www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাবলী (২্য় পর্ব)

(দুই)

পর পর দু-দিন বাবলীর কোন পাত্তা নেই। জীবনে প্রেম এবং টাকার মত গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। টাকা প্রেমের মধ্যে এবং প্রেম টাকার মধ্যে পরস্পরের সার্থকতা খুঁজে পায়। অথচ আমি বাবলীকে খুঁজেপাচ্ছিনা। এরপরের দু-দিন ছিল শনি আর রবিবার, অফিস ছুটির দিন। কেন জানি না শনিবারও অকারণে একবার বাসস্টপ পর্যন্ত ঘুরে গেলুম। আমার মধ্যে এক গম্ভীর কন্ঠ ফিস ফিস করে বলল তুমি এমনিই ঘুরতে এসেছো বিশেষ কিছুর জন্য নয়। কিছুটা দূরে একটা পড়ে থাকা সিমেন্টের চাঙ্গড়ের উপরে বসে একজন ছাতা আর ব্যাগ সারায়। তার গেঞ্জীটা ছেঁড়া , মুখটা কোরিয়া্নদের মত, চোয়াল ভাঙ্গা আর মুখটা বড় বলে রোগা হলেও তাকে শক্তিশালী দেখায়। সে বসে বসে বিড়ি ফুঁকোচ্ছিল আর একটা নেড়ী কুকুর তার সামনে দাঁড়িয়ে অকারণে লেজ নাড়াচ্ছিল। তার লেজ নাড়া আর আমার ঘুরতে আসা দুটোর মানেই দুর্বোধ্য বলে মনে হল আমার। লোকটা আশা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাঁসল। আমি ইতস্ততঃ করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালুম।
আপনার বাড়ী কি এই এলাকায়?
সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ভাবতে লাগলুম এরপর কি বলা যায়। লোকটা হাতের বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলেই একলাফে কুকুরটাকে ধরে তার পিঠে আদর করে চাপড় দিতে থাকল আর সেই সময় আমাকে অবাক করে বাবলী এসে দাঁড়াল রাস্তার পাশে পাঁকুড় গাছটার তলায়। দাঁড়িয়েই কাকে যেন ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমার হৃদপিন্ড তখন এতজোড়ে পাম্পিং শুরু করল যে নিজেকে আমার দুর্বল মনে হল। এই সময়ই বাবলী আমায় দেখতে পেল। আমি গুটি গুটি রাস্তা পার হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে একটা কাষ্ঠহাসি দিলুম। বাবলী ফোন কানে রেখেই আমার সামনে একটা একশ টাকার নোট বাড়িয়ে ধরল।
ঠিক আছে বাবা, আমি আধ ঘন্টার মধ্যেই যাচ্ছি। কি করব? না, সেটা সম্ভব নয়। আচ্ছা এখন রাখো, আমি আসছি, আমি একটু ব্যস্ত আছি। এই বলে ফোনটা ব্যাগে রেখে ও আমার হাসিটা ফেরত দিল। না, না, এটা কোন ব্যাপার নয়। এটা তোমাকে ফেরত দিতে হবে না।
মানে? বাবলীর গলাটা বেশ কঠিন শোনাল।
থাকনা, ওটার দরকার নেই।
না, না, আপনি রাখুন। আপনি যে সাহায্য করেছিলেন এটাই যথেষ্ট। ওর কন্ঠস্বর বদলে যাওয়ায় আমি আর ঝুঁকি না নিয়ে টাকাটাই নিয়ে নিলুম। ইয়ে, যদি কিছু মনে না কর- তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো?
কাজে যাচ্ছি। আমি একটা জব করি।
কোথায়?
প্রাইভেট অফিসে।
ও! শনিবার ছুটি নেই?
না, আপনি?
আমার অফিস নিউ-টাউনে। আজ আমাদের ছুটি।
তাহলে এখানে?
আসলে ভাবছিলাম তোমার হয়ত অসুখ-বিসুখ করেছে। তুমি তো দু-দিন আসো নি তাই।
ও! আপনি আমাকে নিয়ে একটু বেশী ভাবছেন মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ, মানে—আসলে—
হয়ত আপনি ভেবেছেন আপনার টাকাটা আমি মেরে দিয়ে কোথাও ভেগে গেছি—এই বলে ও খিল খিল করে হেসে ফেলল। ওর হাসে এ-প্লাস হাসি, চমৎকার। হয়ত চাকরী করে বলেই ও এতটা সাবলীল। এইসময় একরাশ ধুলোর ঝড় তুলে ওর বাসটা এসে দাঁড়াল। ও আমার দিকে একবার হাত নেড়ে বাসের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। (ক্রমশঃ)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭০৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সোলাইমান ২৩/১১/২০১৭
    সুন্দর কাব্য রূপ !! প্রিয়কবির প্রতি শুভেচ্ছা শতশত
  • বাহ!
  • সাইদুর রহমান ২৩/১১/২০১৭
    ভালো লাগলো।
  • সুন্দর লেখা।
  • সাঁঝের তারা ২৩/১১/২০১৭
    চলতে থাকুক
 
Quantcast