www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দিবসের অপেক্ষা

তখন খুব ভোর।ছেলেমেয়েরা এখনও ঘুম থেকে উঠেনি।জাহিদ মিয়ার ঘুম হয়নি।রাতে রিক্সা চালিয়ে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।এখন একটু ঘুমুচ্ছে।একটু পরে ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে মক্তবে পড়তে যাবে।তাদের চেঁচামেচিতে জাহিদ মিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।হাতমুখ ধুয়ে পান্তাভাত খেতে বসে।তার স্ত্রী ভাত নিয়ে আসল।ভাত খেতে খেতে চিন্তা করছে তার বড় ছেলে আরিফকে নিয়ে।সে নিজে রিক্সা চালিয়ে টাকা কামিয়ে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছে।আর সে কিনা পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরছে।রাজনীতি ,মারপিট করছে।দলের সবার সাথে মিশে মদ-গাঁজা সেবন করছে।জাহিদ মিয়ার কত স্বপ্ন ছিল তার ছেলেটা মানুষ হবে।অন্তত,তাদের মেহনতের টাকাটা কাজে লাগবে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।জাহিদ মিয়া পরিবার নিয়ে বস্তিতে থাকে।মনে করেছিলো বস্তির সবার মাঝে তার ছেলেটা অনন্য হবে।সে গর্ববোধ করবে।কিন্তু আজ সেই বস্তিওয়ালাদের সামনে মাথা নিচু করে চলতে হয়।কখনো নিজে না খেয়ে ছেলের জন্য টাকা পাঠায়।পুরো পরিবার উপোস থাকে।ছোট্র মেয়ে জেরিন এসে বলে।আব্বা,আইজকা ভাত খামুনা?আইচ্ছা দরকার নাই বড় ভাইয়া তো কয়দিন পর আমগো লাগি অনেক কিছু আনব।তখন পেটভরে ভাত খামু।''তখন আর কোনো অভাব থাকবেনা।রাতদিন পরিশ্রম করে জাহিদ মিয়া।কিন্তু ছেলে আরও বিপথে যাচ্ছে।তারপর একদিন হঠাত ছেলে বাড়ীতে এলো।কারো সাথে কোনো কথা নেই।পরদিন আবার চলে গেল।পরদিন সন্ধ্যাবেলা সবেমাত্র রিক্সা চালানো থেকে এসে ভাত খেতে বসেছে জাহিদ মিয়া।তখন পুলিশ আসে।বাড়ীর তল্লাশি নেয়।এবং জাহিদ মিয়ার খাটের নিচ থেকে ধারালো চাকু পায়।তাকে ভাত খেতে না দিয়েই গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।বিশিষ্ট একজন রাজনৈতিক নেতাকে খুনের দায়ে তাকে কারাবন্দি করা হয়।জাহিদ মিয়া জানে তার ছেলেই এই খুনটা করেছে এবং তার খাটের নিচে চাকুটা রেখে গেছে।সেই পুলিশকে ইনফর্ম করেছে।দু চোখ বেয়ে ঝরঝর করে অশ্রু পড়তে লাগলো জাহিদ মিয়ার।না খেয়ে না পরে সারাদিন উপোস থেকে যাকে খাইয়েছেন সে কিনা!সবচে বেশী কষ্টটা হয় জেরিনের জন্য।বেচারী ছোট মানুষ।এখন বাবা নাই কে খাওয়াবে।কিন্তু আশায় আছে বড় ভাইয়া একদিন বড় হবে।সে পেট ভরে ভাত খেতে পারবে!সেটা চিন্তা করতেই তার খুশি লাগে।অথচ এই খুন করার জন্য আরিফ ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে।এখন বিয়ে শাদী করে শেষ।একটিবারের জন্য তার পরিবারের কথা চিন্তা করেনি।জাহিদ মিয়া রিক্সাটা বিক্রি করে কয়েক বছর জেল খেটে জামিনে রেহাই পান।ততদিনে দিন বদলে গিয়েছে।মা-মেয়ে না খেতে পেয়ে এখন ভিক্ষে করে।এভাবে আর কতদিন।শেষমেষ মারা যায় জাহিদ মিয়া।বুকের ভেতরে তার অজস্র কষ্ট ছিল।সেই কষ্টটা মৃত্যুর আগে মুছতে পারেনি।তবে বাবার ফরজ আদায় করেছে এটাই তার শান্তি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৫৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৩/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আজকের এই পরিস্থিতিতে পরে ছেলে মেয়ে গুলো নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ছে। ওদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। ভালো থাকবেন।
  • ভালো হয়েছে।
  • গাজী তারেক আজিজ ২৬/০৩/২০২০
    ভালো বয়ান
  • সত্য ঘটনা না কল্পনা?
  • রেজাউল ইসলাম ২৩/০৩/২০২০
    ভালো গল্প
  • একনিষ্ঠ অনুগত ২৩/০৩/২০২০
    কত স্বপ্ন আর আশাই থাকে বাবা মায়ের। পরিবেশ আর সঙ্গদোষে নষ্ট হওয়া সন্তান কি আর তা বুঝবে।
  • ফয়জুল মহী ২৩/০৩/২০২০
    । সুকোমল ভাবনার অনন্যসাধারণ  লেখা
 
Quantcast