পূর্ন
১.
বাসার গেইট থেকে বের হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছি। কিছুদূর এগিয়েও যখন রিকশা পাচ্ছি না ঠিক তখনই চোখে পড়ে, সেই মেয়েটি! আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, রাস্তার ওপাশ থেকে। আরো কয়েকটি মেয়ে তাকে ঠেলছে আর হাসাহাসি করছে, ওরা মেয়েটির বন্ধু বলে মনে হচ্ছে। আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলে হয়তো রিক্সা পাওয়া যাবে এই ভেবে সামনের দিকে হাটতে থাকি ।আসলে দেখতে চাচ্ছি সত্য
মেয়েটি আমার পিঁছু নেয় কি না। যদিও বুঝতে পারছি না এটা ঠিক হচ্ছে কিনা । কিংবা মেয়েটি সত্যিই পিঁছু নিলে কি করবো এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছতে পারছি না, তবু দেখতে চাই কি হয়। অনেকক্ষণ হাঁটার পর পিছনে তাকিয়েছি কোন খালি রিক্সা আছে কি না তা দেখার জন্য এবং মেয়েটি এখন ও আসছে কিনা । অবাক হই এখনও কিছু বলছে না আবার পিছুও ছাড়ছে না । এদিকে অফিসের সময় ও হয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু কি বলে এটা না দেখে যেতে ইচ্ছা করছে না । আরো ধীরে হেঁটে ব্যাপারখানা কি তা দেখতে চাচ্ছি । অতএব হাঁটার গতি শ্লথ করি এবং একসময় বুঝতে পারি মেয়েটি আমার ঠিক পিছনে চলে এসেছে। যখন মেয়েটি পেছন থেকে বলছে " এক্সকিউজ মি " তখন এমনভাবেই থেমে গেলাম যেন এই কথাটি শোনার জন্যই অপেক্ষা করছি আর তাই চোখে প্রশ্ন নিয়ে পিছন ফিরে তাকাই ।
- আমার নাম পূর্ন। আ- আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
আমার সাথে? কি কথা, বলুন?" বলবো বলে মনে মনে ঠিক করছি ঠিক তখনই কি যেন হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না-
- আশ্চর্য মেয়ে তো আপনি! সেই তখন থেকে ফলো করে চলেছেন আমাকে । রাস্তাঘাটে ছেলে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে, না? চেনা নেই জানা নেই রাস্তা আটকে কথা বলতে এসেছেন ।
-"শুনুন।" পূর্ন বোঝাবার চেষ্টা করে।
- "আর একটা কথাও না । পূর্নকে থামিয়ে দিয়ে বললাম । এই রিক্সা।" বলে হাত রিক্সায় উঠে বসলাম।
পুরো ঘটনা এত দ্রুত ঘটে যায় যে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । কেবল নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এটা কি ঠিক হল ?
২.
বাসায় বসে অর্নব ভাবছিল সে দিনের কথা।এত সাহস সঞ্চয় করে সেদিন কি কথা বলতে গেল মেয়েটি আর কি থেকে যে কি হয়ে গেল! মেয়েটির ডাক শুনে নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম, তাই মুখে কোন কথা আসছিল না হঠাৎ কি বলতে কি বলে ফেললাম। কিন্তু সে তো তেমন কিছুই বলে নি! তবে ও এমন করল কেন?
হঠাৎ একদিন বাসায় একটি চিঠি পেলো অর্নব ।
চিঠিটা খুলেই খুবই অবাক হয় অর্নব। রাজ তাকে চিঠি লিখেছে! দীর্ঘ ছয়টি বছর পর! তার একসময়ের প্রাণের বন্ধু, যে কি না হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে গিয়েছিল অর্নব এর কাছে, সেই রাজ তাকে চিঠি লিখেছে! দেরি না করে পড়তে শুরু করে সে।
অর্নব,
জানি চিঠি পেয়ে অবাক হবি। জানি ভালই আছিস। তাই আর কুশল জিজ্ঞেস করলাম না। ভাবছিস যেই আমি আজ ছয়টি বছর তোকে এড়িয়ে চলেছি, কথা পর্যন্ত বলিনি, সেই আমি কেন আজ চিঠি লিখলাম তোকে ? না লিখলেও হয়তো হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুইও পাল্টেছিস, আমিও। আজ তোকে লিখতে বসছি আর ভাবছি তুই কি আমার চাচাতো বোন কে চিনিস না ?তোর কি মনে পড়ে কলেজে পড়ার সময় তুই যখন আমাদের বাসায় আসতি তখন কেউ একজন তোকে একটা চিঠি দিয়ে ছিল যেটা আমার হাতে পড়ে আর আমি জানতে পারি সেটা আমার চাচাতো বোন পূর্ন । এর জন্য আমি খুব অপমান করেছিলাম তোকে। আর তাই তুই আমাকে ভুল বুঝে বলেছিলি আমি যেন জীবনে তোর সাথে কথা না বলি। বিশ্বাস কর, সেই অল্প বয়সের আমি তখন বুঝতে পারিনি আমার বোন তোকে কতোটা ভালোবাসে । আজ যখন জানলাম তুই ওর সাথে কোন কথা না বলে ওকে অপমান করেছিস তথন তোর ওপর অনেক রাগ করেছিলাম । কেবলই মনে হচ্ছিল তুই খুব বড় ভুল করেছিস ওকে এভাবে বলে ।যে তোকে ভালোবাসার জন্য আমার সাথে এতো দিন ও কথা বলেনি সে আজ আমায় ফোন করে যেভাবে কাদঁছে আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না তাইতো তোকে লিখতে বসা ।তুই একদিন বাসায় এসে পূর্ন এর সাথে কথা বল ।আমি চাই তোরা দু‘জন সুখে থাক ।
ভাল থাকিস, সুখে থাকিস।
রাজ
চোখের কোণে জমে ওঠা জল মুছে অর্নব। রাজ জানেনা অনেক আগেই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে অর্নব। সে ঘটনার পর আরো একদিন পূর্ন এর সাথে দেখা হয়েছিল ওর। সেদিন পূর্ন জানতে চেয়েছিল কি দোষ ছিল তার যে তাকে এভাবে অবহেলা করে অর্নব ।বলেছিল তার ভালবাসার কথা যা তখন রাজ এর কথায় মরে গিয়ে ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। জ্বল ছলছলে চোখে কথাগুলো বলেই ঝড়ের বেগে চলে গিয়েছিল । আর কখনো সামনে পড়েনি ।তাই সেদিন যখন সামনা সামনি হয়ে গেল তখন পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে ওই কথা গুলা বলছিল অর্নব । সেদিনও পূর্ন কোন কিছু বলতে পারে নি অর্নবকে । সে বুঝতে পেরেছিল এই ঘটনার পিছনে রাজ এর হাত আছে। রাজ এর আজকের চিঠি পাওয়ার পর পূর্নকে ক্ষমা করে দিলেও আর তার সাথে আগের সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নাই অর্নব এর । শুধু প্রথম প্রেমের শুকিয়ে যাওয়া নদীর মতই ঘটনার স্মৃতি তার হৃদয়ে দাগ রেখে যাবে। আর তার ভেতরের ডাহুকটা ডেকে ডেকে একদিন শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। অর্নব জানে , আর কোন আঁখির পানে চেয়ে তার মনে প্রেম জাগবে না । তাইতো চিঠিটা কুটি কুটি করে ছিড়ে সে টুকরোগুলো ভাসিয়ে দেয় বিষণ্ন বাতাসে।
বাসার গেইট থেকে বের হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছি। কিছুদূর এগিয়েও যখন রিকশা পাচ্ছি না ঠিক তখনই চোখে পড়ে, সেই মেয়েটি! আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, রাস্তার ওপাশ থেকে। আরো কয়েকটি মেয়ে তাকে ঠেলছে আর হাসাহাসি করছে, ওরা মেয়েটির বন্ধু বলে মনে হচ্ছে। আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলে হয়তো রিক্সা পাওয়া যাবে এই ভেবে সামনের দিকে হাটতে থাকি ।আসলে দেখতে চাচ্ছি সত্য
মেয়েটি আমার পিঁছু নেয় কি না। যদিও বুঝতে পারছি না এটা ঠিক হচ্ছে কিনা । কিংবা মেয়েটি সত্যিই পিঁছু নিলে কি করবো এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছতে পারছি না, তবু দেখতে চাই কি হয়। অনেকক্ষণ হাঁটার পর পিছনে তাকিয়েছি কোন খালি রিক্সা আছে কি না তা দেখার জন্য এবং মেয়েটি এখন ও আসছে কিনা । অবাক হই এখনও কিছু বলছে না আবার পিছুও ছাড়ছে না । এদিকে অফিসের সময় ও হয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু কি বলে এটা না দেখে যেতে ইচ্ছা করছে না । আরো ধীরে হেঁটে ব্যাপারখানা কি তা দেখতে চাচ্ছি । অতএব হাঁটার গতি শ্লথ করি এবং একসময় বুঝতে পারি মেয়েটি আমার ঠিক পিছনে চলে এসেছে। যখন মেয়েটি পেছন থেকে বলছে " এক্সকিউজ মি " তখন এমনভাবেই থেমে গেলাম যেন এই কথাটি শোনার জন্যই অপেক্ষা করছি আর তাই চোখে প্রশ্ন নিয়ে পিছন ফিরে তাকাই ।
- আমার নাম পূর্ন। আ- আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
আমার সাথে? কি কথা, বলুন?" বলবো বলে মনে মনে ঠিক করছি ঠিক তখনই কি যেন হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না-
- আশ্চর্য মেয়ে তো আপনি! সেই তখন থেকে ফলো করে চলেছেন আমাকে । রাস্তাঘাটে ছেলে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে, না? চেনা নেই জানা নেই রাস্তা আটকে কথা বলতে এসেছেন ।
-"শুনুন।" পূর্ন বোঝাবার চেষ্টা করে।
- "আর একটা কথাও না । পূর্নকে থামিয়ে দিয়ে বললাম । এই রিক্সা।" বলে হাত রিক্সায় উঠে বসলাম।
পুরো ঘটনা এত দ্রুত ঘটে যায় যে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । কেবল নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এটা কি ঠিক হল ?
২.
বাসায় বসে অর্নব ভাবছিল সে দিনের কথা।এত সাহস সঞ্চয় করে সেদিন কি কথা বলতে গেল মেয়েটি আর কি থেকে যে কি হয়ে গেল! মেয়েটির ডাক শুনে নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম, তাই মুখে কোন কথা আসছিল না হঠাৎ কি বলতে কি বলে ফেললাম। কিন্তু সে তো তেমন কিছুই বলে নি! তবে ও এমন করল কেন?
হঠাৎ একদিন বাসায় একটি চিঠি পেলো অর্নব ।
চিঠিটা খুলেই খুবই অবাক হয় অর্নব। রাজ তাকে চিঠি লিখেছে! দীর্ঘ ছয়টি বছর পর! তার একসময়ের প্রাণের বন্ধু, যে কি না হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে গিয়েছিল অর্নব এর কাছে, সেই রাজ তাকে চিঠি লিখেছে! দেরি না করে পড়তে শুরু করে সে।
অর্নব,
জানি চিঠি পেয়ে অবাক হবি। জানি ভালই আছিস। তাই আর কুশল জিজ্ঞেস করলাম না। ভাবছিস যেই আমি আজ ছয়টি বছর তোকে এড়িয়ে চলেছি, কথা পর্যন্ত বলিনি, সেই আমি কেন আজ চিঠি লিখলাম তোকে ? না লিখলেও হয়তো হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুইও পাল্টেছিস, আমিও। আজ তোকে লিখতে বসছি আর ভাবছি তুই কি আমার চাচাতো বোন কে চিনিস না ?তোর কি মনে পড়ে কলেজে পড়ার সময় তুই যখন আমাদের বাসায় আসতি তখন কেউ একজন তোকে একটা চিঠি দিয়ে ছিল যেটা আমার হাতে পড়ে আর আমি জানতে পারি সেটা আমার চাচাতো বোন পূর্ন । এর জন্য আমি খুব অপমান করেছিলাম তোকে। আর তাই তুই আমাকে ভুল বুঝে বলেছিলি আমি যেন জীবনে তোর সাথে কথা না বলি। বিশ্বাস কর, সেই অল্প বয়সের আমি তখন বুঝতে পারিনি আমার বোন তোকে কতোটা ভালোবাসে । আজ যখন জানলাম তুই ওর সাথে কোন কথা না বলে ওকে অপমান করেছিস তথন তোর ওপর অনেক রাগ করেছিলাম । কেবলই মনে হচ্ছিল তুই খুব বড় ভুল করেছিস ওকে এভাবে বলে ।যে তোকে ভালোবাসার জন্য আমার সাথে এতো দিন ও কথা বলেনি সে আজ আমায় ফোন করে যেভাবে কাদঁছে আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না তাইতো তোকে লিখতে বসা ।তুই একদিন বাসায় এসে পূর্ন এর সাথে কথা বল ।আমি চাই তোরা দু‘জন সুখে থাক ।
ভাল থাকিস, সুখে থাকিস।
রাজ
চোখের কোণে জমে ওঠা জল মুছে অর্নব। রাজ জানেনা অনেক আগেই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে অর্নব। সে ঘটনার পর আরো একদিন পূর্ন এর সাথে দেখা হয়েছিল ওর। সেদিন পূর্ন জানতে চেয়েছিল কি দোষ ছিল তার যে তাকে এভাবে অবহেলা করে অর্নব ।বলেছিল তার ভালবাসার কথা যা তখন রাজ এর কথায় মরে গিয়ে ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। জ্বল ছলছলে চোখে কথাগুলো বলেই ঝড়ের বেগে চলে গিয়েছিল । আর কখনো সামনে পড়েনি ।তাই সেদিন যখন সামনা সামনি হয়ে গেল তখন পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে ওই কথা গুলা বলছিল অর্নব । সেদিনও পূর্ন কোন কিছু বলতে পারে নি অর্নবকে । সে বুঝতে পেরেছিল এই ঘটনার পিছনে রাজ এর হাত আছে। রাজ এর আজকের চিঠি পাওয়ার পর পূর্নকে ক্ষমা করে দিলেও আর তার সাথে আগের সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নাই অর্নব এর । শুধু প্রথম প্রেমের শুকিয়ে যাওয়া নদীর মতই ঘটনার স্মৃতি তার হৃদয়ে দাগ রেখে যাবে। আর তার ভেতরের ডাহুকটা ডেকে ডেকে একদিন শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। অর্নব জানে , আর কোন আঁখির পানে চেয়ে তার মনে প্রেম জাগবে না । তাইতো চিঠিটা কুটি কুটি করে ছিড়ে সে টুকরোগুলো ভাসিয়ে দেয় বিষণ্ন বাতাসে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ১৯/০৯/২০১৩ভাল....
-
ওয়াহিদ ১৯/০৯/২০১৩বিরহ ,বেদনার গল্প ......প্রথমে বিরহ শেষে বেদনা !