গল্পটা শুধুই আমার তোমার নয়
টাইটেলঃ গল্পটা শুধুই আমার, তোমার নয়।
স্বার্থপর, এই শব্দটি আমি তোমার মুখ থেকে যে কতবার শুনেছি, ঠিক মনে করতে পারছিনা। সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত হরহামেশাই শুনতে হয়। আমার ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে কথাটি দিনের মাঝে কতবার বলো, টুকে রাখি।
আদ্রিয়ানা, নামটা বড় বিদঘুটে। এটা আমার নাম! এই নিঃসার্থ দুনিয়ার একমাত্র স্বার্থপর ব্যক্তি বলছি। তনয়ের কথা শুনে আমার মাঝেমধ্যেই এমনটা মনে হয়। তনয়, মানে আমার তুমি, যে কিনা সম্পর্কে- আমার হাসবেন্ড। গোলগাল চেহারা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখগুলো মায়ায় ভরা, লম্বায় আমার থেকে ১ ফুট লম্বা। ৫ ইঞ্চি হিল পড়তাম যাতে ওর থেকে ৭ ইঞ্চি ছোট হই। আমার কাছে মনে হয় ওর চেহারা আর চারিত্রিক সংমিশ্রণ ঘটালে খানিকটা ডাকু সর্দারের মত লাগবে। আসলে খানিক ওরকমই। ওর কথা বাদ দেওয়া যাক।
আসল কথায় আসি। প্রত্যেক মানুষের জীবনই অজস্র ঘটনা সম্বলিত। আমার জীবনটিও তাই। তনয় যে আমাকে স্বার্থপর বলে, তার যথেষ্ট কারণ আছে। ও ঠিক ভোর ৬ টায় উঠে আমার জন্য নাস্তা তৈরী করে-নিজে রেডি হয়, তারপর সবকাজ শেষে আমাকে ডেকে তুলে! একসাথে নাস্তা খাওয়ার জন্য। বেশির ভাগ সময়ই আলসেমি করে ওঠাই হয়না। তখন একটু অভিমানে সুরে বলে, "তুমি বড্ড স্বার্থপর "। তবু ধমকের সুরে কিচ্ছু বলে না।তারপর সুন্দর মত সবকিছু পরিপাটি করে অফিসে চলে যায়।
আমি রাজরানীর মত আস্তে ধীরে উঠে ওর হাতে তৈরিকৃত নাস্তা খাই। হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর।
এরপর দুপুর হয়। ও বাসায় চলে আসে একসাথে আমার সাথে খাবে বলে। বেশির ভাগ দিনই আমার রাঁধতে দেরী হয়। ও চলে আসে, এসে যখন দেখে কোন খাবার তৈরী হয়নি আমাকে কিচ্ছু না বলে চুপচাপ রেষ্টুডেন্ট থেকে খাবার নিয়ে চলে আসে। আমাকে বলে, "ঠিক আছে। এসো খেতে এসো।" আমাকে আস্তে করে বলে, "স্বার্থপর!"যদিও মুখে বলে না,তবু আমি শুনতে পাই।ওর চোখের সাথে কথা বলাটা আমার কেমন অভ্যাস হয়ে গেছে।
হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর। বিকেল হলে ওর ইচ্ছা হয় ঘুরতে । দুজন মিলে বের হব, একসাথে ফুচকা চটপটি খাব। নাহ্, আমি তাতেও তোমার সাথে বেরুতে রাজি হইনা। এই বাহানা, ওই বাহানা সবসময় লেগেই থাকে। হ্যাঁ, তোমার না বলা স্বার্থপর কথাটা তখনও শুনতে পাই। ইচ্ছা হয়না ওকে কষ্ট দিতে কিন্তু আলসেমির কাছে আমি পরাজিত।
এত আদর যত্নে কেউকি তার বউকে রাখে। তনয় রাখে। কোন কিছুতে তার কোন অভিযোগ নেই। শুধু ওর চোখের গভীরের ভাষা বলে দেয় বারবার, "তুমি এতটা স্বার্থপর কেন? কতই না করছি তোমার জন্য!? এতটুকু সময় কি আমার প্রাপ্য নয়??"
আমি আমার নামটির মতই বড় বিদঘুটে ধরণের স্বার্থপর। বাড়ি থেকে জোড় করে বিয়ে দেননি। বাসা থেকে সব ঠিক ঠাক হয়ে ছয় সাত মাস চুটিয়ে প্রেমের পর আমাদের বিয়ে হয়। সব ঠিকঠাক মতই চলছিল। আমাদের ২ বছরের সংসার।
হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। রোড এক্সিডেন্ট! তনয় এর তেমন কোন ক্ষতি না হলেও, আমি আমার দুইপা হারালাম। প্যারালাইজড। দুইপা পুরো অবশ।
একটা খোঁড়া, স্বার্থপর মানুষটির সাথে তুমি এতটা দিন কি করে কাঁটাতে পারলে!? কেন চলে গেলেনা।? তুমি তো চাইলেই কোন সুস্থ্য সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করতে পারতে। কেন আগলে রাখলে আমায় চোখের জলে?আমিতো তোমায় ভালবাসতেও ভুলে গেছিলাম!
আজ প্রায় ৪০বছর হয়ে গেল আমাদের বিয়ের। আমার স্বার্থপরতা আমাকে ভীষণ পোড়াচ্ছে।
আমার মেয়ে আরিশা, এখন অনেক বড় ডাক্তার। এতটাই স্বার্থপর আমি, তনয়ের দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহারটিও আগলে রাখতে পারিনি। এক্সিডেন্ট এরপর আরিশার ৬ মাস বয়স থেকে নানুর কাছেই মানুষ হয়েছে।বড় হওয়ার পরে মাঝেসাঝে আসত। কখনো আগলে রাখতে পারিনি আমি ওকেও। মায়ায় জড়াতে পারিনি কখনো। তবু তো মা,ভালবাসা তো আছেই।
আমি চিন্তিত। হাসতাপালের করিডোরে হুইলচেয়ারে বসে আছি। আরিশা আমার কাছে এলো,এসে খুব শান্তগলায় বলল,"মা, আমি পারলাম না। বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা কর মা।" বুঝলাম আমার স্বার্থপরতার সাজা তনয় আমাকে ৪০ বছর পর দিচ্ছে।
হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে আছি। তনয় আসছে। আমি দেখতে পাচ্ছি ওকে। সুন্দর সাদা রঙের জামা পরিহিত। আজকে ওকে আরোবেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। স্বার্থপর এই দুনিয়া থেকে তার বিদায় হয়েছে। আমি আজো ওকে জড়িয়ে ধরিনি। নিথর বসে আছি।
আরিশা বলল," বাবাকে একটু ছোঁবেনা? "
আমি আজও স্বার্থপরের মত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওর নিথর শরীরটাকে ছুঁয়ে দেখলাম না।
ভাবছি এই মানুষটা কতটাই না স্বার্থপর, আমাকে না নিয়ে শেষ বয়সে কেমন করে চলে গেল! আমাকে ৪০ টা বছর আগলে রেখে এখন সে আমার সাথে প্রতারণা কেমন করে করতে পারল? টুপ করে এক ফোঁটা জল ওর কপালে এসে পড়ল। আমি মুছে দিতে গিয়ে কপালটা ছুঁয়ে ফেললাম।কেমন শীতল!! কেমন উষ্ণ কপাল। কেমন করে পারল,ও! বড় বেশি অভিমান হচ্ছে।
আরিশা বলল," মা,ওঠো! বাবার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে "! তনয় চলে যাচ্ছে খাটিয়ায় করে। আর আমি স্বার্থপরের মত গল্প লিখছি! গল্পটিও শেষমেষ তোমার করিনি। নাম দিয়েছি, " গল্পটি শুধু আমার,তোমার নয়"! আজ চলে গিয়েও তুমি আমার স্বার্থপরতার কাছে পরাজিত।
স্বার্থপর, এই শব্দটি আমি তোমার মুখ থেকে যে কতবার শুনেছি, ঠিক মনে করতে পারছিনা। সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত হরহামেশাই শুনতে হয়। আমার ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে কথাটি দিনের মাঝে কতবার বলো, টুকে রাখি।
আদ্রিয়ানা, নামটা বড় বিদঘুটে। এটা আমার নাম! এই নিঃসার্থ দুনিয়ার একমাত্র স্বার্থপর ব্যক্তি বলছি। তনয়ের কথা শুনে আমার মাঝেমধ্যেই এমনটা মনে হয়। তনয়, মানে আমার তুমি, যে কিনা সম্পর্কে- আমার হাসবেন্ড। গোলগাল চেহারা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখগুলো মায়ায় ভরা, লম্বায় আমার থেকে ১ ফুট লম্বা। ৫ ইঞ্চি হিল পড়তাম যাতে ওর থেকে ৭ ইঞ্চি ছোট হই। আমার কাছে মনে হয় ওর চেহারা আর চারিত্রিক সংমিশ্রণ ঘটালে খানিকটা ডাকু সর্দারের মত লাগবে। আসলে খানিক ওরকমই। ওর কথা বাদ দেওয়া যাক।
আসল কথায় আসি। প্রত্যেক মানুষের জীবনই অজস্র ঘটনা সম্বলিত। আমার জীবনটিও তাই। তনয় যে আমাকে স্বার্থপর বলে, তার যথেষ্ট কারণ আছে। ও ঠিক ভোর ৬ টায় উঠে আমার জন্য নাস্তা তৈরী করে-নিজে রেডি হয়, তারপর সবকাজ শেষে আমাকে ডেকে তুলে! একসাথে নাস্তা খাওয়ার জন্য। বেশির ভাগ সময়ই আলসেমি করে ওঠাই হয়না। তখন একটু অভিমানে সুরে বলে, "তুমি বড্ড স্বার্থপর "। তবু ধমকের সুরে কিচ্ছু বলে না।তারপর সুন্দর মত সবকিছু পরিপাটি করে অফিসে চলে যায়।
আমি রাজরানীর মত আস্তে ধীরে উঠে ওর হাতে তৈরিকৃত নাস্তা খাই। হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর।
এরপর দুপুর হয়। ও বাসায় চলে আসে একসাথে আমার সাথে খাবে বলে। বেশির ভাগ দিনই আমার রাঁধতে দেরী হয়। ও চলে আসে, এসে যখন দেখে কোন খাবার তৈরী হয়নি আমাকে কিচ্ছু না বলে চুপচাপ রেষ্টুডেন্ট থেকে খাবার নিয়ে চলে আসে। আমাকে বলে, "ঠিক আছে। এসো খেতে এসো।" আমাকে আস্তে করে বলে, "স্বার্থপর!"যদিও মুখে বলে না,তবু আমি শুনতে পাই।ওর চোখের সাথে কথা বলাটা আমার কেমন অভ্যাস হয়ে গেছে।
হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর। বিকেল হলে ওর ইচ্ছা হয় ঘুরতে । দুজন মিলে বের হব, একসাথে ফুচকা চটপটি খাব। নাহ্, আমি তাতেও তোমার সাথে বেরুতে রাজি হইনা। এই বাহানা, ওই বাহানা সবসময় লেগেই থাকে। হ্যাঁ, তোমার না বলা স্বার্থপর কথাটা তখনও শুনতে পাই। ইচ্ছা হয়না ওকে কষ্ট দিতে কিন্তু আলসেমির কাছে আমি পরাজিত।
এত আদর যত্নে কেউকি তার বউকে রাখে। তনয় রাখে। কোন কিছুতে তার কোন অভিযোগ নেই। শুধু ওর চোখের গভীরের ভাষা বলে দেয় বারবার, "তুমি এতটা স্বার্থপর কেন? কতই না করছি তোমার জন্য!? এতটুকু সময় কি আমার প্রাপ্য নয়??"
আমি আমার নামটির মতই বড় বিদঘুটে ধরণের স্বার্থপর। বাড়ি থেকে জোড় করে বিয়ে দেননি। বাসা থেকে সব ঠিক ঠাক হয়ে ছয় সাত মাস চুটিয়ে প্রেমের পর আমাদের বিয়ে হয়। সব ঠিকঠাক মতই চলছিল। আমাদের ২ বছরের সংসার।
হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। রোড এক্সিডেন্ট! তনয় এর তেমন কোন ক্ষতি না হলেও, আমি আমার দুইপা হারালাম। প্যারালাইজড। দুইপা পুরো অবশ।
একটা খোঁড়া, স্বার্থপর মানুষটির সাথে তুমি এতটা দিন কি করে কাঁটাতে পারলে!? কেন চলে গেলেনা।? তুমি তো চাইলেই কোন সুস্থ্য সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করতে পারতে। কেন আগলে রাখলে আমায় চোখের জলে?আমিতো তোমায় ভালবাসতেও ভুলে গেছিলাম!
আজ প্রায় ৪০বছর হয়ে গেল আমাদের বিয়ের। আমার স্বার্থপরতা আমাকে ভীষণ পোড়াচ্ছে।
আমার মেয়ে আরিশা, এখন অনেক বড় ডাক্তার। এতটাই স্বার্থপর আমি, তনয়ের দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহারটিও আগলে রাখতে পারিনি। এক্সিডেন্ট এরপর আরিশার ৬ মাস বয়স থেকে নানুর কাছেই মানুষ হয়েছে।বড় হওয়ার পরে মাঝেসাঝে আসত। কখনো আগলে রাখতে পারিনি আমি ওকেও। মায়ায় জড়াতে পারিনি কখনো। তবু তো মা,ভালবাসা তো আছেই।
আমি চিন্তিত। হাসতাপালের করিডোরে হুইলচেয়ারে বসে আছি। আরিশা আমার কাছে এলো,এসে খুব শান্তগলায় বলল,"মা, আমি পারলাম না। বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা কর মা।" বুঝলাম আমার স্বার্থপরতার সাজা তনয় আমাকে ৪০ বছর পর দিচ্ছে।
হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে আছি। তনয় আসছে। আমি দেখতে পাচ্ছি ওকে। সুন্দর সাদা রঙের জামা পরিহিত। আজকে ওকে আরোবেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। স্বার্থপর এই দুনিয়া থেকে তার বিদায় হয়েছে। আমি আজো ওকে জড়িয়ে ধরিনি। নিথর বসে আছি।
আরিশা বলল," বাবাকে একটু ছোঁবেনা? "
আমি আজও স্বার্থপরের মত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওর নিথর শরীরটাকে ছুঁয়ে দেখলাম না।
ভাবছি এই মানুষটা কতটাই না স্বার্থপর, আমাকে না নিয়ে শেষ বয়সে কেমন করে চলে গেল! আমাকে ৪০ টা বছর আগলে রেখে এখন সে আমার সাথে প্রতারণা কেমন করে করতে পারল? টুপ করে এক ফোঁটা জল ওর কপালে এসে পড়ল। আমি মুছে দিতে গিয়ে কপালটা ছুঁয়ে ফেললাম।কেমন শীতল!! কেমন উষ্ণ কপাল। কেমন করে পারল,ও! বড় বেশি অভিমান হচ্ছে।
আরিশা বলল," মা,ওঠো! বাবার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে "! তনয় চলে যাচ্ছে খাটিয়ায় করে। আর আমি স্বার্থপরের মত গল্প লিখছি! গল্পটিও শেষমেষ তোমার করিনি। নাম দিয়েছি, " গল্পটি শুধু আমার,তোমার নয়"! আজ চলে গিয়েও তুমি আমার স্বার্থপরতার কাছে পরাজিত।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সৌরভ তালুকদার ২০/০২/২০১৮বা,, বেশ দারুন
-
রেজাউল রেজা (নীরব কবি) ০৯/০২/২০১৮খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।অনেক ভালো লাগল।
-
নীলসাগর ০৭/০২/২০১৮ভাল লেগেছে
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৯/০১/২০১৮মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।