www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আশঙ্কা

শঙ্কায় দিন-রাত কাটাইতেছি এই মহামারীর ভয়ানক সময়ে। মনে হইতেছে- এই করোনা-১৯ স্থায়ী, এতদিনকার গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। সংক্রামণ লক্ষণগুলো পাল্টাইতেছে কপটচারীর বুলির মতো। মানুষের বিশ্বাসগুলো দিনদিন ক্ষয় হইতেছে ক্ষয়িষ্ণু পদার্থের মতো। কোন দিক থেকে কোন দিকে গড়াইতেছে দশদিকের বিশ্বাসগুলো কে জানে। মানুষের ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ, খোদা, গড যাহারা যেই শব্দে একক স্রষ্টাকে আহবান করে, সকলেরই স্রষ্টা যেনো সেই প্রার্থনার শব্দেই অবরুদ্ধ। ক্ষণিক মনে হইতেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাই এই দুঃসময়ে উত্তরণের একমাত্র কান্ডারি; ক্ষণিক মনে হইতেছে স্রষ্টা বন্দনায়, প্রার্থনায় রত থাকাটাই শ্রেয়। হয়তো যিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে তিনিই উদ্ধারকর্তা সকলের। (বিশ্বাস অনুযায়ী) যাঁর ইশারা ব্যতিরেকে কোনো কিছুই হয়না, ঘটেনা এই তাবৎ বিশ্ব সংসারে, হয়তো তাঁর ইশারায় এই ভয়ঙ্কর মহামারী কোবিড-১৯ প্রলয় ঘটাইতেছে।

যাহাই হউক, আমার আশঙ্কা আমার মনোমাঝেই সমুদ্রতটের জোয়ার-ভাটার মতো গড়াগড়ি করিতেছে। ধর্ম যাহারা পালন করেন, ধর্ম-শাস্ত্রকে একমাত্র মুক্তির পাথেয় যাহারা মনে করেন, ধর্ম-শাস্ত্রের বুলি আওড়াইয়া যাহারা মানুষকে পরিশুদ্ধ করিতে পারেন বলিয়া বিশ্বাস আনয়ন করিয়াছেন, ধার্মিক যাহারা হইয়াছেন, ধর্মগুরুর আসনে যাহারা সমাসীন হইয়াছেন স্বর্গীয় দেবদূত হিসাবে, আমি জানিনা তাহারা এখন ঠিক কোনদিকে দৌড়াইতেছেন। কি ধর্ম শাস্ত্রের শব্দগুলোর দিকে যেগুলোকে পবিত্র মনে করা হইয়া থাকে, নাকি আপন আপন বিশ্বাসের মনিকোঠায় বসবাস করা স্রষ্টার দিকে নাকি সকলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্বারে দ্বারে ঘুরিতেছে দীর্ঘজীবী হওয়ার বাসনায়। (বিশ্বাস অনুযায়ী)জন্ম-মৃত্যু সবই যদি আপন আপন বিশ্বাসের স্রষ্টার হাতেই থাকে তাহা হইলে চিন্তা, শঙ্কা, ভয় কিসের তরে? যিনি যাহাই দিয়াছেন তিনি তাহাই নিয়া যাইবেন; এটাই স্বাভাবিক বৈকি।

আমিও মনুষ্য জীব। পুরোদস্তুর বিবেক, বাক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। অনুসরণে, অনুকরণে আমি অগ্রজদেরই শিখি, বিশ্বাস করি। ওঁদের শেখানো বুলি গুলোই আমার চিন্তার সরণে জাগতিক মাধ্যাকর্ষণের মতোই আমাকে পরিচালনা করে। আমিও আমার অগ্রজদের পথের পথিক। তবে এই বয়সে আসিয়া, এই করোনা-১৯ -র আতঙ্কিত সময়ে আমার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, জ্ঞান বিন্যাস গুলো দিগ্বিদিক হইয়া চৈতন্যশূন্য হইবার উপক্রম হইতেছে। কাহাদের বিশ্বাস করিব ভাবিয়া কূল পারিতেছিনা এই শঠতাপূর্ণ কূটনৈতিক মানবতাহীন বাণিজ্যিক বিশ্বে। সব নেতা-নেত্রী (হউক রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয়) যেনো নিজেদের আখের গোছাইতেই ব্যস্ত।

করোনা-১৯ -র উৎপত্তিস্থল এখন যেনো সম্পূর্ণ সুস্থ সুন্দর স্বর্গরূপ ধারণ করিতেছে। এই বাণিজ্যিক পৃথিবীতে ওই করোনা-১৯ -র উৎপত্তিস্থলই এখন বাণিজ্যিকভাবে প্রথম কাতারে আসিয়া এক নম্বর হইয়াছে। যেখানে মনুষ্য জীবের শবের মিছিল এই পৃথিবীর আনাচে কানাচে, যেইখানে বাতাসে ওই সব লাশের গন্ধ বহিতেছে, যেইখানে অনুন্নত আর উন্নয়নশীল দেশগুলো বাণিজ্যিকভাবে নরকের দ্বারে উপনীত হইতেছে সেইখানে ওই করোনা-১৯ -র উৎপত্তিস্থল যেনো সব লাশের উপর অশ্বারোহী হইয়া বাণিজ্যিকভাবে একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করিবার মতলব করিতেছে। এই পৃথিবী আর পৃথিবীর সবকিছুই নশ্বর, সকল প্রাণাত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিতেই হইবে; ঠিক একইভাবে ব্যবসার মধ্যে উত্থান-পতন থাকিবে সেইটাই স্বাভাবিক। তবে সেই আন্তর্জাতিক ব্যবসার উৎকর্ষ যদি কৃত্রিম মহামারী ঘটাইয়া হইয়া থাকে তাহা হইলে সেই ব্যবসায়িক উত্থান-পতনে সকলের জন্য শুধু নরকের দ্বারই উন্মুক্ত হইবে বৈকি।

দিকে দিকে যাহা দেখিতেছি আর শুনিতেছি তাহা হইল- মনুষ্য জাতি উদ্যমহারা হইয়া শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞান কর্তৃক স্বাস্থ্যের কোন তথ্য বাহির হইয়াছে সেই দিকেই নজর দিতেছে। মনে হইতেছে মনুষ্য জাতি একনিষ্ঠভাবে সম্মোহিত হইয়া পড়িয়াছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রত্যেক প্রচার পত্রের প্রতি। যেনো লুব্ধ মনো-প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আর এতদিন ধরিয়া যাঁহাকে সর্ব-বিরাজিত, সর্বশক্তিমান বলিয়া স্রষ্টা হিসাবে পূজা, আরাধনা, উপাসনা করিয়া আসিতেছে সকলে মিলিয়া তাঁহাকে যেনো একমাত্র পরিত্রাতা হইতে অব্যাহতি দিয়াছে। তাইতো করোনা-১৯ ধারী শরীর হইতে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সকল উপসনালয় অচল করিয়া দেওয়া হইয়াছে যদিওবা এতদিন ধরিয়া বিশ্বাস করা হয়ত ওই সব উপসনালয়ে গিয়া নিখাদ প্রার্থনায় রত হইলে সকল ধরণের বালা-মুসিবত দূর হইয়া যাইবে।

শুনিয়াছি, আদিম যুগে নাকি গায়ের শক্তির জোরেই রাজারা নিজেদের খোদা দাবি করিত আর কিছু ভেল্কিবাজীর মাধ্যমে ইন্দ্রজাল দেখাইয়া প্রজাদের দাস বানাইয়া রাখিত এই বলিয়া যে- "যাহারা তোমাদের থাকিবার স্থান দিতেছে, দুই মোটো খাইবার খাদ্য দিতেছে তাহাদের কথা যদি তোমরা মান্য না কর অথবা তাহাদের যদি তোমরা ঈশ্বর জ্ঞান বলিয়া বিশ্বাস স্থাপন না করিয়া থাক তাহা হইলে তোমরা মৃত্যুর পর অনাদিকাল পর্যন্ত নরকের আগুনে পুড়িতে থাকিবে!" এই ধরণের হাজারো অবাঞ্চিত ঘোষণার উপর সম্মোহিত হইয়া আদিম যুগের বিবেক-বুদ্ধিহীন প্রজারা আপন আপন রাজ্যের রাজাদেরই খোদার স্থলাভিষিক্ত করিয়া কৃশকায় দিনাতিপাত করিয়াছে আর কপটচারী রাজাগণ প্রজাদের দাস বানাইয়া রাজ্যের যথেচ্ছা সুবিধা ভোগ করিয়া সার্বভৌমকর্তা সাজিয়া আমৃত্যু রাজ্য শাসন করিয়াছে। ঠিক এখন আমি সেই আশঙ্কাই করিতেছি- খুব শীগ্রই পৃথিবীবাসী হয়তো দেখিবে সকল শঠতাপূর্ণ বিজ্ঞানীরা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে কিছু কিছু রহস্যময় আবিষ্কার দেখাইয়া পৃথিবীবাসীর বিবেকী মন-জ্ঞান-ধ্যান নিয়ন্ত্রণ করিবে আর সেই সব আবিষ্কারের প্রতি সম্মোহন করাইয়া ঐ আদিম যুগের প্রজাদের মতো দাস বানাইয়া রাখিবে। শঠতাপূর্ণ বিজ্ঞানীরা যাহাই বলিবে, যাহাই প্রচার করিবে সেই সবের বাস্তবতা দেখিয়া পৃথিবীবাসী আপন জ্ঞানের নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া ওদেরকে খোদার স্থলাভিষিক্ত করিবে আর ভুলিয়া যাইবে আপন আপন বিশ্বাসের অথবা আপনাকে চিনিবার জ্ঞানের শেকড় থেকে শিখর কোথায় ছিল।

হয়তো, এইভাবেই এই সুন্দর পৃথিবীর শান্তি সমীরণ, শান্তি বারি চির নশ্বরের দিকেই বহিতেছে, গড়াইতেছে....

চট্টগ্রাম © মাহতাব বাঙ্গালী
এপ্রিল ২০, ২০২১ ইং
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩১০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০২১

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast