www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এই সব দিন রাত

সত্যি যে একটা চাকরী পাবো তা কখনও ভাবিনি। অগুন্তি ছেলে মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল আর আমার প্রিপারেশন তেমন ভালো ছিল না। তারপর যখন প্যানেলে রোল দেখলাম, অবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু একমাস পরেও যখন চিঠি পেলাম না তখন ধরেই নিলাম অন্য কিছুর চেষ্টা করতে হবে। অথচ চিঠিটা একদিন এলো। সেই চিঠিটা আমি গর্বভরে স্কুলের এক কর্তাকে দেখিয়ে বললাম, আমি তো বেশীদিন আর এখানে থাকতে পারছি না। লোকটা বসে বসে ভুড়িতে হাত বোলাছিল। বোধহয় ওর হাতে একটু তেলও ছিল কারণ ভুড়িটা তেল চকচকে দেখাচ্ছিল। লোকটা তোয়ালেতে হাত মুছে সাবধানে চিঠিটা পড়বার চেষ্টা করছিল। ওর ইংরাজী জ্ঞান তেমন ভালো নয়। আসলে ও বোঝবার চেষ্টা করছিল সত্যিই ওটা চাকরীর চিঠি কি না। কিছুক্ষন চিঠিটা নিরীক্ষণ করে বলল, কি পোস্টে চাকরী পেলে? আমি বললাম কেরানী কাম অফিসার। মানে? প্রথমে কেরানী কয়েকবছর পর অফিসার। ও! বলে লোকটা ভুড়িতে এক জোরে চাপড় মারল। তারপর স্নান করতে চলে গেল। স্নানের আগে রোজ ও স্কুলে এসে একবার উঁকি মেরে দেখে কোথায় কি হচ্ছে। সব তিন চার হাজারের ম্যাডাম এখানে কাজ করে। ছাত্র বাড়ছে কিন্তু মাইনে আর বাড়ে না। মালিকের আবার খুব মিটিং বাই।প্রায় দিনই মিটিং কল করে। এতগুলো দিদিমণির মাঝে আমিই ছিলাম মাস্টারমশায়। লোকটা আমাকে খুব একটা পছন্দ করত না। প্রমিতা এসে বলল, শুনলাম আপনি চাকরী পেয়েছেন? আমি বললাম এখনও পাই নি তবে পাবো। পেলে তো আমাদের কথা ভুলেই যাবেন। কবে যে ওদের মনে রাখব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা আমি মনে করতে পারলাম না। প্রমিতা কালো রঙের খুব আবেগপ্রবণ মিস্টি মুখের মেয়ে। ও রোজ একটা খবরের কাগজ আনত কিন্তু নিজে কখনও সেটা পড়ত না। ও ছাড়া স্কুলে আরও ছয়-সাতজন ছিল। খুব সুন্দরী একজন দিদিমণি ছিল বিবাহিতা। সে মালিকের বিষয়ে বলত লোকটার চাহনি একেবারেই ভালো নয়। কি-রকম অসভ্যের মত ভুড়ি বার করে থাকে দেখেছেন! আমি প্রায় লুকিয়ে লুকিয়ে ওর ভুড়িও দেখতাম। খুব ফর্সা সামান্য নীল আভাযুক্ত ভুড়ি ছিল ওর। কিন্তু শাড়ির বিচিত্র প্যাচ পয়জারের মধ্যে থাকে বলে ওটা যেন চোখের সঙ্গে লুকোচুরি খেলত। আপনি চাকরীপেয়েও এত গম্ভীর কেন?
ভাবতেই পারছি না কিভাবে তোমাদের ছেড়ে যাবো? আমি যে তোমাদের এতটা ভালোবেসে ফেলেছি তা আগে বুঝতে পারিনি। বলেই বুঝলাম ‘তোমাদের’ কথাটা প্রমিতার পছন্দ হয় নি।
বুঝলেই যদি গম্ভীর হতে হয় তা-হলে বোঝার কি দরকার। বলে প্রমিতাও গম্ভীর হয়ে গেল। শুনেছি ওর বাবা নাকি তেল আর রেশনের ডিলার। ওর ডায়েরীতে অনেক প্রেমের কোটেশন আর উচ্ছ্বসিত আবেগপূর্ণ লেখা আছে। একবার জ্যোৎস্নারাতে কে যেন ওদের বাড়ী বেড়াতে এসেছিল। ওরা অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করেছিল ছাদে বসে। সেই কথা ও আজও ভুলতে পারেনি। যতদিন বাঁচবে ততদিন ঐ স্মৃতিকেও বাঁচিয়ে রাখবে এমন প্রতিজ্ঞা বার বার ওর ডায়েরীতে লেখা আছে। লোকের ডায়েরী চুরি করা আমার স্বভাব। ওর ডায়েরীটা একদিন হারিয়ে যায়। ও প্রায়ই বলে ও নিজে হারিয়ে গেলেও এত দুঃখ পেত না। কেন জানি না প্রমিতাকে দুঃখ দিতে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম কি করে ওকে আরও দুঃখ দেওয়া যায়। ওর এই এত কালো হওয়া, জ্যোৎস্নারাতে প্রেমে পড়া এ-সবই নিশ্চিতভাবে এই ঘোষণাই করছে যে দুঃখ পাবার জন্যই ও জন্মেছে।
অফিসে যাবার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আমাকে বাস ধরতে হত। সেটা ঠিক কোন স্টপেজ নয় কিন্তু ঐ লাইনে প্যাসেঞ্জার কম বলে হাত দেখালে বাসটা দাঁড়াত। প্রায়ই দেখতাম ছিপছিপে একটি মেয়ে ঐ একই সময়ে ওখান থেকে বাস ধরত। প্রায়ই মোবাইলে ব্যস্তভাবে কথা বার্তা বলত। ইংরাজী আর বাংলা দুটোতেই বেশ বলতে পারত। আমার চেহারা মন্দ নয় বলে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাত। নিশ্চয় ও বুঝতে পেরেছিল যে যার তার সঙ্গে আলাপে আমি আগ্রহী নই তাই আলাপ করার সাহস আর করে নি।
আমাদের অফিসটা চমৎকার। লোক কম অথচ জায়গা প্রচুর। জানালা দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। কাজকর্মের চাপ তেমন নেই। কাঁচা বয়সে কাজকর্মের প্রবল চাপ না থাকলে মন নিজের বশে থাকে না। অল্পদিনের মধ্যেই আমি স্কুলের কথা প্রায় ভুলেই গেলাম। এখন আমার মনে জায়গা নিচ্ছে অফিসিয়াল কতকগুলো মুখ, আর ঐ বাবলী। আমি ওর নাম রেখেছি বাবলী। সরু চিবুক, একটু বড় চ্যাপটা ধরণের নাক, টানা টানা চোখ, কমলালেবুর মত ঠোঁট, বাচ্চা রাজহাঁসের মত গলা আর রোগা হলেও বেশ শক্ত পোক্ত চেহারা। যেহেতু ওর মনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় নি তাই শরীরের কথাই বেশী করে বলতে হচ্ছে। প্রায় তিনমাস পরে এমন একদিন এলো যেদিন বাস আর আসেই না। বাবলী বলল, আচ্ছা আজ কি বাস পাওয়া যাবে না? আমি এত অবাক হলাম যে নার্ভাস হয়ে উত্তর দিতে অনেক দেরী করে ফেললাম। না, মানে তাই তো মনে হচ্ছে।
ইস! যদি কিছু মনে না করেন আমি না পার্সটা ভুল করে ফেলে এসেছি—আপনি কি আমাকে একটু হেল্প করবেন?
হ্যাঁ, বলুন কি সাহায্য চাই?
পঞ্চাশ বা এক’শ টাকা ধার দেবেন? কালই ফেরত দিয়ে দেব?
মূল্যবান যে দু’শ টাকা আমার কাছে সে-দিন ছিল তার থেকে এক’শ টাকা ওকে দিলাম। যদি আমার মনে ওর শেকড় না থাকত আমি ওকে কিছুই দিতাম না। দিয়ে কেউ মেয়েদের মন পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু বাবলীকে তো আর সাধারণ মেয়েদের সঙ্গে এক করা যাবে না। এক’শ টাকা ও যার কাছে চাইবে সেই দেবে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০০২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ২৯/১১/২০১৭
    পরিপাটি প্রশংসনীয় একটা লেখনী
  • বিষয় আকর্ষণীয় ছিল । আর একটু গুছিয়ে পরিবেশন করলে দুটোই বেশ আকর্ষণীয় হতো । যাই হোক ভালো লেগেছে । আরও এগিয়ে চলুন । শুভকামনা রইল ।
  • কে. পাল ২৩/১১/২০১৭
    Osadharon lekha.
    Keep doing brother
  • সাঁঝের তারা ২৩/১১/২০১৭
    বেশ ভাল
  • স্যালুট স্যার
  • সোলাইমান ২১/১১/২০১৭
    সুন্দর বোধের অসাধারণ অভিভূত!
    প্রিয় কবির জন্য এক রাশ রক্তিম শুভেচ্ছা ও গভীর ভালোবাসা রেখে গেলাম।
    ভালো থাকুন
  • লেখাটা তেমন গোছানো মনে হয়নি।আরেকটু সাজানো গোছানো লেখা অবশ্যই আশা করতে পারি।লেখাটা ভালো লেগেছে।বিষয়বস্তু ঠিক ছিলো।
    • মনোবর ২১/১১/২০১৭
      লেখাটা এখনও চলবে। আমি ক্রমশঃ লিখতে ভুলে গেছি।
 
Quantcast