মুক্তি (বিজয় দিবসের গল্প) - ৩য় (শেষ) পর্ব
২য় পর্বের পর ...
কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি কি যেন একটা কিছু ঘটতে চলেছে। রাজাকারেরা মেয়েদের ভুলে অন্যদিকে কি সব কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে একদিন জানা গেল, ভারতীয় বিমান বাহিনী আক্রমণ করেছে পার্শ্ববর্তী পাকঘাটিতে। মুক্তিবাহিনীও তাদেরকে আক্রমণ করেছে চার পাশ থেকে।
ইতিমধ্যে এই ক্যাম্পের রাজাকারেরাও যেন কি সব শঙ্কার ছায়া দেখতে শুরু করেছে। মনে হয় একটা বিরাট অঘটনের সংকেত চারিদিকে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ? তাহলে মুক্তি আসবে শেষ পর্যন্ত? না এমন ভাবতে পারে না কুসুমেরা, এমন তো কতবার ভেবেছে, আবার সবকিছু হতাশায় ডু্বেছে!
একদিন রাতে ওরা টের পেল ক্যাম্পে জনমানবের সাড়া নেই। চারিধার নীরব কেন? কেউ আলো জ্বালেনি, কোথাও কেউ নেই যেন। সবাই কি তা হলে অপারেশনে গেল ক্যাম্প এমনিভাবে অরক্ষিত রেখে? হয়ত এই সূযোগে কুসুমেরাও পালিয়ে যেতে পারে ঘরের দরজা ভেঙ্গে। কিন্তু কেমন করে তা পারবে? বাইরে থেকে তালা দেওয়া। খুব শক্ত দরজা, ভাঙবার মত গায়ে ওদের অত জোর অবশিষ্ট নেই যে! যদি দরজা ভেঙে বেরও হয় এবং পাহারাদার থেকে থাকে, তবে সবাইকে গুলি খেয়ে মরতে হবে।
এদিকে রাত গভীর হতেই একটু দূরে শোনা গেল গোলাগুলির শব্দ। সময় যতই গড়িয়ে চলেছে ক্রমে ক্রমে তা কাছে আসছে। কারা যেন আসছে। অন্ধকার ঘরে তখন ভোরের আলো এসে পড়েছে, বাইরে দেখতে না পেলেও মনে হচ্ছে, আজকের সূর্যটা যেন কেমন লাল, অন্যরকম। কি যেন আনন্দ আশায় বুক কেঁপে উঠছে মেয়েগুলির।
কারা আসছে? তাহলে কি রাজাকারেরা অপারেশন শেষে ফিরে আসছে। আবার বুকের ভিতর কাঁপন তাদের। অনেক কিছু ভাববার আগেই শুনতে পেল ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি! ওরা তাহলে মুক্তিযোদ্ধা! সাহস ফিরে পেয়ে সব কয়টি মেয়ে মিলে দরজায় আঘাত করতে থাকে, কোথা থেকে এক অদম্য শক্তি তারা যেন ফিরে পেয়েছে। একসময় দরজা ভেঙ্গে গেল। বাইরে থেকেও কারা যেন দরজার কড়া ভেঙ্গে দিল প্রায় একই সময়। দেখতে পেল ওদের হাতে সবুজ-লালসূর্য পতাকা – ওরা মুক্তিযোদ্ধা! মুক্ত ওরা ...
দেশ আজ মুক্ত। শত্রু বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পন করেছে... আজ বিজয়ের দিন, মুক্তির দিন। মুক্তির আনন্দে সবার চোখে আজ পানি ..। এত অত্যাচার, এত কষ্ট আর বেদনার সত্যি কি অবসান তাহলে? ভাবতে পারছে না ওরা, অবিভূত সে চেতনা বর্ণনীয় নয় ...
এবার বাড়ী ফেরার পালা। কুসুম স্বপ্ন দেখছে আম্মা-আব্বার সাথে আবার দেখা হবে। মুক্তিবাহিনীর লোকেরা কুসুমকে বাড়ী পাঠাবার ব্যবস্থা করল।
বাড়ীর যতই কাছে আসছে কুসুমের মন ততই কেমন যেন করছে। কোন এক অজানা আশংকায় ভাবনা সব এলোমেলো হয়ে আসছে। এতো কলেজ থেকে সেই খুশী ভরা হৃদয় নিয়ে আনন্দমুখর প্রত্যাবর্তন নয়। কি যেন দূর্বোধ্যতা সারা মন জুড়ে। একদিকে মুক্তির আনন্দ, অন্যদিকে অনিশ্চিত কিছু একটা অশুভ বোধ।
কিন্তু একি, বাড়ী এসে দেখে ঘরদোর পোড়ানো। তার আম্মা-আব্বা কেউ বেঁচে নেই। সব শুনেই মুর্ছা গেল সে।
এ মুর্ছা ভেঙ্গে তার আর ওঠার কথা ছিল না। কিন্তু সে আবার জেগে উঠল, কে যেন তার সে মূর্ছা ভাঙ্গিয়ে দিল সোনার কাঠি রূপোর কাঠি বদল করে। হঠাৎ চোখ মেলে তাকাতেই দেখে কে যেন তার পাশে বসে - ওদের গ্রামেরই বিল্লাল! এতদিন কোথায় ছিল সে? কেমন করেই বা এখানে সে এল?
বিল্লাল বললো, ভয় নেই তোমার কুসুম। আর কষ্ট পেতে হবে না তোমাকে। তোমাকে বর্বরদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি, সে দুঃখ আজীবন থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্ত করেছি তোমাকে, মুক্ত করেছি আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশকে।
কুসুম বুঝলো বিল্লাল মুক্তিযোদ্ধা, গর্বে তার বুক ভরে উঠল। কিন্তু সে জানে না, সে দিন যারা ঐ রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করেছিল বিল্লাল ছিল সেই বাহিনীর কমান্ডার। বিল্লাল কুসুমের সব কথা জানত। জানত রাজীবের সাথে ওর ভালোবাসার কথা ও পরের সমস্ত ঘটনা। ওর মনের কোণে কুসুমের প্রতি নরম একটা জায়গা ছিল, কিন্তু রাজীবকে ভালোবেসে কুসুম সুখী জেনে কখনো কোনদিন কিছু প্রকাশ করে নি। পরে যখন জেনেছে, দেশের প্রতি ভালোবাসার জন্য কুসুমের এই পরিনতি, তখন কুসুমের প্রতি তার হৃদয় বিনম্র শ্রদ্ধায় ভালোবাসার রূপ নিয়েছে। মনে মনে সে কুসুমকে ভালোবেসে ফেলেছে। সেই অপ্রকাশিত ভালোবাসা তাকে আরো অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তি সংগ্রামে। এ সংগ্রাম শুধু দেশকে মুক্ত করাই নয়, মা-বোনদের সম্ভ্রমকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম। এতদিন বিল্লাল কুসুমের সামনে আসেনি যদি পাছে কুসুম ভুল বোঝে। কিন্তু আজ আর সে দূরে থাকতে পারেনি কুসুমের মূর্ছা যাবার খবরে, তার পাশে এসে দাড়িয়েছে, শুশ্রুষায় তাকে সুস্থ করে তুলেছে।
অনেকক্ষণ ধরে কুসুম বিল্লালের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল নিষ্পলক! কুসুম স্বপ্নেও ভাবেনি এমনিভাবে বিল্লালের সাথে তার দেখা হবে।
বিল্লাল বললো, কুসুম, তুমি চাইলে তোমার পাশে আমি থাকব চিরকাল।
পুরনো দিনের ছোটবেলার সেই স্মৃতি ফিরে আসে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা মিলে খেলাধূলা, বনভোজন, ছুটোছুটি, পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি, ইত্যাদি কত কিছু করত এক সাথে। মনে পড়ে, কুসুম নৌকা চড়তে ভালোবাসত খুব। কতবারই না বিল্লাল ওদের ছোট নৌকায় করে কুসুমকে নিয়ে গিয়েছে শাপলাভরা বিলে শাপলা ফুল তুলতে। কতবার দু’জনে বড়শী পেতে খালের পাড়ে বসে মাছ ধরেছে হাজারো রকম কল্পকথার গল্প বলতে বলতে। নিষ্পাপ দিনের সেই মেলামেশা কখন কিভাবে হারিয়ে গিয়েছিল কেউ তা মনে রাখে নি। আজ সময়ের ভিন্ন ক্ষণ, ভিন্ন আঙ্গিক। দুটি প্রাণের হারিয়ে যাওয়া অনুভব কাছাকাছি এসে পরস্পরের আবেশের ছায়ায় আজ এক হয়ে মিশে গেল। হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনের উচ্ছ্বল হৃদয়ের সেই লতাপাতা হঠাৎ নব কিশলয়ে আবার আন্দোলিত হয়ে উঠল।
আবেগমন্ডিত কুসুম বিল্লালকে জড়িয়ে ধরে, ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়। এত দিনের দুঃখ-কষ্ট, অত্যাচার ও পাশবিক নির্যাতনের সব গ্লানি মুছে গেল চোখের সে সলিলধারায়। এ কান্না মুক্তির আনন্দ, নতুন জীবনে নব পল্লব বিকশিত হবার নতুন সূচনায় নতুন জন্ম যেন, স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা হাতে জীবনের জয়গানে দুজনের একসাথে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে এগিয়ে চলার অগ্নিশপথ!
পরদিন আকাশে সূর্য উঠল, আরো লাল হয়ে। সমস্ত শহীদদের রক্তের সাথে কুসুমদের মত মা-বোনদের সম্ভ্রম-হৃদয় মিশে স্বাধীনতার অরুণ আরো রঞ্জিত! এ সূর্য অনির্বান, দীপ্ত শপথে এগিয়ে যাবার আহবান, নতুন চেতনায় নতুন বেশে স্বাধীন বাংলাদেশের নব উত্থান!
------
সমাপ্ত
গল্পটি জোনাকি ই-পত্রিকার বিজয় দিব্স ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত...
কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি কি যেন একটা কিছু ঘটতে চলেছে। রাজাকারেরা মেয়েদের ভুলে অন্যদিকে কি সব কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে একদিন জানা গেল, ভারতীয় বিমান বাহিনী আক্রমণ করেছে পার্শ্ববর্তী পাকঘাটিতে। মুক্তিবাহিনীও তাদেরকে আক্রমণ করেছে চার পাশ থেকে।
ইতিমধ্যে এই ক্যাম্পের রাজাকারেরাও যেন কি সব শঙ্কার ছায়া দেখতে শুরু করেছে। মনে হয় একটা বিরাট অঘটনের সংকেত চারিদিকে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ? তাহলে মুক্তি আসবে শেষ পর্যন্ত? না এমন ভাবতে পারে না কুসুমেরা, এমন তো কতবার ভেবেছে, আবার সবকিছু হতাশায় ডু্বেছে!
একদিন রাতে ওরা টের পেল ক্যাম্পে জনমানবের সাড়া নেই। চারিধার নীরব কেন? কেউ আলো জ্বালেনি, কোথাও কেউ নেই যেন। সবাই কি তা হলে অপারেশনে গেল ক্যাম্প এমনিভাবে অরক্ষিত রেখে? হয়ত এই সূযোগে কুসুমেরাও পালিয়ে যেতে পারে ঘরের দরজা ভেঙ্গে। কিন্তু কেমন করে তা পারবে? বাইরে থেকে তালা দেওয়া। খুব শক্ত দরজা, ভাঙবার মত গায়ে ওদের অত জোর অবশিষ্ট নেই যে! যদি দরজা ভেঙে বেরও হয় এবং পাহারাদার থেকে থাকে, তবে সবাইকে গুলি খেয়ে মরতে হবে।
এদিকে রাত গভীর হতেই একটু দূরে শোনা গেল গোলাগুলির শব্দ। সময় যতই গড়িয়ে চলেছে ক্রমে ক্রমে তা কাছে আসছে। কারা যেন আসছে। অন্ধকার ঘরে তখন ভোরের আলো এসে পড়েছে, বাইরে দেখতে না পেলেও মনে হচ্ছে, আজকের সূর্যটা যেন কেমন লাল, অন্যরকম। কি যেন আনন্দ আশায় বুক কেঁপে উঠছে মেয়েগুলির।
কারা আসছে? তাহলে কি রাজাকারেরা অপারেশন শেষে ফিরে আসছে। আবার বুকের ভিতর কাঁপন তাদের। অনেক কিছু ভাববার আগেই শুনতে পেল ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি! ওরা তাহলে মুক্তিযোদ্ধা! সাহস ফিরে পেয়ে সব কয়টি মেয়ে মিলে দরজায় আঘাত করতে থাকে, কোথা থেকে এক অদম্য শক্তি তারা যেন ফিরে পেয়েছে। একসময় দরজা ভেঙ্গে গেল। বাইরে থেকেও কারা যেন দরজার কড়া ভেঙ্গে দিল প্রায় একই সময়। দেখতে পেল ওদের হাতে সবুজ-লালসূর্য পতাকা – ওরা মুক্তিযোদ্ধা! মুক্ত ওরা ...
দেশ আজ মুক্ত। শত্রু বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পন করেছে... আজ বিজয়ের দিন, মুক্তির দিন। মুক্তির আনন্দে সবার চোখে আজ পানি ..। এত অত্যাচার, এত কষ্ট আর বেদনার সত্যি কি অবসান তাহলে? ভাবতে পারছে না ওরা, অবিভূত সে চেতনা বর্ণনীয় নয় ...
এবার বাড়ী ফেরার পালা। কুসুম স্বপ্ন দেখছে আম্মা-আব্বার সাথে আবার দেখা হবে। মুক্তিবাহিনীর লোকেরা কুসুমকে বাড়ী পাঠাবার ব্যবস্থা করল।
বাড়ীর যতই কাছে আসছে কুসুমের মন ততই কেমন যেন করছে। কোন এক অজানা আশংকায় ভাবনা সব এলোমেলো হয়ে আসছে। এতো কলেজ থেকে সেই খুশী ভরা হৃদয় নিয়ে আনন্দমুখর প্রত্যাবর্তন নয়। কি যেন দূর্বোধ্যতা সারা মন জুড়ে। একদিকে মুক্তির আনন্দ, অন্যদিকে অনিশ্চিত কিছু একটা অশুভ বোধ।
কিন্তু একি, বাড়ী এসে দেখে ঘরদোর পোড়ানো। তার আম্মা-আব্বা কেউ বেঁচে নেই। সব শুনেই মুর্ছা গেল সে।
এ মুর্ছা ভেঙ্গে তার আর ওঠার কথা ছিল না। কিন্তু সে আবার জেগে উঠল, কে যেন তার সে মূর্ছা ভাঙ্গিয়ে দিল সোনার কাঠি রূপোর কাঠি বদল করে। হঠাৎ চোখ মেলে তাকাতেই দেখে কে যেন তার পাশে বসে - ওদের গ্রামেরই বিল্লাল! এতদিন কোথায় ছিল সে? কেমন করেই বা এখানে সে এল?
বিল্লাল বললো, ভয় নেই তোমার কুসুম। আর কষ্ট পেতে হবে না তোমাকে। তোমাকে বর্বরদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি, সে দুঃখ আজীবন থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্ত করেছি তোমাকে, মুক্ত করেছি আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশকে।
কুসুম বুঝলো বিল্লাল মুক্তিযোদ্ধা, গর্বে তার বুক ভরে উঠল। কিন্তু সে জানে না, সে দিন যারা ঐ রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করেছিল বিল্লাল ছিল সেই বাহিনীর কমান্ডার। বিল্লাল কুসুমের সব কথা জানত। জানত রাজীবের সাথে ওর ভালোবাসার কথা ও পরের সমস্ত ঘটনা। ওর মনের কোণে কুসুমের প্রতি নরম একটা জায়গা ছিল, কিন্তু রাজীবকে ভালোবেসে কুসুম সুখী জেনে কখনো কোনদিন কিছু প্রকাশ করে নি। পরে যখন জেনেছে, দেশের প্রতি ভালোবাসার জন্য কুসুমের এই পরিনতি, তখন কুসুমের প্রতি তার হৃদয় বিনম্র শ্রদ্ধায় ভালোবাসার রূপ নিয়েছে। মনে মনে সে কুসুমকে ভালোবেসে ফেলেছে। সেই অপ্রকাশিত ভালোবাসা তাকে আরো অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তি সংগ্রামে। এ সংগ্রাম শুধু দেশকে মুক্ত করাই নয়, মা-বোনদের সম্ভ্রমকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম। এতদিন বিল্লাল কুসুমের সামনে আসেনি যদি পাছে কুসুম ভুল বোঝে। কিন্তু আজ আর সে দূরে থাকতে পারেনি কুসুমের মূর্ছা যাবার খবরে, তার পাশে এসে দাড়িয়েছে, শুশ্রুষায় তাকে সুস্থ করে তুলেছে।
অনেকক্ষণ ধরে কুসুম বিল্লালের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল নিষ্পলক! কুসুম স্বপ্নেও ভাবেনি এমনিভাবে বিল্লালের সাথে তার দেখা হবে।
বিল্লাল বললো, কুসুম, তুমি চাইলে তোমার পাশে আমি থাকব চিরকাল।
পুরনো দিনের ছোটবেলার সেই স্মৃতি ফিরে আসে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা মিলে খেলাধূলা, বনভোজন, ছুটোছুটি, পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি, ইত্যাদি কত কিছু করত এক সাথে। মনে পড়ে, কুসুম নৌকা চড়তে ভালোবাসত খুব। কতবারই না বিল্লাল ওদের ছোট নৌকায় করে কুসুমকে নিয়ে গিয়েছে শাপলাভরা বিলে শাপলা ফুল তুলতে। কতবার দু’জনে বড়শী পেতে খালের পাড়ে বসে মাছ ধরেছে হাজারো রকম কল্পকথার গল্প বলতে বলতে। নিষ্পাপ দিনের সেই মেলামেশা কখন কিভাবে হারিয়ে গিয়েছিল কেউ তা মনে রাখে নি। আজ সময়ের ভিন্ন ক্ষণ, ভিন্ন আঙ্গিক। দুটি প্রাণের হারিয়ে যাওয়া অনুভব কাছাকাছি এসে পরস্পরের আবেশের ছায়ায় আজ এক হয়ে মিশে গেল। হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনের উচ্ছ্বল হৃদয়ের সেই লতাপাতা হঠাৎ নব কিশলয়ে আবার আন্দোলিত হয়ে উঠল।
আবেগমন্ডিত কুসুম বিল্লালকে জড়িয়ে ধরে, ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়। এত দিনের দুঃখ-কষ্ট, অত্যাচার ও পাশবিক নির্যাতনের সব গ্লানি মুছে গেল চোখের সে সলিলধারায়। এ কান্না মুক্তির আনন্দ, নতুন জীবনে নব পল্লব বিকশিত হবার নতুন সূচনায় নতুন জন্ম যেন, স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা হাতে জীবনের জয়গানে দুজনের একসাথে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে এগিয়ে চলার অগ্নিশপথ!
পরদিন আকাশে সূর্য উঠল, আরো লাল হয়ে। সমস্ত শহীদদের রক্তের সাথে কুসুমদের মত মা-বোনদের সম্ভ্রম-হৃদয় মিশে স্বাধীনতার অরুণ আরো রঞ্জিত! এ সূর্য অনির্বান, দীপ্ত শপথে এগিয়ে যাবার আহবান, নতুন চেতনায় নতুন বেশে স্বাধীন বাংলাদেশের নব উত্থান!
------
সমাপ্ত
গল্পটি জোনাকি ই-পত্রিকার বিজয় দিব্স ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৬/১২/২০১৭খুব খুব ভালো লাগলো।
-
আবুল খায়ের ১৫/১২/২০১৭good
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৪/১২/২০১৭নিঃসন্দেহে এটা ভাল লেখা।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/১২/২০১৭ভালো লাগলো।
-
সালাম আলী আহসান ১৪/১২/২০১৭ভাল