www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি মধ্যরাতের গল্প

রাত ১১:৩০-
হঠাৎ এক অদ্ভুত শব্দে ঘুম ভাংলো নিঝুমের্। নিভু নিভু আলোর মাঝে আস্তে আস্তে পিটপিট করে চোখ খুলতে চাইল নিঝুম। কিন্তু কিছুতেই পারছেনা সে।তার কাছে মনে হল কোন এক অশুভ শক্তি তার চোখ গুলোকে জোড় করে বেধে রেখেছে।সুপার গ্লু দিয়ে যেনো কেউ তার চোখের পাতাগুলোকে এক করে রেখেছে।

শব্দের তীব্রতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। অদ্ভুত এক ভয়াবহতা জড়ানো শব্দ। কান্না বিজড়িত সুরে কে যেনো রাতের আধারকে আরো বেশী থমথমে আর ভৌতিক করে তুলেছে।

ঠিক কীসের আওয়াজ তার আচ করতে পারছেনা সে। এটা কী বিড়ালের কান্না?! কিন্তু তাদের বাসায় তো কোন বিড়াল নেই। আর তাদের সাততলা বাসায় বিড়ালই বা কীভাবে আসবে?!ঠিক এমন শব্দ সে কখনোই শোনেনি।

হঠাৎ শব্দটি ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে তার ঠিক তার কানের খুব কাছে চলে আসে। ঠাস করে কান ছুয়ে আবার উধাও হয়ে যায়। ঘামে তার পুরো শরীর ভিজে গেছে। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে।

আবার সব কিছু নিশ্চুপ।
নিঝুম এখনো চোখ খুলতে পারেনি। তার খুব পূর্বের স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো।

ভালোই তো ছিল তার জীবন।
বাবা মার বড় সন্তান সে। বাবার রিটায়ারমেন্টের পর সমস্ত সংসারের দায়িত্ব তার্। ছোট্ট একটা ভাই আর ছোট্ট একটা বোন।নিনিত আর নিসর্গ। দুই ভাইবোন কে সে পাগলের মত ভালবাসে।সারাদিন পর অফিস শেষে তারা যখন তিন ভাই বোন একত্র হয়, তখন পুরো ঘর যেনো স্বর্গভুমি হয়ে উঠে।নিঝুমও সব ভুলে তাদের সাথে মিশে যায়। নিনিত আর নিসর্গ তার পুরোটা অংশ জুড়েই আছে।

হঠাত সে ভীত হয়, তার কিছু হলে তাদের কী হবে? তার অসামর্থ্যতায় যে তার বাবা মাও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে।তার চোখের কোণ বেয়ে বেয়ে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছে। সে তো কখনো কাদেনা। তার পরিবারের পরিস্থিতি তাকে কঠোর করেছে। আবার সেই পরিবারের দূর্বলতাই তাকে অশ্রুসিক্ত করছে।

সে ভাবতে থাকে, সে কী আর কখনোই চোখ খুলতে পারবেনা। সে কী তার ভাইবোন দের কখনোই দেখতে পাবেনা?

অন্ধদের নাকি শ্রবণশক্তি প্রখর হয়। আর তাদের ঘ্রাণশক্তিও প্রবল। তারও মনে হতে শুরু করল, হয়তো তার শ্রবনশক্তিওপ্রবল হতে শুরু করেছে।
ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ যেন গাঢ় হতে গাঢ়তর হতে চলেছে।তার মনে হল কেউ যেনো তার কানের মধ্যে ছুটির ঘন্টা বাজাচ্ছে। হাতটা দিয়ে কানটাকে যত জোড়ে সম্ভব ততটুকু দিয়েই বন্ধ করার চেষ্টা করল। না, কিছুতেই না। এ শব্দ যেন তার কানের পর্দা ভেদ করে অন্ত্র পর্যন্ত পৌছাচ্ছে।

হঠাৎ একটা শীতল হাওয়া অনূভুত হল। এক ঝলক আলোর উপস্থিতি সে লক্ষ্য করল।
মানুষ চোখ বন্ধ রেখেও আলোর উপস্থিতি বুঝতে পারে। তাহলে সে অন্ধ হয়ে যায়নি।খানিকটা স্বস্তি পেল সে।পরক্ষনেই আলো টা নিভে গেল। একটা বিকট শব্দে তার কানের তালা ফেটে যায় যায় অবস্থা। তার শরীর থেকে তড়তড় করে ঘাম ঝরছে।
অঝড়ে তার চোখ বেয়ে অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
উপর থেকে তুলোর মত তার মাথার উপর কী যেনো পড়ছে।সে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। সে পুরো কান্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। সে কী তাহলে তার মৃত্যুর শেষ প্রহর গুনছে?!

আরেকটা বিকট শব্দ!!!! অবিরত তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আরেকটু জোড়ে চোখ খোলার চেষ্টা করাতেই তার চোখ খুলে যায়। চোখ খুলে সে পুরো হতবম্ব। তার উপর থেকে পার্টি স্প্রে পড়ছে। আর নিনিত তার কানের পাশে বোম ফাটাচ্ছে। বাবা মাও দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসছে।ঘটনা বুঝতে আর বাকী নেই তার্। (কালই সে নিনিতের জন্য গাম কিনে এনেছিল। ওইটা দিয়ে নাকি সে ঘুড়ি বানাবে।এখন সে নিজের কেনা গামের শিকার্।গামের কারণেই সে চোখ খুলতে পারছিলনা।চোখের জলে গাম গলে যেতেই সে চোখ খুলতে পারে)
সে রেগে গিয়ে নিনিতের দিকে ক্ষীপ্তবেগে উঠে যেতেই
একসাথে সবাই চিতকার করে ওঠে, happy birthday to u.Happy birthday to u.(অতি ব্যস্ততায় নিঝুম তার জন্মতারিখও ভুলে গেছিল)

এবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো ঘরময় বেলুন আর ফুলসজ্জিত।
এবার খানিক রেগে গিয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে-
-বাবা,তুমিও!!!???(কাদোঁকাদোঁ গলায়)
নিশ্চুপ রজনীতে আত্মার নীবিড় বন্ধনে আর কোন কথা হয়নি সেদিন। শুধু ছলছল করা পাচ জোড়া নয়নগুলো অবিরত বলে গেছে তাদের দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ ভালবাসার কথা।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৬/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবু সঈদ আহমেদ ১০/০৭/২০১৪
    দারুণ লাগল। অনেক বন্ধুকেই এরকম জন্ম্দিনের আয়োজন দেওয়া হয়েছে।
  • শুরুটা বেশ টানটান হলেও শেষটা একদম বিপরীত, বেশ মজা করে পড়লাম, খুব ভালো লাগল...
  • রাধাশ্যাম জানা ০১/০৭/২০১৪
    সুন্দর খুব সুন্দর গল্প শুনলাম,পড়ে ভালো লাগল…!ভালো থেকো বন্ধু!
  • কবি মোঃ ইকবাল ২৯/০৬/২০১৪
    এরকম জন্মদিনের আয়োজন খুব মিস করি।
    বেশ ভালো লাগলো তামান্না।
    • মারুফা তামান্না ০১/০৭/২০১৪
      আমিও মিস করি বিধায় আমার মাথায় এই গল্প এসেছে।
  • ভাল লিখেন তাে। বেশ লাগল।
    • মারুফা তামান্না ২৯/০৬/২০১৪
      ধন্যবাদ ভাইয়া।
      • আমার কবিতায় আমন্ত্রন কবি।
        • মারুফা তামান্না ২৯/০৬/২০১৪
          অবশ্যই যাব ভাইয়া।
  • ভালো লাগলো পড়ে। শুভেচ্ছা রইলো আমার পাতায় আমন্ত্রণ...
 
Quantcast