www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফিনেক্স

অনেক কাল আগের কথা, ক্লারিয়ন নগরীর কোনো এক ছোট্ট গ্রামে বাস করতো সওদাগর জন পাইরাস। ব্যবসায়িক কাজ শেষে তিনি তাঁর বন্ধু জন সাইমনকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। জন সাইমনও একজন প্রসিদ্ধ সওদাগর। পাইরাসের কাছে সাইমনের কিছু টাকা পাওনা ছিল। পাশাপাশি গ্রামেই তাদের বসবাস এছাড়া বন্ধুত্বতো আছেই, তাই অবিশ্বাস নেই একের প্রতি অন্যের।

যাত্রা পথে ক্ষানিক বিশ্রামের জন্য এক জঙ্গলের পাশেই বসলো দু'জন। সহসা সুন্দর তুলতুলে একটি কুকুরছানা দেখতে পেয়ে পছন্দ হলো দু'জনেরই। কুকুরছানাটি মায়াভরা চোখ, চঞ্চল-উৎফুল্ল দেহ-মন নিয়ে এদিকেই ছুটে আসছে।

সাইমন কুকুরছানাটির কাছে গেল। ছানাটি দেখতে অনেকটা নেকড়েছানার মতো, তবে বন্য মনে হলো না। ছানাটি গর্জন করলো না এমনকি পালিয়েও গেলো না। শুধু মায়া ভরা চোখ নিয়ে সাইমনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল অপলক দৃষ্টিতে। ছানাটি হয়ত পছন্দ করেছে তাঁকে। কুকুরছানাটির নরম-মসৃন মাথায় হাত বুলাতে লাগলো সাইমন, ছানাটি তৎক্ষণে চোখ বুজে মাথা নত করে আদর নিতে লাগলো অবুঝ শিশুর মতো।

দুই বন্ধুর সমান সমান পছন্দ হলো কুকুরছানাটি। কে নেবে? যদিও পাইরাস একটু বেশী বেকে বসলো, সে নেবেই কুকুরছানাটি। কিন্তু সাইমন তার পাওনা টাকার পরিবর্তে কুকুরছানাটি সম্পূর্ণ নিজের করে নেয়, ফলে তাদের বিরোধ সহজেই মিমাংসা হল।

সাইমন মনের আনন্দে কুকুরছানাটি বাড়ি নিয়ে খুব আদর যত্নে লালন-পালন করতে লাগলো। ছানাটির নাম রাখলো ফিনেক্স। দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠলো ফিনেক্স। সে তার প্রভূ সাইমনকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। সাইমন যেখানে যাবে ফিনেক্স সেখানে যাবেই। একেবারে প্রভূর সেবায় নিয়োজিত প্রভূভক্ত দাস।

গ্রীষ্মকাল। সাইমনকে ব্যবসায়ীক কজে বহুদূরের গ্রামে যেতে হবে। সে চেয়েছিল ফিনেক্সকে বাড়িতে রেখে যেতে, তবে ফিনেক্স তা মানতে নারাজ। সাইমন ঘোড়ায় চড়ে রওনা হতেই ফিনেক্স ঘোড়ার সাথে সাথে ছুটলো। অবশেষে ফিনেক্সকে সাথে নিয়েই সে রওনা হল।

ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজ সেরে প্রায় মধ্যাহ্নের সময় বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে সাইমন, সাথে তাঁর আদরের ফিনেক্স। সারাদিনের পরিশ্রম সেই সাথে রৌদ্রময় গরমে সে খুব ক্লান্তি অনুভব করছিলো, তাই ঘোড়া থামিয়ে একটি গাছের নিচে টাকার থলিটি পাশে রেখেই কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে নিলো। ক্লান্তি কিছুটা দূর হতেই আবার ঘোড়ায় চেপে বসলো, তবে টাকার থলে তুলে নিতে ভুলে গিয়েছিলো, ফিনেক্স তা লক্ষ করে।

গাছের তলায় টাকার থলে দেখতে পেয়ে প্রভূভক্ত ফিনেক্স দিশেহারা হয়ে একবার টাকার থলের উপর গিয়ে বসে আবার পথের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। সাইমন তৎক্ষণে ঘোড়ায় চরে কিছুদুর অগ্রসর হয়েছে, ফিনেক্স ভেবেছিলো ওকে ঘোড়ার সাথে সাথে হাটতে না দেখলে ও ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনলে সাইমন হয়তো ফিরে আসবে এবং টাকার থলেটা তুলে নেবে। কিন্তু না, সাইমন ফিরে এলো না। ফিনেক্স উদ্বিগ্ন হয়ে চলন্ত ঘোড়ার নিকট দৌড়ে গেলো। ঘোড়ার পা কামড়ে পিছন দিকে টানতে লাগলো এবং সাথে সাথে পথ চলতে ইশারা করলো। ফিনেক্স প্রভূর দিকে তাকালো, লেজ নাড়লো এবং ঘেউ ঘেউ শব্দ করে কি জেনো বুঝাতে চেয়ে টাকার থলে ফেলে রাখা সেই গাছটির দিকে দৌড়ে গেলো। টাকার থলের উপর বসে ফিনেক্স তার প্রভূকে টাকার কথা স্মরন করিয়ে দিতে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। সাইমন কিছু বুঝতে না পেরে বাড়ির দিকেই ঘোড়াকে তাড়াতে লাগলো।

ফিনেক্স আরো ব্যস্ত হয়ে উঠলো। এবার দৌড়ে গিয়ে ঘোড়ার পা কামরে গাছের দিকে টানতে লাগলো। সাইমন ঘোড়া থামালো না, বাড়ির দিকেই চলতে লাগলো। প্রভূর পরিশ্রমের টাকার থলে ফেলে যেতে চাইলো না ফিনেক্স, তাই প্রাণপনে ঘোড়ার পা আটকে রাখতে চাইলো।

সাইমন ভাবলো তার এত আদরের ফিনেক্স পাগলা হয়ে গেছে। পরন্ত বিকেল গড়িয়ে অল্পক্ষণের মধ্যেই সন্ধা নামবে, আরো অনেক পথ যেতে হবে। তাই পাগলা কুকুরটির জন্য আর দেরি করা যায় না। প্রভূভক্ত ফিনেক্স বেপরোয়া কিছুতেই ঘোড়ার পা ছাড়তে চায় না। উপায়ন্ত না দেখে পিস্তল বের করে ফিনেক্সকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ে দিলো সাইমন। কান্নার মতো শব্দ করতে করতে গুলীবিদ্ধ ফিনেক্স তৎক্ষণে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

এতো প্রিয় প্রভূর জন্য দায়িত্ব শেষ হয়নি ভেবে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালো ফিনেক্স। দৌড়ে গাছটির নিকট গেলো, টাকার থলের উপর বসলো আর মনে মনে ভাবলো “আমার প্রভূর টাকার কথা যখন মনে পড়বে তখন সে নিশ্চই ফিরে আসবে। আমাকে অবশ্যই যত্নের সাথে প্রভূর টাকার থলে পাহাড়া দিতে হবে, যতক্ষণ না আমি মরে যাই।”

অনেকটা পথ এগুনোর পর সাইমনের হঠাৎ মনে পড়লো তার এত আদরের বিশ্বস্থ ফিনেক্সকে রাগের মাথায় এভাবে গুলী করা উচিৎ হয়নি। ফিনেক্সের প্রতি এতো নিষ্ঠুর আচরণের কথা ভাবতে ভাবতে মনের ভেতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব করলো সাইমন। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হল অমানবিক কাজটার জন্য। কী একটা ময়ার টানে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় ফেলে আসা ফিনেক্সের দিকে ঘোড়া ফিরালো সাইমন। অবশেষে ঘোড়া নিয়ে ছুটে গেল সেই গাছ তলায়। যেখানে আহত-রক্তাক্ত দেহ নিয়ে টাকার থলের উপর কুন্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে প্রভূর সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত ফিনেক্স।

ঘোড়া থেকে প্রভূকে নামতে দেখে মৃদু মৃদু লেজ নাড়লো, মাথা নত করে কী যেনো বোঝাতে চাইলো, শেষবারের মতো প্রভূকে সম্ভাষণ জানিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লো ফিনেক্স।

নিরিবিলি, মাদারিপুর│ ১৮।০৫।২০০৩
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৩৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৪/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুবই ভালো
 
Quantcast