www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উপন্যাস -আনবিক ( পর্ব চার )

উপন্যাস- আনবিক
( পর্ব চার )

আজ অনেক ভোরে উঠেছে পর্ণা, বাগানে আধঘন্টা পায়চারী করে চা বানিয়ে একাই খেয়েছে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দীমান , পিয়ারীও প্রায় সাতটায় আসবে গতকালের আবেগে আজও সম্মোহিত, বাস্তবের মুখে পড়ে গভীর আলোড়নে তোলপার শরীর,মনকে কিছুতেই বশে রাখা যাচ্ছে না , অদৃশ্য একটা কাঁটা ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে হৃদয়ের অন্তঃস্থল । প্রস্তরখন্ডে নির্মিত নিরেট মানুষগুলি কোন এক যুগের বিবর্তনে যদি হঠাৎ গুনতে শুরু করে অতীত, বর্তমানের প্রাপ্তির নিটফল তবে তারা কি পাবে? পারবে কি কালের ধূসর প্রলেপ মুছে দিয়ে বিষাদ বেদীতে ফের ধূপ,দীপের আরাধনায় হৃদয় স্থাপণ করতে ? মরে যাওয়া আহত মানুষগুলিকে প্রাণান্মোদনায় ভরিয়ে তুলতে ? প্রত্যুষ এখানে এক মুছে যাওয়া চরিত্রের অস্ত্রোপচারে মগ্ন , সব ক্ষত সারিয়ে ফিরিয়ে আনতে চায় একান্ত ভালোবাসাকে ! নিজের প্রতি ধিক্কার হয় এই মানুষটাকেই সে স্বার্থপর ভেবেছিল ছি ছি! শরীরটা আলস্যে ভরপুর কোনরকম টেনে বয়ে নিয়ে চলা । কলিং বাজছে চামেলী এসেছে । ভেজানো দরজায় ঠেলা মারলেই বুঝবে । " ইয়ে লো ভাবী গুলাব কে ফুল, বহত আচ্ছা , হ্যয় না " ? এত ফুল কোথায় পেলি রে ? আহ্ একদম টাটকা " ।
কেন কাল ভিলেনটান পূজো থে না ? মেরা মরদ খোব সোহাগ করল , বলল পিয়ারী আজ রাতকো হম খায়ে,পিয়ে সোহাগ রত মনায়ে " জানতে হো ভাবী ও বিলকুল ভাল হয়ে গেল, কাম ভি মিলল, হমকো বহত পার করল বলল কি ,পিয়ারী আজ সে পিনা বন্দ , তু হাথমে পিলাবে তো পিবে।
বাহ্ আমার খুব আনন্দ হচ্ছে রে চামেলী । যাক্ তোর আর কোন দুঃখ রইল না বল্ ?
কি বলবে ভাবী উ তো ভগবান জানে , আপলোগোকো শুভকামনায়ে হমকো বহত সারি চেন মিলে । ও হ্যয় কি হমরা মরদ ইত্তা জাদা বুড়ে না থে , উও শালা দুবে কা আদমীলোগ হর রোজ উওকে দারু পিয়ে বিখড়ে দিল , উও বহত শরীফ থে................বাহ্ আজ তোকে খুব ভাল লাগছে রে পিয়ারী , দেখেই বুঝেছি তোকে তোর মরদ বহত প্যার কিয়ে । যা এবার ব্রেকফাস্টের টাইম হল , বিন্দু মাসীকে বলবি আজ যেন ফ্রুট জ্যুসটা মিক্সড বানায় , ডিনারে মাছ,সবজী , ডাল ।
প্রত্যুষ টয়লেটে ঢুকেছে , " পর্ণা আমার টাওয়েলটা দেবে ? মনে আছে তো আজ ডঃ স্মিথের এপয়েন্ট , দেখেছ ভাগ্যি মনে করালাম নইলে সবতো ভুলে বসে আছো ।
ভুলব কেন আমি তো ডায়েরী তে ডেটটা মার্ক করে রেখেছি !
টাওয়েলে মাথা মুছতে মুছতে জ্যুসে চুমুক দেয় দিমান , টোস্টে কামড় ।
ডঃরের টাইম ক'টায় ? সন্ধ্যে সাতটা ,তুমি রেডি হয়ে থেক আমি পিকাপ করে নেব । কাগজটার হেড লাইনে চোখ বোলায় , ধ্যুৎ আজকাল পেপার খুললেই আজে বাজে সব খবর । কেন ? কি বাজে খবর ? দ্যাখো ফ্রন্ট পেজের ডানদিকের কর্ণারে........কই দেখি ? মাত্র পঁচিশ হাজার টাকার বিনিময়ে মা'কে খুন করল ছেলে । বেকার শিক্ষিত যুবক চাকরীর পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরী না পাওয়ায় , ব্যবসার জন্য পঁচিশ হাজার টাকা ধার চেয়ে না পাওয়ায় রাগের মাথায় ডাসার বাড়ি মেরে খুন করল ছেলে অসহায় মাকে । এসব তো নৈমিত্তিক ঘটনা । তা অবশ্য ঠিক রাজ্যে চাকরী বাকরীর যা হাল্ ট্যালেন্ট থেকেও মার খাচ্ছে যুব সম্প্রদায় , ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাস্তানাবুদ করে খেঁপিয়ে তোলা হচ্ছে বঞ্চিতদের, ওরা না পাচ্ছে কোন স্থায়ী সমাধান না সুস্থভাবে বাঁচার অবকাশ , সমাজে সংসারে লাথ, ঝ্যাটা পাওয়া এই শ্রেনীরা ভয়ানক অনিশ্চয়তার শিকার হয়ে, হয়ে উঠছে খুনী, ডাকাত,মাস্তান দেশদ্রোহী ! আসলে এরাই সমাজ,সংসারের অবহেলিত সম্প্রদায় , এদেরই দেশ ,রাষ্ট্র মাওবাদ তকমা সেঁটে আরও অন্ধকারে নিক্ষেপ করছে , আসলে পুরো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ষড়যন্ত্রই এই পরিস্থির জন্য দায়ী ।
আসলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চায় যুবসমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হোক্, ব্লু ফিল্ম , ড্রাগে নেশাচ্ছন্ন হয়ে, হয়ে যাক মেরুদন্ডহীন ।সেই সুযোগে মাথা চাড়া দিয়ে উঠুক সাম্প্রদায়িক শক্তি, অনুপ্রবেশ ঘটুক বর্হিশক্তির ,অর্থাৎ যুবশক্তির ধ্বংস সাধনে ওদের বর্হিশক্তির কাছ থেকে ডাবল ট্রিপল্ মুনাফা অর্জনের পথ প্রশস্ত করা ।
একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে পর্ণা কি অদ্ভুত বিচক্ষণ দেখাচ্ছে ওকে, জ্ঞানের আলোয় উজ্জল মুখমন্ডল, এই সেই পান্ডিত্য ? দামী পার্ক এভিন্যুর বিলাসবহুল কোঠায় শিল্পপতিদের চূটকিতে বন্ডে স্বাক্ষর করে মাথা নুইয়ে স্বেচ্ছা প্রস্থাণ ?
উরিব্বাস খাবার দাও গো ! 9টা 10 । বিন্দু মাসীকে বলতে হয় না , তোমার টেবিল রেডি ।
তাছাড়া মজাটা দ্যাখ পর্ণা , এত অনুষ্ঠাণ মিছিল, মিটিং ,সভা, সমিতি ,সমাবেশ , উৎসব শুনেছ কখনও ওদের এই কঠিন সময়ে কোন প্রতিবাদী মঞ্চ , মিছিল , সমাবেশ ? বরং কি শান্ত ব্যবহারে ওদের উপেক্ষা করার পরিস্থিতি , সত্যি ভাবতে অবাক লাগে । এর চাইতে ইংরাজ রাজত্ব শতগুনে ভাল ছিল ! হাত ধুয়ে উঠে পরে দীমান ,
রেডি হয়ে থেক , হুশ্ করে বেড়িয়ে যায় জাপানীস্ স্যান্ট্রো ! কথা পৌঁছয় না পর্ণার কানে । বিন্দু মাসির কাজ শেষ , চলি গো দিদি, দোরটা দিয়ে দাও ! কেন মাসি আমার সাথে কি দু দন্ড কথা বলা যায় না ? আচ্ছা মাসি মেসো তোমায় খুব ভালবাসে না ? সে কি আর সুস্থ আছে রে মা , ছয় মাস হল ডাক্তার, বদ্যি আর ওষুধ । সত্যি মাসি তোমার দিকে তাকানো যায় না , কঙ্কালসার হয়ে গেছ গো । কোন অসুবিধা হলে বোল কিন্তু । বেঁচে থাক্ মা , বলব রে মা বলব । প্রায় পর্ণার বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই বিন্দু মাসির প্রবেশ আপনজনের মত , সবকিছু ওর হাতে ছেড়ে নিশ্চিন্তে থাকা যায় , পিয়ারীও খুব বিশ্বস্থ কিন্তু খলবলি স্বভাবের , মুখের ভাষাটা নিয়ে একটু সমস্যা , অনেকভাবে বুঝিয়েও লাভ হয়নি কোন ,ওর মরদ বেঠিক হলেই খিস্তির ফোয়ারায় খিপ্ত হয়ে যায় মানুষজন , মাঝে স্লেট পেন্সিল কিনে দিয়ে প্রাথমিক পাঠটা শেখানোর ব্যবস্থা করেছিল পর্ণা বেশ কিছুদিন বসেও ছিল, তারপর আবার যে কে সেই, আসলে ওরা ছোটবেলা থেকেই খিস্তি ,নোংরামির মধ্যে থাকতে অভ্যস্ত তাই রক্ত,মজ্জায় গেঁথে গেছে এ সমস্ত এ মার্কা ভাষা শুধু কাজকম্মে এক্সপার্ট বলেই ছাড়ানো যায় নি এ যাবৎ। হাঁ করার আগেই সব বুঝে নেয় ।
কি রে দুবেজীর রাগ মিটল ?
কাহে নাহি ? হমি রুপয়া লেকে উর মুহ্ মে ফেক দিয়া ! ঠিক কিয়া না ভাবী ?
হা ঠিক কিয়া ।
এক বাত বোলে ভাবী ? ডাটোগে তো নাহি ?
বলনা । উ দুবে কা যো লেড়কা হে না বহত খুব সুরত হে , ইস মহিনে মে আয়া ।
এ--বাত ক্য হে বতা । কুছ কিয়ে তো নাহি না ?
এ হি হি হি হি , ভাবী আরে ঘাবরাচ্ছে কেন আমি বলছে কি উও বহত খুব সুরত আছে ।
তো তোর কি আছে ? কাজ কাম সব হয়ে গেল ?
আমার ব্রেকফাস্ট কোথায় ? ইস ভাবি ভুল হয়ে গেল, কান পকারছি । টিফিনে সাধারণত জ্যুস দু পিস স্লাইস খায় পর্ণা । ফোনে কলিং ! হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় , ওহ্ প্রত্যুষ !
আজ সন্ধ্যা সাতটা । মনে আছে তো ?
কিন্তু ?
কোন কিন্তু নয় , সব দায়িত্ব আমার ।
আমি খুব ক্লান্ত প্রত্যুষ, বিশ্বাস করো ভীষণ ,আর পারছি না দম বন্ধ হয়ে আসছে । এই বধ্যভূমিতে আর কিছুদিন থাকলে আমি বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যাব নয়তো নিজেকে শেষ করে দেব প্রত্যুষ ! আমি আর একটুও সহ্য করতে পারছি না ।
আমি স--ব জানি পর্ণা । তোমার নিজের স্বার্থে আরও একটু ধৈর্য ধরো প্লিজ্ । ভেঙে পোর না একদম , কেমন ? আমাকে ভেবে একটু ধৈর্য ধর কেমন ? পর্ণা আমার পর্ণা ! আমার জীবন , আমার প্রেম , আমার ভালোবাসা ।
আমায় শক্ত করে ধরে রাখো প্রত্যুষ , আমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি, শেষ হয়ে যাচ্ছি ........
আমি তোমায় ধরে রেখেছি ভীষণ শক্ত করে, কেউ তোমায় শেষ করতে পারবে না পর্ণা । এই যে আজ থেকে তোমায় ছুঁয়ে থাকলাম , তোমার মুখটা কালো হয়ে গেছে আমি আদর করছি, মাথায় হাত বুলিয়ে তোমার সব কষ্ট নিয়ে নিচ্ছি , দাও পর্ণা তোমার কষ্টের সবটুক আমায় দাও আমি তোমার কষ্টের জমিতে ফুল ফোটাবো ।
একি তুমি কাঁদছ পর্ণা ? আমি পারলে ছুটে চলে যেতাম তোমার কাছে,ছিনিয়ে নিতাম আমার প্রাপ্য । কিন্তু আমি যে কি ভীষণ অসহায় কি করে তোমাকে বোঝাবো বল ?
কেন কেন কেন .........প্রত্যুষ কেন শুধু আমিই তছনছ হয়ে গেলাম বলতে পার ?
আমি । হ্যাঁ এর জন্য আমিই দায়ী । কোনদিন আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না পর্ণা , কোনদিন না, যতদিন বাঁচবো এ অপরাধ বোধ আমায় কুঁরে কুঁরে শেষ করে দেবে !! আমি তোমার সুন্দর জীবনটা তছনচ করে দিয়েছি পর্ণা, আজ অপরাধী হয়ে এসেছি তোমার কাছে , আমার শাস্তি নেবার জন্যে । আমায় তুমি শাস্তি দাও পর্ণা ইচ্ছে মত শাস্তি দাও ।
প্রাথমিক কর্মক্লান্ত দিনের অবসানে চামেলীর প্রস্থানের সময় , " ভাবী মসীনে আজ শুকত্ বনায়ে না ফাস্টো কেলাস , সাহাব ভী তারিফ করল, " তাই "? হাঁ গো ভাবী হম ভি শিখ লিয়া , ঠিক আছে তুই যা আমি স্নানে যাব । পাশের ফ্ল্যাটের লনে গভর্নেস শিশুটিকে নিয়ে খেলায় মগ্ন, সদ্য কথা ফোটা বাচ্ছাটি আঙুল তুলে কি বলার চেষ্টা করছে , লনে এসে দাঁড়ায় পর্ণা ইশারায় ডাকে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে শিশু । বস্তুত এ অপার্থিব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে ঘর থেকে ফোন অন করে ।ক্যামেরা বন্দী হয় রাস্তায় জানযট , তরুণ তরুণীর হাত ধরাধরি প্রণয় দৃশ্য , বিভিন্ন মানুষ, বিভিন্ন পোষাক হলেও প্রেমের ক্ষেত্রে প্রায় সকলেরই সমান প্রতিক্রিয়া । সুখ,দুঃখ হাসি কান্নার এক অভিন্ন সমন্বয় ! নিচ থেকে সিক্যুরিটি কাকু চেঁচিয়ে বলছে," উও ছাত পর টেঙ্কি কা চাবি বন্ধ করিয়ে দো বেটি পানি খতম হো যায় গি " ,
হে কাকু , মোবাইল টেবিলে রেখে দৌঁড়ে ছাদের সিঁড়ি ধরে সোজা ছাঁদে ,ট্যাঙ্কি উপচে জল পড়ছে , চাবি বন্ধ করে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে আচমকা ফসকে যায় পা , শাড়ী আটকে গড়াতে গড়াতে নীচে অচৈতন্য হয়ে পড়ে পর্ণা । রক্তে ভেসে যাচ্ছে সমস্ত মেঝে , চমকে ওঠে পাশের ফ্ল্যাটের খুশী বৈাদি একি পর্ণা না ? কি হয়েছে ওর ? গার্ডকে ডেকে খবর দিতে বলে দিমানকে পাশের সকলকে হাঁকডাক শুরু করে দেয় বৌদি , বহু জনসমগমে দিমান কোনরকম ঠেলে অচৈতন্য পর্ণাকে দেখে ফোন করে ডঃ স্মিথ কে । মিনিট খানেকের মধ্যে ডঃ হাজির হন , ততক্ষনে পর্ণাকে গ্রাউন্ড ফ্লোরের প্রথম ফ্ল্যাটের খুশী বৌদির ঘরে শোয়ানো হয় । ডঃ আসেন । ট্রান্সফার করা হয় মেডিকেলে ।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৮৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast