বাবলী ( ৫ম পর্ব)
ভাই, আমরা তো একসপ্তাহের জন্য দেশের বাড়ী যাব। তোমাকে একাই থাকতে হবে। আমার এক ভাইপো মাঝে দু-একবার আসবে। তাতে অসুবিধা কি, ও এলে ওর মত থাকবে, তুমি তোমার মত। কি? কোন অসুবিধা আছে? এই বলে ছায়া বসাক দরজায় দাঁড়িয়ে উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলেন। ওর বোনও পিছন থেকে উঁকি ঝুঁকি মারতে লাগল। ছায়াদি’র চেয়ে আলো দি একটু বেঁটে। খুব আবেগপ্রবণ। যদি ওর মনে হয় কেউ ওকে অবহেলা করছে তাহলেই শব্দ করে কেঁদে ফেলে। ছায়াদি পঞ্চাশ পার হয়ে গেছে তবে মোটামুটি সাজগোজ করেই অফিসে যায়। দুই বোনেই চুলে কলপ করে। কিন্তু আলো দি ধরেই নিয়েছে ওর আর বিয়ে হবে না। ওনার তেমন একটা সাজগোজ নেই।
কি? চুপ কেন?
না, কি আর অসুবিধা। চা তাহলে বাইরেই খাব।
হ্যাঁ, এইতো নীচেই দোকান আছে। দাঁড়ান সাধন দা কে ফোন করে দেখি। উনি তো কাছেই থাকেন যদি রাজী করাতে পারি আপনি ঘরে বসেই চা পাবেন। ফোনটা রিং হতেই উনি বারান্দায় একটু দূরে চলে গেলেন। আলো দি এবার আমার মুখোমুখি।
আসুন না ভেতরে আসুন, খাটে বসে কথা বলুন।
না, না, এখানেই ভালো আছি বলে আলো দি বড় করে কয়েকবার মাথা ঝাঁকালেন। আমি দ্রুত ভেবে চলেছি এই সাত দিনের মধ্যে কি বাবলীকে এখানে আমন্ত্রণ জানাব। কাছেই বাজার, আমরা একটা হোম পিকনিক করতে পারি।
তবে ভাই, একটা কথা। কোয়ার্টারে অনেক কিছুই হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের নামে কেউ কিছু বলতে পারে নি। জানেন তো, আমরা দুই বোন থাকি। আপনি যেন বন্ধু-বান্ধব এনে এখানে হুল্লোড় করবেন না।
এই, চুপ! একটা কথাও নয়। আমি তো কথা বলছি, তোকে আমি কথা বলতে বলেছি? এই বলে ছায়াদি বারান্দা থেকে হুংকার দিতেই আলোদি খুব মনমরা হয়ে চোখে জল এনে বিদায় নেয়।
হয়েছে। শুনুন, সকালে হবে না। তবে এক আধ দিন হতেও পারে। কিন্তু বিকেলে সাধন দা রোজ আসবে, চা করবে, দু-জনে খাবেন—ব্যাস আর কি। চা বিস্কুট সব থাকবে। কেমন?
আমি বিগলিত হয়ে মাথা নেড়ে ব্যবস্থাপনার তারিফ জানাতে ছায়া দি খুশী মনে বিদায় নেয়। ও-ঘর থেকে ডোকরানো কান্নার আওয়াজ আসতেই আমার মনটা তিক্ত হয়ে যায়। এই মেয়েটা অদ্ভূত! কোন ব্যাপারেই ছায়াদি ওকে পাত্তা দেয় না কিন্তু সর্বদাই এমন ভাব দেখাবে যেন ওই কর্ত্রী। সাদন বাবু সন্ধ্যার পর রোজই এখানে আসে। ওই ঘরে খাটে বসে টি ভি দেখে। ঘরের আলো কখনও জ্বলে কখনও অফ থাকে। কারণ টিভির তো আলো আছে। দরজায় পর্দা দেওয়া থাকে। আলোদি তখন একমনে রান্না করে। ঘরে ঢোকবার আগে ওর খুব কাশি হয়। এইসবই আমার জানা হয়ে গেছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমার কোন কৌতূহল নেই। সকাল আর অফিস থেকে ফেরার পর এককাপ করে চা ফ্রি পাওয়া যায়। বিনিময়ে আমাকে মাঝে মাঝে ছায়াদি কে দেড় বা দু-হাজার টাকা ধার দিতে হয়। এবারে পুজোর সময় পাঁচ হাজার টাকা ধার দিতে হবে বলে উনি আগে থেকেই আমায় এলার্ট করে দিয়েছেন।এই সব ধার ধীরে ধীরে ভাড়া থেকে শোধ হয়। ছায়াদির সর্বদাই টাকার দরকার থাকে। আমার কাছে ধারের কথা সাধনবাবুকে বলা বারণ। তাতে বুঝি সাধন বাবুর কাছ থেকেও উনি ধার নেন।
যাই হোক, এই পাগ্লীহাটে বাবলীকে না আনাই ভাল। উল্লেখ করা দরকার বাবলীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন জড়তামুক্ত হতে পেরেছে। এখন আর ওকে দেখে আমি অতটা ঘাবড়াই না। কথাও আর আগের মত অতটা জড়িয়ে যায় না। আমি তো আর জড়ভরত নয়। তবে এটা ঠিক ওর মত অতটা ব্যক্তিত্ব আমার নেই। তা থাকলে প্রেম হওয়া কি সম্ভব? সমমেরু হলে ফুলকি বেরুবে। ভালোবাসা খুব কোমল আর বায়ুর মত সুক্ষ। এটা ছুরিতে ধার দেবার মত কোন ব্যাপার নয়। ওর ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে। কিন্তু আমি ফোন করি না। ও তো প্রচুর ফোন করে এখানে ওখানে। খুব দ্রুত প্রায় ঝড়ের বেগে মেসেজ লিখতে পারে। সুতরাং ফোন ওর কাছে কোন ব্যাপার হবে না। আমি কিন্তু এখনও আই লাভ ইউ বলি নি। এই সপ্তাহে সেটা বলা যেত। কিন্তু সাধন বাবু যদি জেনে ফেলে তাহলে ওদের বলে দেবে। আর তখন হবে এক যাত্রা পালা। তবে সাতদিনের এখনও পুরোটাই হাতে। এর মধ্যে অনেক কিছুই হতে পারে। বাবলী নিজেও দু-একবার জানতে চেয়েছে আমার বাসাটা ঠিক কোথায়। আসলে ওই তো আমার প্রকৃত বাসা।
(ক্রমশঃ)
কি? চুপ কেন?
না, কি আর অসুবিধা। চা তাহলে বাইরেই খাব।
হ্যাঁ, এইতো নীচেই দোকান আছে। দাঁড়ান সাধন দা কে ফোন করে দেখি। উনি তো কাছেই থাকেন যদি রাজী করাতে পারি আপনি ঘরে বসেই চা পাবেন। ফোনটা রিং হতেই উনি বারান্দায় একটু দূরে চলে গেলেন। আলো দি এবার আমার মুখোমুখি।
আসুন না ভেতরে আসুন, খাটে বসে কথা বলুন।
না, না, এখানেই ভালো আছি বলে আলো দি বড় করে কয়েকবার মাথা ঝাঁকালেন। আমি দ্রুত ভেবে চলেছি এই সাত দিনের মধ্যে কি বাবলীকে এখানে আমন্ত্রণ জানাব। কাছেই বাজার, আমরা একটা হোম পিকনিক করতে পারি।
তবে ভাই, একটা কথা। কোয়ার্টারে অনেক কিছুই হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের নামে কেউ কিছু বলতে পারে নি। জানেন তো, আমরা দুই বোন থাকি। আপনি যেন বন্ধু-বান্ধব এনে এখানে হুল্লোড় করবেন না।
এই, চুপ! একটা কথাও নয়। আমি তো কথা বলছি, তোকে আমি কথা বলতে বলেছি? এই বলে ছায়াদি বারান্দা থেকে হুংকার দিতেই আলোদি খুব মনমরা হয়ে চোখে জল এনে বিদায় নেয়।
হয়েছে। শুনুন, সকালে হবে না। তবে এক আধ দিন হতেও পারে। কিন্তু বিকেলে সাধন দা রোজ আসবে, চা করবে, দু-জনে খাবেন—ব্যাস আর কি। চা বিস্কুট সব থাকবে। কেমন?
আমি বিগলিত হয়ে মাথা নেড়ে ব্যবস্থাপনার তারিফ জানাতে ছায়া দি খুশী মনে বিদায় নেয়। ও-ঘর থেকে ডোকরানো কান্নার আওয়াজ আসতেই আমার মনটা তিক্ত হয়ে যায়। এই মেয়েটা অদ্ভূত! কোন ব্যাপারেই ছায়াদি ওকে পাত্তা দেয় না কিন্তু সর্বদাই এমন ভাব দেখাবে যেন ওই কর্ত্রী। সাদন বাবু সন্ধ্যার পর রোজই এখানে আসে। ওই ঘরে খাটে বসে টি ভি দেখে। ঘরের আলো কখনও জ্বলে কখনও অফ থাকে। কারণ টিভির তো আলো আছে। দরজায় পর্দা দেওয়া থাকে। আলোদি তখন একমনে রান্না করে। ঘরে ঢোকবার আগে ওর খুব কাশি হয়। এইসবই আমার জানা হয়ে গেছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমার কোন কৌতূহল নেই। সকাল আর অফিস থেকে ফেরার পর এককাপ করে চা ফ্রি পাওয়া যায়। বিনিময়ে আমাকে মাঝে মাঝে ছায়াদি কে দেড় বা দু-হাজার টাকা ধার দিতে হয়। এবারে পুজোর সময় পাঁচ হাজার টাকা ধার দিতে হবে বলে উনি আগে থেকেই আমায় এলার্ট করে দিয়েছেন।এই সব ধার ধীরে ধীরে ভাড়া থেকে শোধ হয়। ছায়াদির সর্বদাই টাকার দরকার থাকে। আমার কাছে ধারের কথা সাধনবাবুকে বলা বারণ। তাতে বুঝি সাধন বাবুর কাছ থেকেও উনি ধার নেন।
যাই হোক, এই পাগ্লীহাটে বাবলীকে না আনাই ভাল। উল্লেখ করা দরকার বাবলীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন জড়তামুক্ত হতে পেরেছে। এখন আর ওকে দেখে আমি অতটা ঘাবড়াই না। কথাও আর আগের মত অতটা জড়িয়ে যায় না। আমি তো আর জড়ভরত নয়। তবে এটা ঠিক ওর মত অতটা ব্যক্তিত্ব আমার নেই। তা থাকলে প্রেম হওয়া কি সম্ভব? সমমেরু হলে ফুলকি বেরুবে। ভালোবাসা খুব কোমল আর বায়ুর মত সুক্ষ। এটা ছুরিতে ধার দেবার মত কোন ব্যাপার নয়। ওর ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে। কিন্তু আমি ফোন করি না। ও তো প্রচুর ফোন করে এখানে ওখানে। খুব দ্রুত প্রায় ঝড়ের বেগে মেসেজ লিখতে পারে। সুতরাং ফোন ওর কাছে কোন ব্যাপার হবে না। আমি কিন্তু এখনও আই লাভ ইউ বলি নি। এই সপ্তাহে সেটা বলা যেত। কিন্তু সাধন বাবু যদি জেনে ফেলে তাহলে ওদের বলে দেবে। আর তখন হবে এক যাত্রা পালা। তবে সাতদিনের এখনও পুরোটাই হাতে। এর মধ্যে অনেক কিছুই হতে পারে। বাবলী নিজেও দু-একবার জানতে চেয়েছে আমার বাসাটা ঠিক কোথায়। আসলে ওই তো আমার প্রকৃত বাসা।
(ক্রমশঃ)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।