এবং কবিতা
কবি অবিনাশ চৌধুরী শিক্ষিকা ঝিমলি দে সরকারকে ভালোবেসে বিয়ে করলেন। তাদের দুজনের ভালোবাসা খুব নৈপুণ্য ভরপুর ছিল ।সূর্য ওঠা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা চিরসবুজ থাকত। তারা প্রতি রাতে একসাথে খাবার খেতেন যদিও দিনের বেলা একসাথে খাওয়া পড়া হয়ে ওঠেনা। অফিসের চাপ সংসারের ঝুট-ঝামেলা অনেক কিছু আছে। দুজনে তারা ছাদে বসে আকাশ পানে তাকিয়ে রাতের তারা গুনে, আবার পূর্ণিমার চাঁদ নিজেদের গায়ে মেখে নেয়। ভালোবাসা! ভালোবাসা আর ভালোবাসা- দিয়ে তাদের সংসারকে খুব সুন্দর সাজিয়ে রেখেছে দুজনেই।
অবিনাশ চৌধুরী যখন কবিতা লেখেন তখন নিজের অজান্তেই তিনি একজন শিল্পী হয়ে ওঠেন। মনের কালি দিয়ে তিনি নানা রঙের ছবি, বৈচিত্র পাহাড় পর্বত প্রেম-ভালোবাসা দেশ-বিদেশ সব কিছুকে আঁকড়ে ধরে ফেলেন। আর এখানেই সুখী সংসারের ভেতর একটা কিন্তু সৃষ্টি হয়ে যায় । এই কিন্তু টাকে বাদ দেওয়া যায় না ; আবার আঁকড়ে ধরাও যায় না।বিশেষ করে শিক্ষিকা বলেই কথা-তাদের একটা আদর্শ নিয়ে চলতে হয়। সমাজের বুকে নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হয়। পাছে সেই মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যাতে না যায় সেই চিন্তাতেই-শিক্ষিকা ঝিমলি আনন্দের মাঝে নিরানন্দের ঝড় তুফান দেখতে পান।
প্রায় প্রতিদিন অবিনাশ আর তার স্ত্রী ঝিমলি নিজেদের বাড়ির ছাদের উপর যখন শীতলপাটি বিছিয়ে গায়ে সুপারি বাগানের হালকা বাতাস লাগাতে লাগাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে নিজেরা রোমাঞ্চিত ও আপ্লুত হয়ে যান। ঠিক সেই মুহুর্তে একটা নিরানন্দ শিক্ষিকাকে ধীরে ধীরে আক্রমণ করে। কারণটা কি বুঝলেন? কোন মানুষ নয় স্নিগ্ধ চাঁদের বুকে কিছু কলঙ্কের কালো দাগ আছে, সেই দাগগুলো দেখা মাত্রই ঝিমলি নিজের সেই কবি পুরুষের মধ্যে কলঙ্কের ছোঁয়া, বা কলঙ্কের কল্পনা করেন। কি যে হলো; কবির ভাব কোথা থেকে কি লিখেন কিছু বুঝে উঠতে পারেন না তিনি। ঝিমলি, অবিনাশ এবং তাদের মধ্যে তৃতীয় ভাবনার অস্তিত্বের পরিষ্কার টের পান ঝিমলি।তিনি নিজের মনে মনে সেই অনাকাক্ষিত তৃতীয় জনের ভাবনায় কখন যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন তাদের দু'জনের কেউই সেটা টের পান না।
অবিনাশ আপন মনে কবিতার ভাষা খুঁজে বের করেন বলেন আমি জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসি ওকে নিয়েই সুন্দর ছবি আঁকি আমার মনের ক্যানভাসে। তারাগুলো ঝিঁকমিক করে আমি তাদের খুব কাছাকাছি। তুমিও কি আমার মতো নক্ষত্র, চাঁদ তারাদের ভালোবাসো? মাঝে মাঝে আমরাও কখনো কখনো নিজেরা নিজেদের খেয়ালে উড়ে যেতে পারি জ্যোৎস্নার দেশে। তাদের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করতে পারি। আর আমরা সেখানে হারিয়ে যেতেও পারি, বলো কি আনন্দ হবে-
‘নিঝুম সন্ধ্যায় ক্লান্ত পাখিরা বুজিবা পথ ভুলে যায়’।
অবিনাশের এই কথাগুলো শুনে ঝিমলির মনে ধীরে ধীরে আরও প্রশ্নের এসে ভিড় জমাতে থাকে।কোনক্রমে রাগ সামলালেন ঝিমলি।
-এখানে তুমি কাকে নিয়ে কি কথা বলছে আমি কিচ্ছু বুঝি না। আমরা দুজন এইতো ছাদের উপর বসে আছি এবার আর জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসার প্রশ্নটা আসল কি করে? নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে?
এবার অবিনাশ বাবু হাসলেন।
- তুমি দেখো জ্যোৎস্না আমাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেও নাকি আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সে আমাকে বার বার তার কাছে ডাকছে; আমরাও যেন সে জ্যোৎস্নার বুকে লুটি পুটি খেতে ইচ্ছে হয়।তুমি তো আর কবির মতো ভাবতে চেষ্টা করোনা, সে ব্যথা বুজবে কি করে?
এইবার ঝিমলি মহোদয়া একটু বিব্রত হলেন।
-যতসব ফালতু ফালতু কথা! আমার কিন্তু একদম ভালো লাগছে না। মুখ সামলে কথা বলবে কিন্তু।
-হ্যাঁ সত্যি বলেছ! তোমার কথাটাই সঠিক।তবে তুমি সবসময় মনে রাখবে আমার দৃষ্টি কিন্তু আমার নাগালের মধ্যেই আছে। আমি নাগালের বাইরে কোনো কিছুই দেখি না এবং জেনে রাখ কোন কিছু যখন নাগালের মধ্যে থাকে তবেই তাকে ভালোবাসা যায়। এই দেখো না তুমি জ্যোৎস্নার সাথে আমি কত কথা বলি।জ্যোৎস্নাকে নিয়ে কত না কল্পনা কত কবিতা লিখেছি। হয়তো বা বেঁচে যদি থাকি আরো কয়েক শত নিশ্চয়ই লিখবো জ্যোৎস্নাকে নিয়ে।
-ধুত্তুর!ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পড়া রেডি করতে হবে তুমি এখানে বসে তোমার জ্যোৎস্নার কথা ভাবতে থাক; আমি নিচে চললুম রান্নাবাড়া সেরে একটু পড়াশোনা করতে হবে।আর তুমি তোমার জ্যোৎস্নাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকো।
-আরে যেওনা! যেওনা! এখানে কত ভালো পরিবেশ প্রকৃতির ভালোবাসা। মনের এই কথাগুলোই তো কবিতা। তুমি এখানে বস অনেক আনন্দ পাবে। পড়াশোনা না হয় করবে একটু পরে তাতে কী আসে যায়?’
-তোমাকে নিয়ে আর ঘর সংসার করা যাবে না। ভালোবাসি তাই আমি কিছু বলি না কিন্তু আর কতক্ষণ এধরনের কথা শুনবো। আমার এইসব জিনিস একদম পছন্দ হয় না। তুমি একজন ভালো মানুষ ভেবে,কিন্তু তাই বলে পাগলামো কিন্তু একদম পোষায় না মনে রাখবে।
-ঠিক বলছো। তবে উঠে পড়লে কেনো? আরে বসো, বসো তুমি যদি না থাকো এই সুন্দর রাত অন্ধকার হয়ে যাবে। জ্যোৎস্না কোথায় হারিয়ে যাবে? জেনে রাখ পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই একজন কবি। তারদের নিজেদের ভেতর এক একটা ফিলসফি থাকে, লোকের চোখে নাই বা হলো কবিতা। এই যে দেখো তোমার মুখের উপর কোকড়ানো চুল গুলো স্বয়ং এক-একটা কবিতা। তাইতো বুঝলে তোমাকেই ভালবেসেছি, তুমি যে জীবন্ত কবিতা আর আমি তোমার জন্যই কবি হলাম। আগে ছিলে, আজো আছো আর বাকি জীবন ও কবিতা হয়েই থাকবে। তবে এমন রাগ করলে লক্ষ্মী মেয়েটি তোমার মুখের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আমি তোমার সব ছলনা কলাকৌশল জানি, কেননা কম হলেও পাঁচ বছর ধরে তোমাকে যে জানি! মেয়েদের বুক ফুটে তো মুখ ফোটে না। বলতে চাও অনেক কিছুই কিন্তু বলতে পারছো না। আচ্ছা বল দেখিনি কি বলতে চাও তুমি? আমি কি এমন কিছু করেছি যাতে তোমার বিরক্তি হয়’।
-বলছি কিচ্ছুই করনি, কিন্তু এ যে তৃতীয় জ্যোৎস্নাকে নিয়ে আসলে তোমার আমার মাঝে সেটাই বা কেমন ভালো করেছো- এটা আমি বুঝতে পারছি না।
-সেই জ্যোৎস্না এটা তো আর কোন প্রেমিকা নয়, সোনা।
-যেমনটা নাকি তুমি জ্যোৎস্নার প্রেমে মুগ্ধ।সকলের জন্য উন্মুক্ত।আমি তো আর তা পারি না।
-না হয় একটু প্রেম করে নিলাম জ্যোৎস্নার সাথে।
-না বলছি সময়টা তো নষ্ট হয়ে গেল। তোমার আমার কথা বাদ পড়ে গেল। আগামী দিন কি করব সেই একটু প্লেন, একটু ভালোবাসার কথা- কিছুই তো আর হচ্ছে না। তুমি শুধু জ্যোৎস্না জ্যোৎস্না বলে পাগল হয়ে আছো। তাই বলি চলি তুমি তোমার জ্যোৎস্না কে নিয়ে থাকো ।আমি রান্নাঘরে ঘষামাজা করি ।
-ও হ্যাঁ তা অবশ্য যেতে পারো। রান্না হলে খেয়ে নেব; তাড়াতাড়ি বেশ আরাম করে ঘুমিয়ে পড়বো। তুমি স্কুলের ল্যাসন প্যান তৈয়ারি করবে তাই না? হ্যাঁ, বলি- তবে আমাকে অবশ্যই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে দুটি কবিতা লিখতে হবে। পত্রিকায় জন্য আমার একটা কবিতা লাগবে। আর তুমি দেখে নেবে; যেটা ভালো মনে করবে সেটা ঠিক পাঠাব।এবার পুজো সংখ্যায় সেই কবিতাটা ছাপবে তাপসের পত্রিকায়। বুঝলে ছেলেটা খুব উৎসাহ। সকলকে সাথে নিয়ে কেমন নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে দিনরাত। একটি সাহিত্য পত্রিকার জন্য দশজনের দশ মত। সকলকে নিয়ে চলা বড় কঠিন কাজ যা সে হামেশাই করে থাকে।
-ঠিক আছে তুমি বস আমি যাচ্ছি; নাকি আসবে আমার সাথে। একটু না হয় হাত লাগাবে কাজে।
-ঠিক আছে আসছি। এখানে বসেই আমার অর্ধেকটা কবিতা হয়ে গেছে। নিচে গিয়ে শুধু কাগজ-কলম নেব আর ঝটপট লিখে নেব। আমি কবিতা লিখে কখনো হতাশ হইনি ।স্বরস্বতী কাছে থকেন- তাই ঝটপট লিখে নিতে পারি।
আবিনাশ মশাই একটা ঝুঁকি দিয়ে উঠে দাড়ালেন। এইবার দুহাতে শীতলপাটি গোল করে সামলে নিলেন।
-চলো! চলো! তাহলে চলো তুমি রান্না করবে আর আমি একটা কবিতা লিখব।
-হ্যাঁ বুঝেছি! কবিতা লিখবে তো বুঝেছি। সেই তোমাকে নিয়েই তো লিখবো।
-আজ পর্যন্ত যা কবিতা লিখেছ কোথাও কি আমার উল্লেখ আছে বলতে পারবে?
- কি বলছো তুমি? আরে আমার জীবনের সব কবিতাই তোমার জন্য। তুমি ছাড়া কি আমি কখনো কোনো কবিতা লিখেছি? এমন কোন ইতিহাসে আছে?
-এই এবার বলছি আমার কিন্তু সত্যি সত্যি রাগ উঠে যাচ্ছে।তুমি জ্যোৎস্না জ্যোৎস্না বলে পাগল হয়েই কবিতা লিখে যাচ্ছো, জ্যোৎস্না তোমাকে ভালোবাসি। তোমার চোখ দুটি খুব সুন্দর নীল সাগরের মত আর কত কি কি? আমি ভাল মেয়ে তাই মুখ বুজে সব সহ্য করি; নতুবা তোমার কবিত্ব কোনদিন গোল্লায় চলে যেত। তোমাকে বলছি, বেশি বাড়াবাড়ি করোনা নতুবা তোমার অবস্থা কিন্তু খারাপ হয়ে যেতে পারে।
-নাগো না তুমি কি যে বলছো? আমি কবিতা লিখি একটা ছবিকে নিয়ে সে কোন মানুষ নয় কোন চাঁদ নয় কোন অঞ্জলি বা সবিতা নয়; সে তো শুধু তুমি তোমার গায়ে চাঁদের সুরভি মেখে দেই তাতে তুমি অনেক অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে উঠো। অঞ্জলি! বোঝ না সে তো পূজার অংশ। তাই তো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে থাকি- হেরিবো তোমারে। লোকে বলে আমি এক সৃজনশীল কবি-সাহিত্যিক। তোমার কি ভালো লাগেনা- আমার ভালো কথা শুনতে?
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ভালো লাগে। তবে-ওই যে ওই মেয়েটা কি ছিল নাম? আড্ডায় এসে সেই তোমার কাছে এসে আদিখ্যেতা করল- এ ধরনের জিনিস আমার কিন্তু একদম পোষায় না।
-সত্যি বলছো। আসলে আমি বলি ব্যপারগুলো এ ধরনের কোনো কিছু নয়। যারা শিল্পী, যারা কবি-সাহিত্যিক সকলের মন অনেক অনেক বড় হয়ে যায় তারা সকলকে আপন বলে মেনে নিতে পারে অতি সহজে। তাই সহজে সকলকে গ্রহণ করে নেয় আপন মনে।এই শস্য-শ্যামলা পৃথিবী তাদের সকলের কাছে সুন্দর আর রহস্য মনে হয়। তোমাকে একটা কথা বলতে হয় -আমরা কবি সাহিত্যিকরা কারো চেহারা বা সৌন্দর্য নিয়ে বেশী মাতামাতি করি না। আমরা কিন্তু একটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে চলার চেষ্টা করি। তোমাদের নাকি অন্য কিছু না বললে হয়না। কেউ সুন্দর, কারো চোখ সুন্দর আরো অন্য কিছু সুন্দর । ঠিক আছে বলো; কিন্তু সমালোচনা নয়।আমার তো মনে হয় এগুলো খুব বিশ্রী ব্যাপার ।এগুলো থেকে বিরত হতে পারলে ভালো হবে, নিজে সুখী হবে।
-আরে রাতের আকাশ কথা বলে; কেউ যেন তোমাকে স্পর্শ করছে তুমি তাকে স্পর্শ করছো। জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসো এই কথাগুলো আসলে কি পাগলামো না। আসলে তুমি স্বামী হওয়ায় আমি কিছু বলছি না, না হয় আমি কিন্তু দেখিয়ে দিতাম কত ধানে কত চাল হয়।
-এই তোমার মাথায় কি যে চলছে আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। তুমি যেন তোমার আমার মাঝে কোন একজন দেবী কে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছ।
-আমি কোন দেবীকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইনা। তুমি দেবীকে নেমন্ত্রণ করে আমাদের মধ্যে নিয়ে আসো। তাই কথাটা না বললে নয় বলেই বলছি- শুধরে যাবে বলে।
-আরে কি বলছ তুমি! বেশ উদ্দীপনা আছে তো! যদি পার সেই উদ্দীপনাকে তুমি লেখালেখির কাজে লাগাও নিশ্চয়ই তুমিও ভালো লিখতে পারবে। আচ্ছা শুনো না তুমি একটু চেষ্টা করে দেখো না দুয়েকটা লিখতে পারো কি? আমিতো আছি হাতে খড়ি দেওয়ার জন্য চিন্তার কিছু নেই।
-হ্যাঁ আমাকে অন্য কোন কিছু দিয়ে প্রমান করতে হবে না। আমি যা করি তাই যথেষ্ট- নিজের জন্য হোক আর সমাজের জন্যই হোক। আমাকে আর পাগলামির উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে না। অন্য কেউ আমাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলুক তা আমি কিন্তু একদম চাইনা।
-ঠিক বলেছ আমিও কিন্তু এই ধরনের কথাগুলো পছন্দ করিনা। একটু সামলে কথা বলবে প্রিয়তমা।আচ্ছা ঠিক আছে নিচে চলো । আমার ছাত্র ছাত্রীদের জন্য চিন্তা হয় রাত পোহালে পরীক্ষা। তাদের কি যেন দায় ছাড়া ভাব, তবে বুঝলে- সব ছাত্রছাত্রীই আমার প্রিয়। তারা সবাই খুব ভালো। তাদের বয়স কম - তবুও শিশুদের ভবিষ্যৎ বানানো এই ম্যাডামদের যে কাজ সেটা তুমি মনে রেখে চলতে পারলেই ভালো।
-আসলে একটা সত্যি কথা যদি বলি তুমি রাগ করবে কি না?
-তুমি মন খুলে সব কিছু বলতে পারো আমাকে।
-আসলে আমি এই তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে একদম মনোযোগ দিতে পারছি না। তুমি কখন কি করো, কোথায় কবিতার আসর? কোথায় কবে আসর এসব নিয়ে তুমি ব্যস্ত। তোমাকে যে ধরনের মানুষ ভেবেছিলাম আসলে তুমি সে ধরনের মানুষ নও! খুব একজন জটিল মানুষ- যাকে আমি বুঝতে পারি না; অন্যরা কিভাবে বুঝবে? সবাই তো বাহিরের প্রলেপ দেখে বলছে খাঁটি সোনা।
-আচ্ছা শুনো-তুমি যে কথা বলছো, এধরনের যদি ভাবতে থাকো তুমিও কখন কবি হয়ে যাবে- আমি নিজেই ভেবে ক্লান্ত হয়ে যাই। এতো কঠিনভাবে ভাববে না; তাতে আমাদের জীবন যে কঠিন হয়ে যেতে পারে তাকে তুমি জানো কি? সবকিছুকে ভালো যদি বলো-ভালো দেখবে। কাউকে দোষারোপ করে খারাপ ভেবে বা চাঁদের বুকে কলঙ্ক খুঁজে কি আর করবে বলো? তাকে তো আর আমরা চাইলেও ঠিক করতে পারব না। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু ভালো আর খারাপ গুণ আছে। ভালো কে মেনে আমরা চলতে চাই দোষ খুঁজে কি লাভ বলতো? তোমার মুখের এক ঝলক হাসি শত দুঃখের চেয়েও দামি আমার কাছে। তাই বলি তুমি হেসে হেসে জীবন কাটাও আর আমাকে হাসিয়ে রাখো। আর আমি তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখে লিখে বড়ো কবি হয়ে যাব। তোমার তখন নিশ্চয়ই ভাল লাগবে! কখনো কখনো আমরা বেড়াতে যাব কবিরহাটে। তুমি সঙ্গে থাকবে- তাই বলছি খুব মজা হবে। তোমার ছাত্রছাত্রীরা তোমাকে কবিতা পত্নী বলে খুবই সম্মান করবে। আর আমি তো শিক্ষিকার স্বামী বুঝলে! আমার জীবনের প্রতিটি নিশ্বাসে যেন প্রকাশিত হবে তোমার রূপ রস গন্ধ সবকিছুর মিশ্রনে একটা জীবন্ত কবিতা। চলো নিচে যাই হাতে হাত রেখে।আর যদি তুমি এবার বলতে পারো-
“জীবন জীবনের জন্য”
তবে আমার উভয়েই উৎসর্গিত সকলের জন্য।
অবিনাশ চৌধুরী যখন কবিতা লেখেন তখন নিজের অজান্তেই তিনি একজন শিল্পী হয়ে ওঠেন। মনের কালি দিয়ে তিনি নানা রঙের ছবি, বৈচিত্র পাহাড় পর্বত প্রেম-ভালোবাসা দেশ-বিদেশ সব কিছুকে আঁকড়ে ধরে ফেলেন। আর এখানেই সুখী সংসারের ভেতর একটা কিন্তু সৃষ্টি হয়ে যায় । এই কিন্তু টাকে বাদ দেওয়া যায় না ; আবার আঁকড়ে ধরাও যায় না।বিশেষ করে শিক্ষিকা বলেই কথা-তাদের একটা আদর্শ নিয়ে চলতে হয়। সমাজের বুকে নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হয়। পাছে সেই মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যাতে না যায় সেই চিন্তাতেই-শিক্ষিকা ঝিমলি আনন্দের মাঝে নিরানন্দের ঝড় তুফান দেখতে পান।
প্রায় প্রতিদিন অবিনাশ আর তার স্ত্রী ঝিমলি নিজেদের বাড়ির ছাদের উপর যখন শীতলপাটি বিছিয়ে গায়ে সুপারি বাগানের হালকা বাতাস লাগাতে লাগাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে নিজেরা রোমাঞ্চিত ও আপ্লুত হয়ে যান। ঠিক সেই মুহুর্তে একটা নিরানন্দ শিক্ষিকাকে ধীরে ধীরে আক্রমণ করে। কারণটা কি বুঝলেন? কোন মানুষ নয় স্নিগ্ধ চাঁদের বুকে কিছু কলঙ্কের কালো দাগ আছে, সেই দাগগুলো দেখা মাত্রই ঝিমলি নিজের সেই কবি পুরুষের মধ্যে কলঙ্কের ছোঁয়া, বা কলঙ্কের কল্পনা করেন। কি যে হলো; কবির ভাব কোথা থেকে কি লিখেন কিছু বুঝে উঠতে পারেন না তিনি। ঝিমলি, অবিনাশ এবং তাদের মধ্যে তৃতীয় ভাবনার অস্তিত্বের পরিষ্কার টের পান ঝিমলি।তিনি নিজের মনে মনে সেই অনাকাক্ষিত তৃতীয় জনের ভাবনায় কখন যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন তাদের দু'জনের কেউই সেটা টের পান না।
অবিনাশ আপন মনে কবিতার ভাষা খুঁজে বের করেন বলেন আমি জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসি ওকে নিয়েই সুন্দর ছবি আঁকি আমার মনের ক্যানভাসে। তারাগুলো ঝিঁকমিক করে আমি তাদের খুব কাছাকাছি। তুমিও কি আমার মতো নক্ষত্র, চাঁদ তারাদের ভালোবাসো? মাঝে মাঝে আমরাও কখনো কখনো নিজেরা নিজেদের খেয়ালে উড়ে যেতে পারি জ্যোৎস্নার দেশে। তাদের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করতে পারি। আর আমরা সেখানে হারিয়ে যেতেও পারি, বলো কি আনন্দ হবে-
‘নিঝুম সন্ধ্যায় ক্লান্ত পাখিরা বুজিবা পথ ভুলে যায়’।
অবিনাশের এই কথাগুলো শুনে ঝিমলির মনে ধীরে ধীরে আরও প্রশ্নের এসে ভিড় জমাতে থাকে।কোনক্রমে রাগ সামলালেন ঝিমলি।
-এখানে তুমি কাকে নিয়ে কি কথা বলছে আমি কিচ্ছু বুঝি না। আমরা দুজন এইতো ছাদের উপর বসে আছি এবার আর জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসার প্রশ্নটা আসল কি করে? নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে?
এবার অবিনাশ বাবু হাসলেন।
- তুমি দেখো জ্যোৎস্না আমাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেও নাকি আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সে আমাকে বার বার তার কাছে ডাকছে; আমরাও যেন সে জ্যোৎস্নার বুকে লুটি পুটি খেতে ইচ্ছে হয়।তুমি তো আর কবির মতো ভাবতে চেষ্টা করোনা, সে ব্যথা বুজবে কি করে?
এইবার ঝিমলি মহোদয়া একটু বিব্রত হলেন।
-যতসব ফালতু ফালতু কথা! আমার কিন্তু একদম ভালো লাগছে না। মুখ সামলে কথা বলবে কিন্তু।
-হ্যাঁ সত্যি বলেছ! তোমার কথাটাই সঠিক।তবে তুমি সবসময় মনে রাখবে আমার দৃষ্টি কিন্তু আমার নাগালের মধ্যেই আছে। আমি নাগালের বাইরে কোনো কিছুই দেখি না এবং জেনে রাখ কোন কিছু যখন নাগালের মধ্যে থাকে তবেই তাকে ভালোবাসা যায়। এই দেখো না তুমি জ্যোৎস্নার সাথে আমি কত কথা বলি।জ্যোৎস্নাকে নিয়ে কত না কল্পনা কত কবিতা লিখেছি। হয়তো বা বেঁচে যদি থাকি আরো কয়েক শত নিশ্চয়ই লিখবো জ্যোৎস্নাকে নিয়ে।
-ধুত্তুর!ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পড়া রেডি করতে হবে তুমি এখানে বসে তোমার জ্যোৎস্নার কথা ভাবতে থাক; আমি নিচে চললুম রান্নাবাড়া সেরে একটু পড়াশোনা করতে হবে।আর তুমি তোমার জ্যোৎস্নাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকো।
-আরে যেওনা! যেওনা! এখানে কত ভালো পরিবেশ প্রকৃতির ভালোবাসা। মনের এই কথাগুলোই তো কবিতা। তুমি এখানে বস অনেক আনন্দ পাবে। পড়াশোনা না হয় করবে একটু পরে তাতে কী আসে যায়?’
-তোমাকে নিয়ে আর ঘর সংসার করা যাবে না। ভালোবাসি তাই আমি কিছু বলি না কিন্তু আর কতক্ষণ এধরনের কথা শুনবো। আমার এইসব জিনিস একদম পছন্দ হয় না। তুমি একজন ভালো মানুষ ভেবে,কিন্তু তাই বলে পাগলামো কিন্তু একদম পোষায় না মনে রাখবে।
-ঠিক বলছো। তবে উঠে পড়লে কেনো? আরে বসো, বসো তুমি যদি না থাকো এই সুন্দর রাত অন্ধকার হয়ে যাবে। জ্যোৎস্না কোথায় হারিয়ে যাবে? জেনে রাখ পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই একজন কবি। তারদের নিজেদের ভেতর এক একটা ফিলসফি থাকে, লোকের চোখে নাই বা হলো কবিতা। এই যে দেখো তোমার মুখের উপর কোকড়ানো চুল গুলো স্বয়ং এক-একটা কবিতা। তাইতো বুঝলে তোমাকেই ভালবেসেছি, তুমি যে জীবন্ত কবিতা আর আমি তোমার জন্যই কবি হলাম। আগে ছিলে, আজো আছো আর বাকি জীবন ও কবিতা হয়েই থাকবে। তবে এমন রাগ করলে লক্ষ্মী মেয়েটি তোমার মুখের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আমি তোমার সব ছলনা কলাকৌশল জানি, কেননা কম হলেও পাঁচ বছর ধরে তোমাকে যে জানি! মেয়েদের বুক ফুটে তো মুখ ফোটে না। বলতে চাও অনেক কিছুই কিন্তু বলতে পারছো না। আচ্ছা বল দেখিনি কি বলতে চাও তুমি? আমি কি এমন কিছু করেছি যাতে তোমার বিরক্তি হয়’।
-বলছি কিচ্ছুই করনি, কিন্তু এ যে তৃতীয় জ্যোৎস্নাকে নিয়ে আসলে তোমার আমার মাঝে সেটাই বা কেমন ভালো করেছো- এটা আমি বুঝতে পারছি না।
-সেই জ্যোৎস্না এটা তো আর কোন প্রেমিকা নয়, সোনা।
-যেমনটা নাকি তুমি জ্যোৎস্নার প্রেমে মুগ্ধ।সকলের জন্য উন্মুক্ত।আমি তো আর তা পারি না।
-না হয় একটু প্রেম করে নিলাম জ্যোৎস্নার সাথে।
-না বলছি সময়টা তো নষ্ট হয়ে গেল। তোমার আমার কথা বাদ পড়ে গেল। আগামী দিন কি করব সেই একটু প্লেন, একটু ভালোবাসার কথা- কিছুই তো আর হচ্ছে না। তুমি শুধু জ্যোৎস্না জ্যোৎস্না বলে পাগল হয়ে আছো। তাই বলি চলি তুমি তোমার জ্যোৎস্না কে নিয়ে থাকো ।আমি রান্নাঘরে ঘষামাজা করি ।
-ও হ্যাঁ তা অবশ্য যেতে পারো। রান্না হলে খেয়ে নেব; তাড়াতাড়ি বেশ আরাম করে ঘুমিয়ে পড়বো। তুমি স্কুলের ল্যাসন প্যান তৈয়ারি করবে তাই না? হ্যাঁ, বলি- তবে আমাকে অবশ্যই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে দুটি কবিতা লিখতে হবে। পত্রিকায় জন্য আমার একটা কবিতা লাগবে। আর তুমি দেখে নেবে; যেটা ভালো মনে করবে সেটা ঠিক পাঠাব।এবার পুজো সংখ্যায় সেই কবিতাটা ছাপবে তাপসের পত্রিকায়। বুঝলে ছেলেটা খুব উৎসাহ। সকলকে সাথে নিয়ে কেমন নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে দিনরাত। একটি সাহিত্য পত্রিকার জন্য দশজনের দশ মত। সকলকে নিয়ে চলা বড় কঠিন কাজ যা সে হামেশাই করে থাকে।
-ঠিক আছে তুমি বস আমি যাচ্ছি; নাকি আসবে আমার সাথে। একটু না হয় হাত লাগাবে কাজে।
-ঠিক আছে আসছি। এখানে বসেই আমার অর্ধেকটা কবিতা হয়ে গেছে। নিচে গিয়ে শুধু কাগজ-কলম নেব আর ঝটপট লিখে নেব। আমি কবিতা লিখে কখনো হতাশ হইনি ।স্বরস্বতী কাছে থকেন- তাই ঝটপট লিখে নিতে পারি।
আবিনাশ মশাই একটা ঝুঁকি দিয়ে উঠে দাড়ালেন। এইবার দুহাতে শীতলপাটি গোল করে সামলে নিলেন।
-চলো! চলো! তাহলে চলো তুমি রান্না করবে আর আমি একটা কবিতা লিখব।
-হ্যাঁ বুঝেছি! কবিতা লিখবে তো বুঝেছি। সেই তোমাকে নিয়েই তো লিখবো।
-আজ পর্যন্ত যা কবিতা লিখেছ কোথাও কি আমার উল্লেখ আছে বলতে পারবে?
- কি বলছো তুমি? আরে আমার জীবনের সব কবিতাই তোমার জন্য। তুমি ছাড়া কি আমি কখনো কোনো কবিতা লিখেছি? এমন কোন ইতিহাসে আছে?
-এই এবার বলছি আমার কিন্তু সত্যি সত্যি রাগ উঠে যাচ্ছে।তুমি জ্যোৎস্না জ্যোৎস্না বলে পাগল হয়েই কবিতা লিখে যাচ্ছো, জ্যোৎস্না তোমাকে ভালোবাসি। তোমার চোখ দুটি খুব সুন্দর নীল সাগরের মত আর কত কি কি? আমি ভাল মেয়ে তাই মুখ বুজে সব সহ্য করি; নতুবা তোমার কবিত্ব কোনদিন গোল্লায় চলে যেত। তোমাকে বলছি, বেশি বাড়াবাড়ি করোনা নতুবা তোমার অবস্থা কিন্তু খারাপ হয়ে যেতে পারে।
-নাগো না তুমি কি যে বলছো? আমি কবিতা লিখি একটা ছবিকে নিয়ে সে কোন মানুষ নয় কোন চাঁদ নয় কোন অঞ্জলি বা সবিতা নয়; সে তো শুধু তুমি তোমার গায়ে চাঁদের সুরভি মেখে দেই তাতে তুমি অনেক অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে উঠো। অঞ্জলি! বোঝ না সে তো পূজার অংশ। তাই তো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে থাকি- হেরিবো তোমারে। লোকে বলে আমি এক সৃজনশীল কবি-সাহিত্যিক। তোমার কি ভালো লাগেনা- আমার ভালো কথা শুনতে?
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ভালো লাগে। তবে-ওই যে ওই মেয়েটা কি ছিল নাম? আড্ডায় এসে সেই তোমার কাছে এসে আদিখ্যেতা করল- এ ধরনের জিনিস আমার কিন্তু একদম পোষায় না।
-সত্যি বলছো। আসলে আমি বলি ব্যপারগুলো এ ধরনের কোনো কিছু নয়। যারা শিল্পী, যারা কবি-সাহিত্যিক সকলের মন অনেক অনেক বড় হয়ে যায় তারা সকলকে আপন বলে মেনে নিতে পারে অতি সহজে। তাই সহজে সকলকে গ্রহণ করে নেয় আপন মনে।এই শস্য-শ্যামলা পৃথিবী তাদের সকলের কাছে সুন্দর আর রহস্য মনে হয়। তোমাকে একটা কথা বলতে হয় -আমরা কবি সাহিত্যিকরা কারো চেহারা বা সৌন্দর্য নিয়ে বেশী মাতামাতি করি না। আমরা কিন্তু একটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে চলার চেষ্টা করি। তোমাদের নাকি অন্য কিছু না বললে হয়না। কেউ সুন্দর, কারো চোখ সুন্দর আরো অন্য কিছু সুন্দর । ঠিক আছে বলো; কিন্তু সমালোচনা নয়।আমার তো মনে হয় এগুলো খুব বিশ্রী ব্যাপার ।এগুলো থেকে বিরত হতে পারলে ভালো হবে, নিজে সুখী হবে।
-আরে রাতের আকাশ কথা বলে; কেউ যেন তোমাকে স্পর্শ করছে তুমি তাকে স্পর্শ করছো। জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসো এই কথাগুলো আসলে কি পাগলামো না। আসলে তুমি স্বামী হওয়ায় আমি কিছু বলছি না, না হয় আমি কিন্তু দেখিয়ে দিতাম কত ধানে কত চাল হয়।
-এই তোমার মাথায় কি যে চলছে আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। তুমি যেন তোমার আমার মাঝে কোন একজন দেবী কে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছ।
-আমি কোন দেবীকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইনা। তুমি দেবীকে নেমন্ত্রণ করে আমাদের মধ্যে নিয়ে আসো। তাই কথাটা না বললে নয় বলেই বলছি- শুধরে যাবে বলে।
-আরে কি বলছ তুমি! বেশ উদ্দীপনা আছে তো! যদি পার সেই উদ্দীপনাকে তুমি লেখালেখির কাজে লাগাও নিশ্চয়ই তুমিও ভালো লিখতে পারবে। আচ্ছা শুনো না তুমি একটু চেষ্টা করে দেখো না দুয়েকটা লিখতে পারো কি? আমিতো আছি হাতে খড়ি দেওয়ার জন্য চিন্তার কিছু নেই।
-হ্যাঁ আমাকে অন্য কোন কিছু দিয়ে প্রমান করতে হবে না। আমি যা করি তাই যথেষ্ট- নিজের জন্য হোক আর সমাজের জন্যই হোক। আমাকে আর পাগলামির উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে না। অন্য কেউ আমাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলুক তা আমি কিন্তু একদম চাইনা।
-ঠিক বলেছ আমিও কিন্তু এই ধরনের কথাগুলো পছন্দ করিনা। একটু সামলে কথা বলবে প্রিয়তমা।আচ্ছা ঠিক আছে নিচে চলো । আমার ছাত্র ছাত্রীদের জন্য চিন্তা হয় রাত পোহালে পরীক্ষা। তাদের কি যেন দায় ছাড়া ভাব, তবে বুঝলে- সব ছাত্রছাত্রীই আমার প্রিয়। তারা সবাই খুব ভালো। তাদের বয়স কম - তবুও শিশুদের ভবিষ্যৎ বানানো এই ম্যাডামদের যে কাজ সেটা তুমি মনে রেখে চলতে পারলেই ভালো।
-আসলে একটা সত্যি কথা যদি বলি তুমি রাগ করবে কি না?
-তুমি মন খুলে সব কিছু বলতে পারো আমাকে।
-আসলে আমি এই তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে একদম মনোযোগ দিতে পারছি না। তুমি কখন কি করো, কোথায় কবিতার আসর? কোথায় কবে আসর এসব নিয়ে তুমি ব্যস্ত। তোমাকে যে ধরনের মানুষ ভেবেছিলাম আসলে তুমি সে ধরনের মানুষ নও! খুব একজন জটিল মানুষ- যাকে আমি বুঝতে পারি না; অন্যরা কিভাবে বুঝবে? সবাই তো বাহিরের প্রলেপ দেখে বলছে খাঁটি সোনা।
-আচ্ছা শুনো-তুমি যে কথা বলছো, এধরনের যদি ভাবতে থাকো তুমিও কখন কবি হয়ে যাবে- আমি নিজেই ভেবে ক্লান্ত হয়ে যাই। এতো কঠিনভাবে ভাববে না; তাতে আমাদের জীবন যে কঠিন হয়ে যেতে পারে তাকে তুমি জানো কি? সবকিছুকে ভালো যদি বলো-ভালো দেখবে। কাউকে দোষারোপ করে খারাপ ভেবে বা চাঁদের বুকে কলঙ্ক খুঁজে কি আর করবে বলো? তাকে তো আর আমরা চাইলেও ঠিক করতে পারব না। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু ভালো আর খারাপ গুণ আছে। ভালো কে মেনে আমরা চলতে চাই দোষ খুঁজে কি লাভ বলতো? তোমার মুখের এক ঝলক হাসি শত দুঃখের চেয়েও দামি আমার কাছে। তাই বলি তুমি হেসে হেসে জীবন কাটাও আর আমাকে হাসিয়ে রাখো। আর আমি তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখে লিখে বড়ো কবি হয়ে যাব। তোমার তখন নিশ্চয়ই ভাল লাগবে! কখনো কখনো আমরা বেড়াতে যাব কবিরহাটে। তুমি সঙ্গে থাকবে- তাই বলছি খুব মজা হবে। তোমার ছাত্রছাত্রীরা তোমাকে কবিতা পত্নী বলে খুবই সম্মান করবে। আর আমি তো শিক্ষিকার স্বামী বুঝলে! আমার জীবনের প্রতিটি নিশ্বাসে যেন প্রকাশিত হবে তোমার রূপ রস গন্ধ সবকিছুর মিশ্রনে একটা জীবন্ত কবিতা। চলো নিচে যাই হাতে হাত রেখে।আর যদি তুমি এবার বলতে পারো-
“জীবন জীবনের জন্য”
তবে আমার উভয়েই উৎসর্গিত সকলের জন্য।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ১৫/০৯/২০২২Excellent written