www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিশুশ্রম

“পেটে যে প্রচন্ড খিদের যন্ত্রণা, দুই দিন
কিছু খাইনি
কাকু দশটি টাকা দেন না, মুখে যে কিছু
দিইনি”।
এমনি করে হাত পেতে, দেখি আজ, শিশুটি
ভিক্ষা করছে,
মনে হয় ভিক্ষা পায়নি তাই, সে আমার
দিকেই আসছে।
তাকে না দেখার ভান করে, আমি দ্রুত হাটতে
লাগলাম
কিন্তু সে আলতো করে আমায় স্পর্শ করল,বুঝতে
পারলাম।
রাগত স্বরে ধমক দিয়ে, আমি প্রায় ওকে
মারতে যাই-
আমার ধমকের ভয়ে সে বলে, যে কিছু খেতে
চায়।
শিশুর মতো মুখ, কেমন যেন পাকা পাকা কথা-
তবু কেন যেন মায়া হল,বোধহয় ছেলেটা
মুখকাটা
হাতের ইশারায় কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা
করলাম “তোর নাম কি?”
আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল “নাম দিয়ে
হবে কি”।
তার কথা শুনে সত্যি এবার মেজাজ বিগড়ে
গেল আমার
চেচিয়ে বললাম, হারাম জাদা মুখে মুখে
তর্ক করিস আবার
সে বলল “কিছু তো দিলেন না গালাগালি
দিচ্ছেন কেন?”
দশ টাকা বের করে বললাম “ভিক্ষা করছিস
কিসের জন্যে?”
খুশি মনে দশটাকা নিয়ে বলল “আগে কিছু
খেয়ে আসি”-
ভাবলাম সত্যি ওর খিদে পেয়েছে, না হয়
দিচ্ছে ফাঁকি।
সামনে বিশাল শিব মন্দির, প্রচুর লোকের
ভিড়,
দড়িয়ে আছি আমি বাসের অপেক্ষায়-
জানিনা কিহবে এবার, দেব শেষ পরীক্ষা|
রাস্তা জ্যাম, চলছে মিছিল, চিৎকার
কোলাহল চারিদিকে
জানিনা আমি, বাস বাবাজি কখন আসবেন।
হঠাৎ দেখি সেই ছেলেটি হাতে চায়েরকাপ
নিয়ে-
বলল সে হাসিমুখে “কাকু চা খাবেন?”
পারলাম না ফিরাতে সেই সরল হাসির
ঝিলকে-
কেন যেন আপন আপন মনে হল,
চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে, জিজ্ঞাসা
করলাম তাকে-
দশ টাকায় পেট কি ভরে গেল?
মাথা ঝাকিয়ে বললে সে আমায় “ভাইয়া, তুমি
কি কাজ কর?”
বললাম হেসে “কেন রে, কি করবি? কেন
তোর এই প্রশ্ন?”
সে তখন তার পুরো ঘটনা বলল -
এলোমেলো ভাবে বললে, নাম তার মনে হয় -
এক সময় আন্দুল ছিল।
জানে না বাবার নাম, মনে আছে শুধু
ট্রেনে সে হারিয়ে গেছিল।
লোকে এখন ডাকে তাকে চারানি, আটানি,
আসল নাম গেছিল ভুলেই-
এখানে সেখানে, যত্রতত্র যা পায়, সে খায়,
যেখানে রাতহয় সেখনেই ঘুমায়।
কেউ যে নেই তার, একটু আদর করার,
জানেনা সে কোথায় যায়-
কথায় আছে, কোথায় থাকবে, অচেনা শহর
মায়ের কাছে যেতে চায়
আট নয় বছরের শিশুটির, ভাঙ্গা এলোমেলো
কথাগুলো,
শুনেও যে আমি শুনি নিই-
ব্যাকুল হৃদয় তবু বললাম “মিথ্যা কথা তোর
এগুলো,
মন্দিরের তুই প্রসাদ খাস নিই?”
জানাল সে ঐ মন্দিরে, প্রসাদের লাইনে
দাড়িয়েছিল
তাকে যে ডুকতেই দেওয়া হয়নি।
ব্যথিত মনে ভাবি, হে আল্লাহ/ঈশ্বর সবাই
ভালবাসে তোমাকে,
বিশ্বাস করে, ধর্মগ্রন্থের মাঝে, যুক্তির
ধার ধারে না-
মানবতা যে আজ, আমার চোখের সামনে
জীবন্ত আলোকে,
কেন এই শিশুটিকে,তার বাস্তবতাকে
বিশ্বাস করতে পারি না।
ভালবাসা তো দুর, সামান্য সহানুভূতিও
দেখায় না লোকে,
হয়ত সে বেঁচে থাকবে নিদারুণ অবহেলায়
ভালবাসা পাবে না।
দেশে বিদেশে লাখো শিশু আজ এমন ভিক্ষা
করে অবেলায়,
মন্দিরে মসজিদে স্টেশনে পথে ঘাটে
বাজারে সর্বত্র-
কখনো দিই না ওদের গুরুত্ব, করিনা যে
বিশ্বাস মানবতায়?
পুজা উৎসবে ধর্ম কর্মে শুদ্ধ করে মন
পবিত্র-
ভাবিনা কোনদিন, এই অবুঝ পথের শিশুরা
আছে কি অবস্থায়-
কেন তারা ভিক্ষা করে, কেন যে নেশায়
আসক্ত,
ব্যাস্ত আমরা, থাকি কর্মব্যাস্ততায়, এরা
থাকে মোদের উদাসীনতায়
গাই যে মানবাতার গান কিন্তু নেই কোন
মনুষ্যত্ব।
আছে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের সুরসুরি,
রাজনৈতিক মিথ্যাচার
আছে যে শিশুশ্রমে, সরকারি অনাথ আশ্রমে
অকথ্য অনাচার
আমরা যে সভ্য ভদ্র শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী
নবীন মুক্ত চেতনার দাবিদার
লজ্জিত আমি এই সমাজে, কি বলব? কি আছে
বলার অধিকার?
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭০৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast