পরীক্ষা
জীবনের প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়েছিল হাঁটা দিয়ে ।কতক্ষন হেঁটে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই ।কখনো পড়লে আর উঠে দাড়াতে পারবনা তখন হয়তো মা-বাবার চেষ্টায় সে পরিক্ষায় পাস করে যাই আর স্কুলজীবনের পরীক্ষায় বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায় কোনোরকমে উতরে যাই ।সবচে বড় পরীক্ষা হলো জীবনের পরীক্ষা । যে পাস করতে পারবে সেই আসল সফল ব্যক্তি।আর বাকি সবাই নির্জীব পরীক্ষার্থী বৈ কিছু নয়।এমনি একটা জীবনের পরীক্ষা নিয়ে গল্পটা:
প্রথম জীবনে তার বাবা খুব কোটিপতি ছিলেন।টাকার বিছানায় ঘুমাতেন সে নীল চৌধুরী নামেই বড় হয়ে উঠে।তারপর বাবা শেয়ার ব্যবসায় মার খেয়ে একসাথে হার্ট অ্যাটাক করেন অপরদিকে তাদের ফতুর করে দিয়ে যান।নীল চৌধুরী কালো হয়ে যান।তার মা আর সে মিলে ফুটপাথে চা-য়ের দোকান দেন।কালা মিয়া ভেরাইটিজ স্টোর।তার বাবার কথা সে কাউকে বলেনা দিনে কত মানুষ আসে পরিচিত অপরিচিত ।শেষে সেই দোকানও ভেঙে দিল রাজনৈতিক দল চাঁদা না দেওয়ার জন্য।কালা মিয়া বড় হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ আর পেলনা।মা ছেলে দুজনকেই কেউ চাকরি দেয়না ।পেটের জ্বালা বড় জ্বালা ।তিনদিন তারা না খেয়ে থাকল ।তারপর পেটের ভাত যোগাড় করতে সবচে জঘন্য কাজটা করল।ছেলের পা কাটল ,আর মায়ের হাত কাটল।এখন একটা পয়েন্টে ভিক্ষা করে ,'মা গো বাবা গো ,এক্সিডেন্টে দুইটা হাত-পা গেছে কিছু দিয়ে যান।স্কুল-কলেজে দুজন যায় স্যারের অনুমতি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য চায় ,ভালোই কামাই ।মোটামোটি চলতেছে ।
একদিন এক গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে দেখা হয় তাদের ।তিনি তাদের ডেকে জিগ্যেস করেন কি হয়েছে?
তারা কেঁদে কেঁদে বাস অ্যাক্সিডেন্টের কথা বলল।উনি বললেন ,তাহলে আমি তোমার ছেলেকে লেখাপড়া শিখাব আর তোমাদের ভিক্ষা করার দরকার নাই তোমাদের খাওয়া পরার দায়িত্ব আমার । দুজনের কৃত্রিম হাত পা লাগিয়ে দিলেন নিজের পয়সা খরচ করে ,তাদের উপযুক্ত জায়গা দেখে একখানা ঘর দিলেন ।ছেলেকে প্রতিবন্ধি স্কুলে ভর্তি করালেন।প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কালামিয়ার দ্বারা ঐ গণ্যমান্য লোক মালামিয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করান।তাকে দিয়ে একটা ভারী বাক্স একটা পুরনো বাড়ীতে হস্তান্তর করান,সেখানে কেউ থাকে বলে মনে হয়না ,কেমন পিনপতন নীরবতা ।মালামিয়া তাঁকে বলে দিয়েছেন একটা ঘরে বাক্সটা রেখে আসতে ।তাঁকে কোনোদিন কোনো প্রশ্ন করতে দেননি।আর সে কখনো প্রশ্ন করেনি । প্রথম দিন যাচ্ছিল , সে বুঝল তার পিছু পিছু তাঁকে ফলো করা হচ্ছে ,একটা প্রাচীন বাড়ীতে উঠল সেখানে সামনের কামরায় ভারী বাক্সটা রেখে আসল । স্কুল ব্যাগে করে ভারী বাক্সটা সে বয়ে এনেছে । কেউ দেখে তাঁকে সন্দেহ করেনি ,বাক্সটা রেখে আসার সময়ও কাউকে দেখলনা । চারপাশে ঘন ঝোপঝাড় আর গাছপালা ।চারপাশে বাড়ীঘরও কম। কেমন একটা ভৌতিক পরিবেশ ঘেরাও করে আছে চারপাশ।
তারপর ধীরে ধীরে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় । যিনি তার লেখাপড়া ,খাওয়াদাওয়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন তার কথা আমান্য করার উপায় নাই।একদিন কালামিয়া দেখল তার চারপাশে ফলোয়ার নেই ,তাঁকে আর বেঈমানী করতে পারে এমন ভাবা হয়না ,বিশ্বাস করা হয়ে গেছে ।সে প্যাকেটের সামান্য অংশ খুলে দেখল ভিতরে খয়েরী, মিশমিশে রংয়ের কয়েকটা লোহার বারের মতো , সে আর বুঝেনি এগুলো কি ?
কয়েকদিন পর মালামিয়া ওরফে মনসুর মিয়া(ওনার আসল নাম মনসুর মিয়া) এবং কালামিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
২:
অনেক আগে ভিটেবাড়ী করে মনসুর মিয়া বিদেশে পাড়ী জমান।তখন বিয়ে-শাদী করেন নাই। মা-বাপের ইচ্ছা বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করবেন ।বিদেশে ভালো টাকা কামাই করেন ,জমি-জিরাত করেন । এবার এসে বিয়ে করবেন । পাত্রীও দেখা হয়ে গেছে । তার দূর সম্পর্কের এক খালাতো বোনকে বিয়ে করবেন । মনসুররা দুই বোন আর সে ।দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে বাচ্চাকাচ্চা আছে ,ভাই যেদিন বাড়ীতে আসবে সেদিন তারাও এলো । মনসুর মিয়া রাতের ফ্লাইটে সিলেট আসলেন ।তার পরদিন বাড়ীতে এসে পৌঁছলেন ।মা-বাবা তাকে ধরে গভীর আলিংগন করলেন ।তার বড়বোন পুরনো আমলের মানুষ ।রান্না-বান্নায় ব্যস্ত ছিলেন ,মনসুর মিয়া আসতেই হন্তদন্ত হয়ে এলেন ,''মনচুর , তুই আইছস ভাই ,তোরে কতদিন দেহিনা গালেমুখে হাত বুলাতে লাগলেন। ভাইরে,কি খাবি শরবত না চা ?কি খাইছস এতদিন আল্লাহই জানে। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন মনসুরের বড় বোন দিলারা ।
সেই খেতে কাম করা মনসুর কোর্ট টাই পরা মনচুর হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ইংলিশ দু-একখান ,মারে ,''মাইজি ,ওয়াটার দাও ।মাসখানেক চলে যায় আনন্দ ফুর্তি করে ।পরের মাসে বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে আনে ।বিয়ের দিন সন্ধ্যায় নতুন কনেকে নিয়ে সবাই ঘিরে বসে আছে ।সবাই মজা তামাশা করছে ল বৃদ্ধ এক মহিলা ভূতের গলায় গীত গাইছে ।মনে হচ্ছে থাবড়া দিয়ে ৩২ টা দাঁত ফেলে দিতে , ৩২ টা দাঁত আছে কিনা সন্দেহ।ঠিক সেই সময় তাদের বাড়ীতে পুলিশ হাজীর ।২ মিনিটের মধ্যে মনসুর মিয়াকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া হয় ।সারা বাড়িতে ক্রন্দন রোল উঠে। নতুন বউ এতক্ষন চুপ ছিলো এখন চালাঘরের একটা হাতল ধরে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।মনসুরের মা উঠানে পাগলের মতো চুল ছিঁড়ছে । বাচ্চারা ভয় পেয়ে গিয়েছে এমন ঘটনা দেখে ,কি থেকে কি হয়ে গেল।
ঘটনা বিস্তারিত: বিদেশ থেকে আসার সময় প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের বার এনেছে মনসুর। বিমানবন্দরে ঘুষ খাইয়ে সেটা ছাড়িয়ে আনে । কিন্তু উপরমহল থেকে চাপ আসায় এখন সব তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । গ্রেফতার করতে হবে থাকে ।তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলে সে কিছুই স্বীকার করতে চায়না। তার নখ উপড়ানো হলো ,উল্টো করে চুল মুন্ডানো হলো।প্রায় অনেক বছরের জেল হলো মনসুর মিয়ার। যেদিন ছাড়া পেতে যাবেন সেদিনই কালামিয়া আর সেই মনসুর মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
৩
কালামিয়া আর মনসুর মিয়াকে একসাথে দাঁড় করানো হলো ।কালামিয়াও অপরাধী।মনসুর মিয়া বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার আমদানী করে তার পুরনো বাড়ীর অভ্যন্তরে সেগুলো পরিশোধন করে টাকা কামাই করেন ।
কিছুক্ষণ পর এসে ওসি সাহেব ছাড়া পেতে যাওয়া মনসুরকে বললেন ,''মনসুর মিয়া আপনি যেতে পারবেন না । ''
'কেন'?
''আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আমরা পেয়ে গেছি,আপনি সেই মনসুর যে এরকম মনসুরদের কাছে বিদেশে থাকতে স্বর্ণের বার রফতানী করতেন ।আসুন আমার সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
তিনজনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হলো ।ওসি সাহেব বললেন ,আপনারা দুই মনসুর এই চক্রের সদস্য। দুজনেই মাথা নিচু করে আছে ।ওসি সাহেব সদ্য ধরে আনা মনসুরকে প্রশ্ন করলেন ,''দেখুনতো বিদেশে এর সাথে দেখা হয়েছে কীনা?
মাথা নিচু করে মনসুর মিয়া বলল,হ্যাঁ উনার সাথে দেখা হয়েছিল । উনিই আমাদের বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার পাঠাতেন । উনাকে আমরা মনচুর ভাই নামে ডাকতাম ।
এতদিন জেলে থেকে মনচুর ভাইয়ের চোখে ছানি পড়ে গেছে । মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি ওসি সাহেবের সামনে।
ওসি সাহেব জিগ্যেস করলেন ''তা মনচুর ভাই আপনি আরো অনেক অপরাধ করেছেন ,আমরা ইনভেস্টিগেশন করে জেনেছি বলুনতো কি কি''
''জ্বী, হ্যাঁ ! আমার এই কয়েদীজীবনই ভালো । বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার চুরি করে রফতানীর ব্যবসা করতাম ,খারাপ মহিলাদেরকে দিয়ে ব্যবসা করাতাম। দেশে আসর পর বিয়ের কাজ চলছিলো । বিদেশে থাকতে একটা বিয়ে করছিলাম । ওরে দিয়া প্রচুর টাকা কামাই করছি , দেশে আইসা যেদিন বিয়া করি সেদিনি আমাকে ধরা হয়। আমার চিন্তা ছিলো ওকে দিয়েও টাকা রোজগার করাবো ।আমার টাকা চাই ,টাকা । টাকার প্রতি আমার নেশা ।
বিদেশে যখন থাকতাম তখন প্রথমে কোনো কাজ পাচ্ছিলামনা । পরে জুতা সেলাইয়ের ব্যবসা নিলাম । বাঙালী সবাই আমাকে 'মুচি ভাই '' ডাকতো ( মনচুর থেকে মুচি)।রাগে অপমানে বললাম তাহলে দেশেই ভালো ছিলো ।তারপর মনটা তিক্ত হয়ে উঠে। শুরু করি এসব খারাপ ব্যবসা । অল্পদিনেই ডিজিটাল বাথরুমে পেশাব করার মতো অবস্থা হয়ে যায় ।
তারপর গ্রামে এসে নতুন মিশন চালু করার চেষ্টা করছিলাম । দরকার হয় আপন মা রে দিয়া । কিন্তু ধরা খেলাম ।
এই কয়েদীজীবন ই অনেক ভালো ।অনেক অনেক ভালো ।আমি নিজেও দুর্গন্ধযুক্ত , আবহাওয়াও দুর্গন্ধ ।দুজনে মিললে পবিত্র মানুষেরা ভীষণ কষ্ট পাবে। এখানে নামাজ ,কালাম কোরআন শরীফ পড়ি।প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে বড় একটা পাথর বুকের একপাশে রাইখ্যা ঘুমাই ।পচা , অপবিত্র রূহ কিছুটা শান্তি পাক । শরীর থেকে যেন আস্তে আস্তে বিষাক্ত ধূঁয়াটা বের হয়ে যায় । দু- একদিন রোজা রাখি । খোদার কাছে কান্নাকাটি করি। কত ভালো মানুষকে লোভ দেখাইয়া , জোর করাইয়া খারাপ কাজ করাইছি ।কান্নায় ভেঙে পড়লেন মনচুর মিয়া । আসলেই তিনি মানুষের মন চুরি করে থাকেন।
প্রথম জীবনে তার বাবা খুব কোটিপতি ছিলেন।টাকার বিছানায় ঘুমাতেন সে নীল চৌধুরী নামেই বড় হয়ে উঠে।তারপর বাবা শেয়ার ব্যবসায় মার খেয়ে একসাথে হার্ট অ্যাটাক করেন অপরদিকে তাদের ফতুর করে দিয়ে যান।নীল চৌধুরী কালো হয়ে যান।তার মা আর সে মিলে ফুটপাথে চা-য়ের দোকান দেন।কালা মিয়া ভেরাইটিজ স্টোর।তার বাবার কথা সে কাউকে বলেনা দিনে কত মানুষ আসে পরিচিত অপরিচিত ।শেষে সেই দোকানও ভেঙে দিল রাজনৈতিক দল চাঁদা না দেওয়ার জন্য।কালা মিয়া বড় হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ আর পেলনা।মা ছেলে দুজনকেই কেউ চাকরি দেয়না ।পেটের জ্বালা বড় জ্বালা ।তিনদিন তারা না খেয়ে থাকল ।তারপর পেটের ভাত যোগাড় করতে সবচে জঘন্য কাজটা করল।ছেলের পা কাটল ,আর মায়ের হাত কাটল।এখন একটা পয়েন্টে ভিক্ষা করে ,'মা গো বাবা গো ,এক্সিডেন্টে দুইটা হাত-পা গেছে কিছু দিয়ে যান।স্কুল-কলেজে দুজন যায় স্যারের অনুমতি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য চায় ,ভালোই কামাই ।মোটামোটি চলতেছে ।
একদিন এক গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে দেখা হয় তাদের ।তিনি তাদের ডেকে জিগ্যেস করেন কি হয়েছে?
তারা কেঁদে কেঁদে বাস অ্যাক্সিডেন্টের কথা বলল।উনি বললেন ,তাহলে আমি তোমার ছেলেকে লেখাপড়া শিখাব আর তোমাদের ভিক্ষা করার দরকার নাই তোমাদের খাওয়া পরার দায়িত্ব আমার । দুজনের কৃত্রিম হাত পা লাগিয়ে দিলেন নিজের পয়সা খরচ করে ,তাদের উপযুক্ত জায়গা দেখে একখানা ঘর দিলেন ।ছেলেকে প্রতিবন্ধি স্কুলে ভর্তি করালেন।প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কালামিয়ার দ্বারা ঐ গণ্যমান্য লোক মালামিয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করান।তাকে দিয়ে একটা ভারী বাক্স একটা পুরনো বাড়ীতে হস্তান্তর করান,সেখানে কেউ থাকে বলে মনে হয়না ,কেমন পিনপতন নীরবতা ।মালামিয়া তাঁকে বলে দিয়েছেন একটা ঘরে বাক্সটা রেখে আসতে ।তাঁকে কোনোদিন কোনো প্রশ্ন করতে দেননি।আর সে কখনো প্রশ্ন করেনি । প্রথম দিন যাচ্ছিল , সে বুঝল তার পিছু পিছু তাঁকে ফলো করা হচ্ছে ,একটা প্রাচীন বাড়ীতে উঠল সেখানে সামনের কামরায় ভারী বাক্সটা রেখে আসল । স্কুল ব্যাগে করে ভারী বাক্সটা সে বয়ে এনেছে । কেউ দেখে তাঁকে সন্দেহ করেনি ,বাক্সটা রেখে আসার সময়ও কাউকে দেখলনা । চারপাশে ঘন ঝোপঝাড় আর গাছপালা ।চারপাশে বাড়ীঘরও কম। কেমন একটা ভৌতিক পরিবেশ ঘেরাও করে আছে চারপাশ।
তারপর ধীরে ধীরে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় । যিনি তার লেখাপড়া ,খাওয়াদাওয়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন তার কথা আমান্য করার উপায় নাই।একদিন কালামিয়া দেখল তার চারপাশে ফলোয়ার নেই ,তাঁকে আর বেঈমানী করতে পারে এমন ভাবা হয়না ,বিশ্বাস করা হয়ে গেছে ।সে প্যাকেটের সামান্য অংশ খুলে দেখল ভিতরে খয়েরী, মিশমিশে রংয়ের কয়েকটা লোহার বারের মতো , সে আর বুঝেনি এগুলো কি ?
কয়েকদিন পর মালামিয়া ওরফে মনসুর মিয়া(ওনার আসল নাম মনসুর মিয়া) এবং কালামিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
২:
অনেক আগে ভিটেবাড়ী করে মনসুর মিয়া বিদেশে পাড়ী জমান।তখন বিয়ে-শাদী করেন নাই। মা-বাপের ইচ্ছা বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করবেন ।বিদেশে ভালো টাকা কামাই করেন ,জমি-জিরাত করেন । এবার এসে বিয়ে করবেন । পাত্রীও দেখা হয়ে গেছে । তার দূর সম্পর্কের এক খালাতো বোনকে বিয়ে করবেন । মনসুররা দুই বোন আর সে ।দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে বাচ্চাকাচ্চা আছে ,ভাই যেদিন বাড়ীতে আসবে সেদিন তারাও এলো । মনসুর মিয়া রাতের ফ্লাইটে সিলেট আসলেন ।তার পরদিন বাড়ীতে এসে পৌঁছলেন ।মা-বাবা তাকে ধরে গভীর আলিংগন করলেন ।তার বড়বোন পুরনো আমলের মানুষ ।রান্না-বান্নায় ব্যস্ত ছিলেন ,মনসুর মিয়া আসতেই হন্তদন্ত হয়ে এলেন ,''মনচুর , তুই আইছস ভাই ,তোরে কতদিন দেহিনা গালেমুখে হাত বুলাতে লাগলেন। ভাইরে,কি খাবি শরবত না চা ?কি খাইছস এতদিন আল্লাহই জানে। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন মনসুরের বড় বোন দিলারা ।
সেই খেতে কাম করা মনসুর কোর্ট টাই পরা মনচুর হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ইংলিশ দু-একখান ,মারে ,''মাইজি ,ওয়াটার দাও ।মাসখানেক চলে যায় আনন্দ ফুর্তি করে ।পরের মাসে বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে আনে ।বিয়ের দিন সন্ধ্যায় নতুন কনেকে নিয়ে সবাই ঘিরে বসে আছে ।সবাই মজা তামাশা করছে ল বৃদ্ধ এক মহিলা ভূতের গলায় গীত গাইছে ।মনে হচ্ছে থাবড়া দিয়ে ৩২ টা দাঁত ফেলে দিতে , ৩২ টা দাঁত আছে কিনা সন্দেহ।ঠিক সেই সময় তাদের বাড়ীতে পুলিশ হাজীর ।২ মিনিটের মধ্যে মনসুর মিয়াকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া হয় ।সারা বাড়িতে ক্রন্দন রোল উঠে। নতুন বউ এতক্ষন চুপ ছিলো এখন চালাঘরের একটা হাতল ধরে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।মনসুরের মা উঠানে পাগলের মতো চুল ছিঁড়ছে । বাচ্চারা ভয় পেয়ে গিয়েছে এমন ঘটনা দেখে ,কি থেকে কি হয়ে গেল।
ঘটনা বিস্তারিত: বিদেশ থেকে আসার সময় প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের বার এনেছে মনসুর। বিমানবন্দরে ঘুষ খাইয়ে সেটা ছাড়িয়ে আনে । কিন্তু উপরমহল থেকে চাপ আসায় এখন সব তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । গ্রেফতার করতে হবে থাকে ।তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলে সে কিছুই স্বীকার করতে চায়না। তার নখ উপড়ানো হলো ,উল্টো করে চুল মুন্ডানো হলো।প্রায় অনেক বছরের জেল হলো মনসুর মিয়ার। যেদিন ছাড়া পেতে যাবেন সেদিনই কালামিয়া আর সেই মনসুর মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
৩
কালামিয়া আর মনসুর মিয়াকে একসাথে দাঁড় করানো হলো ।কালামিয়াও অপরাধী।মনসুর মিয়া বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার আমদানী করে তার পুরনো বাড়ীর অভ্যন্তরে সেগুলো পরিশোধন করে টাকা কামাই করেন ।
কিছুক্ষণ পর এসে ওসি সাহেব ছাড়া পেতে যাওয়া মনসুরকে বললেন ,''মনসুর মিয়া আপনি যেতে পারবেন না । ''
'কেন'?
''আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আমরা পেয়ে গেছি,আপনি সেই মনসুর যে এরকম মনসুরদের কাছে বিদেশে থাকতে স্বর্ণের বার রফতানী করতেন ।আসুন আমার সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
তিনজনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হলো ।ওসি সাহেব বললেন ,আপনারা দুই মনসুর এই চক্রের সদস্য। দুজনেই মাথা নিচু করে আছে ।ওসি সাহেব সদ্য ধরে আনা মনসুরকে প্রশ্ন করলেন ,''দেখুনতো বিদেশে এর সাথে দেখা হয়েছে কীনা?
মাথা নিচু করে মনসুর মিয়া বলল,হ্যাঁ উনার সাথে দেখা হয়েছিল । উনিই আমাদের বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার পাঠাতেন । উনাকে আমরা মনচুর ভাই নামে ডাকতাম ।
এতদিন জেলে থেকে মনচুর ভাইয়ের চোখে ছানি পড়ে গেছে । মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি ওসি সাহেবের সামনে।
ওসি সাহেব জিগ্যেস করলেন ''তা মনচুর ভাই আপনি আরো অনেক অপরাধ করেছেন ,আমরা ইনভেস্টিগেশন করে জেনেছি বলুনতো কি কি''
''জ্বী, হ্যাঁ ! আমার এই কয়েদীজীবনই ভালো । বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার চুরি করে রফতানীর ব্যবসা করতাম ,খারাপ মহিলাদেরকে দিয়ে ব্যবসা করাতাম। দেশে আসর পর বিয়ের কাজ চলছিলো । বিদেশে থাকতে একটা বিয়ে করছিলাম । ওরে দিয়া প্রচুর টাকা কামাই করছি , দেশে আইসা যেদিন বিয়া করি সেদিনি আমাকে ধরা হয়। আমার চিন্তা ছিলো ওকে দিয়েও টাকা রোজগার করাবো ।আমার টাকা চাই ,টাকা । টাকার প্রতি আমার নেশা ।
বিদেশে যখন থাকতাম তখন প্রথমে কোনো কাজ পাচ্ছিলামনা । পরে জুতা সেলাইয়ের ব্যবসা নিলাম । বাঙালী সবাই আমাকে 'মুচি ভাই '' ডাকতো ( মনচুর থেকে মুচি)।রাগে অপমানে বললাম তাহলে দেশেই ভালো ছিলো ।তারপর মনটা তিক্ত হয়ে উঠে। শুরু করি এসব খারাপ ব্যবসা । অল্পদিনেই ডিজিটাল বাথরুমে পেশাব করার মতো অবস্থা হয়ে যায় ।
তারপর গ্রামে এসে নতুন মিশন চালু করার চেষ্টা করছিলাম । দরকার হয় আপন মা রে দিয়া । কিন্তু ধরা খেলাম ।
এই কয়েদীজীবন ই অনেক ভালো ।অনেক অনেক ভালো ।আমি নিজেও দুর্গন্ধযুক্ত , আবহাওয়াও দুর্গন্ধ ।দুজনে মিললে পবিত্র মানুষেরা ভীষণ কষ্ট পাবে। এখানে নামাজ ,কালাম কোরআন শরীফ পড়ি।প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে বড় একটা পাথর বুকের একপাশে রাইখ্যা ঘুমাই ।পচা , অপবিত্র রূহ কিছুটা শান্তি পাক । শরীর থেকে যেন আস্তে আস্তে বিষাক্ত ধূঁয়াটা বের হয়ে যায় । দু- একদিন রোজা রাখি । খোদার কাছে কান্নাকাটি করি। কত ভালো মানুষকে লোভ দেখাইয়া , জোর করাইয়া খারাপ কাজ করাইছি ।কান্নায় ভেঙে পড়লেন মনচুর মিয়া । আসলেই তিনি মানুষের মন চুরি করে থাকেন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ১০/০২/২০২০ভালো
-
চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী ১০/০২/২০২০এরকম লেখা প্রতি মুহূর্তে পড়ার আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।
-
আরাফাত বিন হাসান ০৮/০২/২০২০বাহ! চমৎকার!
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৮/০২/২০২০জীবন একটি পরীক্ষা
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৬/০২/২০২০চমৎকার
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৫/০২/২০২০ঘটনা নাটকীয়।
-
নুর হোসেন ০৫/০২/২০২০চমৎকার ভাবনা
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ০৫/০২/২০২০ভালো