www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উপন্যাস - তৃতীয় জীবন

২য় পর্ব - উপন্যাস " তৃতীয় জীবন "
"""""""""""""""""""""'"'''''""""""""""""''"""""""
তনুময়, নাট্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম একসময় সাদামাঠা প্যান্ট, শার্ট,সস্তা চপ্পলের আড়ালে হাসিখুশী ছিমছাম এক অতি সামান্য প্রেমিক,স্বামীর খোলস ছেড়ে অতর্কিতে বেড়িয়ে আসা আরেক বিস্ময়ের নাম। জীবনের নানা প্রান্তের ঘাত,প্রতিঘাত থেকে হোঁচট খেতে খেতে শিঁরদাড়ার কায়েমী ভিতটাকে সটান মজবুত করে তুলেছে আগাম দিনের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। একসময় সরলতার বাস্তব আঘাত চাবুক হয়ে ফলেছে শরীর মনের তন্ত্রে। ওকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছে,ছুটতে হয়েছে,মরতে মরতে মারতে শিখেছে,অতঃপর বাঁচার তাগিদ ছুটিয়ে মেরেছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। একসময় হঠাৎ করে স্টেজ,আলোর চমকে সংবিত ফিরে পেয়েছে তনুময় সহায়ক হয়েছে দোহারা সুন্দর চেহারা। পাড়ায় ভালো অভিনয় করতে পারত সেই সুবাদে একটি সুযোগই বদলে দিল ওর ভবিষ্যৎ। তাছাড়া একদা প্রেমিকা কুন্তলাকে বিয়ে করে বেশ সুখেই চলছিল জীবন। কিন্তু ঐ যে কার জন্যে কি সাজ গুছিয়ে রাখেন ওপরওলা কে জানে। পরের বছর বাবা হয়েও বিষন্নতায় ছেয়ে যাওয়া জীবনে ঘনিয়ে আসা একটি সুযোগ মাত্র। নার্সিং হোমের ছোট্ট ঘরটা জুড়ে মায়ের তীব্র চীৎকার ," ওরে খোকা তোর ছেলে কাঁদছে না কেন "?
সমস্ত মুখগুলো একসাথে ঝুঁকে পড়েছিল সেদিন," কই,দেখি,দেখি..........
পেছন ফিরে বসেছিল তনুময়। চোখে জল। দীর্ঘদিন দু'চোখের পাতা এক করতে পারে নি রাগে,শোকে,দুঃখে। তীব্র রাগে ক্রমে ঘর পরে সম্পর্কে ফাটল ক্রমশঃ গভীর হয়েছে। না শত চেষ্টা করেও মানাতে,বোঝাতে পারেনি নিজেকে। এই ভেঙে যাওয়ার নামই বোধয় ভাগ্য। অতি যত্নে সাজানো থাকে জন্ম ছকের এক নিভৃত কক্ষে। অসহায় কুন্তলাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে ও, কোন সংস্থায় রেখে আসার কথা কিন্তু রাজি করানো সম্ভব হয় নি। অগত্যা মনের যোগসাজশে পলায়ন নিজের কাছ থেকে,দায়িত্বের কাছ থেকে কে যেন বলেছে", পালা তুই পালিয়ে যা ", ........ হ্যাঁ পালিয়ে ৺বেচেছে তনুময়। রঙীণ জীবন,মঞ্চ,অভিনয় ,সাফল্য, পুরষ্কার একগুচ্ছ নায়িকা উফ্ চুটিয়ে উপভোগ। কি পায়নি ও। গ্লাসের রঙীণ পানীয়ের মত উপভোগ এসেছে গেছে, আজ ঘরে সুন্দরী স্ত্রী, নোকর,চাকর,আরাম, বিলাস,গাড়ি, ড্রাইভার পুরোপুরি এক সার্থক জীবন। একসময় যা ছিল স্বপ্ন আজ ভীষণরকম বাস্তব। চুটিয়ে উপভোগ করেছে প্রতিটি মুহূর্ত। মঞ্চের রঙীণ জীবন রং ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছে প্রতিটি অধ্যায়। এক মুহূর্তের জন্যও মনের ভেতর ৺উকি দেয় নি কুন্তলার মুখ আজ প্রায় এক যুগ অতিবাহিত। তিলে তিলে মরে যাওয়া কুন্দ হারিয়ে যায় একসময়,কাউকে কিছু না জানিয়েই। হয়তো ওদের এই গল্পছক্ও নিছক এক মঞ্চ নাটক,পরিচালনার অভাবে হয়তো নায়িকা কুন্দের দম্ খুটে একতরফা অভিযুক্ত হয়ে বেঁচে থাকতে হল না পারল মরতে না মারতে। একমাত্র সন্তানের শিশুমুখ উতল করে আটকে দিয়েছে ওর কোমল ভবিতব্য। এ দায় মায়েদেরই এটাই নিয়ম এর কোন ব্যখ্যা হয় না,কোন কারণ হয় না,কোন সংজ্ঞা হয় না এভাবেই নিয়ম তৈরী হয়ে আসছে। নিতান্ত আটপৌরে সংসারে সন্তানের দায় বিশেষত সঠিকভাবে মানুষ না হলে,উচ্ছন্নে গেলে, অপদার্থ হলে কিংবা হ্যান্ডিক্যাপড বোবা,কালা হলে সম্পূর্ণ মায়েদের কাঠগোড়ায় ৺দাড় করাতে বদ্ধ পরিকর এ দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। এ বাহবা তাড়িয়ে দেখতে অভ্যস্থ পারিপার্শ্বিক অন্যান্য কিংবদন্তি পুরুষ সম্প্রদায়। অতএব তনুময় কুন্তলাকে ছেড়েছে না কুন্তলা তনুময়কে এ বিষয়ে তিন চতুর্থাংশই তনুময়ের পক্ষে। বিপক্ষের সবটুক কুন্দের। অর্থাৎ কূন্দই অপরাধী। পুরুষ দোষের সবটুক যদি গোপনে,যত্নে হৃদয়ে ধারণ করতে না পারে তবে আর নারী জন্ম কেন ? আদর,ভালোবাসা প্রকট হতে হতে লাথি,চড়ে পরিণত হলেও তা অমৃতস্বরুপ কোমলতর প্রাণে লুটিয়া পরিতে হয়।বাস্তবিক মানুষ জীবনের এক অধ্যায় শেষ হবার পরে সংসারের দোলনায় আরেক অস্তিত্বের স্বাদু অস্তিত্বের অধীর অপেক্ষায় থাকে। যার নাম সন্তান। জীবনের গভীরে আরেক ফাঁকা স্থানে কোন এক স্থানে দুটি কোমল হাতের খুনসুটি যেন ফেনাইয়া তোলে শৈশবকে। সে অতি আদরের অতি সযত্নের। এসময়ে এক পুত্তলীর প্রচন্ড অভাব অনুভূত হতে থাকে তনুময়ের, পাশের অন্তর্বতী সম্পর্ক কুন্দ( ভালোবেসে তনুময়ের দেওয়া নাম ) অর্থাৎ কুন্তলা অপেক্ষা অধিক তীক্ষ্ম ও প্রেজেন্টেবল এবং প্রতিষ্ঠিত চরিত্র রাত্রি, বহু দর্শকমন জয় করা প্রতিভাময়ী নারী চরিত্র । কুন্তলা অপেক্ষাকৃত ম্লান,ভাগ্যের মার খাওয়া,প্রতিবাদহীন এক জড়সড় ম্যড়মেড়ে চরিত্র বটে যেখানে উপেক্ষা, প্রবঞ্চনা,লুটতরাজ,রাজত্ব,পৌরুষত্বের সবটুক শৌর্য ফলানো যায় অতি সহযেই। কোথাও কোন জবাবদিহির প্রয়োজন হয় না। অবশ্য যেখানে তার অস্তিত্বের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় যদি সেটা একান্তই পাশের মানুষটির কাছ থেকে আসে তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে অস্তিত্বটির আদতে কোন প্রয়োজনীয়তা কোথাও বিচার্যের প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াবে কিনা।দীর্ঘ বারো বছর ওকে দিয়েছে যথেষ্ট কিন্তু দাঁড় করিয়ে রেখেছে এক প্রশ্নবোধকে। যেখানে আস্তরণের ফাঁক থেকে উঠে আসতে চাইছে এক অতীত এক স্মৃতি। দুই নারীর মাঝে তনুময় এবং সন্তানের মাঝখানে তৃতীয় জীবনে এসে থমকে থাকে অবশিষ্ট ভগ্নাংশে। আজকের দিনে আমরা তনুময়কে নিয়ে মেতে উঠতে পারি কোন তথৈবচ ক্লাব,পার্টিতে, আড্ডায়, মাঠ ময়দানে।ফ্ল্যাশ আলোয় প্রমাণ করতে পারি ", লুক,দ্যাটস থনুময়,আওয়ার প্রোফাইল সিম্বল ",তারপর পার্লামেন্টে স্পীচ টেবিলে রাজ্য,রাজধানীতে তৈরী করতে পারি স্যোস্যাল ইমেজ। হয়তো সে অধীর হয়ে উঠবে এক অতৃপ্তির চরম আস্বাদন নিতে অথচ প্রাচীরটাকে আমরা সরতে দেব না কিছুতেই। অবশেষে শ্লোগান তুলব",উই ওয়ান্ঠ য়্যু থনুময়", একসময় বিরক্ত হয়ে চেপে ধরবে কান চিৎকার করে উঠবে ", না আ আ আ.........

ক্রমশঃ

Mallika Roy
February 18
বন্ধুরা শুরু করলাম আমার তৃতীয় উপন্যাস " তৃতীয় জীবন " আট অথবা দশ পর্বের ।

প্রথম অধ্যায় : উপন্যাস " তৃতীয় জীবন "
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

কুন্তলা সামনে ফিরতেই চমকে ওঠে তনুময়," একি......." হ্যাঁ তোমাকে বলা হয়নি অনেক কথা, ভাবতে পারিনি তুমি এভাবে আমার খোঁজ করবে তাও দীর্ঘ বারো বছর পর,এগিয়ে আসে তনুময়," আমি সেজন্য আসি নি আমি এসেছি কিছু দাবি নিয়ে," আমি জানি তো,তুমি আসবে দাবি নিয়ে,কিন্তু লাভ কি বলতে পারো? সে আজ তোমাকে মনে করতে পারে না,প্রতি দিন প্রতি রাত সে হস্টেল রূমের দেয়ালে লিখে রাখে হাজারো প্রশ্ন যার কোন উত্তর নেই। খাতায় বিকৃত ছবি,উদ্ভট ঘর আরও কত কি ,ডাক্তার বলেছেন এসব ওর ইম্প্রেশন কিংবা ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। আজ এই এগারো বছরের সুস্থ, সুন্দর ছেলেটি ..........
"এ্যম সো সরি। এতে আমার কি করার থাকতে পারে সিম্পল একটি দাবি ব্যস্?
" ওর দেরিতে কথা বলা বোবা,কালা ভেবে.....তুমি ভেবেই নিয়েছিলে ইটস্ আনওয়ান্টেড, দিনের প্রতিটি প্রহর কি উৎকন্ঠায় আমাকে কাটাতে হয়েছে যদি বুঝতে পারতাম সেসব ছিল তোমার চরম উপেক্ষা.....নাহ,আজ আর তা হয়না,না তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। চলে যাও তুমি ,প্লিজ । আমার বাঁচার জগৎটাকে তুমি এভাবে শেষ করে দিতে পারো না। উফ্ আমি ভাবতে পারছি না এভাবে হঠাৎ করে তুমি অধিকার ফলাতে আসবে....
হঠাৎ পতনের মতো ধুপ্ করে শব্দে ঘাড় ফেরায় তনুময় অসতর্ক হয়ে পড়ে গেছে কুন্তলা চশমা হাতড়াতে থাকে, নিজেই খুঁজে নেয়।
"আবার সেই সিনক্রিয়েট? এতকাল পরে তোমার ঘর ফিরে পাবার আনন্দে কোথায় বিভোর হয়ে পরবে তা নয় তুমি হতাশ হলে "?
অবাক চেয়ে থাকে কুন্দ একসময় আদর করে দেওয়া নামে জমতে থাকে উপেক্ষার ঝুল কালি। অদ্ভুত ধরণের মানুষটাকে আজও যেন চেনা হয়ে ওঠেনি।
এই সুদীর্ঘ জীবন অনেকটা বুঝিয়েও যেন গোপন রেখেছে কিছু রহস্য। যার গোপন যন্ত্রণা ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত প্রায়ই। বাকি থেকে গেছে সে সব কিছু, দীর্ঘ নিশ্বাসের প্রপাত নিঃশব্দে ছড়িয়ে পরে ঘাসে, ,পাতায়।

"বাহ চমৎকার আমি ভাবতে পারিনি আজও তুমি তেমনই মঞ্চায়ন।
একের পর এক নাটক তোমার এ্যওয়ার্ডের ছড়াছড়ি ফুল,মালা তোষণ কত কি। তুমি তখন রঙীণ আলোর মঞ্চে একরাশ দর্শকের মাতাল করা নায়ক সঙ্গে নায়িকাদের রঙীণ যাপন। আমি ঘরের কোনের নাম পরিচয়হীন এক অপ্রয়োজনীয় অস্তিত্ব মাত্র। একসময় সত্যিই হারিয়ে গেলে তুমি,আমি একা হয়ে গেলাম ক্রমশঃ"।
ওসব কথা এখন থাক ,তাছাড়া ড্যু য়্যু এচিভ হিজ কস্টলি ট্রিটমেন্ট, অ্যম রেডি কজ হিজ্ অনার, হিজ মাই ওনলি এসেট অ্যন্ড দ্যটস দ্য ফাইন্যল টু লিঙ্ক য়্যূ।ওকে ? কঠিন তনুময় আজও তেমনটি।

"হ্যাঁ আজ অসুখে আমার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গিয়েছে সত্যি তবে অন্তর থেকে মানুষের সত্যি মিথ্যেটা খুব স্পষ্টই টের পাই জানো । অনর্গল বলে চলেছে কুন্দ যেন এক যুগের জমানো যন্ত্রণা উগরে বেরিয়ে আসতে চাইছে অকস্মাৎ। পুরু লেন্সের চশমায় ওকে অন্ধ ভাববার উপায় নেই। মিন্টোর সাত মাস বয়সে তুমি ঘর ছাড়লে অনেকটা সময় একা থাকতে থাকতে হঠাৎ এক সহৃদয় চিকিৎসকের বিজ্ঞাপনে সাড়া পেয়ে ছুটে এলাম এখানে তখন মিন্টোর একবছর। কানে মুখে কোন সার নেই "।
আমি সবটাই জানি,আজ আমি হেল্পলেস,
"না তা আর হয় না ,আমার একা চলার পথে ও আমার একমাত্র সম্বল তুমি তোমার দাবির জানাতে আদালতে যাও প্লিজ। ফিরে যাও আর কখনো এখনে এস না।
এক একটা দিন আমার চরম পরীক্ষা নিয়েছে তোমার মত উচুতে ওঠার রাস্তা আমার ছিল না কখনও বরং হোঁচট খেতে খেতে দৃষ্টিও জীবনীশক্তি খুইয়ে জীবনের পথ এইখানে এনে দাঁড় করিয়েছে আমায়। এযাবৎ আমি আমার প্রতিজ্ঞায় অটল ছিলাম,জীবনে তোমার দেওয়া কোন দাক্ষিন্য গ্রহণ করব না। পাশে চুপচাপ বসে তনুময়। দ্বিপ্রাহরিক উষ্ণতা কাটিয়ে প্রকৃতি খানিকটা শান্ত। আশ্বিনের পর খানিকটা ঠান্ডা আমেজের প্রভাব। একজন বেয়ারা গোছের দু কাপ চা কিছু বিস্কিট টেবিলের উপর রেখে গেল। সামনের লনে বাগানের শোভা বিভিন্ন প্রজাতির ফুল মাঝখানে গেস্ট সিটিং। শহর থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে ডঃ দম্পতি মিঃস্মেলের ফার্ম হাউস কাম ডিসপেনসারি। বেশ সাজানো বোর্ডিং গোছের। অনেকেই আসেন চিকিৎসার কারণে আবার চলেও যান। ইংরেজ দম্পতি বেশ প্রানোচ্ছল,হাসিখুশী। সূদুর বার্মিংহাম থেকে গ্রামে এসেছেন গরীব, দুঃখির সেবা করতে। একপাশে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট রয়েছে।
আরাম আয়েসের জীবন ছেড়ে হদ্দ গ্রামে এই মানুষগুলো কি আনন্দ খুঁজে পেলেন ভেবে পায় না তনুময়। একভাবে বসে আছে তনুময়। উসকো চুল মুখে বিষন্নতা ,কপালে চিন্তার ভাজ। হাঁটছে কুন্তলা ওর জীবন জন্মান্তর বেয়ে অদৃশ্য দৃষ্টি ছেপে যাচ্ছে সংসারে, আমেজে,সিগরেট জ্বলছে,সেই নামকরা ব্র্যান্ড গোল্ড ফ্লেক ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁওয়া ড্রয়িং রুম,বিছানাচাদরে,কেবিনে ,হৃদয়ে কুন্ডলি একে বেঁকে ঢলে পড়ছে রঙীণ গ্লাসের মদিরায়। কতকালের চেনা জানা হঠাৎ ভালোলাগা শেকড় বেয়ে ছড়িয়ে পরতে চাইছে গভীর আকর্ষণে অদ্ভুত এক অব্যক্ত গন্ধ যা শুধু আপনার মধ্যেই থাকে কাছে টানবার,কাছে পাবার। প্রখর অন্তদৃষ্টির সমুখে একে একে খুলে চলেছে নিঃশেষিত অধ্যায়। দু জনার মাঝখানে বিস্তর ব্যবধানে বহুকিছু এসে জমেছে যা ঠেলে মুখোমুখি হওয়া একপ্রকার অসম্ভব। আজ শুধু অস্তিত্বের ঠেলাঠেলি। জোর করে টেনে ধরে রাখা। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় বাতাসে ঠান্ডা ভাব। সমস্ত জড়তা কাটিয়ে উঠে দাঁড়ায় কুন্তলা,"আশা করি আপনাদের প্রসঙ্গ শেষ হয়েছে অনুগ্রহ করে এবার আপনাকে উঠতে হবে , পাশে মিসেস স্মেল। আসলে আমাদের এই ফার্ম হাউসের কিছু রুলস আছে যেগুলো মাস্ট মানতে হবে ডোন্ট মাইন্ড ইয়ং ম্যান"। "ওকে মিসেস , এবারে উঠব প্লিজ লুক মাই কন্ডিশন,এন্ড গ্রান্ট মি। অব কোর্স বাট সি অলসো ডিপ্রাইভ য়্যু ফিল্ হার অলসো আ্যওর এমবিশ্যন ইজ ইয়ং ম্যান। অবশ্যই
ম্যম নমষ্কার.। জীবনের এ এক অন্য অধ্যায় যার শেষে বিয়োজন হবে কিংবা সংযোজন। কিছু অপ্রাপ্তির শূণ্যতা ভরিয়ে নিতে এসেছেন তিনি অবশ্য বুঝতে বাকী থাকে না, সমস্ত বিষয়টি এক নিঁখুত মোড়কে ঘেরা চতুর অভিসন্ধী মাত্র যেখানে কিছু অপ্রাপ্তির শূণ্যতা ভরিয়ে নিতে এসেছেন তিনি যেখানে কুন্তলা নামক চরিত্রের কোন সংযোজন ঘটে না ঘটে না কোন উত্তরণ।শুধু ঘাঁড় ঘুরিয়ে সম্মতি দানটুকে পর্যন্ত তাকে আমরা ফ্ল্যশ আলো দিতে পারি মাত্র।সমাজ তাকে দাঁড় করায় কোথায় কোন সাফল্যের শীর্ষে ? না কিছুই আমরা তাকে দিতে পারিনা শুধু নীরবে মাথা দোলানো ছাড়া,
যেখান থেকে মানুষ আশা করে সম্ভ্রম,সুরক্ষা,ন্যায় নীতি সেখানেই লুকিয়ে থাকে কুন্তলাদের চরম বিপদ,অসহায়তা।
অপরপক্ষে কুন্তলাদের মত অসংখ্য মেয়েদেরও দুই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছেন কিছু প্রবাসী বিদেশি দম্পতি। যে আশ্রয় ভরসার,নিশ্চিতের সেখানেই
বিপদ লুকিয়ে থাকে আগ্রাসী পৃথিবীর নরককুন্ডে ওই স্রোত টেনে নেয় একে একে ওদেরকে। আর তনুময়রা পুতুল খেলে ওদের অসহায়তা যন্ত্রণা নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে মেয়ে মানুষের চাইতে সস্তা প্রজাতি বোধয় কোথাও নেই। অতঃপর সৃষ্টদেব কোথাও সৃষ্টি রহস্যে তৈরী করেন উদ্ধারক বিভিন্ন বেশে বিভিন্ন রুপে। মিঃ এন্ড মিসেস স্মেল এমনই এক চরিত্র।
পৃথিবীর কুন্তলাদের সহযোগিতায় বাড়িয়ে দেন দুই হাত। সাজিয়ে,গুছিয়ে ওদের পৌঁছে দেন সমাজের মানুষগুলোর কাছে।

ক্রমশঃ

উপন্যাস "তৃতীয় জীবন "- ৪র্থ পর্ব
"""""""""""""""""""""""""""""'""""""""'""""""""""""""""""""""
রাত বারোটা। স্মেল সহানুভূতির আদরে ভরিয়ে তোলেন কুন্তলাকে,পাশাপাশি রেখে কুন্দ কিছুতেই মেলাতে পারে না দু'জনকে, বাস্তবিকই বিদেশ বিঁভূইয়ের এই দম্পতির অমায়িক ভালোবাসার বন্ধনকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই,রক্তের বন্ধনহীন,অক্ষম একদল রোগগ্রস্ত শিশুর চিকিৎসায় উৎসর্গীত দুটি প্রাণ জীবনের সমস্ত বিলাসীতা,সুখ,ঐশ্বর্য সব ত্যাগ করে সুদূর আলো বাতাসহীন গ্রামে ছুটে এসেছেন এদের সেবার তাগিদে অপরপ্রান্তে রক্তের সম্পর্কের সাথে চলেছে অস্তিত্বের সংকট। মুখ ফিরিয়েছে পাশের আপনজনেরা। সামনের মাসেই চোখ প্রতিস্থাপনের আশ্বাস দেন মি. স্মেল এবং ওর ছেলেরও যে কান,গলা,জিভের পজিটিভ সেন্স রয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত আশ্বস্ত করেন। বলবে তবে সময় লাগবে। ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সেন্স কাজ করবেই তুমি অধৈর্য হয়ো না কুন্তলা। পরম আশ্বাসের কাছে নির্ভরতায় সঁপে দিতে হয় নিজেকে এ অভাবনীয় সৌভাগ্য সকলের আসে না। কুন্দ খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছে তা। এই কুন্তলা মাই লাভ কুন্তলা ভার্লিং কুন্তলা লেট মি টু ইয়োর হার্ট এন্ড স্কুইজড্ দ্য লাভ, এই হল স্মেলের ভালোবাসার ভঙ্গি বারংবার নামোচ্চারনের মধ্যে দিয়ে ভরিয়ে তোলেন সমস্ত না পাওয়ার যন্ত্রনাকে। জীবনের এক বিশেষ অংশ যখন আচ্ছন্ন হয়ে পরেছিল পরিণামহীন সমস্যায় ঠিক তখনই জীবন নিয়ে এল আরেক মানবিক পথে যে পথে উত্তরণ এক সহজ সুন্দর ও স্বাভাবিক চুক্তির নাম, ভালোবাসার নাম। বাস্তবিক এরা অর্থাৎ পাশ্চাত্যের শিক্ষা হিউম্যানিজম নীতির বিশেষ পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত বলেই বোধয় সুন্দর ও সর্বজনীন। ভারতীয়দের সঙ্গে এক্ষেত্রে ওদের সমানুপাতিক শতকরা হার সর্বনিম্ন বাঙালীদের তো না বলাই ভালো এরা অর্থনৈতিক ভিতের উপর দাঁড়িয়ে গোটা মেরিকা দেখে নিলেও মন মানসিকতায় না ঘরকা না ঘাটকা। তনুময় একটি চরিত্র বটে তবে মানবিক মূল্যবোধহীন এক স্বার্থপর কপট প্রকৃতির তফাৎ এইখানে ঠিক এই শূন্যস্থানে। মানুষের জীবনে যত ঝড় ঝাপটা আসুক না কেন একসময় সেও বুঝে যায় প্রকৃতপক্ষে কোন পথটি তার পক্ষে উপযুক্ত ও সহায়ক। একেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অভিযোজন।
অভিজ্ঞান ও অভিযোজন দুইই জীবের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির পরিপূরক। ঠিক তেমনই মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃত স্বত্তা ও মেকীর পার্থক্যের সূক্ষ্মতা প্রায় ক্ষেত্রেই অধরা থেকে যায়। দুটো মানুষ আজ পরস্পর বিরোধী,জীবনের প্রতি অধ্যায়ের প্রতি ক্ষেত্রে। তাদের ওঠা বসা খাওয়া দেখা ভালোবাসা সবটাই প্রায় একে অন্যের বিপরীত এমনকি দেখবার ভাব ও ভঙ্গিও সম্পূর্ণ বিপরীত। অতএব এমন এক দম্পতির সান্নিধ্য কুন্তলাকে পরিণতই করেনি করেছে আত্মবিশ্বাসী। ফিরে পেয়েছে নিজের প্রতি বিশ্বাস। য়্যু হ্যভ এভরিথিং ট্যু কনকোর সো হোয়াই আর য়্যু সো আনফ্লেক্সিবেল প্লিজ এনজয় টুডে দ্যসট দ্য লাইফ। এমন এক জটিল সময়ে কুন্তলা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল শারিরীক কোন উষ্ণতা ওর মধ্যে আছে কি না। কিংবা সহজাত পদ্ধতিতে ওর সেক্স অরগ্যান ঠিকঠাক ব্যবহারের উপযোগী কি না? হয়তো এমনই হয় যখন জীবনের কাছের পুরুষটির কাছে কোন নারীর প্রকৃত স্বত্ত্বার কোন মূল্যায়ন হয় না অথবা বঞ্চিত হতে হতে একসময় কোথাও যেন অবলুপ্তি ঘটে নারী স্বত্ত্বার। মি স্মেল ভালোবাসেন কুন্তলাকে সাজিয়ে তোলেন বিভিন্ন রুচির কারুকার্যে ওর রুপ যৌবনকে, শেখান এনজয় ইয়োর লাইফ এন্ড ইয়োথ। প্রকৃতই কুন্দ পরিপূর্ণ যৌবনমদেমত্ত হয়ে পরিপূর্ণ চেয়ে থাকে আয়নায়। আবেগে স্মেলের গলা জড়িয়ে ভরিয়ে তোলে চুমুতে। ওর আর তনুময়ের শেষের দিকের সম্পর্কটায় না ছিল কোন ভালোবাসা না আবেগ না দায়িত্ব অবশ্য কাঙ্ক্ষিত বস্তুর অন্য কোথাও ঢালাও ব্যবস্থা থাকলে মানুষ অযথা উপোসী থাকবে কেন ❓ঘর নামক আচ্ছাদনে কেবল গোটা তিন মানুষের অসহায় সহাবস্থান। সেখানে কে কার মনের কথা ভাববে? যাই হোক একেবারে বিদ্ধস্ত চির্ ধরা জীবনে শুধুমাত্র মৃত্যু যেখানে পরম তৃপ্তির আসন প্রায় নিশ্চিত করে রেখেছে ঠিক তখনই দপ করে জ্বলে উঠল কুন্তলা। কাগজের এক কোনে একটি ক্ষুদ্র বিজ্ঞাপনে। বরাবর শোবার আগে খবরের কাগজের কর্মবিভাগ খুটিয়ে পড়ার অভ্যেস ওর আর এটাই কাজে লেগে গেল সঠিক সময়ে। গভীরের পরিতৃপ্তি স্মেলই ওকে দিয়েছে। জীবন থেকে সেক্স বিলুপ্ত হওয়াকে একসময় ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছিল কুন্দ আজ কিন্তু অনেকটাই প্রত্যয়ী। আগামী কাল একজন স্পেশ্যাল এম ডি আসছেন মা ছেলের জন্য সাথে আরও দু'জন ফর এক্সট্রা ট্রিটমেন্ট। কুন্দ প্লিজ লুক ওভার ইয়োর ফিজিক্যাল ইমপ্রুভমেন্ট, খাও খাও হোয়াই ইয়্যু সো আনকনসাস অবশ্য শুধু কুন্তলার প্রতিই নয় কটেজের প্রতিটি সদস্যের প্রতি ফাদারের স্বভাবজাত পরিচর্চা শিশুদের মনেও অনবদ্য স্বজনের মহিমা স্থাপন করেছে। ওদেরকে সঙ্গ দেওয়া, খেলাধূলা, পড়াশোনা প্রভৃতি কাজগুলো দম্পতি একসাথেই করে থাকেন পরম সযত্নে। এছাড়া বাকি সময়ের জন্য কুন্দ ও আরো কিছু সহৃদয় সিস্টার রয়েছেন, আয়ারল্যান্ডের কয়েকজন আয়া মাসী উৎসর্গিত সেবা ব্রতী গোটা পরিবারটি নিয়ে এক সেবাশ্রম। যার মধ্যমনি স্মেল দম্পতি। অল্প সময়ে কুন্তলার ওদের মধ্যের একজন হয়ে ওঠার আন্তরিক কাহিনী যেন নাড়া দেয় সকলকেই। ভাবতে ভাবতে দু'চোখ টলমল করে আজও। এখানকার প্রায় প্রত্যেকেরই জীবন ট্র্যজিক কোন ঘটনার সাক্ষী। মরতে মরতে বেঁচে ফেরা কিংবা ধর্মচ্যুত, সমাজচ্যুত সভ্যতার মুখ ফেরানো অস্তিত্ব অথবা নিদারুণ আধুনিক শিক্ষার কদর্য বহিঃপ্রকাশের কিছু অসহায় ছেলে মেয়ের সামাজিক প্রতিস্থাপন কুন্তলাদের মতো অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলা কিছু মেয়ে।

ক্রমশঃ
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৭২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৬/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast