www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উপন্যাস আনবিক (পর্ব আট )

উপন্যাস আনবিক (পর্ব আট )

দীর্ঘ দশদিন মেডিকেলে থাকার পর বাড়ী ফেরে পর্ণা,গেটের কাছে ফ্ল্যটের লোকজনের ভীড়,সন্ধ্যা দি,বেবী বৌদি,ওদের বর ,সিক্যুরিটি কাকু,পাশের বৌদি ,সেই ছোট্ট শিশুটি আর অবশ্যই চামেলী । প্রত্যেকের মুখে হাসি,"মায়ের মত ওকে ধরে সাবধানে লিফটে চড়ে চামেলী, ব্ব্যস ভাবী অর কোই চিন্তা নাহি হমি এসে গেলম,কিত্তা দুবলা লাাগছে, তুম ঠিক তো হো না ভাবী' ? চামেলীর উদ্বেগ । "ঠিক হে" ঘরে সব ঠিকঠাক তো "? " কুছু তোমার চিন্তা কোরতে হোবে না। সোচো মত্ আশ্বস্ত করে ভাবীকে । ছাহাব বললেন কি," তু ভাবীকো লেকে উপর যা হম আতে হে "। জানত হো ভাবী হম উও দিন যব আয়ে ছাব নে বোলা ," ভাবী অসপতাল মে সিঁড়ি সে গিরে গেল , হম ঘাবরা গয়ে ,ডর কে মারে হমরা জান নিকল গয়ে , হুম ! মৃদু হাসে পর্ণা। "ছহাব কো বোলে, আভি অাভি হম দেখে উও ঠিক থে তো ক্যয়সে গিরে গেল "? উনহে বোলা ,'আপনা কাম করো ,জানত হো ভাবী "? লিফট থেকে নেমে কাপড় পাল্টে সোজা শোবার ঘরেi ঢোকে পর্ণা, চামেলীকে চাদর,বালিশের কভার পাল্টে দিতে বলে লনের ধারে এসে দাঁড়ায় নিজের পোর্টেটের পাশে, নাহ্ কোন ময়লা পড়েনি,অার পরলেও চামেলিকে কিছু বলতে হয় না ,ঝেড়ে,পুছে সাফ করে রাখবে সব। বাহ্ ! চমৎকার থোকা থোকা ফুলে ,গাছের পাতা দেখা যাচ্ছে না,অদ্বুত মিষ্টি গন্ধে ভরে গেছে চারিধার , খুব ভাল লাগছে দেখতে । এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য দিনরাত কত যত্ন,আজ ওর পরিশ্রম সার্থক। পাশের ফ্ল্যটের শিশুটি ঘুমোচ্ছে । পর্না একা ! শুধু তার পাশে কেউ শোবে না । কোন শিশুর শরীরের দুগ্ধ গন্ধ প্রাণ ভরে নিয়ে আঁকড়ে ধরবে না তার কোন হাত। বুকের ভেতরটা অসম্ভব ভারী হয়ে উঠেছে সন্তান সম্ববা মায়ের মত,টনটন করছে অন্তরের মাতৃসুধা । পেছনে হাত ধরে চামেলী ," ভাবী চলো নহা লো, " দীমান ঢুকে চামেলীকে ডেকে দুটো প্যাকেট হাতে দেয়,একটি ওষুধের অপরটি ফলের ।" পর্ণা স্নানে গেছে? খাবার পর যে যে ওষুধগুলোয় যেমন যেমন লেখা আছে তেমনভাবে খাওয়াবি কিন্তু, আর খেয়াল রাখবি যেন কোনরকমে উত্তেজিত না হয় । তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে , সাবধান !! কিছু বোঝানোর চেষ্টায় দৃষ্টি দৃঢ় করে ওর দিকে । সেটা চামেলী বুঝে নেয়। ভাবী বেরোয় স্নান সেরে । " তুমার ভাত দিয়ে দিই "? 'কি রেঁধেছে প্রশ্ন পর্নার "? ভজ্জি, শোল মছলি অর চটনি । ছব নে বোলে । ঠিক আছে দে । খেয়ে হাত ধুয়ে শোবার ঘরে ঢোকে পর্ণা, ভাবী তুম শো যাও হমি তুমার দবা লিয়ে আসচে ঠিক হে ? সাহেবও খেতে বসেছেন । খাবার দিয়ে চামেলী হাত ধোয়,ওষুধের মোড়ক খোলে ,শিশি ট্যাবলেটে খাবার সময় লেখা আছে খুব ভালো করে দেখে নিয়ে ভাবীর ঘরে নিয়ে যায় সঙ্গে জল,কাপ,চামচ। "চামেলী ওষুধগুলো আমায় না দেখিয়ে খাওয়াবি না কিন্ত "? "আচ্ছা", চামেলী ভাবীর ঘরে ঢুকে মাথার কছে বসে ওষুধের সূচী তৈরী করে কোনটার পর কোনটা সঙ্গে জল । ভাবী চোখ বুঁজে আছে পেছন ফিরে,মাথার ক্ষততে ওষুধের তুলো। হাতেও সমান্য ক্ষত । পায়ে ছড়ে গেছে , কষ্ট হয় চামেলীর। মথায়,হাতে হাত বুলোতে থাকে স্নেহে । সজাগ হয় পর্ণা, কি রে তুই খেয়েছিস ? না ভাবী অভি যাবে তুমকো দবা পিলাকে । যা না খেয়ে আয় তারপর ওষুধ খাবো । নাহি ভাবি , খতরা হয়ে যাবে। তুম ঠিক সে দবা পি লো হম খা লেঙ্গে । আভি দর্দ তো নহি না ভাবি ?
মুখ নিচু করে প্রশ্ন করে চামেলী ,পৃথিবীর নগন্য অতি দিন্ এই মেয়েটির আতিশয্যে প্রভাবিত ভাবী অবাক নেত্রে চেয়ে থাকে একদৃষ্টে । " সব ঠিক করে রেখেছিস তো "? সাহেব ঢোকেন। সর্ আমি দিচ্ছি তুই পারবি না । বেড়িয়ে যায় চামেলী । নাও ওষুধগুলো খাও তো । ছোট্ট করে মুখ খোলে পর্না। " কি দেখছ অমন করে "? দীমানের প্রশ্ন । তুমি খেয়েছ তো ? পর্ণার মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা । হ্যাঁ, মাথাটা ফেরো ।তুলোয় গরম জলে ভিজিয়ে ক্ষতস্থাণ পরিষ্কার করে তাতে ওষুধ লাগিয়ে দেয় খুব যত্নে । পাশে থেকে চামেলী সহায়তা করে সাহেবের । চামেলীকে ওঘরে যেতে বলে দীমানকে বসতে বলে পর্ণা । খাটে ওর পাশে বসে দীমান। " তুমি কি আবারও আমায় ঐ কাজ করতে বাধ্য করবে দীমান" ? থতমত খেয়ে সামলে নেয় নিজেকে ,মানে? কি বলতে চাও তুমি ? আমি ,আমার এমবিশ্যান , সব ছেড়ে দিই ? উত্তেজিত দীমান । তা আমি জানি না ,তবে তোমায় বলতে পারি এ জঘণ্য কাজ অন্য করুকে দিয়ে করাতে হবে , তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? উঠে দাঁড়ায় দীমান । রাগে গজ্ গজ্ করতে থাকে ,
শোন ,এসব আমাকে বলে লাভ নেই বুঝলে ? সামনের মাসের গেস্টদের কাছেই সব শুনে নিও কেমন ? লালসার জাল এক্কেবারে গভীরে প্রবেশ করায় অগাধ প্রশ্রয়ের সীমা অতিক্রম করেছে দীমান, বেড়িয়ে পরছে ওর নগন্য নৃশংস মুখভঙ্গি , পৈশাচিকতা ওর কথা বার্তায় ।ধৈর্য্যের এক্কেবারে শেষ সীমায় এসে কঠোর সংযমী প্রশ্ন করে পর্ণা " তার মানে তুমি কোনদিন ভাল হবে না ? আমরা অার আগের মত সুন্দর সংসার করতে পারবনা, না দীমান" ? ঝড়ঝড় করে কান্নায় ভেঙে পরে পর্ণা ।সবটাই নির্ভর করছে তোমার উপর,দীমানের নিস্পৃহ উত্তর । ধীরে নিস্তব্ধ হয় সমস্ত কোলাহল,শান্ত, নীরব ঘর,সংসার ,নারীর কামনা বাসনার চার দেওয়াল । বাইরে নারী দিবসের তোড়জোড় টি ভি তে নারী অগ্রগতির বিবিধ ভাষণ,বক্তৃতা,গান ,নাচ,মিছিল,মিটিং কত কি ।পর্ণা নিথর হয়ে পরে থাকে বিছানায়,কোন ভাবনা কাজ করেনা আর, কোন বোধ । প্রকৃতপক্ষে মানুষ, বিষেশত নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই পাশের মানুষটির অসহযোগিতায় অনেকখানি চির ধরে বিশ্বাসের জায়গাটায় ,নিজের কাছে জগতের কাছে ,সর্বত্র নিজেকে ছোট মনে হয়,দাঁড়াবার জায়গাটুক পর্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে । নারীর নিজস্ব অবস্থাণের জায়গা যেখান থেকে শুরু হয় তার অস্তিত্বের সংগ্রাম সেই মূল জায়গাটি যদি হয় অবিশ্বাসের তবে জীবনের কোন পথে চলবে টিঁকে থাকার লড়াই ? পুরুষ কেন্দ্রিক সমাজে পর্ণার মতো নাম গোত্রহীন একাকী নারীর অস্তিত্বগুলো কি ক্ষয় হয়ে যাবে ? হয়তো পিঠ ঠেকে গেলে সমাজের মানবিক মুখগুলো বড় বেশী প্রকট হয়ে পরবে , ধরা পরে যাবে মেকী মুখোশের অন্তরালে পুরো সমাজটার নগ্নরুপ, দেশ থাকবে,সমাজ থাকবে, অন্তরাল থাকবে , সব থেকে যাবে ,থাকবে না কিছু পর্ণাদের সমাজ,সংসারে মানুষ গড়ার সুষ্ঠ প্রচেষ্ঠা । একাকী পর্ণাদের সাফল্যে ঘৃণা ছেটানো হবে , সামাজিক সংস্কার ,অবজ্ঞার অন্তর্জালে রুদ্ধ করা হবে ওদের হাঁটার পথ। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা পর্ণা উঠে বসে বিছানায়, ওঘরে ঘুমন্ত দীমানের নাক ডাকা ছাপিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দ প্রহর । হয়তো ঝুলে পড়েছে লালসার জিভ, অাধ বোঁজা চোখে কুৎসিত স্বপ্নগুলো নুইয়ে পরছে অন্তরালে , বিশাল পেট নাকের বাদনে তাল মিলিয়ে নৃত্যরত । দেখলেই বিরক্ত হয় , চামেলী ঘরে ঢোকে প্লেটে কিছু ফল নিয়ে, ' উঠো মত্ ভাবী শো যাও, বহত দর্দ হোগা , । না , আর শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না রে,পর্ণার হতাশ উত্তর। কাহে ভাবী ? লো খালো , ফলের প্লেট এগিয়ে দেয় চামেলী। দুপুরের রোদ কেটে বিকেল স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভীড়ে যানজট পেড়োতে হিমসিম পথচারী।
রাস্তা,ফুটপাথ,মানুষ কোলাহলে অন্য আরেক জগতের প্রতিচ্ছবী । পর্ণার প্রেক্ষাপটের তীব্র ফোকাসে ম্লান বাকী সব দৃশ্যপট । সন্ধ্যে হলে দীমান বেড়িয়ে যায় , চামেলী থাকবে আরও কিছুটা সময় এর জন্য ওর বরাদ্দ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা । হ্যাঁরে ,সাহেব আমাকে কতদিন দেখাশোনা করতে বলেছে রে ? কৌতূহলী পর্ণা । ও তো হম নাহি জানে , হমকো বোলা কি তু ভাবীকা খয়াল রখনা তুঝকো মহিনে মে পাঁচ হাজার মিলেগি । বেজে ওঠে ফোন চামেলীকে টি ভির কাছে পাঠিয়ে দরজা হালকা করে বন্ধ করে পর্ণা । ' ঘুম ভাঙলো ? প্রশ্ন প্রত্যুষের । ভাঙলো ,কিন্তু তোমার ভাঙলো কই ? প্রশ্ন ছুড়ে দেয় পর্ণা । মানে ? আমিতো জেগেই থাকি , তোমার ডাকের অপেক্ষায় । সে তো আমি বুঝেই নিয়েছি অভিমানী পর্ণার উত্তর । ভুল বুঝেছ তুমি । দৃঢ়তার সাথে প্রত্যুষের প্রত্যুক্তি । শুনুন ম্যডাম আপনি একটু কম কম কথা বলুন কেমন ? আপনার ইনজিওরড কিন্তু পুরোপুরি কিওর হয়নি । ওর রসিকতার আমল না দিয়ে পর্ণা জানায় , ' অতটা ভাবনা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না ? তুমি না সেই ছেলেমানুষই রয়ে গেলে পর্ণা , ওহো ওষুধ ঠিকমত খেয়েছ তো ? প্রত্যুষ তুমি কি আমায় এভয়েড করতে চাইছ বল প্লিজ্ , এটা জানা আজ আমার ভীষণ জরুরী । আরে পাগলী আমি আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তোমায় চাই বিশ্বাস করো ? সময়ে প্রমাণ দিতে পারবে তো? দৃঢ় প্রস্তাব পর্ণার । কেন নয় ? একশো বার,হাজার বার আশ্বস্থ করে দীমান । ওর ব্যবহারে কেমন একটা এড়িয়ে যাবার গন্ধ পায় পর্ণা , কিছু বলতে গিয়ে থমকে যায় ওর সুইচ অফ্।
। কি করবে এবার সে ? কাকে বিশ্বাস করবে দীমান না প্রত্যুষ ? কার সাথে জুড়বে জীবনের ছেড়া তারগুলো ? কার কাঁধে ভর করে ফিরে তাকাবে সূর্যোদয়ের দিকে ? পৃথিবীর হতভাগ্য সময়গুলো তাড়িয়ে তাড়িয়ে ওকে দাঁড় করাবে খোলা মাঠের সমতলে । বাকী পর্যায়ে অন্য কোন পুরুষকে ঘৃণা হবে, স্বার্থপর মনে হবে। হয়তো সেটাই স্বাভাবিক । ঘোলাটে লাগছে পুরুষ জাতটাকে , উগরে উঠছে ঘৃণা,বিদ্বেষ । বাবা,কাকা,ভাইরুপে সমাজের পুরুষদের স্নেহপ্রবণ মুখের ভীড়ে একদল স্বার্থান্বেষী নরপিশাচের ঘৃণ্য রুপ ক্রমশঃ ঝাঁকা দিয়েই চলে ওর অস্তিত্বে ,বিশ্বাসে । মঞ্চে সংবর্ধনা বক্তৃতার ধূম ' জাগো নারী , উঠে দাঁড়াও, রুখে দাঁড়াও । জীবন তো একটাই, কোন মূল্যে আমরা সমাজের নিপীড়ণ মেনে নেব না। মেনে নেবনা কোন অসম্মাণ , বারংবার নারী শক্তিকে পদানত করে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অন্ধকারে , আর নয় ,আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন অসংখ্য বীর মহিয়সী নারীরা , তাদের দেখেও যদি আমরা আজও পুরুষ নিস্পেষণের স্বীকার হই সেটা চরম লজ্জারই নয় অপমানেরও , বন্ধুরা যেখানে স্নেহ নেই,প্রেম নেই,নেই ভালবাসার সহানুভূতিও সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা কোন সুস্থ সমাজ গঠন করতে চলেছি? যেখানে নারী পুরুষের সুন্দর সহমর্মিতা, সহযোগিতা বিচার করা হয় যৌনতার নিরিখে ,সেখান থেকেই আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে এগিয়ে আসতে হবে আপনাদের সকলকে...বন্ধুরা!
রাতের খাবার গুছিয়ে বিদায় নেয় চামেলী ।
.........বুকে হাত রেখে ,মনে মনে শক্ত করে নিজেকে পর্ণা ,' আমায় আরও সহ্য শক্তি দাও ' ।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৯৯৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast