www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মাদকাসক্তি

''হ্যালো''
''হ্যালো,কে বলছেন?''
'দোস্ত আমি শফি।ভালো আছিস কালু?
কালু খানিক্ষণ কথা বলতে পারছেনা ।আনন্দে বিমুঢ় হয়ে গেছে ।'হ্যা, ভালো ।তুই কেমন আছিস ?এতদিন পর মনে পড়ল আমার কথা !সেই কবে যে ঢাকা গিয়েছিলি আর কোনো খবর নাই।দোস্ত এখন বেশী কথা বলা যাবেনা বস চলে আসবেন ।তোর কাছে জরুরী প্রয়োজনে ফোন দিছি ।তোর কাছে ৫০০ টাকা হবে? শেষের কথাটা একটু ইতস্তত করে বলে শফি।
'কিসের বস' জিজ্ঞ্যেস করল কালু
'বেশী কথা বলিসনা । আছে কিনা বল?
আছে ।বিকাশ নাম্বার দে।
শফি বিকাশ নাম্বার দিল ।
কালু ভেবে পায়না ।শফিরা অনেক ধনী । এস.এস.সি পরীক্ষা দেয়ার পর তারা ঢাকা চলে যায়। কালু আর শফি অন্তরংগ বন্ধু।দুজনে একসাথে পড়েছে।শফিদের নাম্বারটা কালুর কাছে নেই।কালু গ্রামের একটা কলেজে ভর্তি হয় ।শফি ঢাকা শহরের একটা ভালো কলেজে ভর্তি হয় ।প্রায় ছয় মাস পর ফোন দিয়ে ৫০০ টাকা চাইল।তারপর বস না কি জানি বলল।মাথা আউলা হয়ে যাচ্ছে কালুর ।শফির পরিবার অনেক ধনী।কালুর পরিবার দরিদ্র। কালু টিফিনের টাকা জমা করেছিল ।৭০০ টাকা হয়েছিল ।৫০০ টাকা শফিকে দিলে তার থাকে ২০০। দোকানে গিয়ে এক বান আকিজ বিড়ি কিনতে হবে ।বিড়ি না টানলে কালুর দুইটা অসুবিধা হয় ।পড়তে পারেনা এবং ঘুমাতে পারেনা। কলেজে যাওয়ার আগে একটা বিড়ি খায় ।তারপর দাঁত ব্রাশ করে কলেজে রওয়ানা হয় ।একটু পিছন দিকে বসে।স্যারের সামনে বসলে কালুর মুখখানা আরও কালো হয়ে যায়।স্যার এমনভাবে তাকান যেন আলুর মতো কালুকে গিলে খাবেন।
কালুর বাবা অন্যের জমিতে বর্গা খাটেন।তা থেকে যা আয় হয় তাতে পরিবার আর কালুর লেখাপড়া চলে।কালু মা-বাবার ২য় সন্তান ।প্রথম সন্তান মারা যায় জলাতংকে । এক পাগলা কুকুর কামড়ে দিয়েছিল।কত রকমের কবিরাজ দেখল ,ঝাঁড় ফুঁক সব শেষ সেও শেষ।তারপর কালুর জন্ম।আর কোনো ভাইবোন নাই তাই ঝামেলাও কম।
কালু চুরুট খাওয়ার অভ্যেস ধরেছে তার দাদির কাছ থেকে।দাদিও হেব্বি চুরুট টানতেন।দাদি নড়তে পারতেন না ।কালুকে বলতেন ,'কালু হারামজাদা বিড়িটা ধরাইয়া আন ।টান দিলে তোর জিহ্বা টান দিয়া ছিইড়া ফালাইমু'।কালু ধরিয়ে আনত।রান্নাঘর থেকে দাদির ঘরে আসতে আসতে বিড়ি নিভে যেত অগত্যা সে টানতে টানতে আসত ।কোনো কোনোদিন দাদির ঘরের দিকে না গিয়ে রাস্তায় হাঁটত আর বিড়ি টানত।ওদিকে তার দাদি বিড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন ।বিড়ি টানলে তার চোখ মুদে আসে ।মনে হয় সে অনেক বড় হয়ে গেছে।
শফিক কলেজে উঠেছে । মোটামুটি ভালো কলেজ । কলেজে ঢোকার কয়েকদিন পর ইয়াবা সেবন শুরু করে।বাসা থেকে প্রচুর টাকা আনতে শুরু করল।সবটাই ইয়াবার তলে খরচ করত।বাসার সবাই এক পর্যায়ে জানতে পারে।তারা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ।অগত্যা সে চাঁদাবাজদের দলে নাম লেখায়।চাঁদা তুলতে যায় রাঘব বোয়াল (কিন্তু হাবা)দের কাছে ।একবার আসল রাঘব বোয়ালের কাছে যায় ।পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় ,সবকটাকে ন্যাংটো করে বাঁশের ডান্ডা দিয়ে ধোলাই দেয়।৬দিন ছাড়া পায়।বাসায় যায় ,দেখে বাসা তালাবন্ধ। জানতে পারে তার মা-বাবা বাসা ছেড়ে চলে গেছে কোথায় গেছে কেউ বলতে পারেনা।
তাঁকে ভিক্ষা করে ইয়াবা খেতে হয় ।পথের ভিখারী সে।মাঝে মাঝে চাঁদাবাজদের সাথে ছোটখাটো দাঁও মেরে আসে ।দু-একদিন শান্তিতে থাকে।আম্মাগো মুই না খাইয়া আছি মুরে সায্য করেন ,বলতে হয়না।পথে পথে ঘুরে শফি।পথেই ঘুমায় ।শরীরের রক্ত ইয়াবার জন্য হন্যে হয়ে থাকে।যেভাবেই হোক ইয়াবা যোগাড় করতে হবে।আজ টাকার শর্ট ।ভিক্ষা পায় নাই,দু-একটা লাত্তি খাইছে শফি।পকেট মারতে গিয়ে ধরা খাইছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশে যাইতে হয় নাই।আজকে আর ভিক্ষা করা যাবেনা ফলে ইয়াবাও খাওয়া হবেনা ।ওদিকে সময় চলে আসছে ।অনেকদিন পর পুরনো বন্ধুর কথা মনে পড়ল,গ্রাম থেকে আসার সময় শুধু মনি ভাই'র নাম্বারটা নিয়ে এসেছিল।
ভিখিরি হলেও মা-বাবার কিনে দেওয়া ফোনটা সে রেখে দিয়েছে ।চাঁদাবাজদের বস তুলা মিয়া যেকোনো সময় ডাক দিতে পারেন।তার ডাকে সাড়া দিতে পারলেই একদিনের সমস্যা সমাধান হয়ে যায় ।কোনো চিন্তা নাই।
মনি ভাইকে ফোন দিল ''হ্যালো,মনি ভাই''
হ্যালো ,কোন হারামজাদা
'আপনি কই ভাই ?
'আমি বাথরুমে'
'আমি শফি চিনতে পারছেন ?'
লাইন কেটে গেল।বাথরুম থেকে বের হয়ে মনি মিয়া ফোন করল সে জানাল তার কাছে টাকা নাই ।ইদানীং চুরি-চামারী কিংবা বাটপারি কোনোটাই করতে পারছেন না।শফি কালুর নাম্বার চাইল,কালুকে ফোন দিয়ে টাকা আনল শফি ইয়াবা খাওয়ার জন্য।শফি রাস্তার পাশে ফুটপাথে শুয়েছিল।পাশে একটা কুকুর ,কিছুক্ষণ পরপর তার দিকে তাকিয়ে ঘেউঘেউ করছে ।শফি নীরবে শুয়ে আছে ।পাশ দিয়ে কত গাড়ি চলে যায়,কত মানুষ যায় তার কোনো হিসাব নেই।কালুর কাছ থেকে সে টাকা আনল ,জানে সে টাকা ফেরত দিতে পারবেনা ।এই বয়সে সে তেল-সোডা মেখে চুল মুরগি স্টাইল করে রাস্তায় হাঁটার কথা । সে একটা ছেঁড়া শাড়ীকে লুংগি বানিয়ে দীর্ঘদিন যাবত পরতেছে।অনেক ভিখিরি তাঁকে দেখলে হাসে,কেউ কেউ লুংগিতে টানও মারে ।একদিন সকালে উঠে দেখে লুংগি নাই।খুব মারাত্নক অবস্থা ।ঘুম থেকে উঠেই সে টের পায় এবং গালাগালি শুরু করে কোন হারামজাদা ,শুয়োরের বাচ্চা আমার লুংগি নিছে।ভাগ্যিস আশেপাশে কেউ ছিলনা ,আর পাশেই শাড়ীর টুকরাটা পড়ে ছিল তবে কেউ অনেকটা কেটে নিয়েছে।ঐ হারামজাদারও মনে হয় পরার মতো কিছু নাই।সে তাড়াতাড়ি পরে ফেলে ।এখন আরও বেখাপ্পা লাগে।ভিক্ষা খুঁজতে গেলে হাসির পাত্র হয় ।ওরা হাসতে হাসতে বলে ''এই বজ্জাতের ঘরের বজ্জাত নে , আমাদের হাসানোর জন্য ১ টাকা ।'' তবে সরাসরি দেয়না ,দূরে ছুঁড়ে দেয় সে নেয়ার আগে খাবলাখাবলি শুরু হয়ে যায় ,ছোট ছোট শিশুগুলো ভয়ানক ।একেকবার মনে হয় লাত্তি মেরে একেকটাকে শেষ করে দেয় । কিন্তু ওদের বাবা-মা আড়ালে থাকে ।অঘটন দেখলেই লুংগি খুলে গাছের মগডালে ঝুলিয়ে রাখবে ।এমনিতেই শফির শরীরে শক্তি নেই ,ইয়াবার গুটিগুলো ভেতরটাকে নি:শেষ করে দিয়েছে। তার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই ভয়ানক ''মাদকাসক্তি''।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/১২/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আর একটু বিশ্লেষণ করে লিখলে সুন্দর হতো
 
Quantcast