www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাবলী (৩য় পর্ব)

যতটা টগবগে ভাব নিয়ে বাসাতে ফিরব ভেবেছিলাম অতটা হল না। দেখলাম যে বাবলী বেশ ব্যক্তিত্বময়ী। কোমল থেকে কঠিন হতে একটুও সময় লাগে না। তাছাড়া ও যতই হাসুক ঐ ভাবে ফোনে কথা বলতে বলতে এক’শ টাকা বাড়িয়ে দেবার মানে কি! কেষ্টপুরের ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে এইসব ভাবছিলাম। ব্রীজটা বেশ পুরানো। নীচ দিয়ে ময়লা জল বয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের খারাপ লাগলেও মশাদের স্বর্গ। তারপর বাঁ-দিকের রাস্তা ধরলাম। এইখানেই একটা কোয়ার্টারে থাকি। দুই বয়স্ক মহিলা সম্পর্কে পরস্পরের বোন। বড়জন চাকরী করে। তারনামেই কোয়ার্টার। সে সাইড ইনকামের জন্য একটা ঘর আমায় ভাড়া দিয়েছে। এইটা নেবার জন্য আমায় আবার পাঁচ হাজার টাকা বকশিষ দিতে হয়েছে। যারা নিয়েছে সকলেই চাকরী করে। এখানে এই নিয়ম। আমার ঘরের জানালা খুললেই আকাশ দেখা যায়। আর দেখা যায় পরের সারির কোয়ার্টারের সারি। মাঝে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে বড় বড় ঘাস হয়। কোয়ার্টারের সারির পর রয়েছে পাকা রাস্তা তারপর এক বিশাল মাঠ। একটা বড় অর্জুন গাছ বেশ ভালই ছিল। কিন্তু রাতারাতি তার পুরো ছালটা কারা যেন ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। গাছটা মরে গেছে। এই মাঠের উত্তর দিক বরাবর বড় রাস্তার পাশে বাজার বসে। সেখানে পেঁপে থেকে তালের শাঁস সবকিছু পাওয়া যায়। রাস্তার উল্টোদিকে পর পর কয়েকটা দোকান। সব জিনিসের গলাকাটা দাম নেয়। কোয়ার্টারের বাসিন্দারা প্রায় সকলেই ঋণ না হলে সমস্যায় জর্জরিত। উপরে যে থাকে তার বউ পাগল। সারা রাত মেঝেতে কি যেন গড়িয়ে দেয় আর খিল খিল করে হাসে। বড় বড় সাইজের কুকুর রাস্তায় শুয়ে থাকে। একজন তাদের খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ায়। চোরও আছে। প্রায়ই কারো না কারো সাইকেল চুরি হয়। গিন্নীরা সব বিকেলে রাস্তার দুই পাশে বসে বা দাঁড়িয়ে গল্প করে। পরচর্চাই বেশী। দেখলে মনে হবে কেউ কারো খবর রাখে না। কিন্তু সবাই চুপি চুপি সকলের খবর রাখে। বেশ আধুনিকা সব মেয়েরা, কানে দুলপরা ছেলেরা সকলেই এখানে নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। পরিবেশ বেশ খোলামেলা। মাঠে যুবক যুবতীরা প্রায় রাত নটা পর্যন্ত গল্প গুজব করে। এখন দেখা দরকার আমি নিজে কি করতে পারি। একজন আধুনিকার পাল্লায় পড়েছি বলেই মনে হচ্ছে।
অফিসের চেহারা খুবই আধুনিক। প্রত্যেকের জন্য একটা করা খুপরি করা হয়েছে। সেখানে দু-জন বসতে পারে কিন্তু বসে একজন। পিছনে ধূ-ধূ মাঠ। সেখানে গরু মহিষ আপনমনে ঘাস খায়। আর একদিকে বিশাল বিশাল হাইরাইজ। এক-একটা ফ্ল্যাটের দাম এ্ক কোটির কাছাকাছি। তবে মাঝে মাঝে লোডশেডিং হয় আর প্রায়ই ট্যাপে জল থাকে না। মানিক বাবু একদিন বললেন, আপনি কোথায় গেছিলেন, দু-দুবার আপনাকে ডেকে পাইনি। জরুরী কাজ আছে আমার ঘরে আসুন।

অফিসাররা আলাদা বসে। আরো কারো ঘর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মানিকবাবু লোক হিসেবে খুব ভালো। ওর চাকরী প্রায় শেষ। ওর ইচ্ছা এক্সটেনশন পাবার তাই খুব খাটে, অফিসের পর আবার টিউশ্যন করে। ছোটখাট লোক কিন্তু কখনও ঝিমোয় না। প্রকৃতির প্রতি ওর কোন আকর্ষন নেই। অথচ দূরের দিকে তাকালেই আমি কেমন উদাস হয়ে যাই। তারপর আমার ঘুম ঘুম পায়। আমি চেয়ারে শরীর এলিয়ে স্বপ্ন দেখি। দু-জনে চাকরী করার যে সংসার তার স্বপ্নও দেখি।এই ধরণের জীবন অনেকটা রাজা বা মন্ত্রীদের মত। দাস-দাসী নিয়ন্ত্রিত জীবন। কাজের চাপ খুব, অবসর কম। এই জীবনে বেশী রোমান্টিকতা থাকে না। কিন্তু ব্যাংকে কিছু ব্যালেন্স থাকে। শেষের দিকে তাই দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে সেখানে অবহেলিত পড়ে থাকা, ছেলে পুলে বাইরে বড় চাকরীতে গেছে আর এই সময় কে যেন এসে আমার কাঁধ নাড়ায়।
শুনছেন? কখন থেকে মানিক বাবু আপনার জন্য বসে আছে।
তা থাকুক। আমিও তো কতকিছুর জন্য বসে থাকি, তারপর এলিয়ে পড়ি, ঘুমোই স্বপ্ন দেখি। যে কারো জন্য বসে থাকে না, অপেক্ষা করেনা সেকি মানুষ? পশু, পশু,- এইসব ভাবতে ভাবতে আমি উঠে দাঁড়াই।
(ক্রমশঃ)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯০১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast