পাত্রী দেখা আর কিছু কথোপকথ্ন
-হ্যাঁ, করিম ভাই; কই আপনে? কতটুকু আইছেন? আমরা বয়সা আছি কিন্তু!
ফোন করে ঘটক বাবু বললেন আমায়
-এইতো চইলা আসছি; ২নাম্বার গেইটের জ্যামে আটকা পড়ছি। আর পাঁচ মিনিট লাগবো।
উত্তরে বললাম আমি
আবার আমার জিজ্ঞাসা- কই বইসছেন আপনেরা?
-এইতো হোটেল জামানের ২য় তলায়।
ঘটক উত্তর দিলেন
আমার বিয়ে নিয়ে মা-বাবা থেকে ভাই-বোন, এমনকি আমার কাজিন আর মামারাও চিন্তিত। আমার বয়স যখন ত্রিশ পার হলো তখন থেকেই মা-বাবা চেষ্টায় আছেন বিয়ে করিয়ে দেয়ার জন্য। এখন বয়স চৌত্রিশ। অবিবাহিত আমি এখনো! সেদিন প্রত্যুষে উঠে চাকরিতে যাওয়ার আগে মায়ের চোখে জল দেখেই বলে ফেললাম
- আইচ্ছা ঠিক আছে মা, একটা সাধন সঙ্গিনী দেইখা ফ্যালো। তবে মনে রাইখো, আমি কিন্তু মাইয়া দেইখতে যামুনা। তোমরা যারে আমার সাধন সঙ্গিনী হিসাবে ঠিক করবা আমি তারেই বিয়া করমু।
মা বিস্ময়ের চোখে জিজ্ঞেস করলেন - কী কইলি তুই? সাধন সঙ্গিনী মানে? হেইডা আবার কী? মাইয়া তুই দেখবি না মানে কী?
উত্তরে বললাম- আইচ্ছা ঠিক আছে মা, আগে মাইয়া ঠিক করো। মাইয়াডারেই আমি কমু- সাধন সঙ্গিনী মানে কী।
মা আমার কাছে বায়োডাটা চাইলেন। আমি বললাম যে মেয়ের পরিবার আমাকে সরাসরি দেখে পছন্দ করবে আমি সে পরিবারের মেয়েই দেখতে যাব। তবে আমি বায়োডাটা দিবনা আর মেয়েরও বায়োডাটা প্রয়োজন নেই আমার।
ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় বড় বোন এক মেয়ের খবর আনলেন ঘটক মারফত। মেয়ের বড় ভাই এর পরবর্তী দিন অফিসে গিয়ে আমাকে দেখলেন আর আমার অফিসিয়াল খোঁজ খবর নিলেন। আমাকে পরবর্তী সন্ধ্যায় ঘটক মারফত মেয়েকে দেখার জন্য সময় জানাতে বললে আমি মেয়ের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো সময়ে রাজি জানালাম।
মুরাদপুরের হোটেল জামান এক্সক্লুসিভ-এ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সন্ধ্যায় দেখা হলো ঊর্মি কাওসার নামক এক মেয়ের সাথে। মেয়েটির সাথে ছিলো তার মা, ভাই আর ঘটক সাহেব। যথাসময়ের দশমিনিট দেরীতে পৌঁছালাম আমি একা। এ আমার প্রথম কোনো মেয়েকে সাধন সঙ্গিনী হিসেবে দেখতে যাওয়া।
-আস্সালামু আলাইকুম।একটু দেরী হইয়া গেলো।আপনেরা ক্যামোন'আছেন? আমি বললাম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমরা ভালা আছি। নাহ; অসুবিধা নাই, বসেন। কৈ আর কেউ আইসবেনা? ঘটক সাহেব উত্তরে বললেন
-নাহ; আমারই তো আসার কথা ছিলো! উত্তরে আমি বললাম
আমরা মোট চারজন তবে টেবিলখানা বারোজনের। আমি রেস্টুরেন্টে বসার টেবিল পরিবর্তন করতে চাইলে কেউ আপত্তি করলোনা।তাই আবার চারজনের টেবিলে গেলাম। কী খাবেন এ জিজ্ঞাসায় পাত্রীর ভাই মেন্যু চাইলো আর সর্বসম্মতিক্রমে চিকেন স্পেশাল চাপ আর স্পেশাল পরোটা আনা হলো। খেতে খেতে পাত্রীর ভাই আমার সম্পর্কে যা জানার জেনে নিলো। খাওয়া শেষে ঘটক আমাকে বললেন- "এবার আপনে পাত্রী থেকে যা জিজ্ঞাসার আছে সব কইরা নিতে পারেন। আমরা একটু আলাদা বসতাছি।" চা, কফি কিংবা ঠান্ডা পানীয়ের কথা জিজ্ঞেস করাতেই উনারা চা বেঁচে নিলেন সাথে আমিও। তবে পাত্রী ঠান্ডা পানীয় চাইল। অতঃপর শুরু হলো কথোপকথন আমার আর সাধন সঙ্গিনী হিসেবে প্রতীক্ষিত পাত্রীর সাথে।
আমিই প্রথমে শুরু করলাম
-আমার কাছে কি আপনার কিছু জিজ্ঞাসার আছে ?
- নাহ! পাত্রী উত্তর দিলো
-আপনার নাম কী? আমি জিজ্ঞাসা করলাম
- ঊর্মি কাওছার। পাত্রীর উত্তর
-নামের অর্থ কী, জানেন?
- ঊর্মি অর্থ ঢেউ আর কাওছার অর্থ নহর মানে নহরের ঢেউ।
-তবে নামটা এমনভাবে কে দিয়েছে? এখানে তো বাংলা আর আরবি শব্দের মিশ্রণ!
- হ্যাঁ; এ নামটা আমার আব্বাই রেখেছিল।
-যাক আপনার নামটা সুন্দর আছে; আছে সুন্দর অর্থ।
- ধন্যবাদ।
-আপনার বাবা কী করেন?
- আসলে ওনি মারা গেছেন। ওনি ইউনিলিভারে চাকরি করতেন।
-আপনাদের বাসা কোথায়?
- এইতো রৌফাবাদ। কাশেম ম্যানশন। আমাদের নিজস্ব বিলডিং।
-আপনারা ভাই-বোন কয়জন?
- তিনবোন, দুই ভাই।
-আপনার অন্য দু'বোনের কি বিয়ে হয়েছে?
- হ্যাঁ, ওরা বিবাহিত। বড় বোন আমাদের পাশেই থাকে; ওনার হাসব্যান্ড-র বিলডিং। আর মেজো বোন নাজিরহাট-এ, চৌধুরী বাড়ী।
-আপনার দুলাভায়েরা কী করেন?
-বড় দুলাভাই ছোটকাট ব্যবসা করে বর্তমানে আর মেজো দুলাভাই আগে প্রবাসী ছিল এখন গ্রামে খামার ব্যবসা করে।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আবার জানতে চাইলাম আমার কাছে কি কিছু জিজ্ঞাসার আছে কিনা। ঊর্মি (পাত্রী) মাথা নেড়ে জানাল- নাই। তারপর জানতে চাইলাম- আর কী খাবেন। সে বললো- যা খেয়েছি অনেক, এবার আস্তে আস্তে এ মাউন্টেন ডিও-তে চুমুক দিতে দিতে আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে ভালো লাগছে। আমি আবার কথা শুরু করলাম
-আপনি তো স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, না? কোন বিষয়ে আর কবে কমপ্লিট হয়েছে?
- হ্যাঁ, আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি ২০১৮ সালে, ইসলামী ইতিহাস-এ।
-আপনার কি লেখাপড়া সব এ শহরে হয়েছে?
- না, আসলে আমি এসএসসি পাশ করেছি রোসাংগিরি স্কুল থেকে; এইচএসসি পাশ করেছি কাপাসগোলা কলেজ থেকে; অনার্স পাশ করেছি মহসিন কলেজ থেকে আর মাস্টার্স পাশ করেছি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে।
-আপনার অনার্স-মাস্টার্স কি ডিভিশনে পাশ না গ্রেড সিস্টেম পাশ?
- ডিভিশনে ছিল। আমার দু'টোতেই ১ম বিভাগে ছিল।
-আপনার ব্যাচে কয়জন ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে?
- কেউ না; শুধু আমিই পেয়েছিলাম। আর সেজন্য চট্টগ্রাম কলেজের "ইসলামী ইতিহাস" ডিপার্টমেন্ট প্রধান আমাকে তাঁর কলেজে লেকচারার হিসাবে যোগ দিতে বলেছিলেন। তবে মা আর ভাইয়ার সম্মতি না থাকায় আমি যোগ দিইনি।
-তবে আমি মনে করি আপনি এটা ভুল করেছেন! আপনি প্রফেশনাল লাইফে গেলে বুঝতে পারতেন- আপনি কতটুকু যোগ্য এ পৃথিবীর জন্য। আপনি কি নিজেকে স্বাধীন ভাবেননা? আপনার ফ্যামিলি কি কনসারভেটিভ, না মডারেট, না লিভরাল?
- আসলে আমার ফ্যামিলি আমার জন্য সবকিছু। আমি আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের খুব ভালোবাসি। উনারা আমার হিসেবে সবাই লিভরাল। উনারা সবাই আমার ভালইতো চান। হয়তো ওই লেকচারার পোস্টের চাকরিটা আমার জন্য ভালো হতো না তাই উনারাও চাইনি যে আমি যোগ দিই।
-আপনি তো মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন ২০১৮ সালে; তো আর অন্য কোথাও জবের জন্য ট্রাই করেননি?
- না, তবে এনটিআরসিএ-তে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, এমসিকিউ আর লিখিত পরীক্ষায় পাশও করেছি; এখন ওটার ভাইভা-র জন্য ওয়েইট করছি। আর গতসপ্তাহে অনুষ্ঠিত বিসিএস -এ এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
-আমি যা বুঝলাম আপনার মুখস্ত শক্তি ভালো। মেধাও ভালো। তবে সার্টিফিকেট এইজ শেষ হওয়ার আগে আপনি ভালো কোন জবের জন্য চেষ্টা করেন। কারণ বর্তমান সময়ে যে কোন চাকরির পরীক্ষায় পাশের জন্য মুখস্ত শক্তি বেশিই প্রয়োজন।
- হ্যাঁ; ঠিকই বলেছেন। আমি ভালোই মুখস্ত করতে পারি। তবে মেধা আছে কিনা জানিনা।
এরই মধ্যে রেস্টুরেন্টের ছেলেটা মিষ্টি পান নিয়ে এসেছে। আর জানতে চাইলো- স্যার আপনেরা আর কিছু খাইবেন। আমি বললাম না। তবে বলতে বলতে ঊর্মির (পাত্রীর) ছোট ছোট শুকনো কাশি শুনতে পেরে আমি বললাম- আপনি তো কাশাচ্ছেন, চা বা কফি আনাবো? ঊর্র্মী (পাত্রী) বললো- আসলে এসির ঠান্ডা বাতাস আর এ কোল ড্রিঙ্কস দুটো মিলেই এ অবস্থা। তবে আমি ভালো আছি। তবে চা আনালে ভালো হতো। রেস্টুরেন্টের ছেলেটাকে চা আনতে বলে আবার কথা শুরু করলাম আমি নিজে।
-আচ্ছা, আপনার কেমন পাত্র পছন্দ? মানে বলতে চাইছি- 'লাইফ পার্টনারের বৈশিষ্ট্য কেমন' আমি কি জানতে পারি?
- আসলে, যে আমাকে পছন্দ করবে, ভালোবাসবে আমার সববিষয় নিয়ে যে সচেতন থাকবে সহযোগিতা করার মানসে আমি সে ধরণের পাত্রই চাচ্ছি।
-জীবন নিয়ে আপনার দর্শন কী? আর কোন ধর্মই আপনি পছন্দ করেন মানে বলতে চাইছি আপনি তো মুসলিম তবে ইসলামের কোন দর্শন আপনার বেশি ভালো লাগে বা আপনি ফলো করেন কাকে বেশি?
- আমি 'ধর্মের মধ্যে দর্শন' আপনার এ বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারলাম না! আর আমি ইসলাম বলতে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ আর যাকাত বুঝি।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেই হবে যে আমার লাইফ পার্টনার হবে তাকে। আমি আল্লাহর কোরআন আর রাসূলের বিশুদ্ধ ছয় হাদিস ছাড়া অন্য কোন দর্শন এ ইসলাম ধর্মে মানিনা।
-আপনিতো দেখছি সম্পূর্ণ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ভালো লেগেছে আপনাকে আর আপনার কথাগুলোকে!
- কেন? আপনি কি ইসলাম ধর্মে পূর্ণ বিশ্বাসী নন? আপনি কি আল্লাহ, তাঁর রাসূল, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, শেষ বিচারের দিন- এগুলো বিশ্বাস করেননা? দেখেন- আমি কিন্তু যে এসবে অবিশ্বাসী তার সাথে নাই!
-আসলে আমি আপনাকে কী বলবো বুঝতে পারছিনা। তবে সত্যি বলতে- আমি কোন পাত্রী, ওয়াইফ, লাইফ পার্টনার, অন্তরঙ্গ বন্ধুর জন্য আপনাকে দেখতে আসিনি। আমি একজন আমার জীবনের সাধন সঙ্গীর খুঁজে আপনাকে দেখতে এসেছি। আমার মহামহিম মহাত্মা মহাসত্য মাওলা গুরু ফকির লালন সাইঁজির দর্শন খুব বেশি পছন্দ করি। কোন মেয়ের প্রতি কামের উদ্দেশ্যে আমি ইন্টারেস্টেড নই।
- একটু দাঁড়ান। তো আপনি বিয়ে করতে চাইছেন কেন?
-আসলে এটাতো সামাজিকতা রক্ষার্থে করতে হচ্ছে। সাংসারিক জীবন আমার একেবারে পছন্দ নয়। পরিবারের সকলের জন্য পাত্রী হিসেবে আপনাকে দেখতে আসা। আসলে লালন সাইঁজীর দর্শনই আমার সবকিছু। কেউ আমাকে সেজন্য গালি দিলেও আমার ভালো লাগে। তবে অন্যদের মতো আমাকে গাঞ্জা সেবনকারী ভাববেন না! আমি গাঞ্জা তো দূরের কথা পান-সিগারেট পর্যন্ত খাইনা।
- তো আপনি যে বললেন 'সাধন সঙ্গিনী' সেটার কোন ধরণের সঙ্গিনী আমাকে কি একটু বলবেন।
-না, সে ব্যাখ্যা এখন নয়। পরিপূর্ণ মনের মিলন হলেই তখন হয়তো বলা যাবে। আর আপনি যে বললেন আপনি জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করেন; আপনি কি ওগুলো সম্পর্কে জানেন?
- কেন জানবোনা! কোরআন-হাদিসে অসংখ্য প্রমাণ আছে এগুলো সম্পর্কে।
-আচ্ছা আপনি বলছেন কোরআন-হাদিসের কথা। তবে দেখেন কোরআন সংকলিত হয়েছে রাসূলের তিরোধানের আরো দশ-পনের বছর পরে। যেখানে প্রযুক্তির এত অগ্রগামিতার যুগেও আমরা গত রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার APPROPRIATE-EXACT প্রমাণ দিতে পারছিনা সেখানে আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে কী করে সম্ভব যে দশ-পনের বছর পরেও রাসূল যা বলেছেন তার APPROPRIATE-EXACT সংকলন করা আল্লাহর কালাম হিসেবে। আর দেখেন ঐ কালামের হরকত দিয়েছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যে কিনা ইসলাম বিদ্বেষী ছিল। হয়তো অনেকে বলবে রাসূলের সাহাবীদের অনুমতিক্রমেই হরকত সে হরকত দিয়েছিল। তবে আমি জিজ্ঞেস করব- রাসূলের সব সাহাবীই কি হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে পছন্দ করতো বা সবার মধ্যে কি ওই সময় ঐক্য ছিল? আসলেই না! আর দেখেন ইমাম বুখারীর জন্ম প্রায় দু'শত বছর পর, হাদিস সংকলনও প্রায় আড়াইশত বছর পর। তো এগুলোর উপর অন্ধভাবে আমার আস্থা নেই।
- তাহলে আপনি কি আল্লাহ কে বিশ্বাস করেন না?
-হ্যাঁ, বিশ্বাস অবশ্যই করি একজন স্রষ্টা আছেন। তবে দেখেন- আমি যতটুকু জানি, সাক্ষ্য দিতে হলে সাক্ষ্যদাতাকে নিজ চোখে দেখতে হয় অথবা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়। ইসলাম ধর্মও তাই বলে। কিন্তু আপনি কালেমায়ে শাহাদাত পড়ে যে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনার সে সাক্ষ্য মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত! কারণ- না আপনি আল্লাহকে দেখেছেন, না নবী মুহাম্মাদ (স:) কে দেখেছেন!
- আসলে আমি আপনার মতো এতকিছু বুঝিনা আর বুঝতে চাইও না। আমি ইসলাম ধর্মকে মনে-প্রাণে ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি। অন্য কথায় আসেন।
এদিকে পাত্রীর ভাই চলে যাওয়ার জন্য ঘটককে তাড়া দিলেন আর ঘটকও আমার দিকে এসে উঠার অনুমতি চাইলেন। আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। রেস্টুরেন্টের ছেলেটাকে বিল আনতে বললাম আর ছেলের ভাই পেমেন্ট দিতে চাইলে আমিই এগিয়ে গিয়ে পেমেন্ট দিলাম। কিছুক্ষন আমি চুপসে যাওয়ার পর ঊর্মি (পাত্রী) আমাকে জিজ্ঞেস করল-
- আপনার দেখে যাওয়াই কি ফাইনাল দেখে যাওয়া। আপনার মতামতের উপরই কি আপনার ফ্যামিলি পাত্রীকে পছন্দ করবে বা মেনে নিবে।
-আসলে সবকিছু আমার উপর ডিপেন্ড করছে। তবে সত্যি বলতে আপনাকে ভালো লেগেছে, বলতে পারেন পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমার ফ্যামিলি চায়ছে- পাত্রী যাতে লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট আর দেখতে সুশ্রী আর ফর্সা হয়। যদিও আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন- মনের মিলটাই আসল।
- আচ্ছা যাক। আপনার সাথে অনেক্ষন কথা হলো। মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার অনেক দিনের জানাশোনা আছে। আমি আপনার ফ্যামিলির প্রত্যাশিত লম্বাও নই আর ফর্সাও নই। ধন্যবাদ
-ধন্যবাদ আপনাকেও
বৃহস্পতিবার, ১লা এপ্রিল, ২০২১
মুরাদপুর, চট্টগ্রাম (সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭.৩০টা পর্যন্ত)
© মাহতাব বাঙ্গালী
ফোন করে ঘটক বাবু বললেন আমায়
-এইতো চইলা আসছি; ২নাম্বার গেইটের জ্যামে আটকা পড়ছি। আর পাঁচ মিনিট লাগবো।
উত্তরে বললাম আমি
আবার আমার জিজ্ঞাসা- কই বইসছেন আপনেরা?
-এইতো হোটেল জামানের ২য় তলায়।
ঘটক উত্তর দিলেন
আমার বিয়ে নিয়ে মা-বাবা থেকে ভাই-বোন, এমনকি আমার কাজিন আর মামারাও চিন্তিত। আমার বয়স যখন ত্রিশ পার হলো তখন থেকেই মা-বাবা চেষ্টায় আছেন বিয়ে করিয়ে দেয়ার জন্য। এখন বয়স চৌত্রিশ। অবিবাহিত আমি এখনো! সেদিন প্রত্যুষে উঠে চাকরিতে যাওয়ার আগে মায়ের চোখে জল দেখেই বলে ফেললাম
- আইচ্ছা ঠিক আছে মা, একটা সাধন সঙ্গিনী দেইখা ফ্যালো। তবে মনে রাইখো, আমি কিন্তু মাইয়া দেইখতে যামুনা। তোমরা যারে আমার সাধন সঙ্গিনী হিসাবে ঠিক করবা আমি তারেই বিয়া করমু।
মা বিস্ময়ের চোখে জিজ্ঞেস করলেন - কী কইলি তুই? সাধন সঙ্গিনী মানে? হেইডা আবার কী? মাইয়া তুই দেখবি না মানে কী?
উত্তরে বললাম- আইচ্ছা ঠিক আছে মা, আগে মাইয়া ঠিক করো। মাইয়াডারেই আমি কমু- সাধন সঙ্গিনী মানে কী।
মা আমার কাছে বায়োডাটা চাইলেন। আমি বললাম যে মেয়ের পরিবার আমাকে সরাসরি দেখে পছন্দ করবে আমি সে পরিবারের মেয়েই দেখতে যাব। তবে আমি বায়োডাটা দিবনা আর মেয়েরও বায়োডাটা প্রয়োজন নেই আমার।
ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় বড় বোন এক মেয়ের খবর আনলেন ঘটক মারফত। মেয়ের বড় ভাই এর পরবর্তী দিন অফিসে গিয়ে আমাকে দেখলেন আর আমার অফিসিয়াল খোঁজ খবর নিলেন। আমাকে পরবর্তী সন্ধ্যায় ঘটক মারফত মেয়েকে দেখার জন্য সময় জানাতে বললে আমি মেয়ের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো সময়ে রাজি জানালাম।
মুরাদপুরের হোটেল জামান এক্সক্লুসিভ-এ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সন্ধ্যায় দেখা হলো ঊর্মি কাওসার নামক এক মেয়ের সাথে। মেয়েটির সাথে ছিলো তার মা, ভাই আর ঘটক সাহেব। যথাসময়ের দশমিনিট দেরীতে পৌঁছালাম আমি একা। এ আমার প্রথম কোনো মেয়েকে সাধন সঙ্গিনী হিসেবে দেখতে যাওয়া।
-আস্সালামু আলাইকুম।একটু দেরী হইয়া গেলো।আপনেরা ক্যামোন'আছেন? আমি বললাম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমরা ভালা আছি। নাহ; অসুবিধা নাই, বসেন। কৈ আর কেউ আইসবেনা? ঘটক সাহেব উত্তরে বললেন
-নাহ; আমারই তো আসার কথা ছিলো! উত্তরে আমি বললাম
আমরা মোট চারজন তবে টেবিলখানা বারোজনের। আমি রেস্টুরেন্টে বসার টেবিল পরিবর্তন করতে চাইলে কেউ আপত্তি করলোনা।তাই আবার চারজনের টেবিলে গেলাম। কী খাবেন এ জিজ্ঞাসায় পাত্রীর ভাই মেন্যু চাইলো আর সর্বসম্মতিক্রমে চিকেন স্পেশাল চাপ আর স্পেশাল পরোটা আনা হলো। খেতে খেতে পাত্রীর ভাই আমার সম্পর্কে যা জানার জেনে নিলো। খাওয়া শেষে ঘটক আমাকে বললেন- "এবার আপনে পাত্রী থেকে যা জিজ্ঞাসার আছে সব কইরা নিতে পারেন। আমরা একটু আলাদা বসতাছি।" চা, কফি কিংবা ঠান্ডা পানীয়ের কথা জিজ্ঞেস করাতেই উনারা চা বেঁচে নিলেন সাথে আমিও। তবে পাত্রী ঠান্ডা পানীয় চাইল। অতঃপর শুরু হলো কথোপকথন আমার আর সাধন সঙ্গিনী হিসেবে প্রতীক্ষিত পাত্রীর সাথে।
আমিই প্রথমে শুরু করলাম
-আমার কাছে কি আপনার কিছু জিজ্ঞাসার আছে ?
- নাহ! পাত্রী উত্তর দিলো
-আপনার নাম কী? আমি জিজ্ঞাসা করলাম
- ঊর্মি কাওছার। পাত্রীর উত্তর
-নামের অর্থ কী, জানেন?
- ঊর্মি অর্থ ঢেউ আর কাওছার অর্থ নহর মানে নহরের ঢেউ।
-তবে নামটা এমনভাবে কে দিয়েছে? এখানে তো বাংলা আর আরবি শব্দের মিশ্রণ!
- হ্যাঁ; এ নামটা আমার আব্বাই রেখেছিল।
-যাক আপনার নামটা সুন্দর আছে; আছে সুন্দর অর্থ।
- ধন্যবাদ।
-আপনার বাবা কী করেন?
- আসলে ওনি মারা গেছেন। ওনি ইউনিলিভারে চাকরি করতেন।
-আপনাদের বাসা কোথায়?
- এইতো রৌফাবাদ। কাশেম ম্যানশন। আমাদের নিজস্ব বিলডিং।
-আপনারা ভাই-বোন কয়জন?
- তিনবোন, দুই ভাই।
-আপনার অন্য দু'বোনের কি বিয়ে হয়েছে?
- হ্যাঁ, ওরা বিবাহিত। বড় বোন আমাদের পাশেই থাকে; ওনার হাসব্যান্ড-র বিলডিং। আর মেজো বোন নাজিরহাট-এ, চৌধুরী বাড়ী।
-আপনার দুলাভায়েরা কী করেন?
-বড় দুলাভাই ছোটকাট ব্যবসা করে বর্তমানে আর মেজো দুলাভাই আগে প্রবাসী ছিল এখন গ্রামে খামার ব্যবসা করে।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আবার জানতে চাইলাম আমার কাছে কি কিছু জিজ্ঞাসার আছে কিনা। ঊর্মি (পাত্রী) মাথা নেড়ে জানাল- নাই। তারপর জানতে চাইলাম- আর কী খাবেন। সে বললো- যা খেয়েছি অনেক, এবার আস্তে আস্তে এ মাউন্টেন ডিও-তে চুমুক দিতে দিতে আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে ভালো লাগছে। আমি আবার কথা শুরু করলাম
-আপনি তো স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, না? কোন বিষয়ে আর কবে কমপ্লিট হয়েছে?
- হ্যাঁ, আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি ২০১৮ সালে, ইসলামী ইতিহাস-এ।
-আপনার কি লেখাপড়া সব এ শহরে হয়েছে?
- না, আসলে আমি এসএসসি পাশ করেছি রোসাংগিরি স্কুল থেকে; এইচএসসি পাশ করেছি কাপাসগোলা কলেজ থেকে; অনার্স পাশ করেছি মহসিন কলেজ থেকে আর মাস্টার্স পাশ করেছি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে।
-আপনার অনার্স-মাস্টার্স কি ডিভিশনে পাশ না গ্রেড সিস্টেম পাশ?
- ডিভিশনে ছিল। আমার দু'টোতেই ১ম বিভাগে ছিল।
-আপনার ব্যাচে কয়জন ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে?
- কেউ না; শুধু আমিই পেয়েছিলাম। আর সেজন্য চট্টগ্রাম কলেজের "ইসলামী ইতিহাস" ডিপার্টমেন্ট প্রধান আমাকে তাঁর কলেজে লেকচারার হিসাবে যোগ দিতে বলেছিলেন। তবে মা আর ভাইয়ার সম্মতি না থাকায় আমি যোগ দিইনি।
-তবে আমি মনে করি আপনি এটা ভুল করেছেন! আপনি প্রফেশনাল লাইফে গেলে বুঝতে পারতেন- আপনি কতটুকু যোগ্য এ পৃথিবীর জন্য। আপনি কি নিজেকে স্বাধীন ভাবেননা? আপনার ফ্যামিলি কি কনসারভেটিভ, না মডারেট, না লিভরাল?
- আসলে আমার ফ্যামিলি আমার জন্য সবকিছু। আমি আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের খুব ভালোবাসি। উনারা আমার হিসেবে সবাই লিভরাল। উনারা সবাই আমার ভালইতো চান। হয়তো ওই লেকচারার পোস্টের চাকরিটা আমার জন্য ভালো হতো না তাই উনারাও চাইনি যে আমি যোগ দিই।
-আপনি তো মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন ২০১৮ সালে; তো আর অন্য কোথাও জবের জন্য ট্রাই করেননি?
- না, তবে এনটিআরসিএ-তে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, এমসিকিউ আর লিখিত পরীক্ষায় পাশও করেছি; এখন ওটার ভাইভা-র জন্য ওয়েইট করছি। আর গতসপ্তাহে অনুষ্ঠিত বিসিএস -এ এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
-আমি যা বুঝলাম আপনার মুখস্ত শক্তি ভালো। মেধাও ভালো। তবে সার্টিফিকেট এইজ শেষ হওয়ার আগে আপনি ভালো কোন জবের জন্য চেষ্টা করেন। কারণ বর্তমান সময়ে যে কোন চাকরির পরীক্ষায় পাশের জন্য মুখস্ত শক্তি বেশিই প্রয়োজন।
- হ্যাঁ; ঠিকই বলেছেন। আমি ভালোই মুখস্ত করতে পারি। তবে মেধা আছে কিনা জানিনা।
এরই মধ্যে রেস্টুরেন্টের ছেলেটা মিষ্টি পান নিয়ে এসেছে। আর জানতে চাইলো- স্যার আপনেরা আর কিছু খাইবেন। আমি বললাম না। তবে বলতে বলতে ঊর্মির (পাত্রীর) ছোট ছোট শুকনো কাশি শুনতে পেরে আমি বললাম- আপনি তো কাশাচ্ছেন, চা বা কফি আনাবো? ঊর্র্মী (পাত্রী) বললো- আসলে এসির ঠান্ডা বাতাস আর এ কোল ড্রিঙ্কস দুটো মিলেই এ অবস্থা। তবে আমি ভালো আছি। তবে চা আনালে ভালো হতো। রেস্টুরেন্টের ছেলেটাকে চা আনতে বলে আবার কথা শুরু করলাম আমি নিজে।
-আচ্ছা, আপনার কেমন পাত্র পছন্দ? মানে বলতে চাইছি- 'লাইফ পার্টনারের বৈশিষ্ট্য কেমন' আমি কি জানতে পারি?
- আসলে, যে আমাকে পছন্দ করবে, ভালোবাসবে আমার সববিষয় নিয়ে যে সচেতন থাকবে সহযোগিতা করার মানসে আমি সে ধরণের পাত্রই চাচ্ছি।
-জীবন নিয়ে আপনার দর্শন কী? আর কোন ধর্মই আপনি পছন্দ করেন মানে বলতে চাইছি আপনি তো মুসলিম তবে ইসলামের কোন দর্শন আপনার বেশি ভালো লাগে বা আপনি ফলো করেন কাকে বেশি?
- আমি 'ধর্মের মধ্যে দর্শন' আপনার এ বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারলাম না! আর আমি ইসলাম বলতে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ আর যাকাত বুঝি।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেই হবে যে আমার লাইফ পার্টনার হবে তাকে। আমি আল্লাহর কোরআন আর রাসূলের বিশুদ্ধ ছয় হাদিস ছাড়া অন্য কোন দর্শন এ ইসলাম ধর্মে মানিনা।
-আপনিতো দেখছি সম্পূর্ণ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ভালো লেগেছে আপনাকে আর আপনার কথাগুলোকে!
- কেন? আপনি কি ইসলাম ধর্মে পূর্ণ বিশ্বাসী নন? আপনি কি আল্লাহ, তাঁর রাসূল, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, শেষ বিচারের দিন- এগুলো বিশ্বাস করেননা? দেখেন- আমি কিন্তু যে এসবে অবিশ্বাসী তার সাথে নাই!
-আসলে আমি আপনাকে কী বলবো বুঝতে পারছিনা। তবে সত্যি বলতে- আমি কোন পাত্রী, ওয়াইফ, লাইফ পার্টনার, অন্তরঙ্গ বন্ধুর জন্য আপনাকে দেখতে আসিনি। আমি একজন আমার জীবনের সাধন সঙ্গীর খুঁজে আপনাকে দেখতে এসেছি। আমার মহামহিম মহাত্মা মহাসত্য মাওলা গুরু ফকির লালন সাইঁজির দর্শন খুব বেশি পছন্দ করি। কোন মেয়ের প্রতি কামের উদ্দেশ্যে আমি ইন্টারেস্টেড নই।
- একটু দাঁড়ান। তো আপনি বিয়ে করতে চাইছেন কেন?
-আসলে এটাতো সামাজিকতা রক্ষার্থে করতে হচ্ছে। সাংসারিক জীবন আমার একেবারে পছন্দ নয়। পরিবারের সকলের জন্য পাত্রী হিসেবে আপনাকে দেখতে আসা। আসলে লালন সাইঁজীর দর্শনই আমার সবকিছু। কেউ আমাকে সেজন্য গালি দিলেও আমার ভালো লাগে। তবে অন্যদের মতো আমাকে গাঞ্জা সেবনকারী ভাববেন না! আমি গাঞ্জা তো দূরের কথা পান-সিগারেট পর্যন্ত খাইনা।
- তো আপনি যে বললেন 'সাধন সঙ্গিনী' সেটার কোন ধরণের সঙ্গিনী আমাকে কি একটু বলবেন।
-না, সে ব্যাখ্যা এখন নয়। পরিপূর্ণ মনের মিলন হলেই তখন হয়তো বলা যাবে। আর আপনি যে বললেন আপনি জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করেন; আপনি কি ওগুলো সম্পর্কে জানেন?
- কেন জানবোনা! কোরআন-হাদিসে অসংখ্য প্রমাণ আছে এগুলো সম্পর্কে।
-আচ্ছা আপনি বলছেন কোরআন-হাদিসের কথা। তবে দেখেন কোরআন সংকলিত হয়েছে রাসূলের তিরোধানের আরো দশ-পনের বছর পরে। যেখানে প্রযুক্তির এত অগ্রগামিতার যুগেও আমরা গত রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার APPROPRIATE-EXACT প্রমাণ দিতে পারছিনা সেখানে আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে কী করে সম্ভব যে দশ-পনের বছর পরেও রাসূল যা বলেছেন তার APPROPRIATE-EXACT সংকলন করা আল্লাহর কালাম হিসেবে। আর দেখেন ঐ কালামের হরকত দিয়েছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যে কিনা ইসলাম বিদ্বেষী ছিল। হয়তো অনেকে বলবে রাসূলের সাহাবীদের অনুমতিক্রমেই হরকত সে হরকত দিয়েছিল। তবে আমি জিজ্ঞেস করব- রাসূলের সব সাহাবীই কি হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে পছন্দ করতো বা সবার মধ্যে কি ওই সময় ঐক্য ছিল? আসলেই না! আর দেখেন ইমাম বুখারীর জন্ম প্রায় দু'শত বছর পর, হাদিস সংকলনও প্রায় আড়াইশত বছর পর। তো এগুলোর উপর অন্ধভাবে আমার আস্থা নেই।
- তাহলে আপনি কি আল্লাহ কে বিশ্বাস করেন না?
-হ্যাঁ, বিশ্বাস অবশ্যই করি একজন স্রষ্টা আছেন। তবে দেখেন- আমি যতটুকু জানি, সাক্ষ্য দিতে হলে সাক্ষ্যদাতাকে নিজ চোখে দেখতে হয় অথবা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়। ইসলাম ধর্মও তাই বলে। কিন্তু আপনি কালেমায়ে শাহাদাত পড়ে যে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনার সে সাক্ষ্য মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত! কারণ- না আপনি আল্লাহকে দেখেছেন, না নবী মুহাম্মাদ (স:) কে দেখেছেন!
- আসলে আমি আপনার মতো এতকিছু বুঝিনা আর বুঝতে চাইও না। আমি ইসলাম ধর্মকে মনে-প্রাণে ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি। অন্য কথায় আসেন।
এদিকে পাত্রীর ভাই চলে যাওয়ার জন্য ঘটককে তাড়া দিলেন আর ঘটকও আমার দিকে এসে উঠার অনুমতি চাইলেন। আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। রেস্টুরেন্টের ছেলেটাকে বিল আনতে বললাম আর ছেলের ভাই পেমেন্ট দিতে চাইলে আমিই এগিয়ে গিয়ে পেমেন্ট দিলাম। কিছুক্ষন আমি চুপসে যাওয়ার পর ঊর্মি (পাত্রী) আমাকে জিজ্ঞেস করল-
- আপনার দেখে যাওয়াই কি ফাইনাল দেখে যাওয়া। আপনার মতামতের উপরই কি আপনার ফ্যামিলি পাত্রীকে পছন্দ করবে বা মেনে নিবে।
-আসলে সবকিছু আমার উপর ডিপেন্ড করছে। তবে সত্যি বলতে আপনাকে ভালো লেগেছে, বলতে পারেন পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমার ফ্যামিলি চায়ছে- পাত্রী যাতে লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট আর দেখতে সুশ্রী আর ফর্সা হয়। যদিও আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন- মনের মিলটাই আসল।
- আচ্ছা যাক। আপনার সাথে অনেক্ষন কথা হলো। মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার অনেক দিনের জানাশোনা আছে। আমি আপনার ফ্যামিলির প্রত্যাশিত লম্বাও নই আর ফর্সাও নই। ধন্যবাদ
-ধন্যবাদ আপনাকেও
বৃহস্পতিবার, ১লা এপ্রিল, ২০২১
মুরাদপুর, চট্টগ্রাম (সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭.৩০টা পর্যন্ত)
© মাহতাব বাঙ্গালী
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২১/১১/২০২৩সুন্দর
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৬/০৩/২০২২ভালো