ত্রিশূল
এখন পর্যন্ত ২৪ টা খুন করেছে চাকু শফিক । এদের মধ্যে শিশু-বৃদ্ধসহ সবাই আছে।
এলাকায় সে চাকু শফিক নামেই পরিচিত । সে ছোটবেলা থেকেই অশান্তিতে বড় হয়ে উঠেছে । ক্লাস টুতে থাকতে সিগারেট ধরে । সিগারেট খেয়ে কেমন বড় মানুষের মতো ধোয়া ছেড়ে চলে যেত । কেউ কিছু বলেনা বা বলতে পারেনা । কারণ , বাবার অঢেল সম্পত্তি। কিন্তু সেখানে অশান্তি । মা পাগল , বাবাও পাগল। মানসিক সমস্যা । তার চাচারা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন । সেই শোক আর চিন্তায় মাথামুন্ডা কয়েকটা বন্ধুর প্ররোচনায় ছোটখাটো ঝোপে লুকিয়ে সিগারেট খায় । প্রথম দিন প্রথমে কয়েকটা টান দিতেই খুকখুক করে কাশতে থাকে । পরে কাশি থামতেই আবার টান দেয় । এবার কিছুটা আরাম পায় । মাথার ভেতরটা খোলাসা হতে শুরু করে। মস্তিষ্কের উষ্ঞ কোষগুলো ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়।
আজ তার বাবা কিছুটা সুস্থ ছিলেন। স্কুলে আসার সময় ২০ টাকার একটা নোট গুঁজে দেন । চুল আঁচড়িয়ে দেন । মা তো একেবারেই পাগল । তাকে দেখলেই খিলখিল করে হাসেন। মায়ের হাসিটা খুব সুন্দর । মা হাসলে মনে হয় এক্ষুণি গিয়ে জড়িয়ে ধরি । কিন্তু আর জড়িয়ে ধরা হয়না । কাছে গেলে বাঘের মতো খামচাখামচি শুরু করে দেন । একমাত্র ছেলেটা কি খাবে কি করবে তার দিকে কারো খেয়াল নেই। কাজের মেয়ে একজন আছে । সে রেঁধে দিয়ে যায় । তবেই কেউ খায় কেউ খায়না। চাচা চাচী আলাদা হয়ে গেছে শফিকের মা-বাবা পাগল হওয়ার পর ।
আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে শফিক । যত বড় হচ্ছে তত আরও খারাপ হচ্ছে । ক্লাস ফাইভে উঠে গাঁজা খায় মদরিছ চাচার সাথে। মদরিছ চাচা গাঁজা খেতে ওস্তাদ। দুজনে বসে আরামসে গাঁজা খায় । ক্লাস ফাইভে রেজাল্ট খারাপ হয় শফিকের । শফিক দেখতে অনেক উঁচামোটা । ক্লাসের সবার চেয়ে বড় ।
এরপর সে পড়ালেখা ছেড়ে দেয় । কোনো কাজকাম নাই । বাপের অসুখটা এখনো ভালো হয় নাই। বাপের টাকা উড়ায় সে।
তারপর একদিন এলাকা ছেড়ে চলে যায় । যেদিন তার মা-বাবা খুন হন ।
চাচা- চাচী মিলে সম্পদ লুটে খায় ।
১০ বছর পর গ্রামে ফিরে আসে শফিক । পুরোদস্তুর মাস্তান হয়ে । ধারালো একটা চাকু থাকে সাথে সবসময় । চোখগুলো মদ খেতে খেতে তামাটে লাল হয়ে গেছে । চুল মেয়েদের মতো লম্বা হয়ে গে্ছে । হাতে একটা ব্রেসলেট । এলাকায় এখন মার-ডাঙ্গা করে বেড়ায় । চাকু শফিক নামে অল্পদিনেই স্বীকৃতি লাভ করে । বাড়ীতে যেতে পারেনি । বাড়ী-গাড়ী সব দখল করে নিয়েছেন তার চাচা-চাচী । বাজারের একটা পরিত্যক্ত দোকানে থাকে সে । সারারাত জুয়া খেলে । আর দুপুরে ঘুম থেকে উঠে চায়ের দোকানে সময় কাটায় । মারামারি করে কারণে অকারণে ।
তার আসল কাজ হচ্ছে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে যে তরকারীর মিনিট্রাক আসে সেটা আনা- নেওয়া আর তরকারির বস্তাগুলো নামানো তার কাজ। এর থেকে যা পায় তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে বাঁচে চাকু শফিক । আর খুনের অভ্যাসটা রপ্ত করে তার চাচাকে দিয়ে । এরপর থেকে অনেক অর্ডার পায় ।
তার চাচাকে সে খুন করে অদ্ভুত উপায়ে । একদিন তার চাচার নাম্বারে কল দিল ।
''হ্যালো''
''হ্যালো , কে বলছেন ?''
'' আমি শফিক ''
''শফিক! কি চাই তোমার ?''
'' আজ্ঞে আপনাকে চাই।''
'' আমাকে মানে ''
'' জ্বি আপনাকে ''
'' শুঁয়রের বাচ্চা ফোন রাখ''
''শালা মালাউনের বাচ্চা পিছনে চেয়ে দেখ''
ওপাশে শফিকের চাচা ঝট করে ঘুরে তাকালেন
'' কি! দেখতে পাচ্ছিস ?''
'' হুঁ আমার মৃত ভাই ''
শফিক জিগ্যেস করে ,''তুই এখন কোথায় ?''
'' বাথরুমে''
''এখন তোর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হবে । ''
তার চাচা বললেন , এর আগেই আমি চলে যাচ্ছি ।ছিটকিনি টানার শব্দ হলো কিন্তু বাথরুমের দরজা খুললনা ।
শফিক ফোনে হাসতে লাগল '' হা হা হা , বাইরে থেকে দরজা তালা মারা তুই বেরোবি কি করে । ''
শফিকের মৃত পাগল বাবা আস্তে আস্তে দেশলাই আর কেরোসিন নিয়ে এগোচ্ছেন । শফিকের চাচা ভয়ে হত বিহ্বল । হাত থেকে মোবাইল খসে পড়ল।
কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর যজ্ঞে আগুন দেয়া হলো । গগনবিদারী চিৎকার দিচ্ছেন শফিকের চাচা। বাইরে থেকে দরজা তালা মারা । তার চিৎকার শুনে সবাই এসে দেখেন দরজা তালা মারা । অদ্ভুত সেই তালা । এর চাবি কারো কাছে নেই। তালা ভাঙতে ভাঙতে ওদিককার খেলা সাংগ হয়ে গেছে ।
মোবাইল রাখার আগে চিৎকার দিয়ে হাসতে থাকে শফিক । ধন্যবাদ দেয় তার মৃত বাবার আত্নাকে । (উল্লেখ্য,তার মা-বাবাকে তার চাচা-চাচী মিলে নৃশংসভাবে খুন করেন )
এরপর গ্রামে এসে এলাকার চ্যাংড়া টাইপের পোলাপাইনদের শায়েস্তা করে । ২য় খুন সে নিজের হাতে করে ।
তার চাচার জ্বালানোর ঘটনা নিয়ে অনেক হেনতেন হয়েছে । কিন্তু শফিকের টিকিটির নাগালও কেউ পায়নি ।
এলাকায় একটা নতুন লোক এসেছে । বাড়ী কোথায় কেউ জানেনা । একটা ছোট্র চায়ের দোকান দেয় । মানুষের ভিড়ও ওখানে বেশী ।
আজ শফিক ঘুম থেকে উঠেছে সাড়ে সাতটায় । প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে । রাতে কিছু খেয়ে ঘুমায়নি । সারারাত জুয়া খেলেছে ।
সকালে উঠে গেল চায়ের দোকানে । দোকানদার বুড়ো খিটখিটে মেজাজের । চায়ের পানি এখনো বসিয়েছে , ফুটে নাই। চায়ের পাতা দিয়ে রেখেছে। আড়মোড়া ভেঙে শফিক বসল । বলল,'' চাচা এক কাও চা দিয়েন তো ।
১০ মিনিট পর চা দিল । দুইটা মালাই বিস্কুট দিল সাথে ।
শফিক বলল, '' চাচা বিস্কুট লাগবনা ।''
'' কেন?''
''বিস্কুট খাইনা ''
''চায়ের সাথে বিস্কুট না হলে কোনো মজা নাই। পানির মতো লাগে । ''
''চাচা আপনারে কইতেছি বিস্কুট লাগবনা ''
''তাইলে চা খাওয়ার দরকার নাই। আমার দোকানে চায়ের সাথে বিস্কুট খেতে হয় । কারণ জানেন না বুঝি ? বিস্কুটে নেশা মাখাইয়া দেই, খাইতে দারুণ লাগে । তাই সবাই জানে । এজন্য সবাই ঘনঘন আসে । এটা মুর তৈয়ারী , বুঝছ । ''
শফিক জিগ্যেস করে , ''বাচ্চাকাচ্চা যারা আছে তাদেরকেও দেন ?''
''হ দেই । সবাই আনন্দ পাক ।''
'' আপনার লাভ না ক্ষতি ''
''লাভ । মানুষের ভীড় বাড়ে । খারাপ জিনিসে সবারই টান থাকে । এক প্যাকেট বিস্কুটে ১০০ গ্রাম দিলেই হয় । কোনো চাক্ষুষ প্রমাণ নাই ।
" তয় চাচা আর কি করেন ?''
''নতুন একটা পদক্ষেপ চলতাছে । ''
শফিক জিগ্যেস করল ,'' কি?''
'' এলাকায় খারাপ মেয়ে আমদানি করতাছি ''
'' কাজটা কি ঠিক করতাছেন চাচা মিয়া ''
'' আরে বেটা সবাই বাহ বাহ দেয় আর তুই বলছিস কিনা ঠিক না বেঠিক । প্রতিদিন যে এত মানুষ আসে দোকানে , কত আলোচনা করে । এই দোকানই তো যোগসাজসের কারখানা । বর্তমান যুগে মানুষের কোটিপতি হওয়া চাই। টাকা দরকার । খারাপ কাজ করে অইলেও। এই চায়ের দোকানে মুর চুল কামাইবার টেকা হয়না । তাই নয়া অধ্যায় চালু করলাম । এখন লাখপতি হয়ে যাব। ''
'' চাচার ঘরে কি মা-বইন নাই '' জিগ্যেস করে শফিক ।
'' আছে । ওরাই তো এসব কাম করে ''
'' ওয়াক থু , আইচ্ছা চাচা আমারে এসব কথা না কইলেও পারতেন । মানে আমি যদি বিপক্ষে যাই''
'' আরে মিয়া তোমার হিয়ালের মতো লাল চোখ দেইখ্যা বুঝছি তুমি এসবের জন্য কান খোলা রেখে আস । আর তোমার মুখ থেকে তো ভদকার গন্ধ ভূরভূর করে বেরোচ্ছে । ''
'' এসব কাজ ভালো না চাচা । আমি এসব মারাত্নক ঘেন্না করি ।''
আমারও একটা ছোট বোন ছিল । বাবার সম্পত্তির জের ধরে চাচারা তাঁকেও খুন করে ফেলে । সে সময় ছোট ছিলাম । কিছু করতে পারি নাই। মরা বইনরে বুকে রাইখ্যা সারারাইত কান্দিসি ।
বুড়া কট্রর চেহারার লোকটা মুচকি হাসে তামাটে দাঁত বের করে । বলল,''বুঝবার পারছি চাচাজান, । এইসব অইবই। কিছু করার নাই । তয় তোমার বইন বাইচ্ছা থাকলে ভালো অইত আমার কামে লাগ ..........''
'' এই কুত্তার বাচ্চা কি বলিস ? এত জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে শফিক ।
সি.এন.জি স্ট্যান্ডের লোকেরা দৌড়ে আসে । কাঠের একটা চেয়ার হাতে তুলে নিয়েছে শফিক । বৃদ্ধ চা-ওয়ালা সরে গিয়েছে একপাশে ।মারাত্নক ভয় পেয়েছে। সি এন জি ড্রাইভাররা শফিককে ঝাপটে ধরেছে ।
'' শূঁয়োরের বাচ্চা , তোর মা- বইন চৌদ্দগুষ্ঠী জবাই করব । আমার মরা বইনরে লইয়া কি বলে । তোরে কাইলকার ভিতরে উপরে না পাঠাইলে তাইলে আমি চাকু শফিক না । জাহান্নামে পাঠামু তোরে , জুতাপেটা করমু । কত মাইনষেরে নষ্ট বানাইছিস । ''
এই ছাড় তোরা আমারে । ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয় শফিক । হনহন করে গজরাতে গজরাতে চলে যায় ।
চা-ওয়ালা খিটখিটে মেজাজের লোকটা মাথা নিচু করে বসে আছে ।
পরদিন সকালে বুড়ো লোকটার টুকরো করা লাশ রাস্তায় পাওয়া যায় ।
পুলিশ আসলে কিছু ঘুষটুষ দিয়ে বিদায় দেয়া হয় । মামলা দেওয়ার মতো কেউ নাই । তাছাড়া চাকু শফিককে ভয় পায়না এমন লোক খুব কম ।
এরপর তার খুনের ইতিহাস শুরু ।
এখন প্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি দেখায় ।
একদিন চার পাঁচজন বন্ধু মিলে মদ খেতে খেতে চলে যায় গ্রামের হিন্দুবাড়ীতে । হিন্দুবাড়ীতে বিয়ে চলছিল । লাল ,নীল , হলুদ , সবুজ বাতি জ্বলজ্বল করছে । ছোট ছোট বাচ্চারা আনন্দে লাফালাফি করছে । শফিকরা জানেনা এখানে কিভাবে এসেছে । নাকি খুনের গন্ধ তাদেরকে টেনে এনেছে । তার বাঁধানো গেইটের পাশে বসে মদ্যপান করছে । তারপর উঠে ওরা চারপাশ দেখতে থাকে । ঢুলুঢুলু চোখে স্বপ্নপুরীর মতো মনে হয় তাঁদের ।
হঠাৎ কে যেন শফিকের কলার ধরে ঠাস করে দুইটা চড় মারে । এই মূহুর্তে হাতে কোনো শক্তি নাই । চাকুটা বার করতে পারছেনা । থাপ্পড় খেয়ে মাথা কিছুটা জায়গায় আসে ।
'' এ্যাই মিয়াভাই থাপ্পড় দিলেন ক্যান ?''
'' এ্যাই শুঁয়োরের বাচ্চা , তোদের কোনো উৎসবে দেখছস আমরা যাই!আমাদের আনন্দের দিনে তোরা আইসা ভাব মারস । মাইয়াদের দেখস । আধুনিকতা করস । কেন? এই অত্যাচার ক্যান ? পরের উৎসবে আইসা ইচ্ছামত মদ খাওয়া । ছবি তোলা । মাইনসেরে দেখানো আমরা কি করতাসি ।''
'' আইচ্ছা ভাই ভূল হইয়া গেছে । আর করুমনা । মদ খাইয়া মাথা ঠিক রাখতে পারি নাই । আইসা পড়ছি । এহন যাই । ''
'' যাই মানে কি ? তিনজন অতিথির গহনা-পাতি পাইতেছেনা । পকেট মারছস শালা শুঁয়োরের বাচ্চা । ''
শফিক ঘুঁত করে উঠে ,'' মুখ সামলে কথা বল শালা মালাউনের বাচ্চা , শফিক না সরি চাকু শফিকরে তুই চিনসনা !''
'' কোথায় রাখছস গহনাগুলো তাড়াতাড়ি বাহির কর । নায় পিটুনী খাইয়া এইখানে পায়খানা করবি । ''
শফিকের সাথীরা বলল, ''আচ্ছা ভাই চেক করেন ''
লোকটা চারজনের শরীরের আঁতিপাতি খোঁজ করে , কিন্তু কিছুই পায়না । তারা চারজনই টলতেছে । মাথা ঘুরতেছে । ঐ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি চোরামুখো কালো কুতকুতা লোক ভয়ে ভয়ে গেইটের দিকে যায় । এটা খেয়াল করে শফিক । তার হাতে কাঁদা লাগানো । লোকটা কিছুক্ষণ যেয়ে আবার ফিরে তাকায় তাদের দিকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে সে ।
লোকটা শফিকদের কাছে কিছুই খুঁজে পায়নি । তবুও ছাড়তে চায়না । বলে ,'' চল আমার সাথে কোথায় লুকাইয়া রাখছস দেখায় দে । আইজকা তোদের নিস্তার নাই । ''
চোরামুখো লোকটা কার সাথে ফোন করার চেষ্টা করছে । শফিক তখন ঘুমঘুম চোখে বলে উঠে ভাই কোনো কাদামাখা জায়গা খুঁড়ে দেখেন । চকিতে ফিরে তাকায় লোকটা । তারপর ঘরের একটা ঝোপের আড়ালে কাদাপানি জমে থাকা মাটি খুঁড়ে গয়নার থলেটা পাওয়া গেল । আর কোথাও মাটি নেই । সারা উঠোন পাকা করা । এখানে ছোট্র একটা ঝোপ । পচাপানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে । ওখানে খুঁজতেই পাওয়া গেল । লোকটা চিৎকার করে সবাইকে জড়ো করল।
শফিক বলার চেষ্টা করল । '' ভাই আমরা চোর নই । ঐ যে গেটের সামনে দাঁড়ানো , ওর হাতে কাঁদা ছিলো তাই দেখে বুঝলাম । ''
সবাই গেটের দিকে তাকালো কেউ নেই। কিন্তু ভীড়ের মাঝে চোরামুখো শয়তানটাকে দেখা গেল । তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । গেলো কোথায় হারামজাদা ।
লোকটা ধমকে উঠল , '' চুপ শূয়োঁরের বাচ্চা । চুরি করে আবার বড় বড় কথা । মদ খেলে সবাই সত্য কথা বলে । তুই চুরি করে সত্য কথা বলছিস ।''
শফিক বলল , '' ঐ যে ওই কালো লোকটার হাতে কাদা দেখছিলুম । ঐ মনে হয় চুরি করছিলো ''
'' চুপ বেয়াদব , ও হচ্ছে আমাদের প্রঘোষ ,কনের ভাই । গ্রাম্য সিনেমার নায়ক হতে যাচ্ছে । বড় একটা ছবিতে অভিনয় করবে । আর ও বলে কিনা চুর । ''
এই ওদের পিটুনি লাগা । শূঁয়োরের বাচ্চাদের ।
এমনিতেই চোখ বুজে আসছে । সারা শরীর অবসন্ন । তার উপর ময়দার বস্তার মতো মানুষের লাথ-ঘুষি চলছে নাকে মুখে পেটে ।
পরদিন সকালে বাজারে বিরাট বড় সভা করে চুরির বিচার করা হলো । সারা গ্রামে শফিকের নাম ''চুর শফিক '' হয়ে গেল । এখন তাঁকে দেখে কেউ ভয় পায়না । উল্টো সে ভয়ে ভয়ে থাকে ।
সারা বাজারে পোস্টার লেখা আছে , '' চুর শফিক ও তার সহযোগীদের গ্রাম থেকে বিতাড়িত করা চাই '' । কয়েকদিন পরে একটা ডাকাতির ঘটনা ঘটে । এতেও দোষী হয় শফিক । গ্রামে টিকে থাকাই তার জন্য মুশকিল হয়ে গেল । ঐ হারামীর বাচ্চাকে ( কনের ভাই যে চুরটা তাদের দোষী বানিয়েছে ) উপরে না পাঠাইতে পারলে তার মনে শান্তি নাই। গাছে গাছে , দেয়ালে দেয়ালে তার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো । দোকানঘর থেকে সে এখন বেরোতে পারেনা । যেখানেই যায় চুরির আর ডাকাতির গল্প । চা-ওয়ালারা তাঁকে চা দেয়না , চুরের আবার চা কি লাত্তি খাওয়া দরকার । পান খেতে চাইলে জর্দা দেয়না । তার সাথে মশকরা করে । যে শফিকের চোখ দেখে অনেকে বিলাই হয়ে যায় সে শফিকের সাথে মশকরা । জর্দা চাইলে সামান্য দিয়েই কৌটা লাগিয়ে দোকানদার বলে ,'' জর্দার শর্ট , এহন একটু পেশাব কইরা আসি । '' চুর শফিক না হয়ে যদি চাকু শফিক হত তাহলে পুরো জর্দার কৌটাই হয়তো ঢেলে দিত ।
এখন একদিন সুযোগ পেল ঐ হিন্দুবাড়ীর চামারটাকে । লোকটা বাজার করতে এসেছিল । এক সুযোগে শফিকরা চার-পাঁচজন মিলে তাঁকে ধরে দূরে নিয়ে যায় । সেখানে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখে তাঁকে ( ঐ চুরটাকে) । রাতে এক বালতি পানি নিয়ে চার-পাঁচজনসহ সেখানে যায় । ঘন একটা জংগলের মধ্যে ।
লোকটার পাশে এখনও সওদার ব্যাগ পড়ে আছে । লোকটা শ্বাসবন্ধের মতো ছটফট করছে । পরানে শান্তি নাই।
শফিক বালতিটা রাখে । কিছু নীতিকথা শুনিয়ে মাথাটা বালতির কাছে আনে । প্রথমে ১০ সেকেন্ড চুবায় । মাথা ঝাকড়া দিয়ে উঠে লোকটা । হাউমাউ করে কাঁদতেছে আর বলছে , মাইরেন না ভাই আমারে মাইরেন না । পাগলের মতো চিৎকার করছে লোকটা ।
এবার ১০ মিনিট রাখলো ।
এখন ঠিক কুকুরের মতো চিৎকার করছে । যেন শ্বাসনালী এক্ষুণি ফেটে পড়বে । পৃথিবীর শেষ নি:শ্বাস নেওয়ার আগেই মাথা চুবিয়ে আধাঘন্টা রাখলো শফিক। আর মাথা তুললনা লোকটা । মরে শেষ । লাশটা জংগলে পুঁতে বাজারে এসে ঘুমিয়ে পড়ে শফিক ।
এরপর থেকে যার তার সাথে , যখন ইচ্ছা মার করে । সে মারতে পারে খুব । চাকু নামটা হারালেও চাকুটা হারায়নি । মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা বখাটেদের সাথে মারামারি করে । দাপট দেখিয়ে চলা মানুষের সাথে গা ঠেলা দিয়ে চলে । তবে কারো মনে ভয় ঢুকাতে পারেনি । বেশী বেশী মারামারি করলেও কেউ তাঁকে তোয়াক্কাও করেনা । মাঝে মাঝে তার বিচারও হয় । বিচারে বুক উঁচিয়ে কথা বলতে পারেনা , থাপ্পড় খেতে হয় । আগের চোখ রাঙানিতে ভাটা পড়েছে । এখন যত মারামারি করে তত তাঁকে আরো বেশি চোর ভাবা হয় । শফিকের হাতে মার খেয়েও সবাই একটা কথা বলে ,'' চুরের মার বড় গলা । ঘনঘন বিচার হয় তাঁর ।
কোনো খারাপ কাজে চাকু দিয়ে বাঁধা দেখালেওতাকে কেউ ডরায়না । ধাক্কা দিয়ে চলে । সামনে কিছু বলেনা ।কিন্তু একলা পেলে অনেকসময় সুদে আসলে পোষানো হয় তাঁর উপর । মোদ্দাকথা , তাঁকে সামনে মারামারি করতে দেওয়া হয় কিন্তু পরে জুতাপেটা করা হয় । সবাই এতে দারুণ মজা পায়। চোরটা বড়ত্ব দেখায় আবার পরে জুতার বাড়ী খায় । কেমন লজ্জার ব্যাপার । প্রথমে মেরে সে ঝাল মিটায় পরে সবার সামনে , ছোট বড় বাচ্চাকাচ্চার সামনে তাকে লজ্জা দিয়ে মার দেওয়া হয় । তাকে ওয়ারেন্ট দেওয়া হয়েছে , আর যদি সে মারামারি করে তবে তাঁকে বিনা নোটিশে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে ।
কিন্তু মারামারি সে ছাড়তে পারেনা । বাইরের এলাকায় জমিজমা নিয়ে খুন করার কিছু অর্ডার পায় সেখানে চাকু শফিক নামটা এখনো টিকে আছে । মাঝে মাঝে অর্ডার হয় । তাকে যেতে হয় ।
একদিন চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে মারামারি হয় । আচ্ছামতো পেটায় ওকে । স্কুলের একটা মেয়ের ওড়নায় ধরে টান দিয়েছিলো । শফিক জোরছে দুইটা থাপ্পড় কানের নিচে লাগিয়েছিলো । চেয়ারম্যান সাহেব সম্মুখে চাকু শফিককে কিছু বলতে ডরায় । একসময়কার ইয়ার ছিল শফিক । কিন্তু শফিককে চিরতরে উপরে পাঠিয়ে দিতে পূর্বপাড়ার নামকরা সন্ত্রাসীদের ভাড়া করেন । উল্লেখ্য , পূর্বপাড়ার বাসিন্দা স্বয়ং শফিক । ওরা তাঁকে মারতে এসে উল্টো জখম হয় । শফিক রিভলবার ভাড়া করে এনেছিল শহর থেকে । এটা দিয়ে গুলি চালায় । আচ্ছামতো ধোলাই খেয়ে ওরা হসপিটালে ভর্তি হয়। হসপিটালে দুর্ভাগ্যবশত একজন মারা যায় । শয়তানরা আড়ি পেতে ছিল চারপাশে । খুন নিয়ে দুইপাড়া , পূর্বপাড়া আর পশ্চিমপাড়ার মধ্যে মারামারি বাঁধে । পূর্বপাড়ার মানুষ বলে , '' পশ্চিমপাড়ার মানুষ তাদের ভাড়া নেয় , খুনের দায় তাদের স্বীকার করতে হবে । চেয়ারম্যানের ছেলেকে মেরেছে , চেয়ারম্যানের লোকজন দেখবে । আমাদের ছেলেদের নিয়ে মারামারি করাবে কেন । তাও আবার মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি করার পন্থা । শফিক তো আমাদের একজন । টাকার লোভে জঘন্য কাজ করিয়েছে । দেখে নেব । ''
পশ্চিম পাড়ার মানুষ ভয় পেয়ে যায় । শেষে তারা বিচারে যায় । বিচারে একটা সমঝোতা হয় । যে এই খুন করেছে তাঁকে দুইপাড়ার লোকজন মিলে পায়ে দলে খুন করাই কর্তব্য । এরকম একটা জঘন্য মানুষ পৃথিবীতে না থাকাই ভালো । পরদিন সকালে সারাবাজারে পিনপতন নীরবতা । শফিক আজকে সারা বাজারে পোস্টার লাগিয়েছে তার নামে '' চাকু শফিক লিখে । সকালে তাড়াতাড়ি উঠেছে শফিক । ফজরের নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ে । তার বাবার আত্না তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । একটু পরে দূর থেকে হাকডাক শোনা যায় । শফিকের বাবা চাইলে শফিককে বাঁচাতে পারে , কিন্তু সেটা করবেনা । এসব মানুষকে শাস্তি দিতে হলে শফিককে তার চাই । এবং এটা সম্ভব তার মৃত্যুর মাধ্যমে । তাই বারবার ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছে ।
শফিক মনে মনে হাসছে । একটু পরে তার ছোট্র ঘরটাতে এসে অসংখ্যা মানুষ লাথি দিতে থাকে । তারপর তাকে আছাড় আর তলোয়ারের খোঁচায় মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় । সবাই যখন বেরিয়ে আসবে তখন পিছনে গ্রামের দিকে বিকট শব্দে ক্রমান্বয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকবে । ভয়ানক চিৎকার চেঁচামেচি । আবারও বিস্ফোরণ আগুনের স্ফুলিংগ উড়ছে । সব মানুষ ঐ দিকে দৌড়ায় । সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছে শফিক । সে জানে তাকে খুন করা হবে । তাই আগের দিন বোমা লাগিয়েছিল চেয়ারম্যানসহ বিখ্যাত মানুষদের বাড়ীতে । তাকে মারার সময় এক ফাঁকে সে বোতাম টিপে দেয় । তারপর সে মারা যায় । সারা মানুষ ঐ দিকে দৌড়ে যায় । সব শেষ প্রায় ২০ টি বাড়ি ছারখার । অনেক মানুষ আর গরু মারা গেছে ।
চেয়ারম্যান সাহেবের ঘুমন্ত বউ-বাচ্চা সব পুড়ে ছাই । চেয়ারম্যান সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন , এ কি হলো !
তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললেন , সত্যিই হে চাকু শফিক ।
লোকজন বলাবলি করছে , '' হারামীর বাচ্চা আসলেই জানোয়ার । জানোয়ারের মতো কাম করছে । ''
সারা বাজারে পোস্টারগুলো এখনও অক্ষত । লেখা , চাকু শফিক '' জিন্দাবাদ , জিন্দাবাদ । ''
এলাকায় সে চাকু শফিক নামেই পরিচিত । সে ছোটবেলা থেকেই অশান্তিতে বড় হয়ে উঠেছে । ক্লাস টুতে থাকতে সিগারেট ধরে । সিগারেট খেয়ে কেমন বড় মানুষের মতো ধোয়া ছেড়ে চলে যেত । কেউ কিছু বলেনা বা বলতে পারেনা । কারণ , বাবার অঢেল সম্পত্তি। কিন্তু সেখানে অশান্তি । মা পাগল , বাবাও পাগল। মানসিক সমস্যা । তার চাচারা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন । সেই শোক আর চিন্তায় মাথামুন্ডা কয়েকটা বন্ধুর প্ররোচনায় ছোটখাটো ঝোপে লুকিয়ে সিগারেট খায় । প্রথম দিন প্রথমে কয়েকটা টান দিতেই খুকখুক করে কাশতে থাকে । পরে কাশি থামতেই আবার টান দেয় । এবার কিছুটা আরাম পায় । মাথার ভেতরটা খোলাসা হতে শুরু করে। মস্তিষ্কের উষ্ঞ কোষগুলো ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়।
আজ তার বাবা কিছুটা সুস্থ ছিলেন। স্কুলে আসার সময় ২০ টাকার একটা নোট গুঁজে দেন । চুল আঁচড়িয়ে দেন । মা তো একেবারেই পাগল । তাকে দেখলেই খিলখিল করে হাসেন। মায়ের হাসিটা খুব সুন্দর । মা হাসলে মনে হয় এক্ষুণি গিয়ে জড়িয়ে ধরি । কিন্তু আর জড়িয়ে ধরা হয়না । কাছে গেলে বাঘের মতো খামচাখামচি শুরু করে দেন । একমাত্র ছেলেটা কি খাবে কি করবে তার দিকে কারো খেয়াল নেই। কাজের মেয়ে একজন আছে । সে রেঁধে দিয়ে যায় । তবেই কেউ খায় কেউ খায়না। চাচা চাচী আলাদা হয়ে গেছে শফিকের মা-বাবা পাগল হওয়ার পর ।
আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে শফিক । যত বড় হচ্ছে তত আরও খারাপ হচ্ছে । ক্লাস ফাইভে উঠে গাঁজা খায় মদরিছ চাচার সাথে। মদরিছ চাচা গাঁজা খেতে ওস্তাদ। দুজনে বসে আরামসে গাঁজা খায় । ক্লাস ফাইভে রেজাল্ট খারাপ হয় শফিকের । শফিক দেখতে অনেক উঁচামোটা । ক্লাসের সবার চেয়ে বড় ।
এরপর সে পড়ালেখা ছেড়ে দেয় । কোনো কাজকাম নাই । বাপের অসুখটা এখনো ভালো হয় নাই। বাপের টাকা উড়ায় সে।
তারপর একদিন এলাকা ছেড়ে চলে যায় । যেদিন তার মা-বাবা খুন হন ।
চাচা- চাচী মিলে সম্পদ লুটে খায় ।
১০ বছর পর গ্রামে ফিরে আসে শফিক । পুরোদস্তুর মাস্তান হয়ে । ধারালো একটা চাকু থাকে সাথে সবসময় । চোখগুলো মদ খেতে খেতে তামাটে লাল হয়ে গেছে । চুল মেয়েদের মতো লম্বা হয়ে গে্ছে । হাতে একটা ব্রেসলেট । এলাকায় এখন মার-ডাঙ্গা করে বেড়ায় । চাকু শফিক নামে অল্পদিনেই স্বীকৃতি লাভ করে । বাড়ীতে যেতে পারেনি । বাড়ী-গাড়ী সব দখল করে নিয়েছেন তার চাচা-চাচী । বাজারের একটা পরিত্যক্ত দোকানে থাকে সে । সারারাত জুয়া খেলে । আর দুপুরে ঘুম থেকে উঠে চায়ের দোকানে সময় কাটায় । মারামারি করে কারণে অকারণে ।
তার আসল কাজ হচ্ছে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে যে তরকারীর মিনিট্রাক আসে সেটা আনা- নেওয়া আর তরকারির বস্তাগুলো নামানো তার কাজ। এর থেকে যা পায় তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে বাঁচে চাকু শফিক । আর খুনের অভ্যাসটা রপ্ত করে তার চাচাকে দিয়ে । এরপর থেকে অনেক অর্ডার পায় ।
তার চাচাকে সে খুন করে অদ্ভুত উপায়ে । একদিন তার চাচার নাম্বারে কল দিল ।
''হ্যালো''
''হ্যালো , কে বলছেন ?''
'' আমি শফিক ''
''শফিক! কি চাই তোমার ?''
'' আজ্ঞে আপনাকে চাই।''
'' আমাকে মানে ''
'' জ্বি আপনাকে ''
'' শুঁয়রের বাচ্চা ফোন রাখ''
''শালা মালাউনের বাচ্চা পিছনে চেয়ে দেখ''
ওপাশে শফিকের চাচা ঝট করে ঘুরে তাকালেন
'' কি! দেখতে পাচ্ছিস ?''
'' হুঁ আমার মৃত ভাই ''
শফিক জিগ্যেস করে ,''তুই এখন কোথায় ?''
'' বাথরুমে''
''এখন তোর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হবে । ''
তার চাচা বললেন , এর আগেই আমি চলে যাচ্ছি ।ছিটকিনি টানার শব্দ হলো কিন্তু বাথরুমের দরজা খুললনা ।
শফিক ফোনে হাসতে লাগল '' হা হা হা , বাইরে থেকে দরজা তালা মারা তুই বেরোবি কি করে । ''
শফিকের মৃত পাগল বাবা আস্তে আস্তে দেশলাই আর কেরোসিন নিয়ে এগোচ্ছেন । শফিকের চাচা ভয়ে হত বিহ্বল । হাত থেকে মোবাইল খসে পড়ল।
কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর যজ্ঞে আগুন দেয়া হলো । গগনবিদারী চিৎকার দিচ্ছেন শফিকের চাচা। বাইরে থেকে দরজা তালা মারা । তার চিৎকার শুনে সবাই এসে দেখেন দরজা তালা মারা । অদ্ভুত সেই তালা । এর চাবি কারো কাছে নেই। তালা ভাঙতে ভাঙতে ওদিককার খেলা সাংগ হয়ে গেছে ।
মোবাইল রাখার আগে চিৎকার দিয়ে হাসতে থাকে শফিক । ধন্যবাদ দেয় তার মৃত বাবার আত্নাকে । (উল্লেখ্য,তার মা-বাবাকে তার চাচা-চাচী মিলে নৃশংসভাবে খুন করেন )
এরপর গ্রামে এসে এলাকার চ্যাংড়া টাইপের পোলাপাইনদের শায়েস্তা করে । ২য় খুন সে নিজের হাতে করে ।
তার চাচার জ্বালানোর ঘটনা নিয়ে অনেক হেনতেন হয়েছে । কিন্তু শফিকের টিকিটির নাগালও কেউ পায়নি ।
এলাকায় একটা নতুন লোক এসেছে । বাড়ী কোথায় কেউ জানেনা । একটা ছোট্র চায়ের দোকান দেয় । মানুষের ভিড়ও ওখানে বেশী ।
আজ শফিক ঘুম থেকে উঠেছে সাড়ে সাতটায় । প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে । রাতে কিছু খেয়ে ঘুমায়নি । সারারাত জুয়া খেলেছে ।
সকালে উঠে গেল চায়ের দোকানে । দোকানদার বুড়ো খিটখিটে মেজাজের । চায়ের পানি এখনো বসিয়েছে , ফুটে নাই। চায়ের পাতা দিয়ে রেখেছে। আড়মোড়া ভেঙে শফিক বসল । বলল,'' চাচা এক কাও চা দিয়েন তো ।
১০ মিনিট পর চা দিল । দুইটা মালাই বিস্কুট দিল সাথে ।
শফিক বলল, '' চাচা বিস্কুট লাগবনা ।''
'' কেন?''
''বিস্কুট খাইনা ''
''চায়ের সাথে বিস্কুট না হলে কোনো মজা নাই। পানির মতো লাগে । ''
''চাচা আপনারে কইতেছি বিস্কুট লাগবনা ''
''তাইলে চা খাওয়ার দরকার নাই। আমার দোকানে চায়ের সাথে বিস্কুট খেতে হয় । কারণ জানেন না বুঝি ? বিস্কুটে নেশা মাখাইয়া দেই, খাইতে দারুণ লাগে । তাই সবাই জানে । এজন্য সবাই ঘনঘন আসে । এটা মুর তৈয়ারী , বুঝছ । ''
শফিক জিগ্যেস করে , ''বাচ্চাকাচ্চা যারা আছে তাদেরকেও দেন ?''
''হ দেই । সবাই আনন্দ পাক ।''
'' আপনার লাভ না ক্ষতি ''
''লাভ । মানুষের ভীড় বাড়ে । খারাপ জিনিসে সবারই টান থাকে । এক প্যাকেট বিস্কুটে ১০০ গ্রাম দিলেই হয় । কোনো চাক্ষুষ প্রমাণ নাই ।
" তয় চাচা আর কি করেন ?''
''নতুন একটা পদক্ষেপ চলতাছে । ''
শফিক জিগ্যেস করল ,'' কি?''
'' এলাকায় খারাপ মেয়ে আমদানি করতাছি ''
'' কাজটা কি ঠিক করতাছেন চাচা মিয়া ''
'' আরে বেটা সবাই বাহ বাহ দেয় আর তুই বলছিস কিনা ঠিক না বেঠিক । প্রতিদিন যে এত মানুষ আসে দোকানে , কত আলোচনা করে । এই দোকানই তো যোগসাজসের কারখানা । বর্তমান যুগে মানুষের কোটিপতি হওয়া চাই। টাকা দরকার । খারাপ কাজ করে অইলেও। এই চায়ের দোকানে মুর চুল কামাইবার টেকা হয়না । তাই নয়া অধ্যায় চালু করলাম । এখন লাখপতি হয়ে যাব। ''
'' চাচার ঘরে কি মা-বইন নাই '' জিগ্যেস করে শফিক ।
'' আছে । ওরাই তো এসব কাম করে ''
'' ওয়াক থু , আইচ্ছা চাচা আমারে এসব কথা না কইলেও পারতেন । মানে আমি যদি বিপক্ষে যাই''
'' আরে মিয়া তোমার হিয়ালের মতো লাল চোখ দেইখ্যা বুঝছি তুমি এসবের জন্য কান খোলা রেখে আস । আর তোমার মুখ থেকে তো ভদকার গন্ধ ভূরভূর করে বেরোচ্ছে । ''
'' এসব কাজ ভালো না চাচা । আমি এসব মারাত্নক ঘেন্না করি ।''
আমারও একটা ছোট বোন ছিল । বাবার সম্পত্তির জের ধরে চাচারা তাঁকেও খুন করে ফেলে । সে সময় ছোট ছিলাম । কিছু করতে পারি নাই। মরা বইনরে বুকে রাইখ্যা সারারাইত কান্দিসি ।
বুড়া কট্রর চেহারার লোকটা মুচকি হাসে তামাটে দাঁত বের করে । বলল,''বুঝবার পারছি চাচাজান, । এইসব অইবই। কিছু করার নাই । তয় তোমার বইন বাইচ্ছা থাকলে ভালো অইত আমার কামে লাগ ..........''
'' এই কুত্তার বাচ্চা কি বলিস ? এত জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে শফিক ।
সি.এন.জি স্ট্যান্ডের লোকেরা দৌড়ে আসে । কাঠের একটা চেয়ার হাতে তুলে নিয়েছে শফিক । বৃদ্ধ চা-ওয়ালা সরে গিয়েছে একপাশে ।মারাত্নক ভয় পেয়েছে। সি এন জি ড্রাইভাররা শফিককে ঝাপটে ধরেছে ।
'' শূঁয়োরের বাচ্চা , তোর মা- বইন চৌদ্দগুষ্ঠী জবাই করব । আমার মরা বইনরে লইয়া কি বলে । তোরে কাইলকার ভিতরে উপরে না পাঠাইলে তাইলে আমি চাকু শফিক না । জাহান্নামে পাঠামু তোরে , জুতাপেটা করমু । কত মাইনষেরে নষ্ট বানাইছিস । ''
এই ছাড় তোরা আমারে । ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয় শফিক । হনহন করে গজরাতে গজরাতে চলে যায় ।
চা-ওয়ালা খিটখিটে মেজাজের লোকটা মাথা নিচু করে বসে আছে ।
পরদিন সকালে বুড়ো লোকটার টুকরো করা লাশ রাস্তায় পাওয়া যায় ।
পুলিশ আসলে কিছু ঘুষটুষ দিয়ে বিদায় দেয়া হয় । মামলা দেওয়ার মতো কেউ নাই । তাছাড়া চাকু শফিককে ভয় পায়না এমন লোক খুব কম ।
এরপর তার খুনের ইতিহাস শুরু ।
এখন প্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি দেখায় ।
একদিন চার পাঁচজন বন্ধু মিলে মদ খেতে খেতে চলে যায় গ্রামের হিন্দুবাড়ীতে । হিন্দুবাড়ীতে বিয়ে চলছিল । লাল ,নীল , হলুদ , সবুজ বাতি জ্বলজ্বল করছে । ছোট ছোট বাচ্চারা আনন্দে লাফালাফি করছে । শফিকরা জানেনা এখানে কিভাবে এসেছে । নাকি খুনের গন্ধ তাদেরকে টেনে এনেছে । তার বাঁধানো গেইটের পাশে বসে মদ্যপান করছে । তারপর উঠে ওরা চারপাশ দেখতে থাকে । ঢুলুঢুলু চোখে স্বপ্নপুরীর মতো মনে হয় তাঁদের ।
হঠাৎ কে যেন শফিকের কলার ধরে ঠাস করে দুইটা চড় মারে । এই মূহুর্তে হাতে কোনো শক্তি নাই । চাকুটা বার করতে পারছেনা । থাপ্পড় খেয়ে মাথা কিছুটা জায়গায় আসে ।
'' এ্যাই মিয়াভাই থাপ্পড় দিলেন ক্যান ?''
'' এ্যাই শুঁয়োরের বাচ্চা , তোদের কোনো উৎসবে দেখছস আমরা যাই!আমাদের আনন্দের দিনে তোরা আইসা ভাব মারস । মাইয়াদের দেখস । আধুনিকতা করস । কেন? এই অত্যাচার ক্যান ? পরের উৎসবে আইসা ইচ্ছামত মদ খাওয়া । ছবি তোলা । মাইনসেরে দেখানো আমরা কি করতাসি ।''
'' আইচ্ছা ভাই ভূল হইয়া গেছে । আর করুমনা । মদ খাইয়া মাথা ঠিক রাখতে পারি নাই । আইসা পড়ছি । এহন যাই । ''
'' যাই মানে কি ? তিনজন অতিথির গহনা-পাতি পাইতেছেনা । পকেট মারছস শালা শুঁয়োরের বাচ্চা । ''
শফিক ঘুঁত করে উঠে ,'' মুখ সামলে কথা বল শালা মালাউনের বাচ্চা , শফিক না সরি চাকু শফিকরে তুই চিনসনা !''
'' কোথায় রাখছস গহনাগুলো তাড়াতাড়ি বাহির কর । নায় পিটুনী খাইয়া এইখানে পায়খানা করবি । ''
শফিকের সাথীরা বলল, ''আচ্ছা ভাই চেক করেন ''
লোকটা চারজনের শরীরের আঁতিপাতি খোঁজ করে , কিন্তু কিছুই পায়না । তারা চারজনই টলতেছে । মাথা ঘুরতেছে । ঐ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি চোরামুখো কালো কুতকুতা লোক ভয়ে ভয়ে গেইটের দিকে যায় । এটা খেয়াল করে শফিক । তার হাতে কাঁদা লাগানো । লোকটা কিছুক্ষণ যেয়ে আবার ফিরে তাকায় তাদের দিকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে সে ।
লোকটা শফিকদের কাছে কিছুই খুঁজে পায়নি । তবুও ছাড়তে চায়না । বলে ,'' চল আমার সাথে কোথায় লুকাইয়া রাখছস দেখায় দে । আইজকা তোদের নিস্তার নাই । ''
চোরামুখো লোকটা কার সাথে ফোন করার চেষ্টা করছে । শফিক তখন ঘুমঘুম চোখে বলে উঠে ভাই কোনো কাদামাখা জায়গা খুঁড়ে দেখেন । চকিতে ফিরে তাকায় লোকটা । তারপর ঘরের একটা ঝোপের আড়ালে কাদাপানি জমে থাকা মাটি খুঁড়ে গয়নার থলেটা পাওয়া গেল । আর কোথাও মাটি নেই । সারা উঠোন পাকা করা । এখানে ছোট্র একটা ঝোপ । পচাপানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে । ওখানে খুঁজতেই পাওয়া গেল । লোকটা চিৎকার করে সবাইকে জড়ো করল।
শফিক বলার চেষ্টা করল । '' ভাই আমরা চোর নই । ঐ যে গেটের সামনে দাঁড়ানো , ওর হাতে কাঁদা ছিলো তাই দেখে বুঝলাম । ''
সবাই গেটের দিকে তাকালো কেউ নেই। কিন্তু ভীড়ের মাঝে চোরামুখো শয়তানটাকে দেখা গেল । তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । গেলো কোথায় হারামজাদা ।
লোকটা ধমকে উঠল , '' চুপ শূয়োঁরের বাচ্চা । চুরি করে আবার বড় বড় কথা । মদ খেলে সবাই সত্য কথা বলে । তুই চুরি করে সত্য কথা বলছিস ।''
শফিক বলল , '' ঐ যে ওই কালো লোকটার হাতে কাদা দেখছিলুম । ঐ মনে হয় চুরি করছিলো ''
'' চুপ বেয়াদব , ও হচ্ছে আমাদের প্রঘোষ ,কনের ভাই । গ্রাম্য সিনেমার নায়ক হতে যাচ্ছে । বড় একটা ছবিতে অভিনয় করবে । আর ও বলে কিনা চুর । ''
এই ওদের পিটুনি লাগা । শূঁয়োরের বাচ্চাদের ।
এমনিতেই চোখ বুজে আসছে । সারা শরীর অবসন্ন । তার উপর ময়দার বস্তার মতো মানুষের লাথ-ঘুষি চলছে নাকে মুখে পেটে ।
পরদিন সকালে বাজারে বিরাট বড় সভা করে চুরির বিচার করা হলো । সারা গ্রামে শফিকের নাম ''চুর শফিক '' হয়ে গেল । এখন তাঁকে দেখে কেউ ভয় পায়না । উল্টো সে ভয়ে ভয়ে থাকে ।
সারা বাজারে পোস্টার লেখা আছে , '' চুর শফিক ও তার সহযোগীদের গ্রাম থেকে বিতাড়িত করা চাই '' । কয়েকদিন পরে একটা ডাকাতির ঘটনা ঘটে । এতেও দোষী হয় শফিক । গ্রামে টিকে থাকাই তার জন্য মুশকিল হয়ে গেল । ঐ হারামীর বাচ্চাকে ( কনের ভাই যে চুরটা তাদের দোষী বানিয়েছে ) উপরে না পাঠাইতে পারলে তার মনে শান্তি নাই। গাছে গাছে , দেয়ালে দেয়ালে তার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো । দোকানঘর থেকে সে এখন বেরোতে পারেনা । যেখানেই যায় চুরির আর ডাকাতির গল্প । চা-ওয়ালারা তাঁকে চা দেয়না , চুরের আবার চা কি লাত্তি খাওয়া দরকার । পান খেতে চাইলে জর্দা দেয়না । তার সাথে মশকরা করে । যে শফিকের চোখ দেখে অনেকে বিলাই হয়ে যায় সে শফিকের সাথে মশকরা । জর্দা চাইলে সামান্য দিয়েই কৌটা লাগিয়ে দোকানদার বলে ,'' জর্দার শর্ট , এহন একটু পেশাব কইরা আসি । '' চুর শফিক না হয়ে যদি চাকু শফিক হত তাহলে পুরো জর্দার কৌটাই হয়তো ঢেলে দিত ।
এখন একদিন সুযোগ পেল ঐ হিন্দুবাড়ীর চামারটাকে । লোকটা বাজার করতে এসেছিল । এক সুযোগে শফিকরা চার-পাঁচজন মিলে তাঁকে ধরে দূরে নিয়ে যায় । সেখানে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখে তাঁকে ( ঐ চুরটাকে) । রাতে এক বালতি পানি নিয়ে চার-পাঁচজনসহ সেখানে যায় । ঘন একটা জংগলের মধ্যে ।
লোকটার পাশে এখনও সওদার ব্যাগ পড়ে আছে । লোকটা শ্বাসবন্ধের মতো ছটফট করছে । পরানে শান্তি নাই।
শফিক বালতিটা রাখে । কিছু নীতিকথা শুনিয়ে মাথাটা বালতির কাছে আনে । প্রথমে ১০ সেকেন্ড চুবায় । মাথা ঝাকড়া দিয়ে উঠে লোকটা । হাউমাউ করে কাঁদতেছে আর বলছে , মাইরেন না ভাই আমারে মাইরেন না । পাগলের মতো চিৎকার করছে লোকটা ।
এবার ১০ মিনিট রাখলো ।
এখন ঠিক কুকুরের মতো চিৎকার করছে । যেন শ্বাসনালী এক্ষুণি ফেটে পড়বে । পৃথিবীর শেষ নি:শ্বাস নেওয়ার আগেই মাথা চুবিয়ে আধাঘন্টা রাখলো শফিক। আর মাথা তুললনা লোকটা । মরে শেষ । লাশটা জংগলে পুঁতে বাজারে এসে ঘুমিয়ে পড়ে শফিক ।
এরপর থেকে যার তার সাথে , যখন ইচ্ছা মার করে । সে মারতে পারে খুব । চাকু নামটা হারালেও চাকুটা হারায়নি । মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা বখাটেদের সাথে মারামারি করে । দাপট দেখিয়ে চলা মানুষের সাথে গা ঠেলা দিয়ে চলে । তবে কারো মনে ভয় ঢুকাতে পারেনি । বেশী বেশী মারামারি করলেও কেউ তাঁকে তোয়াক্কাও করেনা । মাঝে মাঝে তার বিচারও হয় । বিচারে বুক উঁচিয়ে কথা বলতে পারেনা , থাপ্পড় খেতে হয় । আগের চোখ রাঙানিতে ভাটা পড়েছে । এখন যত মারামারি করে তত তাঁকে আরো বেশি চোর ভাবা হয় । শফিকের হাতে মার খেয়েও সবাই একটা কথা বলে ,'' চুরের মার বড় গলা । ঘনঘন বিচার হয় তাঁর ।
কোনো খারাপ কাজে চাকু দিয়ে বাঁধা দেখালেওতাকে কেউ ডরায়না । ধাক্কা দিয়ে চলে । সামনে কিছু বলেনা ।কিন্তু একলা পেলে অনেকসময় সুদে আসলে পোষানো হয় তাঁর উপর । মোদ্দাকথা , তাঁকে সামনে মারামারি করতে দেওয়া হয় কিন্তু পরে জুতাপেটা করা হয় । সবাই এতে দারুণ মজা পায়। চোরটা বড়ত্ব দেখায় আবার পরে জুতার বাড়ী খায় । কেমন লজ্জার ব্যাপার । প্রথমে মেরে সে ঝাল মিটায় পরে সবার সামনে , ছোট বড় বাচ্চাকাচ্চার সামনে তাকে লজ্জা দিয়ে মার দেওয়া হয় । তাকে ওয়ারেন্ট দেওয়া হয়েছে , আর যদি সে মারামারি করে তবে তাঁকে বিনা নোটিশে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে ।
কিন্তু মারামারি সে ছাড়তে পারেনা । বাইরের এলাকায় জমিজমা নিয়ে খুন করার কিছু অর্ডার পায় সেখানে চাকু শফিক নামটা এখনো টিকে আছে । মাঝে মাঝে অর্ডার হয় । তাকে যেতে হয় ।
একদিন চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে মারামারি হয় । আচ্ছামতো পেটায় ওকে । স্কুলের একটা মেয়ের ওড়নায় ধরে টান দিয়েছিলো । শফিক জোরছে দুইটা থাপ্পড় কানের নিচে লাগিয়েছিলো । চেয়ারম্যান সাহেব সম্মুখে চাকু শফিককে কিছু বলতে ডরায় । একসময়কার ইয়ার ছিল শফিক । কিন্তু শফিককে চিরতরে উপরে পাঠিয়ে দিতে পূর্বপাড়ার নামকরা সন্ত্রাসীদের ভাড়া করেন । উল্লেখ্য , পূর্বপাড়ার বাসিন্দা স্বয়ং শফিক । ওরা তাঁকে মারতে এসে উল্টো জখম হয় । শফিক রিভলবার ভাড়া করে এনেছিল শহর থেকে । এটা দিয়ে গুলি চালায় । আচ্ছামতো ধোলাই খেয়ে ওরা হসপিটালে ভর্তি হয়। হসপিটালে দুর্ভাগ্যবশত একজন মারা যায় । শয়তানরা আড়ি পেতে ছিল চারপাশে । খুন নিয়ে দুইপাড়া , পূর্বপাড়া আর পশ্চিমপাড়ার মধ্যে মারামারি বাঁধে । পূর্বপাড়ার মানুষ বলে , '' পশ্চিমপাড়ার মানুষ তাদের ভাড়া নেয় , খুনের দায় তাদের স্বীকার করতে হবে । চেয়ারম্যানের ছেলেকে মেরেছে , চেয়ারম্যানের লোকজন দেখবে । আমাদের ছেলেদের নিয়ে মারামারি করাবে কেন । তাও আবার মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি করার পন্থা । শফিক তো আমাদের একজন । টাকার লোভে জঘন্য কাজ করিয়েছে । দেখে নেব । ''
পশ্চিম পাড়ার মানুষ ভয় পেয়ে যায় । শেষে তারা বিচারে যায় । বিচারে একটা সমঝোতা হয় । যে এই খুন করেছে তাঁকে দুইপাড়ার লোকজন মিলে পায়ে দলে খুন করাই কর্তব্য । এরকম একটা জঘন্য মানুষ পৃথিবীতে না থাকাই ভালো । পরদিন সকালে সারাবাজারে পিনপতন নীরবতা । শফিক আজকে সারা বাজারে পোস্টার লাগিয়েছে তার নামে '' চাকু শফিক লিখে । সকালে তাড়াতাড়ি উঠেছে শফিক । ফজরের নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ে । তার বাবার আত্না তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । একটু পরে দূর থেকে হাকডাক শোনা যায় । শফিকের বাবা চাইলে শফিককে বাঁচাতে পারে , কিন্তু সেটা করবেনা । এসব মানুষকে শাস্তি দিতে হলে শফিককে তার চাই । এবং এটা সম্ভব তার মৃত্যুর মাধ্যমে । তাই বারবার ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছে ।
শফিক মনে মনে হাসছে । একটু পরে তার ছোট্র ঘরটাতে এসে অসংখ্যা মানুষ লাথি দিতে থাকে । তারপর তাকে আছাড় আর তলোয়ারের খোঁচায় মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় । সবাই যখন বেরিয়ে আসবে তখন পিছনে গ্রামের দিকে বিকট শব্দে ক্রমান্বয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকবে । ভয়ানক চিৎকার চেঁচামেচি । আবারও বিস্ফোরণ আগুনের স্ফুলিংগ উড়ছে । সব মানুষ ঐ দিকে দৌড়ায় । সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছে শফিক । সে জানে তাকে খুন করা হবে । তাই আগের দিন বোমা লাগিয়েছিল চেয়ারম্যানসহ বিখ্যাত মানুষদের বাড়ীতে । তাকে মারার সময় এক ফাঁকে সে বোতাম টিপে দেয় । তারপর সে মারা যায় । সারা মানুষ ঐ দিকে দৌড়ে যায় । সব শেষ প্রায় ২০ টি বাড়ি ছারখার । অনেক মানুষ আর গরু মারা গেছে ।
চেয়ারম্যান সাহেবের ঘুমন্ত বউ-বাচ্চা সব পুড়ে ছাই । চেয়ারম্যান সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন , এ কি হলো !
তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললেন , সত্যিই হে চাকু শফিক ।
লোকজন বলাবলি করছে , '' হারামীর বাচ্চা আসলেই জানোয়ার । জানোয়ারের মতো কাম করছে । ''
সারা বাজারে পোস্টারগুলো এখনও অক্ষত । লেখা , চাকু শফিক '' জিন্দাবাদ , জিন্দাবাদ । ''
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আসিফ খন্দকার ২৪/০১/২০২০সুন্দর গল্প
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ০৯/০১/২০২০গল্পটি পূর্ণ । সুন্দর রচনা ।