সিঁথি
অসাবধান হয়ে পথে হাঁটা খুবই বিস্ময়কর । বিশেষ করে মুখরিত এবং যানবাহন যে রাস্তায় অধিক চলাচল করে সে রাস্তায় । ঘুমের চোটে একবার এদিকে যাবেন আরেকবার ওদিকে । কখন দ্রুতগতির একটা রিকশা আপনাকে উড়িয়ে দিবে টের পাবেন না । আর আপনি যদি ফুটপাথে ঘুমানো কেউ হন আর যদি রিক্সাওয়ালা খিটখিটে মেজাজের হয় তবে রিক্সা আপনার উপর দিয়ে চালিয়ে দিবে কোনো পরোয়া করবেনা । কেননা , সে এদিকে পায়ের ব্যথায় ছটফট করছে আর আপনি দিব্যি নাক ডাকিয়ে ফুটপাথে ঘুমাচ্ছেন । পাশে লিখে রেখেছেন
'' একটু করুন খেয়াল
মানবতার দেয়াল
আপনার অব্যবহৃত পোশাকগুলো এখানে রেখে যান।
আরও কয়েকদিন আমরাও পোশাক পরি । ''
সেখানে দারুণ সাড়া পেয়েছেন । আর হাত -পা ছেড়ে এমনভাবে ঘুমিয়েছেন যে মনে হচ্ছে পৃথীবিটা আপনার । তাই জ্যামের মধ্যে ফুটপাথ দিয়ে রিকশা উঠিয়ে আপনার উপর দিয়ে আরামসে চালাবে । আপনি হয়তো ধড়মড়িয়ে উঠে গাল পাড়লেন । সেই রিক্সাওয়ালা রিকশা থামিয়ে আসার আগেই আপনার উপর দিয়ে আরেকখানা পংখীরাজা রিকশা ডিঙিয়ে যাবে । তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুম থেকে উঠে নিরাপদে সরে যান ।
সেদিন রাত ৮.০০ টা হয়েছে মাত্র । হিসাব করে বেরিয়েছিলাম পকেটে ২৫ টাকা আ্ছে । ভাড়া ,১৫ টাকা আম্বরখানা আর ১০ টাকা টিলাগড় । এতেই বাসায় ফিরতে পারব । মাঝখানে পান আর সিগারেট খেয়ে বাকী টাকা উড়িয়ে দিয়েছি ।
আম্বরখানায় নেমে পকেট থেকে ২৫ টাকা বের করলাম । ১৫ টাকা দিয়েই ১০ টাকা হাত থেকে খসে হাওয়ায় উড়ে গেল । সি এন জি চালিত অটোরিক্সার উপর তলা সব দেখলাম । ১০ টাকা নেই হাওয়া হয়ে গেছে ।
অগত্যা হাঁটা শুরু করলাম । প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে হবে । শুনেছি রাত্রের পথ সংকুচিত । কিন্তু আমার হাঁটা যেন আর ফুরোয়না । চলছি, চলছি । পিছনে একটা স্কুলব্যাগ । মাঝে মাঝে চশমার ভেতর ভালো করে চেয়ে দেখলাম , বিভিন্ন স্টেশনে দু-একজন ভূঁরু কুঁচকে আমাকে দেখছে । রাতে হেঁটে যেতে হলে সতর্ক থাকতে হয় বিশেষ করে আকাশহীন শহরে । আমি তো হাঁটছি । আঙুল ফুলে উঠছে । চশমাটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে কপালের ঘামে । শেষে এম সি কলেজ মাঠ পেরিয়ে পা দিয়েছি নির্জন একটিএলাকায় । আরও এক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হবে ।
এখানে গাড়ি আসছে যাচ্ছে একটা দুটো । বেশ সুনসান এলাকা । রাস্তার পাশ দিয়ে ফুটপাথের উপর দিয়ে হাঁটতেছি । হঠাৎ পাশ ফিরে তাকাতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম । একজন গরীব লোক হাত-পা ছড়িয়ে ভূতের মতো শুয়ে আছে । নীরবে শু্য়ে আছে নাক ডাকাডাকি নেই । আচমকা ওর শোয়া দেখে ভয় পেয়ে যাই । আর পাশে তাকাতেই অন্তরাত্না খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে দৌড় দিতে চাইল । পাশেই আরেকটা লোক নিথর , গলায় অস্পষ্ট লাল রক্ত জমাট বেঁধে আছে । গলার মাঝখান হাঁ করা । ২ ঘন্টা আগে খুন হয়েছে মনে হয় । আমি পড়লাম বিপদে । এখন কি করি । এরকম কত মানুষ হাজারে হাজারে মরছে । কেউ খোঁজ রাখেনা । এই লোকটাকে মারল কে , কাছে গিয়ে উবু হয়ে দেখি নি:শ্বাস নেই । পা এমনিতেই অবশ । তার মাঝে এখানে একটা ফুটপাথের বাসিন্দা খুন । মানবতার দেয়াল ভেঙে পড়ল । আমি কেটে পড়তে লাগলাম । হয়তো এরা দুজনেই পাগল । একজন আরেক জনকে খুন করে দিব্যি ঘুমাচ্ছে । তাদের আসামী বানাবে কে ? উদ্বাস্তুদের কোনো কেস নেই । তাদের শুধু পেশিশক্তির জোর । অবশেষে আমি পা বাড়াতে লাগলাম । রাত বিরাতে এদিকে পুলিশ টহল দেয় । কখন না জানি এসে আমার সামনে হুংকার ছাড়ে যে আমি খুন করেছি তাঁকে । অবশেষে কিছুটা জোরে হাঁটা শুরু করলাম ।
আমার বাবা বিখ্যাত না হলেও কিছুটা জনপ্রিয় কবি । ঘরে উনার জায়গা নাই । উনার জায়গা হলো সারা পৃথিবীময় । কবিরা কিছু পাগলা টাইপের । শাহীনূর মুস্তাফিজ নামের এক কবির সাথে আমার খাতির আ্ছে । আত্নমগ্ন এক কবি । বাড়িতে কখন আসে কখন যায় কেউ টের পায়না । কোথায় থাকে কেউ খুঁজে পায়না । শহরে একটা ভালো কলেজে পড়াশোনা করলেও মন তাঁর কবি হওয়ার ইচ্ছা । তার সাথে মাঝে মাঝে সাক্ষাৎ হয় । আমার সাথে দু এক কথা বলে কেটে পড়ে । যেন আমি তাকে মারব এমন ভাব করে ।
আমার বাবাও কম নন । উনি সাধারণত ফুটপাথে থাকেন । নতুবা আত্নীয় কারো বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন । আমার মা কখনো বাবাকে ঘরে জায়গা দেননা। সারারাত বসে হিন্দি গান শুনেন আর হঠাৎ দু'একটা প্রেমের কবিতা বলেন । ভাইবোন কেউ ঘুমাতে পারেনা ।
আমি বাসায় এসে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লাম । একে তো এতো পথ হাঁটতে হয়েছে । তার মাঝে ঐ গলাকাটা লাশটা এখনো চোখের সামনে ভাসছে ।
পরদিন মা হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে আসলেন , তোর বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা । সবার কাছে ফোন করেছি আত্নীয়স্বজন ফুটপাথের নিয়মিত বাসিন্দাদের কেউ কিচ্ছু বলতে পারেনা । বাড়ীতে না আসলেও প্রতিদিন ভোরে তো ফোন করে আজ ফোন সুইচড অফ বলছে । কোথায় গেছে আল্লাই জানে । এই আবুল তোর বাপের কি্ছু হয়নি তো । আমি বললাম . না মা কি হবে হয়তো কোথাও আছে । ''
আছে মানে কি তোর মনে নেই যেদিন থেকে ঘর থেকে বের হয়েছিলো প্রতিদিন ফজরের নামাজের সময় ফারিহার খবর নিত । মোবাইলে চার্জ বা টাকা না থাকলেও অন্য কারোর টা দিয়ে ফোন দিত আজ এরকম কেন হবে । এখন ১০ টা হয়ে গে্ছে কোনো খোঁজ নাই । এতদিন ফোন করতে মিস করেনি একটা দিনও না তাহলে আজ কি হলো নিশ্চয় কোনো বিপদে পড়েছে । আর কেউ তার সম্বন্ধে কিছু বলতে পারছেনা । আবুল তোর বাপের কিছু একটা হয়েছে । কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন মা ।
অগত্যা আমি বেরিয়ে পড়লাম । সেই ফুটপাথে গেলাম । রাঁতের আঁধারে চেনা মুশকিল ছিল ।
সেখানে লাশটাও পেলাম না । সেই উন্মাদ , কাঁথা মুড়ি দেয়া লোকটাকেও পেলাম না । আমার বাবা অবশ্য খুন হননি । আমার মনে হোঁচট লাগল । যে লোকটার গলা দুঁ ফাঁক করা দেখেছিলাম সে লোকটা আমার বাবা নন । তাহলে পাশের লোকটা হয়তো হতে পারে । তাহলে বাবাই কি লোকটাকে খুন করলেন ।
পত্রিকায় নিউজ দিলাম । পত্রিকা অফিসে নিউজ দেয়ার আগে দেখলাম আরেকজন কেঁদেকুটে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে । প্রাবন্ধিক বজলুর রশিদকে পাওয়া যাচ্ছেনা । ওদিকে আমার বাবাকেও না । তাহলে এই দুজন কি সেই রাতে ওখানে ছিল । আমার বাবা কি খুন করেছেন প্রাবন্ধিক বজলুর রশিদকে ! বড়ই বেখাপ্পা জিনিসটা ।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দুইদিন পরে জানা গেল বজলুর রশিদের লাশ পুলিশ সুরমা নদী থেকে উদ্ধার করেছে । তদন্ত শেষে আমার বাবাই খুনি প্রমাণিত হলেন ।
মাকে বিষয়টা জানালাম না । বাবা ফোন করেছেন চারদিন পর ।
'' কে আবুল ? শোন , আমি মারাত্নক একটা কাজ করে ফেলেছি । তোরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলি কেন ? আমিতো আছি , সরি নাই । পুলিশ আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে । তোদের জেলে যেতে হতে পারে । যতটুকু পারিস বলবি , বাবা আমাদের সাথে অনেকদিন হলো থাকেননা । আমরা কিছু জানিনা ।
আমার জন্য তোদের জেলে যেতে দিতে চাইনা । শেষ পর্যন্ত বলবি , লামাবাজার এলাকায় আমি থাকি । ওখান থেকে আমাকে গ্রেফ্তার করতে । সত্যিই আমি ওখানে থাকি । পুলিশের সাথে আমার কিছু কথা আছে । আচ্ছা ভালো থাকিস , ফোন রাখি । ''
দিন কয়েক পরে পুলিশ আসল বাসায় । জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল ।
'' আপনার বাবা কোথায় ?
'' আমি জানিনা ''
'' কেন জাননা?
'' উনি একজন উদ্বাস্তু কবি । ''
'' ১৮ তারিখ রাত্রে উনি কোথায় ছিলেন ? ''
'' জানিনা ''
পুলিশ সাহেব গর্জে উঠলেন , '' কিছুই জাননা । লালঘরে নিয়ে ধোলাই দিলে হড়হড় করে সব বের হয়ে আসবে । ''
অবশেষে আমি জেলে গেলাম । একদিনের রিমান্ডে আমি সব ধীরে সুস্থে ওসি সাহেবকে বলে দিলাম । লামাবাজার থেকে বাবাকে ধরে আনা হলো । আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো ।
কয়েকদিন পর আমি মনমরা হয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছি । হঠাৎ দেখি হাতে দুইটা ব্যাগ নিয়ে বাবা ঘরের দিকে আসছেন । আমি হতচকিত হই এ কি !
কয়েকদিন জেলে গিয়েছিলাম বাবাকে দেখার জন্য । শুনেছি প্রাবন্ধিক বজলুর রশিদকে খুনের দায়ে বাবাকে যাবজ্জীবন অথবা ফাঁসি হতে পারে । শুনে তো মা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন । এই প্রথম বাবার জন্য মাকে কাঁদতে দেখলাম ।
এখন দেখি বাবা ফিরে আসছেন ।
এসেই বললেন , '' আবুল তোর মাকে বল ভাত দিতে । ''
বাবা ভাত খেতে খেতে বললেন ,
'' আসলে আমি ওকে খুন করিনি । দিন চারেক আগে ওকে একটা বিষয় নিয়ে চাকু দিয়ে আঘাত করেছিলাম । পেটে আঘাত করেছিলাম ।পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই । ডাক্তার ওকে সেলাই দেয় । সে ভালো হয়ে যায় । দুজনের বন্ধুত্ব আবার শুরু হয় । দুজন ফুটপাথে আরাম করে ঘুমাই । ঐ খুনটা আসলে ডাক্তারটা করেছিল । ঐ ডাক্তারকে দেখার পর আমি হতবাক । ও আমাদের পুরনো শত্রু । কয়েক বছর আগে তার খারাপ কর্মকান্ড আর মেডিকেল ভাঁওতাবাজি নিয়ে রশিদ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখে । তারপর থেকে তার নিন্দা ( ডাক্তারের ) শুরু হয় । সে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয় । অনেক ভালো পদে ছিল সে । পরে ক্ষমা টমা চেয়ে আবার জয়েন করে । কিন্তু সেই জেদ তাঁকে চেপে আছে ।
রশিদকে নিয়ে যখন মেডিকেলে গেলাম । তখন সেখানেই তাঁকে মেরে ফেলতে চাইছিলো । কিন্তু আমি সামনে থাকায় মারতে পারেনি । ভালোই ট্রিটমেন্ট দেয় । পরে আমরা কোথায় থাকি , কি করি সব খবরাখবর নেয় ।
ঐদিন রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রশীদকে সে খুন করে আর আমার উপর ফাঁসিয়ে যায় । আমি এমনিতেই পাগল । কি করব ভেবে পাচ্ছিনা , পরে লাশটাকে নদীতে ফেলে দেই । লুকিয়ে যাই আমি । পরে পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় । আমি বললাম , '' ঐ ডাক্তারকে ধরুন । ওই সব করেছে ।
ডাক্তার প্রথমে স্বীকার করতে চায়না ।
পরে আমি একটা খেলা খেললাম ।
বললাম , '' দেখুন পুলিশ সাহেব , উনি অস্বীকার করতেছেন । তাহলে ডাক্তার সাহেব বলুন , '' রশিদকে মেডিকেলে কেন খুন করতে চাইছিলেন ?
'' আমি কেন খুন করতে যাব । আমি একজন সমাজ সেবক ''
'' আপনার নোংরা সমাজসেবা নিয়ে রশিদ একটা প্রবন্ধ লিখেছিল । যার দরুণ আপনার চাকরি চলে গিয়েছিল । এটার জন্য নয় কি ! ''
'' আপনার বন্ধু লিখেছে । তো আমি কি করব এখানে ।''
'' আপনি এর জেদ ধরে তাকে খুন করেছেন । ''
'' অসম্ভব আমি এটা কোনোভাবেই করিনি ।''
তাহলে পুলিশ স্যার , শুনে রাখুন আপনারা যে লাশ পেয়েছেন তা রশীদের নয় । অন্য কারো লাশ । রশিদ এইরকম ভন্ডদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য এখনো বেঁচে আছে । আপনারা ভালো করে তদন্ত করুন । সে হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে । ফোন দিবে নিশ্চয় ।
পুলিশ অফিসার দুইদিন পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে আসলেন । বললেন , '' লোকটা বজলুর রশিদ নয় অন্য কেউ । ( এটা আমার বুদ্ধিতেই করেছেন পুলিশ অফিসার )
এই দুইদিন ডাক্তার সাহেব ও আমি জেলেই ছিলাম । খবরটা শুনার পর ডাক্তার সাহেবের মুখ দেখলাম কেমন শুকিয়ে গেছে । অফিসার সাহেব উনাকে চলে যেতে বললেন ।
উনি চলে যেতে চাইছিলেন । পিছনে ফিরে বললেন , '' পত্রিকায় দেখলাম বজলুর রশীদ লেখা আছে । ''
অফিসার সাহেব বললেন , '' এটা ভূল । আসলে ওরা দুইজন একসাথে থাকত । তাই মনে করা হয়েছে রশিদ । ''
ডাক্তার সাহেব বললেন , '' ও আচ্ছা , তবে গলা তো দেখলাম ভালো করে কাটা । তারপরও বজলুর রশীদ মরেন নি । না .... ব্যাপারটা কেমন মিলছেনা । ''
পুলিশ অফিসারের কান ততক্ষণে সচকিত হয়ে গেছে । তিনি থাবড়া মেরে ডাক্তারকে ধরলেন । '' এই শালা , পত্রিকায় তো আমরা এরকম কোনো ছবি ছাপিনি । বজলুর রশিদের কোর্ট টাই পরা ছবি ছেপেছি । তাহলে তুই দেখলি কেমন করে গলা কাটা ।''
'' আজ্ঞে আমি জেনেছি ''
'' কোথা থেকে জেনেছিস ? ''
'' লোকে বলাবলি করছিল ''
লোকেরা কি বলছিল
'' বলছিল বজলুর রশিদের গলাকাটা পুলিশ উদ্ধার করেছে ।''
'' তাহলে তুই যে বললি , গলা দেখলাম ভালো করে কাটা । তার মানে ভালো করে গলাটা তুই ই কেটেছিস । আর এখন ভাবছিস রশিদকে খুন করতে গিয়ে অন্য কাকে খুন করে ফেললাম । তোর লক্ষ্য তো ছিল রশিদ । এখন বলছিস পত্রিকায় তার নাম দেখেছিস , গলা ভালো করে কাটা । রশীদের মৃত্যু ব্যাপারটা সম্বন্ধে তুই কেন নিশ্চিত হতে চাইছিস । তাই বারবার বলছিস দেখলাম রশিদ , শুনলাম রশীদ আর এখন ময়নাতদন্ত বলে রশিদ নয় । তাহলে তোর লস হয়ে গেল না ? বুলেটটা লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছায়নি তাহলে । রশিদ আবার তোর সম্বন্ধে প্রবন্ধ লেখবে । তাঁকে শেষ করতে পারলি না ।
তবে তোর উদ্দেশ্য আমরা পুরা করমু । হাজতে ঢুক শালা , সব স্বীকার করবি ।
ডাক্তার সাহেব বললেন , '' আজ্ঞে আমিই খুন করেছি ।''
তারপর লালঘরে ঢুকিয়ে সে যে কেমন ডান্ডা পিটালেন ওসি সাহেব । হাড্ডিগুলো মনে হয় গুঁড়া করে ফেলেছে ।
আর তোর বাবা বেঁচে গেলেন । রশিদের জন্য এখনও অনেক কষ্ট হয় ।
'' একটু করুন খেয়াল
মানবতার দেয়াল
আপনার অব্যবহৃত পোশাকগুলো এখানে রেখে যান।
আরও কয়েকদিন আমরাও পোশাক পরি । ''
সেখানে দারুণ সাড়া পেয়েছেন । আর হাত -পা ছেড়ে এমনভাবে ঘুমিয়েছেন যে মনে হচ্ছে পৃথীবিটা আপনার । তাই জ্যামের মধ্যে ফুটপাথ দিয়ে রিকশা উঠিয়ে আপনার উপর দিয়ে আরামসে চালাবে । আপনি হয়তো ধড়মড়িয়ে উঠে গাল পাড়লেন । সেই রিক্সাওয়ালা রিকশা থামিয়ে আসার আগেই আপনার উপর দিয়ে আরেকখানা পংখীরাজা রিকশা ডিঙিয়ে যাবে । তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুম থেকে উঠে নিরাপদে সরে যান ।
সেদিন রাত ৮.০০ টা হয়েছে মাত্র । হিসাব করে বেরিয়েছিলাম পকেটে ২৫ টাকা আ্ছে । ভাড়া ,১৫ টাকা আম্বরখানা আর ১০ টাকা টিলাগড় । এতেই বাসায় ফিরতে পারব । মাঝখানে পান আর সিগারেট খেয়ে বাকী টাকা উড়িয়ে দিয়েছি ।
আম্বরখানায় নেমে পকেট থেকে ২৫ টাকা বের করলাম । ১৫ টাকা দিয়েই ১০ টাকা হাত থেকে খসে হাওয়ায় উড়ে গেল । সি এন জি চালিত অটোরিক্সার উপর তলা সব দেখলাম । ১০ টাকা নেই হাওয়া হয়ে গেছে ।
অগত্যা হাঁটা শুরু করলাম । প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে হবে । শুনেছি রাত্রের পথ সংকুচিত । কিন্তু আমার হাঁটা যেন আর ফুরোয়না । চলছি, চলছি । পিছনে একটা স্কুলব্যাগ । মাঝে মাঝে চশমার ভেতর ভালো করে চেয়ে দেখলাম , বিভিন্ন স্টেশনে দু-একজন ভূঁরু কুঁচকে আমাকে দেখছে । রাতে হেঁটে যেতে হলে সতর্ক থাকতে হয় বিশেষ করে আকাশহীন শহরে । আমি তো হাঁটছি । আঙুল ফুলে উঠছে । চশমাটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে কপালের ঘামে । শেষে এম সি কলেজ মাঠ পেরিয়ে পা দিয়েছি নির্জন একটিএলাকায় । আরও এক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হবে ।
এখানে গাড়ি আসছে যাচ্ছে একটা দুটো । বেশ সুনসান এলাকা । রাস্তার পাশ দিয়ে ফুটপাথের উপর দিয়ে হাঁটতেছি । হঠাৎ পাশ ফিরে তাকাতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম । একজন গরীব লোক হাত-পা ছড়িয়ে ভূতের মতো শুয়ে আছে । নীরবে শু্য়ে আছে নাক ডাকাডাকি নেই । আচমকা ওর শোয়া দেখে ভয় পেয়ে যাই । আর পাশে তাকাতেই অন্তরাত্না খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে দৌড় দিতে চাইল । পাশেই আরেকটা লোক নিথর , গলায় অস্পষ্ট লাল রক্ত জমাট বেঁধে আছে । গলার মাঝখান হাঁ করা । ২ ঘন্টা আগে খুন হয়েছে মনে হয় । আমি পড়লাম বিপদে । এখন কি করি । এরকম কত মানুষ হাজারে হাজারে মরছে । কেউ খোঁজ রাখেনা । এই লোকটাকে মারল কে , কাছে গিয়ে উবু হয়ে দেখি নি:শ্বাস নেই । পা এমনিতেই অবশ । তার মাঝে এখানে একটা ফুটপাথের বাসিন্দা খুন । মানবতার দেয়াল ভেঙে পড়ল । আমি কেটে পড়তে লাগলাম । হয়তো এরা দুজনেই পাগল । একজন আরেক জনকে খুন করে দিব্যি ঘুমাচ্ছে । তাদের আসামী বানাবে কে ? উদ্বাস্তুদের কোনো কেস নেই । তাদের শুধু পেশিশক্তির জোর । অবশেষে আমি পা বাড়াতে লাগলাম । রাত বিরাতে এদিকে পুলিশ টহল দেয় । কখন না জানি এসে আমার সামনে হুংকার ছাড়ে যে আমি খুন করেছি তাঁকে । অবশেষে কিছুটা জোরে হাঁটা শুরু করলাম ।
আমার বাবা বিখ্যাত না হলেও কিছুটা জনপ্রিয় কবি । ঘরে উনার জায়গা নাই । উনার জায়গা হলো সারা পৃথিবীময় । কবিরা কিছু পাগলা টাইপের । শাহীনূর মুস্তাফিজ নামের এক কবির সাথে আমার খাতির আ্ছে । আত্নমগ্ন এক কবি । বাড়িতে কখন আসে কখন যায় কেউ টের পায়না । কোথায় থাকে কেউ খুঁজে পায়না । শহরে একটা ভালো কলেজে পড়াশোনা করলেও মন তাঁর কবি হওয়ার ইচ্ছা । তার সাথে মাঝে মাঝে সাক্ষাৎ হয় । আমার সাথে দু এক কথা বলে কেটে পড়ে । যেন আমি তাকে মারব এমন ভাব করে ।
আমার বাবাও কম নন । উনি সাধারণত ফুটপাথে থাকেন । নতুবা আত্নীয় কারো বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন । আমার মা কখনো বাবাকে ঘরে জায়গা দেননা। সারারাত বসে হিন্দি গান শুনেন আর হঠাৎ দু'একটা প্রেমের কবিতা বলেন । ভাইবোন কেউ ঘুমাতে পারেনা ।
আমি বাসায় এসে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লাম । একে তো এতো পথ হাঁটতে হয়েছে । তার মাঝে ঐ গলাকাটা লাশটা এখনো চোখের সামনে ভাসছে ।
পরদিন মা হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে আসলেন , তোর বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা । সবার কাছে ফোন করেছি আত্নীয়স্বজন ফুটপাথের নিয়মিত বাসিন্দাদের কেউ কিচ্ছু বলতে পারেনা । বাড়ীতে না আসলেও প্রতিদিন ভোরে তো ফোন করে আজ ফোন সুইচড অফ বলছে । কোথায় গেছে আল্লাই জানে । এই আবুল তোর বাপের কি্ছু হয়নি তো । আমি বললাম . না মা কি হবে হয়তো কোথাও আছে । ''
আছে মানে কি তোর মনে নেই যেদিন থেকে ঘর থেকে বের হয়েছিলো প্রতিদিন ফজরের নামাজের সময় ফারিহার খবর নিত । মোবাইলে চার্জ বা টাকা না থাকলেও অন্য কারোর টা দিয়ে ফোন দিত আজ এরকম কেন হবে । এখন ১০ টা হয়ে গে্ছে কোনো খোঁজ নাই । এতদিন ফোন করতে মিস করেনি একটা দিনও না তাহলে আজ কি হলো নিশ্চয় কোনো বিপদে পড়েছে । আর কেউ তার সম্বন্ধে কিছু বলতে পারছেনা । আবুল তোর বাপের কিছু একটা হয়েছে । কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন মা ।
অগত্যা আমি বেরিয়ে পড়লাম । সেই ফুটপাথে গেলাম । রাঁতের আঁধারে চেনা মুশকিল ছিল ।
সেখানে লাশটাও পেলাম না । সেই উন্মাদ , কাঁথা মুড়ি দেয়া লোকটাকেও পেলাম না । আমার বাবা অবশ্য খুন হননি । আমার মনে হোঁচট লাগল । যে লোকটার গলা দুঁ ফাঁক করা দেখেছিলাম সে লোকটা আমার বাবা নন । তাহলে পাশের লোকটা হয়তো হতে পারে । তাহলে বাবাই কি লোকটাকে খুন করলেন ।
পত্রিকায় নিউজ দিলাম । পত্রিকা অফিসে নিউজ দেয়ার আগে দেখলাম আরেকজন কেঁদেকুটে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে । প্রাবন্ধিক বজলুর রশিদকে পাওয়া যাচ্ছেনা । ওদিকে আমার বাবাকেও না । তাহলে এই দুজন কি সেই রাতে ওখানে ছিল । আমার বাবা কি খুন করেছেন প্রাবন্ধিক বজলুর রশিদকে ! বড়ই বেখাপ্পা জিনিসটা ।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দুইদিন পরে জানা গেল বজলুর রশিদের লাশ পুলিশ সুরমা নদী থেকে উদ্ধার করেছে । তদন্ত শেষে আমার বাবাই খুনি প্রমাণিত হলেন ।
মাকে বিষয়টা জানালাম না । বাবা ফোন করেছেন চারদিন পর ।
'' কে আবুল ? শোন , আমি মারাত্নক একটা কাজ করে ফেলেছি । তোরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলি কেন ? আমিতো আছি , সরি নাই । পুলিশ আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে । তোদের জেলে যেতে হতে পারে । যতটুকু পারিস বলবি , বাবা আমাদের সাথে অনেকদিন হলো থাকেননা । আমরা কিছু জানিনা ।
আমার জন্য তোদের জেলে যেতে দিতে চাইনা । শেষ পর্যন্ত বলবি , লামাবাজার এলাকায় আমি থাকি । ওখান থেকে আমাকে গ্রেফ্তার করতে । সত্যিই আমি ওখানে থাকি । পুলিশের সাথে আমার কিছু কথা আছে । আচ্ছা ভালো থাকিস , ফোন রাখি । ''
দিন কয়েক পরে পুলিশ আসল বাসায় । জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল ।
'' আপনার বাবা কোথায় ?
'' আমি জানিনা ''
'' কেন জাননা?
'' উনি একজন উদ্বাস্তু কবি । ''
'' ১৮ তারিখ রাত্রে উনি কোথায় ছিলেন ? ''
'' জানিনা ''
পুলিশ সাহেব গর্জে উঠলেন , '' কিছুই জাননা । লালঘরে নিয়ে ধোলাই দিলে হড়হড় করে সব বের হয়ে আসবে । ''
অবশেষে আমি জেলে গেলাম । একদিনের রিমান্ডে আমি সব ধীরে সুস্থে ওসি সাহেবকে বলে দিলাম । লামাবাজার থেকে বাবাকে ধরে আনা হলো । আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো ।
কয়েকদিন পর আমি মনমরা হয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছি । হঠাৎ দেখি হাতে দুইটা ব্যাগ নিয়ে বাবা ঘরের দিকে আসছেন । আমি হতচকিত হই এ কি !
কয়েকদিন জেলে গিয়েছিলাম বাবাকে দেখার জন্য । শুনেছি প্রাবন্ধিক বজলুর রশিদকে খুনের দায়ে বাবাকে যাবজ্জীবন অথবা ফাঁসি হতে পারে । শুনে তো মা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন । এই প্রথম বাবার জন্য মাকে কাঁদতে দেখলাম ।
এখন দেখি বাবা ফিরে আসছেন ।
এসেই বললেন , '' আবুল তোর মাকে বল ভাত দিতে । ''
বাবা ভাত খেতে খেতে বললেন ,
'' আসলে আমি ওকে খুন করিনি । দিন চারেক আগে ওকে একটা বিষয় নিয়ে চাকু দিয়ে আঘাত করেছিলাম । পেটে আঘাত করেছিলাম ।পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই । ডাক্তার ওকে সেলাই দেয় । সে ভালো হয়ে যায় । দুজনের বন্ধুত্ব আবার শুরু হয় । দুজন ফুটপাথে আরাম করে ঘুমাই । ঐ খুনটা আসলে ডাক্তারটা করেছিল । ঐ ডাক্তারকে দেখার পর আমি হতবাক । ও আমাদের পুরনো শত্রু । কয়েক বছর আগে তার খারাপ কর্মকান্ড আর মেডিকেল ভাঁওতাবাজি নিয়ে রশিদ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখে । তারপর থেকে তার নিন্দা ( ডাক্তারের ) শুরু হয় । সে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয় । অনেক ভালো পদে ছিল সে । পরে ক্ষমা টমা চেয়ে আবার জয়েন করে । কিন্তু সেই জেদ তাঁকে চেপে আছে ।
রশিদকে নিয়ে যখন মেডিকেলে গেলাম । তখন সেখানেই তাঁকে মেরে ফেলতে চাইছিলো । কিন্তু আমি সামনে থাকায় মারতে পারেনি । ভালোই ট্রিটমেন্ট দেয় । পরে আমরা কোথায় থাকি , কি করি সব খবরাখবর নেয় ।
ঐদিন রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রশীদকে সে খুন করে আর আমার উপর ফাঁসিয়ে যায় । আমি এমনিতেই পাগল । কি করব ভেবে পাচ্ছিনা , পরে লাশটাকে নদীতে ফেলে দেই । লুকিয়ে যাই আমি । পরে পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় । আমি বললাম , '' ঐ ডাক্তারকে ধরুন । ওই সব করেছে ।
ডাক্তার প্রথমে স্বীকার করতে চায়না ।
পরে আমি একটা খেলা খেললাম ।
বললাম , '' দেখুন পুলিশ সাহেব , উনি অস্বীকার করতেছেন । তাহলে ডাক্তার সাহেব বলুন , '' রশিদকে মেডিকেলে কেন খুন করতে চাইছিলেন ?
'' আমি কেন খুন করতে যাব । আমি একজন সমাজ সেবক ''
'' আপনার নোংরা সমাজসেবা নিয়ে রশিদ একটা প্রবন্ধ লিখেছিল । যার দরুণ আপনার চাকরি চলে গিয়েছিল । এটার জন্য নয় কি ! ''
'' আপনার বন্ধু লিখেছে । তো আমি কি করব এখানে ।''
'' আপনি এর জেদ ধরে তাকে খুন করেছেন । ''
'' অসম্ভব আমি এটা কোনোভাবেই করিনি ।''
তাহলে পুলিশ স্যার , শুনে রাখুন আপনারা যে লাশ পেয়েছেন তা রশীদের নয় । অন্য কারো লাশ । রশিদ এইরকম ভন্ডদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য এখনো বেঁচে আছে । আপনারা ভালো করে তদন্ত করুন । সে হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে । ফোন দিবে নিশ্চয় ।
পুলিশ অফিসার দুইদিন পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে আসলেন । বললেন , '' লোকটা বজলুর রশিদ নয় অন্য কেউ । ( এটা আমার বুদ্ধিতেই করেছেন পুলিশ অফিসার )
এই দুইদিন ডাক্তার সাহেব ও আমি জেলেই ছিলাম । খবরটা শুনার পর ডাক্তার সাহেবের মুখ দেখলাম কেমন শুকিয়ে গেছে । অফিসার সাহেব উনাকে চলে যেতে বললেন ।
উনি চলে যেতে চাইছিলেন । পিছনে ফিরে বললেন , '' পত্রিকায় দেখলাম বজলুর রশীদ লেখা আছে । ''
অফিসার সাহেব বললেন , '' এটা ভূল । আসলে ওরা দুইজন একসাথে থাকত । তাই মনে করা হয়েছে রশিদ । ''
ডাক্তার সাহেব বললেন , '' ও আচ্ছা , তবে গলা তো দেখলাম ভালো করে কাটা । তারপরও বজলুর রশীদ মরেন নি । না .... ব্যাপারটা কেমন মিলছেনা । ''
পুলিশ অফিসারের কান ততক্ষণে সচকিত হয়ে গেছে । তিনি থাবড়া মেরে ডাক্তারকে ধরলেন । '' এই শালা , পত্রিকায় তো আমরা এরকম কোনো ছবি ছাপিনি । বজলুর রশিদের কোর্ট টাই পরা ছবি ছেপেছি । তাহলে তুই দেখলি কেমন করে গলা কাটা ।''
'' আজ্ঞে আমি জেনেছি ''
'' কোথা থেকে জেনেছিস ? ''
'' লোকে বলাবলি করছিল ''
লোকেরা কি বলছিল
'' বলছিল বজলুর রশিদের গলাকাটা পুলিশ উদ্ধার করেছে ।''
'' তাহলে তুই যে বললি , গলা দেখলাম ভালো করে কাটা । তার মানে ভালো করে গলাটা তুই ই কেটেছিস । আর এখন ভাবছিস রশিদকে খুন করতে গিয়ে অন্য কাকে খুন করে ফেললাম । তোর লক্ষ্য তো ছিল রশিদ । এখন বলছিস পত্রিকায় তার নাম দেখেছিস , গলা ভালো করে কাটা । রশীদের মৃত্যু ব্যাপারটা সম্বন্ধে তুই কেন নিশ্চিত হতে চাইছিস । তাই বারবার বলছিস দেখলাম রশিদ , শুনলাম রশীদ আর এখন ময়নাতদন্ত বলে রশিদ নয় । তাহলে তোর লস হয়ে গেল না ? বুলেটটা লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছায়নি তাহলে । রশিদ আবার তোর সম্বন্ধে প্রবন্ধ লেখবে । তাঁকে শেষ করতে পারলি না ।
তবে তোর উদ্দেশ্য আমরা পুরা করমু । হাজতে ঢুক শালা , সব স্বীকার করবি ।
ডাক্তার সাহেব বললেন , '' আজ্ঞে আমিই খুন করেছি ।''
তারপর লালঘরে ঢুকিয়ে সে যে কেমন ডান্ডা পিটালেন ওসি সাহেব । হাড্ডিগুলো মনে হয় গুঁড়া করে ফেলেছে ।
আর তোর বাবা বেঁচে গেলেন । রশিদের জন্য এখনও অনেক কষ্ট হয় ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ১৮/০২/২০২০অনেক ভালো ।
-
শাহীন রহমান (রুদ্র) ১৫/০২/২০২০সবাইকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।
-
ফয়জুল মহী ১৪/০২/২০২০ফাগুনের শুভেচ্ছা,
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৪/০২/২০২০splendid