জাগো জোয়ান জাগো
(1)
বলেন কি আপনি ! বিপিন বাবুও- এখন ওদের দলে চলে গেছেন ।শেষ-মেশ ও যে এমন করবেন আমি ভাবতেও পারিনি ।তবে, আর- কতজন রইলো আমাদের এই “জাগো জোয়ান জাগো” কমিটিতে ।বলুন তো রবীন বাবু একবার !
আজ্ঞে স্যার ‘আপনাকে নিয়েই সতেরো জন’ ।
ও তাই ।আমায় একবার ওদের নাম গুলো লিখে দেবেন তো ।তবে আজকে নয় । অনেক রাত হয়েছে । বাড়ি চলে যান এখন ।কালকে কিন্তু- সকাল সকাল একবার কমিটিতে আসবেন, একটা জরুরি কথা আছে । ও হ্যাঁ , বাকি পনেরো জনকেও আসতে বলবেন I
( যেতে যেতে রবীনবাবু দরজা থেকে ঘুরে আসে )
আজ্ঞে স্যার একটা কথা বলার ছিল , যদি কিছু মনে না করেন , তাহলে... I
হ্যাঁ , বলুন ।এতে আবার অনুমতি নেওয়ার দরকার কি আছে ।বিনা দ্বিধায় বলতে পারেন I
আজ্ঞে আমার ছেলে মানে তপন, অনেক দিন থেকে বলছে এই কমিটিতে যোগদান করবে ।আমি বার বার মানা করেছি, তবে ও আমার কোনো কথাই শুনতে রাজি হয়নি ।তাই আজকে আপনাকে বলতে বাধ্য হলাম I
আরে এ তো দারুন খবর ।সেচ্ছায় যোগদান করতে চাইছে তো ভালো কথা ।তবে- কি করে তোমার ছেলে - !
আজ্ঞে স্যার লেখাপড়া করে ।এই বছর উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে ।চারটা বিষয়ে লেটার সহ প্রথম হয়েছে স্কুলের মধ্যে ।এখন ও আর পড়তে চায় না ।কারন আমি তো গরীব ।ও বোঝে ।তাই হয়তো I
ও --, তাই ।আচ্ছা কালকে ও-কেও নিয়ে আসবেন আপনার সাথে ।অনেক রাত হল ।আপনি যেতে পারবেন তো ! না হয় আমি একটু এগিয়ে দিয়ে আসছি , চলুন I
না না স্যার, আপনি আর কষ্ট করবেন কেন ।আমি একা একা যেতে পারবো ।আর না যদি পারি তাহলে এই ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটির সদস্য হওয়ার উপযুক্ত বয়স হয়তো পেরিয়ে এসেছি আমি I
তিনবার রবীন বাবুর কাঁধে বাহবার প্রতিধ্বণি দিয়ে বললাম, ‘তুমি আছো তাই আমি খুব সাহস পাই ।আর এই জোয়ানটাই সবসময় থাকে যেন ।এইটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস একমাত্র তোমার উপরই আছে’ ।আচ্ছা , বায় , টেক কেয়ার্ ।গুড নাইট ।
(2)
পরের দিন ভোরের বেলা রবীন বাবু তার- দলবলের সাথে ছেলেকেও নিয়ে হাজির ।প্রথমে দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি- রবীন বাবুর ছেলে অর্থাত তপন কুমারকে ।উচ্চতায় ছয় ফুটের মতো হবে , আর হাড্ডা-গাড্ডা শরীর ।যেন এক আতঙ্ক পালোয়ান দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে ।আমি দেখেই তাকে বসতে বললাম , সমিতিতে আসা বাকি জোয়ান গুলোর সাথে I
খানিক-ক্ষন বাদে আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালাম, এবং বলতে লাগলাম ,- ‘প্রথমেই আপনাদের পরিচয় করিয়ে দি আমাদের ‘জাগো জোয়ান জাগো’ সমিতির নতুন সদস্য তপন কুমারের সাথে ।ইনি হলেন আমাদের জোয়ান দলের সদস্য রবীন বাবুর ছেলে ।আজ থেকে এ-ও আমাদের সাথে যোগদান দিল ।এবার মূল বক্তব্যে আসি ।আপনাদের এত সকাল সকাল ডাকার কারন এই- সামনের সতেরো তারিখ মানে আর তিন দিন বাদে আমরা সবাই মিলে একটা সম্মেলন করবো ।যার মূল বক্তব্য হবে মানুষ কে সচেতন করার কয়েকটি ধারাবাহিক পরিকল্পনা ।সাথে সাথে এতে যোগদান করার জন্য আহ্বান করা হবে দেশের সমস্ত জনসাধারনকেও , যারা বিভিন্ন রাজনীতির জালে জড়িত হয়ে স্বাধীন দেশের নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গন করছে ।যারা নিজের অজান্তে , নানান লালসার ভারে নিজেকেও জড়িয়ে ফেলছে ওদের সাথে , যাদের রাজনীতি কথার অর্থটা হারিয়ে ফেলেছেন মস্তিস্ক থেকে , তাদেরকেই ইনভায়েট করা হবে এই সম্মেলনের দ্বারা ।আপাতত আমরা এই কয়েকটি পরিকল্পনাই শুরু করবো এখন ।পরে এই পরিকল্পনা আরো বিশালাকৃতি করার চেষ্টা করব সবাই ।আপনাদের নাম গুলো আমাকে রবীন বাবু লিখে দিয়েছেন ।আজকে আমি আমাদের প্রধান প্রতিনিধি দীপঙ্কর বাবুর সাথে স্বাক্ষাত করে কথা বলে নেব এবং আপনাদের নাম গুলোও ওর কাছে দিয়ে আসবো ।আর আমার সাথে যাবে রবীন বাবুর ছেলে তপন কুমার I
নতুন বলে কিন্তু ওকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম না, বলেছিলাম ওর সাহস জানতে ।তাই যখন বলি, ‘কি তপন তুমি আসতে পারবে তো ! আজ বিকেল তিনটায়’ ।খুবই জোরালো স্বরে বলে উঠে , ‘ইয়েস স্যার আমি আসতে পারবো’ ।ঠিক আছে ।এখন আপনারা সবাই আসতে পারেন ।পরশু একবার আসবেন কিন্তু , এই মানে সন্ধ্যে ছয়টার দিকে হলেও হবে ।এই ব্যপারেই আমরা আবার আলোচনা করবো I
(3)
( বিকেল তিনটা হওয়ার আধ ঘণ্টা আগেই তপন এসে হাজির হয়ে যায় আমার বাড়ির সামনে ।আমি তখন হাতে খবরের কাগজ’টা নিয়ে বারান্দায় বসে ছিলাম হালকা হাওয়ার আদরে ।আমি তাকে আসতে দেখেই আমিও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম হাতে ব্যগটা নিয়ে ।আমাকে আসতে দেখে ও দাঁড়িয়ে গেল I)
চলো , আর হ্যাঁ বাইক চালাতে পারো তো I
আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম তখন তার চোখ দুটো যেন কিছু লুকোতে চাইছিল তারপর বলে উঠল , ‘না স্যার , খুব ভালো জানি না ।তবে চালিয়ে নি কখনো কখনো ।
শোনার পর বললাম, ঠিক আছে । হাতে ব্যাগটা নিয়ে বসে পড়ো ।
খানিকক্ষন বাদে আমরা পৌঁচ্ছে গেলাম দীপঙ্কর বাবুর কেবিনে ।অনেকক্ষন ধরে অনেক ব্যপারে কথাবার্তা হল ।তপনকে পরিচয় করিয়ে দিলাম দীপঙ্কর বাবুর সাথে ।দীপঙ্কর বাবুতো ফিদা হয়ে যায় ওর সাহসিক কথাবার্তা শুনে এবং চাবাসিও দেয় , যেন সারাটা জীবন ও এই ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটিতে লড়েই যায় ।
(4)
সতেরোই মার্চ বেলা দশটার সময় শুরু হল ময়ূরখোলা থেকে রওনা আমাদের ‘জাগো জোয়ান জাগো’ সম্মেলন ।নানান রকম সমাজ সচেতন মূলক ভাষন দিতে দিতে আমাদের সম্মেলন যখন দুই নাম্বার গলিতে প্রবেশ করে ঠিক তখন বিরোধী পক্ষের কিছু শোষকদল আমাদের উপর ইট ছোঁড়া শুরু করে ।ধীরে ধীরে বাড়তেও থাকে ইট আর নানান রকম আঘাতিক বস্তু ।আহত হতে থাকে সম্মেলনের প্রতিটি জোয়ান ।তবুও আমাদের জোয়ান চালিয়ে যায়, শুনিয়ে যায় জনসাধারনকে আমাদের নতুন সদস্য তপন কুমার – ‘দেখতেই পাচ্ছেন আপনারা সচোক্ষে , আমাদের মুল উদ্দেশ্য লড়াই নয় , নয় কারোর ক্ষতি সাধন করা ।আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দাওয়া ।আপনাদের পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরিয়ে দাওয়া ।যাতে আপনারা সুখে-সাচ্ছন্দে বাস করতে পারেন ।আসুন আপনারা , দলিয়ে দিন ওদেরকে যারা আজ অত্যাচারের শীর্ষে স্থান নিয়েছে ।আসুন, আজকের এই সম্মেলন শুধু আমাদের নয়, আপনাদেরও বটে ।আজ আমাদের এই মুক্তি যুদ্ধে ঠিক তোমাদের মত মুক্তি যোদ্ধার অবশ্যই প্রয়োজন ।তাই আমাদের সাথে আজ স্বর মেলান-
“ঘরে ঘরে আজো আছো যত জোয়ান,
আমি তাদের-কেই করছি আহ্বান !!
তোমাদের পূর্ণ অধিকার ফের ফিরে পেতে
যোগ দিন আজ দলে দলে এতে----” ।
ধীরে ধীরে আমাদের সম্মেলন আরো অগ্রসর হতে থাকে আরো গভীরে ।হঠা ৎ বিরোধী পক্ষের একটা ইট রবীন বাবুর মাথায় এসে পড়াতেই রবীন বাবু রক্তাক্ত হয়ে পড়ে ।বাবার এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে তপন কুমার এক পা’ও পিছু হটেনি ।এমনকি আহত রবীন বাবুও বসে থাকেননি ।রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়ে যেতে চান ।ঠিক যেন ‘বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের’ গল্প ।প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে লড়াইয়ে পর একটু যখন মাহল শান্তিতে পরিনত হয় তখন ফিরে আসে জাগো জোয়ান জাগো কমিটির সমস্ত আহত জোয়ানেরা ।
(5)
পরেরদিন নানান খবরের কাগজে এই লড়াইয়ের ইতিহাস নানান বর্ণনা হয়ে উঠে আসে সমাজের সামনে এবং এই সম্মেলনের দ্বারা দেশের কোনায় কোনায় সমস্ত ন-জোয়ান জেগে ওঠে, এমনকি প্রতিবাদীও হয়ে ওঠে ।ধীরে ধীরে এই আমাদের ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটির সদস্য সংখ্যা আঠারো থেকে ল্যকভ্যগ আঠারো-শ’তে হয়ে দাঁড়ায় ।দেশের মানুষ এই আন্দোলন অর্থা ৎ এই সম্মেলনের অর্থটা সঠিক ভাবে বুঝে নিয়েছিল শুধুমাত্র তপন কিংবা ন-জোয়ান রবীনের মত আরো যত ছিল তাদের দ্বারা ।আর এই সম্মেলন দেশের কল্যানকারি হিসাবে পরিচিত হয়ে যায় ।শুধু আমি-ই নই দেশের সবাই গর্বিত একমাত্র তপন আর তপনের বাবা রবীনের উপর ।
আজ দেশ খোঁজে এমনই বীর যোদ্ধাদের যারা মৃত্যুকে পরোয়া না করে দেশের জন্যই লড়ে যায় একমাত্র জনকল্যানের খাতিরে ।প্রতিটি ইঁট আর প্রতিটি গুলির পিছনে যদি মৃত্যুর নাম লেখা থাকে তবে কখনোও জয় করতে পারবে না দেশের কোণায় কোণায় আছে যতো রবীন কিংবা তপনের মতো হাজার হাজার জোয়ানকে ।এরা বার বার জন্মেও অমর হয়ে যাবে ।আমি চাই, এই জোয়ান-রাই যেন ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে শাখা-প্রশাখা হিসাবে ।এই ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটির সমস্ত সদস্যকে আমার তরফ থেকে রইল শতকোটি সেলাম ।
বলেন কি আপনি ! বিপিন বাবুও- এখন ওদের দলে চলে গেছেন ।শেষ-মেশ ও যে এমন করবেন আমি ভাবতেও পারিনি ।তবে, আর- কতজন রইলো আমাদের এই “জাগো জোয়ান জাগো” কমিটিতে ।বলুন তো রবীন বাবু একবার !
আজ্ঞে স্যার ‘আপনাকে নিয়েই সতেরো জন’ ।
ও তাই ।আমায় একবার ওদের নাম গুলো লিখে দেবেন তো ।তবে আজকে নয় । অনেক রাত হয়েছে । বাড়ি চলে যান এখন ।কালকে কিন্তু- সকাল সকাল একবার কমিটিতে আসবেন, একটা জরুরি কথা আছে । ও হ্যাঁ , বাকি পনেরো জনকেও আসতে বলবেন I
( যেতে যেতে রবীনবাবু দরজা থেকে ঘুরে আসে )
আজ্ঞে স্যার একটা কথা বলার ছিল , যদি কিছু মনে না করেন , তাহলে... I
হ্যাঁ , বলুন ।এতে আবার অনুমতি নেওয়ার দরকার কি আছে ।বিনা দ্বিধায় বলতে পারেন I
আজ্ঞে আমার ছেলে মানে তপন, অনেক দিন থেকে বলছে এই কমিটিতে যোগদান করবে ।আমি বার বার মানা করেছি, তবে ও আমার কোনো কথাই শুনতে রাজি হয়নি ।তাই আজকে আপনাকে বলতে বাধ্য হলাম I
আরে এ তো দারুন খবর ।সেচ্ছায় যোগদান করতে চাইছে তো ভালো কথা ।তবে- কি করে তোমার ছেলে - !
আজ্ঞে স্যার লেখাপড়া করে ।এই বছর উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে ।চারটা বিষয়ে লেটার সহ প্রথম হয়েছে স্কুলের মধ্যে ।এখন ও আর পড়তে চায় না ।কারন আমি তো গরীব ।ও বোঝে ।তাই হয়তো I
ও --, তাই ।আচ্ছা কালকে ও-কেও নিয়ে আসবেন আপনার সাথে ।অনেক রাত হল ।আপনি যেতে পারবেন তো ! না হয় আমি একটু এগিয়ে দিয়ে আসছি , চলুন I
না না স্যার, আপনি আর কষ্ট করবেন কেন ।আমি একা একা যেতে পারবো ।আর না যদি পারি তাহলে এই ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটির সদস্য হওয়ার উপযুক্ত বয়স হয়তো পেরিয়ে এসেছি আমি I
তিনবার রবীন বাবুর কাঁধে বাহবার প্রতিধ্বণি দিয়ে বললাম, ‘তুমি আছো তাই আমি খুব সাহস পাই ।আর এই জোয়ানটাই সবসময় থাকে যেন ।এইটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস একমাত্র তোমার উপরই আছে’ ।আচ্ছা , বায় , টেক কেয়ার্ ।গুড নাইট ।
(2)
পরের দিন ভোরের বেলা রবীন বাবু তার- দলবলের সাথে ছেলেকেও নিয়ে হাজির ।প্রথমে দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি- রবীন বাবুর ছেলে অর্থাত তপন কুমারকে ।উচ্চতায় ছয় ফুটের মতো হবে , আর হাড্ডা-গাড্ডা শরীর ।যেন এক আতঙ্ক পালোয়ান দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে ।আমি দেখেই তাকে বসতে বললাম , সমিতিতে আসা বাকি জোয়ান গুলোর সাথে I
খানিক-ক্ষন বাদে আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালাম, এবং বলতে লাগলাম ,- ‘প্রথমেই আপনাদের পরিচয় করিয়ে দি আমাদের ‘জাগো জোয়ান জাগো’ সমিতির নতুন সদস্য তপন কুমারের সাথে ।ইনি হলেন আমাদের জোয়ান দলের সদস্য রবীন বাবুর ছেলে ।আজ থেকে এ-ও আমাদের সাথে যোগদান দিল ।এবার মূল বক্তব্যে আসি ।আপনাদের এত সকাল সকাল ডাকার কারন এই- সামনের সতেরো তারিখ মানে আর তিন দিন বাদে আমরা সবাই মিলে একটা সম্মেলন করবো ।যার মূল বক্তব্য হবে মানুষ কে সচেতন করার কয়েকটি ধারাবাহিক পরিকল্পনা ।সাথে সাথে এতে যোগদান করার জন্য আহ্বান করা হবে দেশের সমস্ত জনসাধারনকেও , যারা বিভিন্ন রাজনীতির জালে জড়িত হয়ে স্বাধীন দেশের নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গন করছে ।যারা নিজের অজান্তে , নানান লালসার ভারে নিজেকেও জড়িয়ে ফেলছে ওদের সাথে , যাদের রাজনীতি কথার অর্থটা হারিয়ে ফেলেছেন মস্তিস্ক থেকে , তাদেরকেই ইনভায়েট করা হবে এই সম্মেলনের দ্বারা ।আপাতত আমরা এই কয়েকটি পরিকল্পনাই শুরু করবো এখন ।পরে এই পরিকল্পনা আরো বিশালাকৃতি করার চেষ্টা করব সবাই ।আপনাদের নাম গুলো আমাকে রবীন বাবু লিখে দিয়েছেন ।আজকে আমি আমাদের প্রধান প্রতিনিধি দীপঙ্কর বাবুর সাথে স্বাক্ষাত করে কথা বলে নেব এবং আপনাদের নাম গুলোও ওর কাছে দিয়ে আসবো ।আর আমার সাথে যাবে রবীন বাবুর ছেলে তপন কুমার I
নতুন বলে কিন্তু ওকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম না, বলেছিলাম ওর সাহস জানতে ।তাই যখন বলি, ‘কি তপন তুমি আসতে পারবে তো ! আজ বিকেল তিনটায়’ ।খুবই জোরালো স্বরে বলে উঠে , ‘ইয়েস স্যার আমি আসতে পারবো’ ।ঠিক আছে ।এখন আপনারা সবাই আসতে পারেন ।পরশু একবার আসবেন কিন্তু , এই মানে সন্ধ্যে ছয়টার দিকে হলেও হবে ।এই ব্যপারেই আমরা আবার আলোচনা করবো I
(3)
( বিকেল তিনটা হওয়ার আধ ঘণ্টা আগেই তপন এসে হাজির হয়ে যায় আমার বাড়ির সামনে ।আমি তখন হাতে খবরের কাগজ’টা নিয়ে বারান্দায় বসে ছিলাম হালকা হাওয়ার আদরে ।আমি তাকে আসতে দেখেই আমিও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম হাতে ব্যগটা নিয়ে ।আমাকে আসতে দেখে ও দাঁড়িয়ে গেল I)
চলো , আর হ্যাঁ বাইক চালাতে পারো তো I
আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম তখন তার চোখ দুটো যেন কিছু লুকোতে চাইছিল তারপর বলে উঠল , ‘না স্যার , খুব ভালো জানি না ।তবে চালিয়ে নি কখনো কখনো ।
শোনার পর বললাম, ঠিক আছে । হাতে ব্যাগটা নিয়ে বসে পড়ো ।
খানিকক্ষন বাদে আমরা পৌঁচ্ছে গেলাম দীপঙ্কর বাবুর কেবিনে ।অনেকক্ষন ধরে অনেক ব্যপারে কথাবার্তা হল ।তপনকে পরিচয় করিয়ে দিলাম দীপঙ্কর বাবুর সাথে ।দীপঙ্কর বাবুতো ফিদা হয়ে যায় ওর সাহসিক কথাবার্তা শুনে এবং চাবাসিও দেয় , যেন সারাটা জীবন ও এই ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটিতে লড়েই যায় ।
(4)
সতেরোই মার্চ বেলা দশটার সময় শুরু হল ময়ূরখোলা থেকে রওনা আমাদের ‘জাগো জোয়ান জাগো’ সম্মেলন ।নানান রকম সমাজ সচেতন মূলক ভাষন দিতে দিতে আমাদের সম্মেলন যখন দুই নাম্বার গলিতে প্রবেশ করে ঠিক তখন বিরোধী পক্ষের কিছু শোষকদল আমাদের উপর ইট ছোঁড়া শুরু করে ।ধীরে ধীরে বাড়তেও থাকে ইট আর নানান রকম আঘাতিক বস্তু ।আহত হতে থাকে সম্মেলনের প্রতিটি জোয়ান ।তবুও আমাদের জোয়ান চালিয়ে যায়, শুনিয়ে যায় জনসাধারনকে আমাদের নতুন সদস্য তপন কুমার – ‘দেখতেই পাচ্ছেন আপনারা সচোক্ষে , আমাদের মুল উদ্দেশ্য লড়াই নয় , নয় কারোর ক্ষতি সাধন করা ।আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দাওয়া ।আপনাদের পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরিয়ে দাওয়া ।যাতে আপনারা সুখে-সাচ্ছন্দে বাস করতে পারেন ।আসুন আপনারা , দলিয়ে দিন ওদেরকে যারা আজ অত্যাচারের শীর্ষে স্থান নিয়েছে ।আসুন, আজকের এই সম্মেলন শুধু আমাদের নয়, আপনাদেরও বটে ।আজ আমাদের এই মুক্তি যুদ্ধে ঠিক তোমাদের মত মুক্তি যোদ্ধার অবশ্যই প্রয়োজন ।তাই আমাদের সাথে আজ স্বর মেলান-
“ঘরে ঘরে আজো আছো যত জোয়ান,
আমি তাদের-কেই করছি আহ্বান !!
তোমাদের পূর্ণ অধিকার ফের ফিরে পেতে
যোগ দিন আজ দলে দলে এতে----” ।
ধীরে ধীরে আমাদের সম্মেলন আরো অগ্রসর হতে থাকে আরো গভীরে ।হঠা ৎ বিরোধী পক্ষের একটা ইট রবীন বাবুর মাথায় এসে পড়াতেই রবীন বাবু রক্তাক্ত হয়ে পড়ে ।বাবার এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে তপন কুমার এক পা’ও পিছু হটেনি ।এমনকি আহত রবীন বাবুও বসে থাকেননি ।রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়ে যেতে চান ।ঠিক যেন ‘বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের’ গল্প ।প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে লড়াইয়ে পর একটু যখন মাহল শান্তিতে পরিনত হয় তখন ফিরে আসে জাগো জোয়ান জাগো কমিটির সমস্ত আহত জোয়ানেরা ।
(5)
পরেরদিন নানান খবরের কাগজে এই লড়াইয়ের ইতিহাস নানান বর্ণনা হয়ে উঠে আসে সমাজের সামনে এবং এই সম্মেলনের দ্বারা দেশের কোনায় কোনায় সমস্ত ন-জোয়ান জেগে ওঠে, এমনকি প্রতিবাদীও হয়ে ওঠে ।ধীরে ধীরে এই আমাদের ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটির সদস্য সংখ্যা আঠারো থেকে ল্যকভ্যগ আঠারো-শ’তে হয়ে দাঁড়ায় ।দেশের মানুষ এই আন্দোলন অর্থা ৎ এই সম্মেলনের অর্থটা সঠিক ভাবে বুঝে নিয়েছিল শুধুমাত্র তপন কিংবা ন-জোয়ান রবীনের মত আরো যত ছিল তাদের দ্বারা ।আর এই সম্মেলন দেশের কল্যানকারি হিসাবে পরিচিত হয়ে যায় ।শুধু আমি-ই নই দেশের সবাই গর্বিত একমাত্র তপন আর তপনের বাবা রবীনের উপর ।
আজ দেশ খোঁজে এমনই বীর যোদ্ধাদের যারা মৃত্যুকে পরোয়া না করে দেশের জন্যই লড়ে যায় একমাত্র জনকল্যানের খাতিরে ।প্রতিটি ইঁট আর প্রতিটি গুলির পিছনে যদি মৃত্যুর নাম লেখা থাকে তবে কখনোও জয় করতে পারবে না দেশের কোণায় কোণায় আছে যতো রবীন কিংবা তপনের মতো হাজার হাজার জোয়ানকে ।এরা বার বার জন্মেও অমর হয়ে যাবে ।আমি চাই, এই জোয়ান-রাই যেন ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে শাখা-প্রশাখা হিসাবে ।এই ‘জাগো জোয়ান জাগো’ কমিটির সমস্ত সদস্যকে আমার তরফ থেকে রইল শতকোটি সেলাম ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফাহিম খান ২৮/০৫/২০১৬দারুণ সম্পাদনা
-
ফয়জুল মহী ২৬/০৫/২০১৬সুসম্পূর্ণ লেখা
-
জে এস সাব্বির ২৪/০৫/২০১৬"জাগো জোয়ান জাগো" থিমটা আকর্ষনীয়ই বটে!
-
পরশ ২০/০৫/২০১৬ভাল
-
আশরাফুল ইসলাম শিমুল ১৯/০৫/২০১৬ভাল
-
পরশ ১৯/০৫/২০১৬দারুন
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৮/০৫/২০১৬জেগে ওঠার অনুপ্রেরণা।।
ধন্যবাদ।