www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি ছেড়া স্বপ্ন

কয়েক সপ্তাহ ধরে সেতু কলেজে আসছে না। বন্ধুরা অস্থির হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অবনি ভীষন অস্থির হয়ে আছে। কারন সেতুর মুঠ ফোন বন্ধ হয়ে আছে। সেই ছোট বেলা থেকে একই সাথে বেড়ে উঠেছে ওরা দুজন। সেতু আর অবনির চেহারা কিছুটা মিল থাকলে ও সেতু দেখতে অনেক সুন্দরী আর আকর্ষনীয়। সে জন্য অবশ্য অবনি সেতুকে মাঝে মাঝে ইষা করে । তবে দুজন যেন একই বৃন্তে ফোটা দুইটি ফুল। বাসা বদল হওয়ায় সেতুটা একটু দুরে চলে গেছে। তাই কলেজে আসলে দিনের অধিকাংশ সময় ওরা কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। আজ ওরা সেতুদের বাসায় যাবে ভাবছে। আর এক জন তো মনে মনে অস্থির হচ্ছে।
ক্লাসের সবচেয়ে ভদ্র আর শান্ত ছেলেটি বন্ধু সভায় অংশ নিয়ে চুপ মেরে বসে থাকে। আধ ঘন্টা পর পর দু-চারটা কথা বলে। বাকী সময়টা চুপি চুপি সেতুকে দেখতে থাকে। চোখে চোখ পড়লে আবার মাথা নিচু করে বসে থাকে। লজ্জা নারীর ভুষন সবাই জানে, কিন্তু রিফাত কে দেখলে তার উল্টাটা মনে হয়। লজ্জআ পেলে ওকে বোধায় একটু বেশিই ভাল লাগে। সেতু রিফাতের এই মেন্তা মেন্তা ভাব মোটেই সহ্য করতে পারে না। শুধু ভাল ছাত্র বলেই ওর সাথে কথা বলে। অবনির কাছে ওকে ভালই লাগে। কি মায়া মায়া চেহারা! ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। বসের ঝারি একটু কম খাবে, মুখ দেখলেই গলে যাবে যে কেউ। আর মহিলা বস হলেতো কথাই নেই।
পাঁচজন নিয়ে ওদের ফ্রেন্ডস সারকেল। উচ্ছলতায় ভরা থাকে আড্ডা। অনেকেই দলে এসে ভীরে। কিন্তু ওরা পাঁচজন যে একই সুতায় গাথা। তাই অন্যরা তেমন সুবিদা করতে পারে না। শেষে দল ত্যাগ করে, মনে হয় ওদের দিগবাজী খাওয়ার অভ্যাস আছে। ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদ হতে পারবে।
চার বন্ধু অবনি, রিফাত, রিতু আর নরেশ সেতুদের বাড়ির উদ্যেশে রওনা হল। বাসায় গিয়ে তো অবাক! দরজায় মস্ত এক তালা ঝুলছে। তাহলে কি ওরা বেড়াতে গেছে। তবে ফোন বন্ধ কেন? হতাশা আর রাগ ওদের তাড়া করলো।এতক্ষনে সকলে কষ্ট অনুভব করছে। রাস্তার দুরত্ব আর অতিক্রন্ত সময় নিয়ে অংক কষাকষি শরু করল। বেচারা রিফাতের উজ্জল মুখটা বাংলার পাঁচ আকৃতির হয়ে গেল।অবনীর এবার সত্যিই হাসি পেল। গেট পার হতেই সেতুর বাবার সঙ্গে দেখা। অবনী এগিয়ে গেল আংকেলের-আংকেল সেতু ......। জিজ্ঞাস করতেই যেন ওনার মুখটা ফিকে হয়ে গেল। আমাদেও দিকে তাকাতে সঙ্কিত মনে হচ্ছে যদি সেতুর কথা জেনে ফেলি।অজানা আসঙ্কায় অবনীর মুখ বিবর্ন হয়ে এল।
সমস্ত শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা হলুদ মুখ খানা বিবর্ন হয়ে আছে। এতদিন এক সাথে ছিল অথচ ওরা কেউই বুঝতে পারেনি ওর এমন জটিল রোগের কথা। সেতুও হয়তো বোঝেনি। রোড একসিডেন্টের পর অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহন আজ ওর জীবনে অন্ধকার ডেকে এনেছে। পারে পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে ওকে ধিক্কার জানানো হচ্ছে। সবার চোখের দৃষ্টি সন্দেহের তীর ছুড়ে দিচ্ছে ওর দিকে। সেই তীরের বিষে সে বিদগ্ধ। কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারছে না এর পেছনে ওর কোন দোষ নেই। বন্ধুরা একে এক সবাই চলে গেল। বসে রইল শুধু অবনী। ও ওর বান্ধবীকে ভুল বুজবে না। ওর জন্য দরকার সহানুভূতি। বেচারা রিফাতের কথা ভেবে অবনী দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। চুপি চুপি যাকে দেখে যেত, যাকে পাওয়ার জন্য এত ব্যকুলতা ছিল অথচ লোক লজ্জার ভয়ে ওর ভালবাসাতে কালিমা এঁকে দিল।
পরিবারের সকলেই অবনী কে সেতুর কাছে আসতে নিষেধ করেছে। কিন্তু ও অনড়। সমাজের অন্ধকূপ থেকে ওকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যেও ভূলের কারনে আজ সেতুর মত মেধাবী মেয়ে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এজন্য অবস্য চাই সচেতনতা। হাসপাতাল কতৃপক্ষের উদাসিনতাই সেতু আর সমাজের মধ্যে দেওয়াল সৃষ্টি হল।
বিছনায় সোয়া অভেজা সেতুর চোখের পানে তাকিয়ে অবনীর চোখ জলে ভেসে ওঠে। জালানা দিয়ে বাইরে তাকায় । দূর আকাশে উড়ছে কিছু সঙ্খচিল হয়তো তাদের নীড়ের পানে এভাবেই ছুটবে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৮০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast