার জায়গা পাচ্ছি না। এটা একটা কথা হল?’ ভদ্রলোক রাগে গজগজ করছেন।
আমি চারিদিকে তাকাই একটু। কিছু সিট এখনো খালি আছে, এদিক-ওদিক। তিনি ওসব জায়গায় না বসে এখানে এসে ফুঁসছেন কেন ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে কি ভদ্রলোক চাচ্ছেন কেউ একজন উঠে তাঁকে সিট ছেড়ে দিক। হতেও পারে, খোদ বিলাতি বলে কথা।
আচ্ছা, আমি উঠে গেলে কেমন হয়? এমনিতেই আমার চেহারায় ‘আদেশ পালন কর’ টাইপের মার্কা মারা আছে। উঠে জায়গা করে দিলে নিশ্চয় বেজায় খুশী হবেন ভদ্রলোক। মজারও হতে পারে।
‘স্যার, এখানে বসেন।’ উঠে দাড়িয়ে অত্যন্ত ভক্তিভরে আহ্বান করি।
‘থ্যাংক ইয়ু, থ্যাংক ইয়ু’ বলে তিনি আরাম করে বসেন। সারা মুখে গর্ব মেশানো হাসি। তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দেয়া হয়েছে, খুশী রাখে কে?
গদগদ হয়ে বলেন, ‘লেবারগুলোর জ্বালায় আর পারি না। সবকিছু একেবারে মেস করে ফেলে। আরামে জার্নি করব তারও উপায় নাই। তুমি আবার কিছু মনে কর না। সব লেবার একরকম না।’
‘জ্বি না স্যার, আমি কিছু মনে করিনি। আপনি আরাম করে বসুন। এত দূর থেকে এসেছেন।’
‘আর বলো না আট ঘন্টা প্লেনে বসে থেকে পায়ে খিল ধরে গেছে।’ বলে ভদ্রলোক পায়ের উপর পা উঠিয়ে দিলেন। এতে পায়ের খিল দূর হবে কিনা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে সবুজ টাইয়ের মত ইনি সমানে পা নাচাচ্ছেন না, পদযুগল শান্ত।
‘তোমার পোশাক দেখে ঠিক এদের মত মনে হচ্ছে না।’ উনি একটু আমতা আমতা করেন।
আমার দার্শনিকের স্বর, ‘স্যার, পোশাক দেখে কি মানুষ চেনা যায়? শেখ সাদী করেও দেখিয়েছেন, তাই না?’
ভদ্রলোক বোধ হয় একটু অপ্রস্তুত হন। লেবারের মুখে আবার কি দার্শনিক ভাব! মুহূর্তেই ঝেড়ে ফেলে লন্ডনের গল্প শুরু করে দেন।
আমি হু হা করে চালিয়ে দেই।
‘বাইশ বছর ধরে লন্ডনে আছি, বুঝলে। শুরুতে ব্রিক লেনের দিকে থাকতাম। বাঙ্গালীদের কান্ডকারখানা দেখে কিছুদিনের মধ্যেই বিরক্ত। তাই কেনসিংটনে চলে এসেছি, দামী এলাকা বুঝছ। ব্যবসা-ট্যবসা করে ভালই টাকা হয়েছে। বাড়ীও কিনে ফেলেছি একটা, বেশ বড়। ব্রিটিশ সিটিজেন তো, বাংলাদেশে ঢুকতে গর্ব গর্ব লাগে এখন। লেবারদের সাথে লাইনে দাড়াতে হয় না, ফরেন পাসপোর্ট কাউন্টার দিয়ে সুড়–ৎ করে ঢুকে পরি। আহ!’
মেজাজটা চড়ে যাচ্ছে। খাল কেটে কুমির আনার মত জলজ্যান্ত একটা খবিশ পাশে আনার জন্য নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কষে চড় লাগাবো কিনা তার চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করছি। চড়টা ডান হাত দিয়ে উনার ঠিক বাম গালে আমচমকাই মেরে দিতে হবে। নিশ্চয় বোবা হয়ে যাবেন বিষ্ময়ে!
এদিকে তিনি মহাবিরক্তি নিয়ে বলেই যাচ্ছেন, ‘লেবারগুলোকে দেখ? কী সব খ্যাতমার্কা পোশাক পরেছে। দেশে যাবি ভাল কিছু গায়ে দে। ইংরেজীর তো কিছুই জানে না। বোর্ডিংএর ঘোষণা দেবার আগেই দেখবে হুলুস্থ’ল পড়ে গেছে, কার আগে কে যাবে। জিজ্ঞেস করে দেখ টিকেটের জোন নাম্বার-টাম্বার কিছুই জানে না।’
‘স্যার, আপনার জোন নাম্বার কত?’
‘পাঁচ।’
পিছনের সিটে কে বসেছিল জানি না। গলার স্বর উচু করে বললেন, ‘ভাইজানের দেখি এখানকার প্রবাসী শ্রমিকদের উপর বেজায় গোস্বা।’
আমরা দুজনেই পিছনে তাকাই। ছাই রঙা জ্যাকেট পরা এক ভদ্রলোক, মাথায় বেসবল ক্যাপ।
চক্রাবক্রা টাই মুখ বাকিয়ে বলেন, ‘রাগ হবে না! এরাতো সব গেঁয়ো ভুত।’
‘আপনি ভাল করেই জানেন, আপনার এই ক্ষোভটা ঠিক না। এদের গালি দেওয়া অন্যায়। এরা আপনারটা খায়ও না, পরেও না।’ বেসবল গলার স্বর আরো উঁচু করে।
‘কেন, অন্যায় হবে কেন?’
পিছনের ভদ্রলোক গম্ভীর হন, ‘দেখুন এ কথা দেশের দুগ্ধপোষ্য শিশুও জানে যে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সিংহভাগ গার্মেন্টস কর্মী আর এরা দেয়। আশ্চর্য কি জানেন, এরা দুই টাকা আয় করে পারলে তিন টাকা দেশে পাঠায়।’
‘আমরাও দেশে টাকা পাঠাই।’
‘আপনারা? রাখেন! দুই টাকা আয় করেন, আর দেশ থেকে আরো এক টাকা এনে লন্ডনে বাড়ী কেনেন। তবে হ্যা, সবাই না। এয়ারপোর্টে ভিআইপি মর্যাদা এই প্রবাসী শ্রমিকদের দেয়া উচিৎ, আপনাদের নয়। বরঞ্চ আপনাদের ডুয়েল সিটিজেনের সুবিধাই তুলে নেয়া উচিৎ। প্রতিবার ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবেন। দেখবেন কেমন লাগে?’
‘কী বলছেন আপনি এসব?’
‘আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? নিজেই ভেবে দেখুন, গত বাইশ বছরে কয় পাউন্ড দেশে পাঠিয়েছেন আর কত টাকা দেশ থেকে এনেছেন। হিসাবটা আপনিই সবচেয়ে ভাল জানেন। আরেকটা কথা, এই মানুষগুলোর ইংরেজী জানা খুব একটা জরুরী না। এরা কিছুদিনের মধ্যেই চমৎকার আরবী আর হিন্দি শিখে ফেলে। মধ্যপ্রাচ্যে এই দুই ভাষা জানলে ইংরেজী দিয়ে আপনি করবেনটা কী? এদের পোশাক নিয়ে আপনাকে বিরক্ত মনে হচ্ছে। আপনি বোধ হয় জানেন না, এদের কেউ কেউ সরাসরি কাজ থেকে এয়ারপোর্টে এসেছেন। ফ্যাশান শো করে আসেননি। বাইরে তাকিয়ে দেখুন, এই এয়ারপোর্টের সম্প্রসারণ হচ্ছে। কর্মী মানুষগুলোর চেহারা দেখেছেন? আপনার-আমার মত দেখতে অনেকেই, তাই না?’
আমি চরকির মত ঘুরছি যেন - দু’জনের দিকে দৃষ্টি ফেলছি সমানে। বেসবলের বাউন্সার চক্রাবক্রার সোজা হেলমেটে গিয়ে লেগেছে। তাই ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলেন মনে হল।
মরুকগে, আমার আগ্রহ অন্যদিকে এখন। ছোট্ট একটি পরিবার কাছেই; স্বামী-স্ত্রী আর দুগ্ধপোষ্য শিশু। এদের আধুনিক বলা যায়। অতি আধুনিক কী? মহিলাটি আটোসাটো থ্রি কোয়ার্টার জিন্সের সাথে ঢিলেঢালা টি-শার্ট পরনে, হাসবেন্ড গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট। ইংরেজীতে কথা বলছে, নিজেদের মধ্যে। এরাও ব্রিটিশ সিটিজেন, কথাতেই বুঝা যায়। বাচ্চাটি থেকে থেকে কাঁদছে। আধুনিক হলেও বাচ্চা লালনে মাকে চরম আনাড়ী মনে হচ্ছে। ডে কেয়ারে বাচ্চা বড় করা পরিবার বোঝাই যায়। কান্না থামাতে তাই রীতিমত হিমশিম অবস্থা। যেন অথৈ সাগরে পড়ে লাইফ-জ্যাকেট খুঁজছে। কাছেই মুখ-খোলা আপাদমস্তক কালো বোরকায় ঢাকা ভদ্রমহিলা এক দৃষ্টিতে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আচ্ছে। বোরকার চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ।
এরিমধ্যে ঘোষণা চলে এল, ‘হুইলচেয়ার, বয়স্ক ও শিশুর পরিবার - আপনারা আগে বোর্ডিং করুন।’
কে শোনে কার কথা, কে বোঝে কার কথা - পড়িমরি করে সব ছুটল লাইনের দিকে। আশ্চর্য! সেই ব্রিটিশ চক্রাবক্রা টাই দেখি সবার আগে। উহু, বেসবল ক্যাপ তাঁকে ছাড়বেন কেন? কঠিন মুখে এগিয়ে যান চক্রাবক্রার দিকে।
‘এই যে ভাই, আপনাকে ডাকেনি তো, লাইনের আগে কেন দাড়িয়েছেন?’ স্যার-ট্যার বাদ দিয়ে সরাসরি আক্রমণ।
চক্রাবক্রা টাই থতমত খেয়ে গেছেন। পুরাই টাস্কি! হঠাৎ করে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন ভদ্রলোক। বেসবল ক্যাপ ছাড়ার পাত্রই না, ‘আপনার জোন নম¦র পাঁচ। যখন ডাকবে তখন আসবেন। বের হন, লাইন থেকে বের হন। আপনি নিয়ম জানেন, নিয়মমাফিক লাইনে দাড়াবেন।’
নিতান্ত অনিচ্ছায় মাথা নীচু করে লাইন থেকে বের হন তিনি। আমি পাশ থেকে দুঃখ দুঃথ গলায় বলি, ‘স্যরি, স্যার। নিয়ম মানা খারাপ কিছু না।’
চার আর পাঁচ নম্বর জোন একসাথে ডাকে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই আমরা। প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে পাসপোর্টটা বের করি। আমার হাতে কানেইডিয়ান পাসপোর্ট দেখে ভদ্রলোকের আঁতকে উঠার মত অবস্থা। তুমি বাদ দিয়ে আপনিতে চলে এসেছেন নিমিষেই, ‘আপনি কানাডা থাকেন? একথা আগে বলবেন না?’
আমি মৃদু স্বরে বলি, ‘স্যার, এটা বলার মত কোন কথা না। ঘটনাচক্রে আবার কোন কোন সময় দূর্ভাগ্যক্রমে দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকতে হয়। আমি ভীষণভাবে দুঃখিত এবং লজ্জিত এজন্যে। তাই সবসময় চোরের মত দেশে ঢুকি, আবার চোরের মত বের হয়ে যাই। কী লজ্জা! কী অপমান!’
চক্রাবক্রা টাই কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে, বোবা হয়ে গেছেন যেন। এরকম করে শোনেন নাই কোনদিন নিশ্চয়। এদিকে বেসবলের সপ্রশংস দৃষ্টি আমাক দিকে।
বাঙ্গালীদের প্লেনে উঠা এবং সিটে বসার দৃশ্যটা খুবই মজার। একবার দেখলেই আজীবন মনে থাকে। সাড়ে আটশ যাত্রীর এয়ারবাস-৩৮০ সুশৃংখলভাবে যথাসময়ে অনবোর্ড হয়ে রানওয়ে ছেড়ে যায়। আর আমাদের ক্ষেত্রে পুরাই উল্টা। কারো কোন তাড়াহুড়া নাই, সামান্য ব্যস্ততাও নাই; কেমন উৎসব উৎসব ভাব। বোর্ডিংয়ের জন্য মানুষ পিছনে দাড়িয়ে আছে, কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। আইলে দাড়িয়ে গল্প করছে, হাসছে - যেন সিটে বসার চেয়ে আইলে দাড়িয়ে থাকায় মহা আনন্দ এদের। অনেকটা সময় নিয়ে ক্যারি-অন ব্যাগ রাখছে। ব্যাগ রাখা নিয়ে এরওর সাথে ঝগড়াও বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার সিটই খুঁজে পাচ্ছে না, বোর্ডিং পাসের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চারিদিকে ঈদ ঈদ ব্যাপার-স্যাপার, হর্ষোৎফুল্ল পরিবেশ!
ইউরোপ-আমেরিকা থেকে যারা এসেছেন তাদের বিরক্তি চরমে। ইংরেজীতে ‘এফ’-জাতীয় গালিগালাজ দিয়ে ফেলছেন কেউ কেউ। সেই অতি আধুনিক ছোট্ট পরিবারটিকেও দেখা যাচ্ছে, সমানে বিরক্তি প্রকাশ করে যাচ্ছে। ওদের বিরক্তির অবশ্য কারণ আছে - বাচ্চাটা বেশ কাঁদছে। তাই তাড়াতাড়ি সিটে বসতে চাচ্ছে।
এহেন পরিস্থিতিতে পাশের সিটের সেই ভদ্রমহিলার সিটবেল্ট বাঁধার নাটক। প্লেন টেকঅফের সময় বেশ আগেই পার হয়ে গেছে। এসব নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই। আমার কাছেও খারাপ লাগছে না। আওে, এসেই তো গেছি প্রায়। মাত্র ঘন্টা চারেক বাকী আছে। যাই ধীরেসুস্থে।
সবাই মিলে সেই ভদ্রমহিলার গুষ্ঠি উদ্ধার করছে। বিশেষ করে ঐ ছোট বাচ্চাওয়ালা আধুনিক পরিবারের মন্তব্য বেশ আপত্তিকর হয়ে দাড়াল। ভাগ্যিস ভদ্রমহিলা ইংরেজী বুঝেন না।
চারিদিকে সমুদ্রের গর্জন তুলে বোয়িং-৭৭৭ আকাশে উঠে যায়। এদিকে বাচ্চাটাও কাঁদছে প্লেনের সাথে পাল্লা দিয়ে। বাচ্চার মা’টা কী করছে কে জানে? একটা বাচ্চার কান্না থামাতে পারে না তো তাঁকে মা হতে কে বলেছে? প্লেন আকাশে উঠে গেছে অনেকক্ষণ। তবে সিটবেল্ট বাঁধার সাইন তখনও আছে। পাশের কালো বোরকাওয়ালী বলেন, ‘ভাইজান, এই বেল্ডডা খুইল্লা দ্যান তো।’
আমি একটু থতমত! যাহোক ক্লিক করে বেল্টটা খুলে দেই। উনি ঝট করে সিট থেকে উঠে বাচ্চাটার কাছে চলে যান। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘পোলাডারে আমার কাছে দেন?’
সেই মডার্ন মায়ের চোখে বিষ্ময়! কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। এদিকে বাচ্চাটা অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছে। কানে উচ্চতাজনিত চাপের কারণে কাঁদছে, তা বোধ হয় না। প্লেন আকাশে উঠে গেছে বেশ কিছুক্ষণ। বাচ্চাটি এয়ারপোর্টেও থেকে থেকে কেঁদেছিল। ক্ষুধা লাগছে বা কোন কিছুতে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে বাচ্চাটার। বাবা-মার নিশ্চয় বিরক্ত লাগছে একটু। স্বামীর দিকে চায় একবার মেয়েটি।
‘দিয়ে দাও।’ স্বামী মাথা ঝাকিয়ে বলে।
বাচ্চাকে নিয়ে নিজের সিটে চলে এসেছেন ভদ্রমহিলা। নিশ্চয় যাদুটাদু জানেন তিনি। কেমন গুটুর গুটুর করছে বাচ্চাটির সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটির কান্না উধাও। পিট পিট করে ভদ্রমহিলার দিকে তাকাচ্ছে, আর হাসছে খিলখিল করে। এদিকে ভদ্রমহিলা রাগে গজগজ করছেন, ‘কেমন মা হইছে! একখান পোলা পালবার পারে না। খালি ফডর ফডর ইংরেজী কয়।’
আশেপাশের যাত্রীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। ‘খালাম্মা কি ডাইনি-টাইনি নাকি?’
‘তুকতাক নিশ্চয়ই জানেন, নইলে এত সহজে কান্দন থামাই দিল!’
আমি অবাক হয়ে ভদ্রমহিলাকে দেখি। একটু আগে সিটবেল্ট বাঁধা নিয়ে সবাই মিলে কী গালাগালিটাই না দেয়া হলো! অশিক্ষিত, গেয়ো। অথচ মা হিসেবে কতটা শিক্ষিত তিনি। পয়সা খরচ করে ডে-কেয়ারে বাচ্চা রাখি আমরা। ওদের সার্ভিস আছে কিন্তু এই ফ্যামিলি টাচটা নাই। প্রত্যেকটা বাচ্চাকে একেকটা ক্লায়েন্ট ধরা হয়। অথচ আমাদের মা-বোনদের কোন ক্লায়েন্ট নেই - শুধুমাত্র ফ্যামিলি আছে। আছে ফ্যামিলি টাচ - ভালবাসার ছোঁয়া। তা নিজেদের সন্তানই হোক, আর অন্যের সন্তান হোক। আমি খেলতে থাকা বাচ্চাটির দিকে নিস্পলক চেয়ে থাকি। চেনা নাই জানা নাই কোন এক মায়ের সাথে আপনমনে খেলছে। আমার মুগ্ধ দৃষ্টি ঘুরে ফিরে মহিলার অনাবৃত মমতাময়ী মুখে খেলা করে। জয়তু মা, আমার বাংলার শ্বাশত মা।
ভাবনা পেয়ে বসে আমায়। বড় বিচিত্র আমার দেশ। বড় বিচিত্র আমরা! পুরো দেশটা ভরে আছে বিচিত্র সব মানুষে!! বিচিত্র বাঙ্গালী দিয়ে!!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১০৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৯/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সোহাগ রায় ০১/০১/২০১৮
    চালিয়ে যান
  • এম এম মেহেরুল ২১/০৯/২০১৭
    সুন্দর
  • ন্যান্সি দেওয়ান ১৬/০৯/২০১৭
    Darun
  • নীল আকাশ ১২/০৯/২০১৭
    অনেক সুন্দর গল্প । এ রকমভাবে লিখে এগিয়ে যান । আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল ।
  • ফয়জুল মহী ১০/০৯/২০১৭
    পুলকিত করা প্রকাশ
  • প্রিয় লেখক,

    অনেক পরিপক্ক হাতের লেখা মনে হচ্ছে।লেখা চালিয়ে গেলে অনেক বড় কিছু করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস।আজকাল ফেসবুকীয় কিছু কদর্য লেখার ভীড়ে ভাল লেখা চোখে পড়ে না।এজন্য ব্লগ সাইট ভরসার জায়গাটা দখল করে আছে।তবে দিনশেষে পৃষ্ঠা উল্টানো বইয়েই ডুব দিতে ইচ্ছে করে।ভাল লেখাগুলো পত্রিকার সাহিত্য পাতায় পাঠান কিনা জানি না।তবে পাঠানো উচিত।লেখা প্রকাশ পাবে এরকম আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে।একই লেখা একাধিক পত্রিকায় পাঠাবেন না।তবে না প্রকাশ পেলে তিনমাস পরে অন্য পত্রিকায় পাঠাতে পারেন।এই ব্লগে সাম্প্রতিক সময়ে যতগুলো লেখা আপনার পড়েছি ভাল লেগেছে।আশা রাখি আরো ভাল লেখা পাবো।শুভকামনা।
    • আবু সাইদ লিপু ১০/০৯/২০১৭
      ভাললাগায় আপ্লুত হয়ে গেলাম। সাত আট মাস হলো আনাড়ী হাতে লেখালেখী নামের এই বালখিল্য কাজটি করছি। তবে এরকম মন্তব্য এই প্রথম। ধন্যবাদ দিব না। তাহলে ছোট করা হবে।
 
Quantcast