শিবা দ্য পোট্রেট (ছোট গল্প)
ওর বর্তমান যে বয়স তাতে যে বিয়ে হয়না তা নয় আসলে যে কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না তা হল ওর চরম দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বছর পনের আগে কোনরকম গ্রাজুয়েশন'টা করে সরকারী চাকরীর চেষ্টাও করেছিল কিন্তু বর্তমান সমাজনীতির দুর্ণীতিময় সরকারী প্রশাষণের কর্মসংস্থানে ওর জায়গা হয় নি । কারণ কিছু নিয়ম থাকে যা' সাধারণ শিবাদের বোধাবোধের বাইরে, যেখান থেকে ওদের জায়গা ছেঁটে দেওয়া হয় কেন তা শিবার জানা নেই । জানা থাকলেও ইউনিয়নের চতুর্গুণ পাওয়ার লেন্সের চার জোড়া লিপ্সার চোখে চেখে পুছে হজম করে ফেলা হয় ওদের অস্তিত্ব । শিবারা জানে না,জানতে পারে না , শর্ত আছে ,বারণ আছে ।
বর্তমানে তাই লজ্জা,ঘেন্না জলাঞ্জলি দিয়ে তিন চাকাওলা অটো রিক্সাকেই রোজগারের উপকরণ রুপে বেছে নিয়েছে শিবা হাওড়া থেকে আন্দুল, আন্দুল থেকে হাওড়া এই হল ওর নৈমত্তিক পথ পরিক্রমা ,দীর্ঘ দশ বছরের এই সিটটায় কতরকম যে অভিজ্ঞতা হয়েছে যা ওকে কিশোর থেকে পরিপুষ্ট মানুষে পরিণত করেছে । বাড়ীতে মা পরিচিত গন্ডীটুক আগলে পরে আছেন শুধু , এক ছটাক্ কলোনী'র সংস্থাণ অার ঘুঁণে ধরা চৌকি । যেখনে দিনান্তে ছায়া পড়ে টুকটুক শাড়ী পরা রাই কিশোরীর ছমছমে দু'টি ঘুঙুর পরা আলতা রঙা পা'য়ের সোহাগ, শাষণ,বারণ .......। শাঁখা,সিঁদুরের ঝনঝনি, যুঁই আঁতরের মধুর বাতাসে ঘরময় ছলাৎ ঢেউয়ের উথাল পাতাল...............আর বছর আশি'র অসমর্থ মায়ের চির কটূক্তি," অহন মুই আর পারত নাই , ক্ষ্যামা দে বাপ্ " ।
কোনরকম বাসি পান্তা গলাধঃকরণ করে মাথা নুয়ে বেড়িয়ে বাঁচে অন্যান্যদিনের মতো , এ বাঁচায় আত্মগ্লানি আছে ,অনুশোচনা অাছে তারপর ক্রোধের কোন বাঁধা নেই,অশ্রাব্য যা খুশী বলে হালকা হওয়া যায় অনেকটা । সেখানে কেউ অশ্লীল নয় বরং প্রতারিত । অনেক প্রতরণা সমাজের,দেশের,দশের,বংশের, গ্রামের- সব জমে তৈরী হয় শিবাদের ক্রোধের মিসাইল ।
অরুণ ওর শৈশবের প্রিয় বন্ধু। পাশের গ্রামেই থাকে বিয়ে করেছে সদ্য,অবসরে সেখানে যায় মাঝে মধ্যে, ইদানিং একটু বেশী , সাহানা!! বেশ ডগমগে রুপসী, খুব আপ্যায়ন করে শিবাকে , কেন নয় ; প্রায় ছ' ফুট উচ্চতা'র টকটকে দাপুটে শিবা পাড়ার প্রায় সব মেয়েরই পছন্দের । কপাল আছে অরুণের ,পাশটা করেই মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে কাজটা পাইয়ে দিয়েছেন এম এলএ ভুবন দা' । দুই বন্ধুর একজনের হল অন্যজনের নয় । গ্রাম জানল মেধা আছে অরুণের, ধারে কাছে যায় না শিবা ।
ক্রমে সাহানায় ডুবে যায় সে, অড্ডা, গল্প,ছোটখাটো খুনসুটি আরো কিছু... রুপের চটকে মোহিত শিবা ভুলে থাকে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা , কথা দেয় ঘর পাঁকা করে তবে সংসার পাতা । ইদানীং বেশ রাত হয়ে যায়, রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়েন না বৌঠান । বেশ লাগে অালতো ছোঁয়ায় যেন শরীরে রোমাঞ্চের টের পায় শিবা ,"জানো ঠকুর'পো প্রায় দুমাস হয়ে গেল কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেল না তোমার বন্ধু ", চোখে জল.........
"আসলে কি জানো বৌঠান অরূণটা একটু গোঁয়ার প্রকৃতির ,নিজের ছাড়া অন্য কারুর সুখ,দুঃখ ওকে ভাবায় না মোটে, সেটা ছোটবেলা থেকেই" । ছুটে ভেতরে চলে যায় সাহানা পছন্দ হয় না শিবার অযুহাত, ম্লান হেসে ধীরে শিবার প্রস্থাণ.....................।
হায় মানুষ !! সংসারের নিতান্ত স্নিগ্ধ ছায়া সুনিবিড় কাংখিত যে জায়গাটুকের জন্য জগতের সমস্ত মানুষ মানুষী বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধণে আবদ্ধ হবার স্বপ্ন দেখে নিতান্ত কিশোর বয়স থেকেই ,জীবনের প্রতিটি উত্থান পতনে যে নির্ঝরিণী স্নেহ পুত্তলির কোমল স্পর্শে সমস্ত দুর্বোধ্য পথ অতিক্রম করে চলার সাহস ও শক্তি পায় এই সেই প্রচ্ছায়া আজীবন শুধু পুরুষের পাশে থেকে অনবরত শক্তির যোগান দেয় এইতো সেই বন্ধণ ।
প্রচন্ড রাগ হয় অরুণের ওপর, খিঁচরে যায় মেজাজ, "হতভাগা অরুণ ",কোন দিক থেকে যদিও ওকে খারাপ বলার কোন অযুহাত নেই, কি সংসার পালনে, কর্তব্য কর্মে,দায়-দায়িত্বে খারাপের মধ্যে নিতান্ত নারীকূলের অধিকার জাতীয় কিছু দেখলেই বিগরে যায় মেজাজ , "মেয়েছেলে জাতটা হল বুঝলি শিবা ঘরের পোষা মুরগীর মতো পোক্ত করে বেঁধে রাখতে হয়,বাঁধণ অালগা হলেই ফুরুৎ "!! বলেই জিভ দিয়ে টাকড়ায় অদ্ভুত আওয়াজ করে । আড়চোখে শিবার দিকে চাওয়ায় কেমন যেন আড়ষ্ট বোধ হয় ওর । এক ঢোকে চায়ের গ্লাস শেষ করে দ্রুত সরে পরে রাস্তায় ।
আজ কেমন অন্যমনস্ক দেখায় ওকে ,অবিন্যস্ত চুল ,ময়লা পোষাক,মুখে আধপোড়া বিড়ি । স্ট্যন্ডের গতিকে হাত ধরে সময়ে পৌঁছে দেয় গন্তব্যে ," চৌমাথা ,স্টেষণ , হল্ট ব্রীজ,স্কুল গেট ,চৌমাথা স্টেষণ ....................সময়ের কন্ঠস্বরে প্রায় সকলেই নিত্য সচকিত ।
ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাঝগগনে এলিয়ে দেয় শরীর, তার সোহাগী প্রেয়সীর মতো, সুদীর্ঘ সময়ের কাঁচা পাঁকা রাস্তায় তার অবাধ প্রেম কিভাবে বয়ে গেছে প্রেমী সময় আলতো করে বলে যায় কানে কখনো বাতাস হয়ে,কখনো ঝঞ্ঝা হয়ে । কেমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে আকাশের মতো মহা জাগতিক ওদার্যে, প্রেয়সী যেন একান্তে দেখিয়েছে অনাড়ম্বর সহিষ্ণুতা,ত্যাগের প্রকৃতি, কখনো সন্ধ্যায় নক্ষত্রের চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়া, কখনও তারূণ্যের চরম উচ্ছাসে দিগভ্রান্ত হওয়া ।
দশটা বছর দীর্ঘ সময়ে গাড়ীর স্টিয়রিংয়ে হাত রেখে পার হয়েছে বহু ঝঞ্ঝার পথ্ ।বহু ঝঞ্ঝায় লক্ষ্য হয়েছে দৃঢ় ও স্থির । শিবা এখন খুব সহজ সাহানার কাছে অর্থাৎ অরুণের পরিবারে অনেকটা সময় কেটে যায় অড্ডা,খেলায় । প্রায় রাতেই খেয়ে বাড়ী ফেরে ,অরুণের কড়া আবদারে । ভুরভুরে সৌগন্ধে মতোয়ারা শিবা রাত্রে ঢলে যায় একরাশ পাপড়ি বুকে ।
দু'বন্ধুর অন্তরঙ্গের ঈর্ষায় কোথাও নড়তে থাকে টলমলে ভিত্ ,ভেতরে না অন্তরে বোঝা যায় না কিছু, শুধু কতগুলো জটিল চোখ জ্বলজ্বল করে সামনে পেছনে । শিবা লক্ষ্য করে সাহানা কেমন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে যেন বলতে হয় বলে,চলতে হয় বলে, মন ভেঙে যায় ওর ।
শিবার অত্যন্ত প্রিয় বন্ধুটি যে শিবার খুব ভক্ত বুঝতে কষ্ট হয় না,অতি পরিশ্রমী,সৎ,নির্ভীক, বলিষ্ট,শিষ্ট,বিচক্ষণ ,মিতভাষী শিবার । অতি সহযেই ভালোবাসার বন্ধণে আবদ্ধ হয়ে যায় প্রায় সকলের । বিশেষত অরুণ খুব ভরসা করে বন্ধুকে, অন্য সকলের চাইতে নির্ভরও করে খুব বেশী । দু'জনার মাঝখানে তিরতির বওয়া নদীটি এতক্ষনে পাড়ের কিণারায় চুপটি করে আছে, কোন ঝুরঝুরে ভিতে ভাঙবে তার নিরেট চ্ছাস ঠাহর করতে পারে না বোধয় । ঝড়ের আগে যেমন থমথমে ভাব আছড়ে পরে প্রলয়ের ঘাড়ে তেমন কিছু আভাস হয়তো কোথাও নির্মিত হচ্ছে ,ততক্ষনে আড়ালের দৃশ্যে জমে গেছে অধ্যায় । ধুপধাপ জানালা দরজা বন্ধের সশব্দ ওদ্ধত্য ।
পরের দিন পরিবহন ধর্মঘট , স্থির হয় দিনভর আড্ডা,খাওয়া দাওয়া ,খেলা । ব্যাস্ রাজি দু 'পক্ষ । মুচকি হাসি সাহানার, চোখ এড়ায় না শিবার । পরদিন বেলা দশটা' ,কলতলে সাহানা ইয়া বড় পাঁকা রুই--- এক্কেবারে ন্যাজে গোবরে অবস্থা বৌঠানের , ল্যাজ ধরে তো পা ফসকে যায় ,মুড়ো ধরে তো ল্যাজ ফসকে ..........."অাহ্ ঠাকুরপো''..
আমি আছি তো, কই বটিটা শক্ত করে ধরি , বেচারা মাছ দুষ্ট চক্রান্ত ফেঁদে মজাটি দেখবে বলে কি বাহাদুরি ,একবার ডায়ে একবার বায়ে ,যেন রাম্পের মাঠে দুই তারকা,মাছ হল উপলক্ষ্য মাত্র । ঘেমে নেয়ে সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা , হঠাৎ বটিতে জোরে চাপ দিতেই সাহানা বৌঠান অপ্রস্তুত , অন্তর্বাসের আর ব্লাউজের হুকের চরম সংঘর্ষে রাম্পে পরাজয় , সরে গেছে শাড়ির অংশ, সাহনা বৌঠানের বিপর্যয়। অারক্ত লজ্জা শিবার চোখে মুখে ,কিং কর্তব্য বিমূঢ় । পরে আসছি বৌঠান একপ্রকার পলায়ন তার । সন্ধ্যায় ওর বাড়ীতে খোঁজ করতে এলে , অবিন্যস্ত চুল,বিবর্ণ মুখ দাঁড়িময়,টকটকে লাল চোখে অপরাধ প্রবণতা। ,সরাসরি তাকাতে না পারার অক্ষমতায় আহত হয় অবোধ অরুন ।
বর্তমানে তাই লজ্জা,ঘেন্না জলাঞ্জলি দিয়ে তিন চাকাওলা অটো রিক্সাকেই রোজগারের উপকরণ রুপে বেছে নিয়েছে শিবা হাওড়া থেকে আন্দুল, আন্দুল থেকে হাওড়া এই হল ওর নৈমত্তিক পথ পরিক্রমা ,দীর্ঘ দশ বছরের এই সিটটায় কতরকম যে অভিজ্ঞতা হয়েছে যা ওকে কিশোর থেকে পরিপুষ্ট মানুষে পরিণত করেছে । বাড়ীতে মা পরিচিত গন্ডীটুক আগলে পরে আছেন শুধু , এক ছটাক্ কলোনী'র সংস্থাণ অার ঘুঁণে ধরা চৌকি । যেখনে দিনান্তে ছায়া পড়ে টুকটুক শাড়ী পরা রাই কিশোরীর ছমছমে দু'টি ঘুঙুর পরা আলতা রঙা পা'য়ের সোহাগ, শাষণ,বারণ .......। শাঁখা,সিঁদুরের ঝনঝনি, যুঁই আঁতরের মধুর বাতাসে ঘরময় ছলাৎ ঢেউয়ের উথাল পাতাল...............আর বছর আশি'র অসমর্থ মায়ের চির কটূক্তি," অহন মুই আর পারত নাই , ক্ষ্যামা দে বাপ্ " ।
কোনরকম বাসি পান্তা গলাধঃকরণ করে মাথা নুয়ে বেড়িয়ে বাঁচে অন্যান্যদিনের মতো , এ বাঁচায় আত্মগ্লানি আছে ,অনুশোচনা অাছে তারপর ক্রোধের কোন বাঁধা নেই,অশ্রাব্য যা খুশী বলে হালকা হওয়া যায় অনেকটা । সেখানে কেউ অশ্লীল নয় বরং প্রতারিত । অনেক প্রতরণা সমাজের,দেশের,দশের,বংশের, গ্রামের- সব জমে তৈরী হয় শিবাদের ক্রোধের মিসাইল ।
অরুণ ওর শৈশবের প্রিয় বন্ধু। পাশের গ্রামেই থাকে বিয়ে করেছে সদ্য,অবসরে সেখানে যায় মাঝে মধ্যে, ইদানিং একটু বেশী , সাহানা!! বেশ ডগমগে রুপসী, খুব আপ্যায়ন করে শিবাকে , কেন নয় ; প্রায় ছ' ফুট উচ্চতা'র টকটকে দাপুটে শিবা পাড়ার প্রায় সব মেয়েরই পছন্দের । কপাল আছে অরুণের ,পাশটা করেই মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে কাজটা পাইয়ে দিয়েছেন এম এলএ ভুবন দা' । দুই বন্ধুর একজনের হল অন্যজনের নয় । গ্রাম জানল মেধা আছে অরুণের, ধারে কাছে যায় না শিবা ।
ক্রমে সাহানায় ডুবে যায় সে, অড্ডা, গল্প,ছোটখাটো খুনসুটি আরো কিছু... রুপের চটকে মোহিত শিবা ভুলে থাকে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা , কথা দেয় ঘর পাঁকা করে তবে সংসার পাতা । ইদানীং বেশ রাত হয়ে যায়, রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়েন না বৌঠান । বেশ লাগে অালতো ছোঁয়ায় যেন শরীরে রোমাঞ্চের টের পায় শিবা ,"জানো ঠকুর'পো প্রায় দুমাস হয়ে গেল কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেল না তোমার বন্ধু ", চোখে জল.........
"আসলে কি জানো বৌঠান অরূণটা একটু গোঁয়ার প্রকৃতির ,নিজের ছাড়া অন্য কারুর সুখ,দুঃখ ওকে ভাবায় না মোটে, সেটা ছোটবেলা থেকেই" । ছুটে ভেতরে চলে যায় সাহানা পছন্দ হয় না শিবার অযুহাত, ম্লান হেসে ধীরে শিবার প্রস্থাণ.....................।
হায় মানুষ !! সংসারের নিতান্ত স্নিগ্ধ ছায়া সুনিবিড় কাংখিত যে জায়গাটুকের জন্য জগতের সমস্ত মানুষ মানুষী বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধণে আবদ্ধ হবার স্বপ্ন দেখে নিতান্ত কিশোর বয়স থেকেই ,জীবনের প্রতিটি উত্থান পতনে যে নির্ঝরিণী স্নেহ পুত্তলির কোমল স্পর্শে সমস্ত দুর্বোধ্য পথ অতিক্রম করে চলার সাহস ও শক্তি পায় এই সেই প্রচ্ছায়া আজীবন শুধু পুরুষের পাশে থেকে অনবরত শক্তির যোগান দেয় এইতো সেই বন্ধণ ।
প্রচন্ড রাগ হয় অরুণের ওপর, খিঁচরে যায় মেজাজ, "হতভাগা অরুণ ",কোন দিক থেকে যদিও ওকে খারাপ বলার কোন অযুহাত নেই, কি সংসার পালনে, কর্তব্য কর্মে,দায়-দায়িত্বে খারাপের মধ্যে নিতান্ত নারীকূলের অধিকার জাতীয় কিছু দেখলেই বিগরে যায় মেজাজ , "মেয়েছেলে জাতটা হল বুঝলি শিবা ঘরের পোষা মুরগীর মতো পোক্ত করে বেঁধে রাখতে হয়,বাঁধণ অালগা হলেই ফুরুৎ "!! বলেই জিভ দিয়ে টাকড়ায় অদ্ভুত আওয়াজ করে । আড়চোখে শিবার দিকে চাওয়ায় কেমন যেন আড়ষ্ট বোধ হয় ওর । এক ঢোকে চায়ের গ্লাস শেষ করে দ্রুত সরে পরে রাস্তায় ।
আজ কেমন অন্যমনস্ক দেখায় ওকে ,অবিন্যস্ত চুল ,ময়লা পোষাক,মুখে আধপোড়া বিড়ি । স্ট্যন্ডের গতিকে হাত ধরে সময়ে পৌঁছে দেয় গন্তব্যে ," চৌমাথা ,স্টেষণ , হল্ট ব্রীজ,স্কুল গেট ,চৌমাথা স্টেষণ ....................সময়ের কন্ঠস্বরে প্রায় সকলেই নিত্য সচকিত ।
ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাঝগগনে এলিয়ে দেয় শরীর, তার সোহাগী প্রেয়সীর মতো, সুদীর্ঘ সময়ের কাঁচা পাঁকা রাস্তায় তার অবাধ প্রেম কিভাবে বয়ে গেছে প্রেমী সময় আলতো করে বলে যায় কানে কখনো বাতাস হয়ে,কখনো ঝঞ্ঝা হয়ে । কেমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে আকাশের মতো মহা জাগতিক ওদার্যে, প্রেয়সী যেন একান্তে দেখিয়েছে অনাড়ম্বর সহিষ্ণুতা,ত্যাগের প্রকৃতি, কখনো সন্ধ্যায় নক্ষত্রের চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়া, কখনও তারূণ্যের চরম উচ্ছাসে দিগভ্রান্ত হওয়া ।
দশটা বছর দীর্ঘ সময়ে গাড়ীর স্টিয়রিংয়ে হাত রেখে পার হয়েছে বহু ঝঞ্ঝার পথ্ ।বহু ঝঞ্ঝায় লক্ষ্য হয়েছে দৃঢ় ও স্থির । শিবা এখন খুব সহজ সাহানার কাছে অর্থাৎ অরুণের পরিবারে অনেকটা সময় কেটে যায় অড্ডা,খেলায় । প্রায় রাতেই খেয়ে বাড়ী ফেরে ,অরুণের কড়া আবদারে । ভুরভুরে সৌগন্ধে মতোয়ারা শিবা রাত্রে ঢলে যায় একরাশ পাপড়ি বুকে ।
দু'বন্ধুর অন্তরঙ্গের ঈর্ষায় কোথাও নড়তে থাকে টলমলে ভিত্ ,ভেতরে না অন্তরে বোঝা যায় না কিছু, শুধু কতগুলো জটিল চোখ জ্বলজ্বল করে সামনে পেছনে । শিবা লক্ষ্য করে সাহানা কেমন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে যেন বলতে হয় বলে,চলতে হয় বলে, মন ভেঙে যায় ওর ।
শিবার অত্যন্ত প্রিয় বন্ধুটি যে শিবার খুব ভক্ত বুঝতে কষ্ট হয় না,অতি পরিশ্রমী,সৎ,নির্ভীক, বলিষ্ট,শিষ্ট,বিচক্ষণ ,মিতভাষী শিবার । অতি সহযেই ভালোবাসার বন্ধণে আবদ্ধ হয়ে যায় প্রায় সকলের । বিশেষত অরুণ খুব ভরসা করে বন্ধুকে, অন্য সকলের চাইতে নির্ভরও করে খুব বেশী । দু'জনার মাঝখানে তিরতির বওয়া নদীটি এতক্ষনে পাড়ের কিণারায় চুপটি করে আছে, কোন ঝুরঝুরে ভিতে ভাঙবে তার নিরেট চ্ছাস ঠাহর করতে পারে না বোধয় । ঝড়ের আগে যেমন থমথমে ভাব আছড়ে পরে প্রলয়ের ঘাড়ে তেমন কিছু আভাস হয়তো কোথাও নির্মিত হচ্ছে ,ততক্ষনে আড়ালের দৃশ্যে জমে গেছে অধ্যায় । ধুপধাপ জানালা দরজা বন্ধের সশব্দ ওদ্ধত্য ।
পরের দিন পরিবহন ধর্মঘট , স্থির হয় দিনভর আড্ডা,খাওয়া দাওয়া ,খেলা । ব্যাস্ রাজি দু 'পক্ষ । মুচকি হাসি সাহানার, চোখ এড়ায় না শিবার । পরদিন বেলা দশটা' ,কলতলে সাহানা ইয়া বড় পাঁকা রুই--- এক্কেবারে ন্যাজে গোবরে অবস্থা বৌঠানের , ল্যাজ ধরে তো পা ফসকে যায় ,মুড়ো ধরে তো ল্যাজ ফসকে ..........."অাহ্ ঠাকুরপো''..
আমি আছি তো, কই বটিটা শক্ত করে ধরি , বেচারা মাছ দুষ্ট চক্রান্ত ফেঁদে মজাটি দেখবে বলে কি বাহাদুরি ,একবার ডায়ে একবার বায়ে ,যেন রাম্পের মাঠে দুই তারকা,মাছ হল উপলক্ষ্য মাত্র । ঘেমে নেয়ে সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা , হঠাৎ বটিতে জোরে চাপ দিতেই সাহানা বৌঠান অপ্রস্তুত , অন্তর্বাসের আর ব্লাউজের হুকের চরম সংঘর্ষে রাম্পে পরাজয় , সরে গেছে শাড়ির অংশ, সাহনা বৌঠানের বিপর্যয়। অারক্ত লজ্জা শিবার চোখে মুখে ,কিং কর্তব্য বিমূঢ় । পরে আসছি বৌঠান একপ্রকার পলায়ন তার । সন্ধ্যায় ওর বাড়ীতে খোঁজ করতে এলে , অবিন্যস্ত চুল,বিবর্ণ মুখ দাঁড়িময়,টকটকে লাল চোখে অপরাধ প্রবণতা। ,সরাসরি তাকাতে না পারার অক্ষমতায় আহত হয় অবোধ অরুন ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সমির প্রামাণিক ০২/১০/২০১৭'সাহানা' রাগিণীর মতো মনোমুগ্ধকর। চমৎকার গল্প বলার ধরন। খুব সুন্দর। শুভেচ্ছা রইলো।
-
Tanju H ৩০/০৯/২০১৭বাহ্!!সুন্দর লেখনি
-
আজাদ আলী ৩০/০৯/২০১৭Sundar