তারুণ্য
নির্ঝরা
খাতুনে জান্নাত
...
নির্ঝরা চিত্রপটের দিকে তাকিয়ে আছে। তের/সতের ইঞ্চির ক্যানভাসে নিজের আঁকা চিত্রটি ইজেলে ভাসছে।চারটি স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো কাঠের এ ইজেলের মাঝখানে ড্রয়ার যাতে রাখা যায় রঙ আর ক্যানভাসের নিচে আড়াআড়িভাবে তুলি। একটি কাঠের পাতলা অংশ বেরিয়ে আসে একটা বোতাম টিপলে যাতে ব্যবহৃত তুলিগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয় একটা পটে। ইচ্ছে করলে একে ভাঁজ করে বক্স বানিয়ে ব্রিফকেসের মতো নেয়া-আনা করা যায়। লন্ডনের আর্টের সরঞ্জামাদির দোকান ‘আটলান্টিস’ থেকে নব্বই পাউন্ড দিয়ে কিনেছে ইজেলটা।গত দশ বছর ধরে চলছে বিরামহীন আঁকাআঁকি। কয়েক হাজার ছবি।
বাইরে নিয়েছিল অনেকবার। টেমস নদীর পাড়ে। লন্ডন ব্রিজের কিনারা ঘেষে দেয়ালটা শেষ হয়েছে যেখানে। নৌকা আর নদীর ছবি ছিল সেটা। আরো মাইল্যন্ড পার্ক, কিউ গার্ডেন। কিউ গার্ডেন মানে প্রকৃতি। সাজানো অথচ সাজানো নয়। যেন খোলা প্রকৃতি অথচ পার্ক । ছিল একটা গ্রিন হাউজও যাতে বিভিন্ন দেশের ছোট গাছ ও গুল্ম সাজানো থরে থরে।এশিয়ার গ্রামের কচুশাক আর ঢেঁকিশাক আর বাগানের মাটি নির্ঝরার চোখে জল এনে দেয়।দেশের মাটিতে নাড়ি, দেশের মধ্যে শক্তি। নয়তো চোখে জল আসে কেন! তাই তো এ ফিরে আসা মাটির গন্ধ শুঁকে স্মৃতির হরিয়াল।
প্রবাসী পল্লীর কাছ থেকে কেনা তিন কাঠার তিন দুই অংশে করা রূপগঞ্জের প্রকৃতির কোল। বাড়িটির পঞ্চাশ -চল্লিশ ফিটের এ কক্ষটি নির্ঝরার ছবি আঁকার ঘর--আর্টিস্টগণ যাকে স্টুডিও বলে।রাত নিঝুম হলেই ঘুমের ফাঁক গলে নির্ঝরা তার স্টুডিওতে আসে।নির্ঝরিণি-নির্ঝরা-নিঝু তিনটিই তার ডাক নাম। কারো আদুরে ডাক ছেনীর মতো বুকে বিঁধে। আহা ডাকটা থাকুক...রঙ আর তুলি, ইজেল আর ক্যানভাস। অংকন আর মগ্নতা। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের মত ঋজু তার মনোবল। কোথাও ভাঙন নেই, রিক্তের বেদনও নয়। এ ঘর থেকে আকাশ দেখা যায় না। মগ্নতার গভীরে ঢোকে আকাশ স্পর্শ করে নির্ঝরা।গায়ে মাখে মেঘ-রোদ আর বৃষ্টি।ডুব দেয়। স্মৃতির গহীন থেকে তুলে আনে শাপলা-শালুক আর হিযল তমালের ছায়া।নিরিবিলি এ সময়টা স্পর্শ করে অধরা সময় আর পেরিয়ে আসা দিনের অনুরাগ। জানালা বিহীন এ ঘরের দেয়াল মেঝেতে স্তূপাকার আর আড়াআড়িভাবে রাখা চিত্রপটে সেসব মনি-মুক্তো ঝলঝলে।
মগ্নতা তাকে নিয়ে যায় শহর ছেড়ে কোন দূর গ্রাম-পথ পেরিয়ে কোন এক পাকা আধভাঙা পাকা ঘাটে।একটি শিশু জল ছিটায়। সে ছেলেশিশুর পানিতে হিসি করার কারণে আরেকটি মেয়েশিশু সিঁড়ির পাশ ঘেঁষে বসে। সকালের বাসিমুখ ধুতে হবে যে।হাত দিয়ে সরায় ‘ও হিসি জল এদিকে এসো না।’ আচমকা হিসিশিশুটির ধাক্কায় পানিতে পড়ে যায় সিঁড়ির পাশঘেষা মেয়েশিশুটি। সাঁতার জানে না গো... পাড়ছোঁয়ানো বর্ষার ডুবোপুকুর। শিশুটি ভাসে-ডোবে হাত বাড়ায় কিনারা চায়।ওহ! নির্ঝরা কেঁপে ওঠে!
চিত্রপটে ধাক্কায় পড়ে যেতে থাকা শিশুটিকে আঁকতে চায়।শুকনো হলুদ পাতার মতো ফ্রক পরা, ফুটফুটে মুখ। থৈ থৈ জল, চারপাশে ঘন গাছ। আম, গাব, করই, মান্দার, ডুমুর, কৃষ্ণচুড়া, সোনালু কি নেই! বৃক্ষদের কোলে এ স্তব্ধ পুকুর গ্রামের বৌ-ঝিদের এ-ঘাট থেকে ও-ঘাটে গল্পের মুখরতায় মেতে থাকে বেশি সময় । মাঝে মাঝে ‘ডুব ডুব’ করে পুকুরে পড়ে আম, গাব ও ডুমুর।কখনো ঝপাৎ শব্দে পড়ে নারিকেল। মালিক পক্ষের সাথে ছুটে আসে আরো অনেক পক্ষ ভেসে থাকা নারিকেল দেখে। নিজের গাছের সাথে মেলায়। পুকুরের পানিতে আধা ডোবানো একটি নারিকেল গাছ বেঁকে আধশোয়া -- মাথাটা উপরের দিকে... পুকুরের রঙটা সবুজ হওয়া চাই। নীল আর লেবু হলুদ আর সাদা মেশালে যে সবুজ হয় অনেকটা তেমন হবে এ কিনারার জলের রঙ। পাতার রঙ করতে শুধু নীল আর লেবু হলুদ, আর বুড়ো পাতা হলে সোনালি হলুদ!
‘রঙটা একটু বেশি করে মিশ্রণ করো; না হলে পরে একই রঙ পাওয়া কঠিন হয়।’ কে কে বলছে! গল্পের রঙ মাখিয়ে কঠিন প্রশিক্ষনের বিষয়গুলোকে সহজ করার গতিময়তা! সেই যে তরুণ কাল! হ্যা, বাটিক, সেলাই মেডাম।ব্লক, রঙ,তুলি, পানি, মোম, রজন, গাম...জীবন অন্বেষণ।শাড়ির পর শাড়ি, থ্রি পিচের পর থ্রিপিচ ব্লক কর, বাটিক কর ফেব্রিক্সে ব্রাশ ঘষাও।
‘প্রতি শাড়িতে ব্লক করলে বিশ টাকা পাবে আর বাটিক করলে দেড়শত টাকা। করবে কি?’ কেন নয়। সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরুবার দলে। আরও চাই তেল, সবজি; মাংস নাই হলো মাছ, ডিম তো খেতে হয়। সাথে থাকে মুখ হা করা বাসা ভাড়া। বাসা নয় গো ছোট ঘর।পাখির বাসার মতো। ফ্লাটের শেষ সীমায় ছোট ঘরটিতে যেতে একে একে দুটো বেড রুম পার হতে হয়।কেউ শুয়ে থাকে কেউ বসে...গম্ভীর ভারকরা মুখ। কত গান হয়েছিল একসাথে, কত গল্প, হাসি, ঠাট্রা আবেদন নিবেদন। জীবন যখন পড়তির দিকে আপনজনও সে পথ ধরে হাঁটে আগে আগে।
ঘরটির ছোট জানালার সামনে বিশাল আম গাছ। ‘ঝুপ’ করে’ আম পড়ে জানালার সামনে ছোট বেলার কথা চ্যাৎ করে কাঁপিয়ে দেয়। জানালা খোলা রাখলেও কেউ দেখে না শুধু দেখে অভাব আর চেটেপুটে খায় ভালোবাসার গুঞ্জরণ; পরস্পরের আলিঙ্গন থেকে খুলে নেয় আবেগের মোহময় কাল।আর মৌ মক্ষিকা হ’য়ে হুল ফুটায়।
নির্ঝরা ব্লক করে, বাটিক করে...‘রঙের উপরে রঙ মানে ডাবল ব্লক হলে শুধু আঁচল পাড়ে পঞ্চাশ টাকা, মেডাম পাবে দেড়শ টাকা। তা পাক। তার ব্লক, রঙ ও ঘর। দোকানীরা তাকেই কাজ দিয়েছে। দোকানীরা বিক্রি করবে আটশত থেকে এক হাজার টাকা।রঙের মিশ্রণটা শিখে নিলে নির্ঝরা নিজেই করতে পারত এ কাজ । কিন্তু এসব কাজের আদি ইতি শিখতে লাগবে এক হাজার টাকা। বাটিকের আরো বেশি মোম, রজন, গাম, লোহার ব্লক আর শেখার চার্জ পুরো দুই হাজার টাকা।‘কাজ থেকে টাকা কেটে কেটে দিন না মেডাম ব্লক শিখিয়ে।’ মেডাম মাথা নাড়ে। এক হাজার টাকা হাতে দিতে হবে এক সাথে নগদ।না হলে নাকি শেখা হবে না ঠিক মতো। কাজ শেখা সোজা কথা নয়। কাজ তো এক জীবনের সম্বল আরো জীবনও যেতে পারে।নির্ঝরা কাজ করে আর শোনে ফাঁকে ফাঁকে মেডামের ক্লাশ।‘এক চামচ ফিক্চারে চার চামচ নিউটেক্স, দুই চামচ বাইন্ডার, রঙ দাও চোখের আন্দাজ যেমন রঙ তুমি চাও।বাস রঙ রেডি হয়ে গেল।’ রাক্ষুসের প্রাণ ভ্রমর আবিস্কারের মতোই ডালিমের লালের খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে নির্ঝরা। আবার আওড়ায় মিশ্রণ প্রনালীটি। আহা উদ্ধার হয়েছে স্বপ্নের মণিকাঞ্চন।
দ্রুত কাজ শেষ করে চট থেকে রঙ তুলে, ব্রাশ ধুয়ে, সবকিছু ঠিক জায়গায় রেখে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে দুপুরের কড়া রোদ,য্যাম আর যানজটের ভেতর দিয়ে দৌড়ায় নির্ঝরা।আলু, ডিম ও তেল কেনে। আর কেনে সাত টাকা দামে একটা চকবার। মাঝে মাঝে চকবার খেয়ে তার মন থেকে অভাবের অভাবীয় বোধটা সরিয়ে ঘরে ঢোকে। স্বামী ঘুমায়। চশমার আড়ালে চকচক করে শ্যামলকান্তি মুখশ্রী। বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত হ’য়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বইটা বুকের উপর। বই পড়ুক...একদিন লেখক হবে যে...আহা ঘুমন্ত মায়ামুখ। ইচ্ছে করছে একটি চুমু এঁকে দেয়। না নির্ঝরা সামলে নেয় ঘুম ভেঙে যাবে। ঘুমুক; আরামের ঘুম ঘুমিয়ে উঠে লিখুক কিছু। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যাই হোক হাতের কাজ শেষ করে তার কোলে মাথা রেখে শোনে নির্ঝরা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লিখিয়েদের সাথে দেখতে পায় সে প্রিয়মুখ।তাকে লেখক বানাতে আজীবন কাজ করে যাবে একা, সহে যাবে সব বিভেদ আর গ্লানি।
সিঁদেল চোরের মতো খাটের নিচ থেকে এক হাতে মসলাপাতির ছোট ডালা ও অন্য হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে। আবার ঘরে গিয়ে তরকারীর পাতিল ও ছোট একটা বাটিও আনে। এ ফ্লাটের সাবলেট সে নিজের সবকিছু ঘরেই রাখতে হয়।
নির্ঝরার চশমাআঁটা চোখে এখনো খেলে বেড়ায় লাল-সবুজ মাছ। শাড়ির জমিনে কেমন এঁকেবেঁকে যায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সে তরুণী কি সুন্দর মিলে মিশে থাকে ডাবল ব্লকে। ‘নিজের কাজ দেখে নিজেই মুগ্ধ’ মেডামের ঠাট্রা গায়ে মেখে চোখ সরায়। নতুন শাড়ি, ওড়না, থ্রিপিচ। ওড়নার কাজ শেষ হতেই চায় না। মেডাম একটি খাবারের বাটি এগিয়ে দেয়। গতকালের রান্নার ক্লাশে তৈরী করা পেটিস ও পেনকেক।হাত ধরে আসে, শ্বাস পড়ে জোরে।
-দুইশত টাকা হলেই রঙ কিনে প্রাথমিক কাজ করা যাবে? খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকা নির্ঝরার প্রশ্নের উত্তরে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায় মেডাম।চশমার লেন্স ঘোলাট হয়ে আসে মেডামের। তবে কি গোপনে কাজের অর্ডার নিতে শুরু করেছে নির্ঝরা। নিজেই হাতিয়ে নেবে মনোয়ারা বেগমের ব্যবসা।না নির্ঝরাকে আর আসতে দেওয়া হবে না।
গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকে। ভারী বৃষ্টি হবে। মেঘ ডাকলে চঞ্চলা হয়ে যায়। ঝড় হবে শো শো বাতাস। মট মট করে কি যেন পড়ে। ডাল ভাঙলো বুঝি! কারো বা ছাদের উপরের টিন। পা নিসপিস করে দৌড় দিতে। সেই আম বাগান, তাল তলা। ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে কত সকাল বিকাল কাজে ভরে থাকত। তার এ তিন তলা ঘরের চালে টিন লাগানো। ঝমঝম বৃষ্টি শুনবে আর ভেসে যাবে শিশু কালে, কিশোরী কালে, যৌবনের আংশিক বৃষ্টি গেয়েছিল। ডুবতে ডুবতে ভাসতে ভাসতে আঁকড়ে ধরেছিল এক বুড়ো বৃক্ষের শিকড়। সে বৃক্ষটিকে একটি ক্যানভাসে ধরে রেখেছে সে। রঙ ও তুলিতে আটকে থাকুক জীবন গতির মূহুর্তকয়েক।এ ঘরটিতে হাজার ক্যানভাসে জমে আছে জীবনের লক্ষ টুকরো কথা। কখনো ব্যর্থ হয়েছে। অর্ধ বা পোনে অংশ সফলতা ব্যর্থতার রঙিন কালো পোচে মাখামাখি হ’য়ে পড়ে আছে। একরামিন ও তেল রঙে আঁকা এসব জীবনছবি নির্ঝরার একার। এ-ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই কারো। কিংবা কাউকে দেখানোর তাগিদও নেই। কোথাও ঢলে পড়ে আছে বৃক্ষ, কোথাও বাকল, কোথাও ঝরছে জীবন-অশ্রু কোথাও স্নিগ্ধতা।অশ্রু, রক্ত, সুখ-কান্না, প্রতারণার ছোবলমাখা অবিমিশ্র খন্ডায়ন নির্ঝরা তেল রঙে আঁকছে। রঙের গন্ধে যেন শ্বাস। তেলরঙ মানে বেঁচে থাকা, অতীত থেকে স্ফুরণ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। স্মৃতির আমেজে ঠাঁসা তার ছবিগুলো কাউকে দেখায় না সেদিন থেকে যেদিন একজন তার মা ও শিশুর একটা ছবি কিনতে চেয়েছিল।তার মনে হয়েছিল তার প্রাণ কেউ কেটে নিতে চাইছে... আর প্রাণ কেটে টাকা আয়ের আর সময় নেই তার।
তার রুমটি বাদে দোতলার ছাদ তিন তলার উঠোন। সে উঠোনের এক পাশে উপরে ছাদওয়ালা বেশ কিছু জায়গা। সেখানে বসার বেঞ্চিতে বসে বৃষ্টির মাতলামী দেখে।বৃষ্টির উন্মাতালতা তাকে রঙতুলিতে মগ্ন থাকতে দেয় না। ‘নিঝু নিঝু’ প্রিয় কোন ডাক বুকে ছেনীর মতো বিঁধে।
...বিজন বিবশ রাতে কথা বলে কে যে
বুকের পাশটি ছুঁয়ে কার আদৃত চোখের পাতা
কোন কালের গল্পের ভিড় পরান ডাঙার মোড়ে
আজ কার কথা মনে পড়ে!
বৃষ্টিতে ভেজার বয়স এটা নয় নির্ঝরা বোঝে।‘তুমি এত কেন বোঝ মা? বেশি বুঝে বুঝে কষ্ট বাড়াও। ’ ছেলেমেয়েরা প্রায়ই আদরের ধমক দেয়। শিশুবেলার তার ছেলেটার পাকা কথা ‘আমাকে মাছ কাটা শিখিয়ে দাও মা আমি তোমার মেয়েও হবো ছেলেও হবো।’ না ছেলেটা শুধু ছেলেই হ’য়ে রইলো আর মেয়েটাও ছেলে হতে চায়।এ পৃথিবীটাই ছেলে হবার প্রতিযোগীতায় মেতে আছে। ছেলে মানে ক্ষমতা, ছেলে মানে বড়, ছেলে মানে আগেভাগে দৌড়ানোর কৌশল...
নিচে নিজস্ব ঘরে ঘুমুচ্ছে তার বড় হয়ে যাওয়া শিশুরা। সবাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখে গেছে। কাউকে নিয়ে আর রাত জাগার ক্লান্তি নেই। গলার ঘাম মুছে দেবার কসরত কিংবা ফ্যান কমানো বাড়ানোর জন্য উঠানামা নয়তো মশা...
এখন শুধু নিজেকে পাহারা দেয়া আর বাঁচিয়ে রাখার কসরত।সবার দরোজা ভেতর থেকে বন্ধ।শুধু নির্ঝরা খোলা রাখে দরোজা; যদি কেউ খবর নিতে এসে বন্ধ দরোজা দেখে ফেরত চলে যায়!
খাতুনে জান্নাত
...
নির্ঝরা চিত্রপটের দিকে তাকিয়ে আছে। তের/সতের ইঞ্চির ক্যানভাসে নিজের আঁকা চিত্রটি ইজেলে ভাসছে।চারটি স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো কাঠের এ ইজেলের মাঝখানে ড্রয়ার যাতে রাখা যায় রঙ আর ক্যানভাসের নিচে আড়াআড়িভাবে তুলি। একটি কাঠের পাতলা অংশ বেরিয়ে আসে একটা বোতাম টিপলে যাতে ব্যবহৃত তুলিগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয় একটা পটে। ইচ্ছে করলে একে ভাঁজ করে বক্স বানিয়ে ব্রিফকেসের মতো নেয়া-আনা করা যায়। লন্ডনের আর্টের সরঞ্জামাদির দোকান ‘আটলান্টিস’ থেকে নব্বই পাউন্ড দিয়ে কিনেছে ইজেলটা।গত দশ বছর ধরে চলছে বিরামহীন আঁকাআঁকি। কয়েক হাজার ছবি।
বাইরে নিয়েছিল অনেকবার। টেমস নদীর পাড়ে। লন্ডন ব্রিজের কিনারা ঘেষে দেয়ালটা শেষ হয়েছে যেখানে। নৌকা আর নদীর ছবি ছিল সেটা। আরো মাইল্যন্ড পার্ক, কিউ গার্ডেন। কিউ গার্ডেন মানে প্রকৃতি। সাজানো অথচ সাজানো নয়। যেন খোলা প্রকৃতি অথচ পার্ক । ছিল একটা গ্রিন হাউজও যাতে বিভিন্ন দেশের ছোট গাছ ও গুল্ম সাজানো থরে থরে।এশিয়ার গ্রামের কচুশাক আর ঢেঁকিশাক আর বাগানের মাটি নির্ঝরার চোখে জল এনে দেয়।দেশের মাটিতে নাড়ি, দেশের মধ্যে শক্তি। নয়তো চোখে জল আসে কেন! তাই তো এ ফিরে আসা মাটির গন্ধ শুঁকে স্মৃতির হরিয়াল।
প্রবাসী পল্লীর কাছ থেকে কেনা তিন কাঠার তিন দুই অংশে করা রূপগঞ্জের প্রকৃতির কোল। বাড়িটির পঞ্চাশ -চল্লিশ ফিটের এ কক্ষটি নির্ঝরার ছবি আঁকার ঘর--আর্টিস্টগণ যাকে স্টুডিও বলে।রাত নিঝুম হলেই ঘুমের ফাঁক গলে নির্ঝরা তার স্টুডিওতে আসে।নির্ঝরিণি-নির্ঝরা-নিঝু তিনটিই তার ডাক নাম। কারো আদুরে ডাক ছেনীর মতো বুকে বিঁধে। আহা ডাকটা থাকুক...রঙ আর তুলি, ইজেল আর ক্যানভাস। অংকন আর মগ্নতা। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের মত ঋজু তার মনোবল। কোথাও ভাঙন নেই, রিক্তের বেদনও নয়। এ ঘর থেকে আকাশ দেখা যায় না। মগ্নতার গভীরে ঢোকে আকাশ স্পর্শ করে নির্ঝরা।গায়ে মাখে মেঘ-রোদ আর বৃষ্টি।ডুব দেয়। স্মৃতির গহীন থেকে তুলে আনে শাপলা-শালুক আর হিযল তমালের ছায়া।নিরিবিলি এ সময়টা স্পর্শ করে অধরা সময় আর পেরিয়ে আসা দিনের অনুরাগ। জানালা বিহীন এ ঘরের দেয়াল মেঝেতে স্তূপাকার আর আড়াআড়িভাবে রাখা চিত্রপটে সেসব মনি-মুক্তো ঝলঝলে।
মগ্নতা তাকে নিয়ে যায় শহর ছেড়ে কোন দূর গ্রাম-পথ পেরিয়ে কোন এক পাকা আধভাঙা পাকা ঘাটে।একটি শিশু জল ছিটায়। সে ছেলেশিশুর পানিতে হিসি করার কারণে আরেকটি মেয়েশিশু সিঁড়ির পাশ ঘেঁষে বসে। সকালের বাসিমুখ ধুতে হবে যে।হাত দিয়ে সরায় ‘ও হিসি জল এদিকে এসো না।’ আচমকা হিসিশিশুটির ধাক্কায় পানিতে পড়ে যায় সিঁড়ির পাশঘেষা মেয়েশিশুটি। সাঁতার জানে না গো... পাড়ছোঁয়ানো বর্ষার ডুবোপুকুর। শিশুটি ভাসে-ডোবে হাত বাড়ায় কিনারা চায়।ওহ! নির্ঝরা কেঁপে ওঠে!
চিত্রপটে ধাক্কায় পড়ে যেতে থাকা শিশুটিকে আঁকতে চায়।শুকনো হলুদ পাতার মতো ফ্রক পরা, ফুটফুটে মুখ। থৈ থৈ জল, চারপাশে ঘন গাছ। আম, গাব, করই, মান্দার, ডুমুর, কৃষ্ণচুড়া, সোনালু কি নেই! বৃক্ষদের কোলে এ স্তব্ধ পুকুর গ্রামের বৌ-ঝিদের এ-ঘাট থেকে ও-ঘাটে গল্পের মুখরতায় মেতে থাকে বেশি সময় । মাঝে মাঝে ‘ডুব ডুব’ করে পুকুরে পড়ে আম, গাব ও ডুমুর।কখনো ঝপাৎ শব্দে পড়ে নারিকেল। মালিক পক্ষের সাথে ছুটে আসে আরো অনেক পক্ষ ভেসে থাকা নারিকেল দেখে। নিজের গাছের সাথে মেলায়। পুকুরের পানিতে আধা ডোবানো একটি নারিকেল গাছ বেঁকে আধশোয়া -- মাথাটা উপরের দিকে... পুকুরের রঙটা সবুজ হওয়া চাই। নীল আর লেবু হলুদ আর সাদা মেশালে যে সবুজ হয় অনেকটা তেমন হবে এ কিনারার জলের রঙ। পাতার রঙ করতে শুধু নীল আর লেবু হলুদ, আর বুড়ো পাতা হলে সোনালি হলুদ!
‘রঙটা একটু বেশি করে মিশ্রণ করো; না হলে পরে একই রঙ পাওয়া কঠিন হয়।’ কে কে বলছে! গল্পের রঙ মাখিয়ে কঠিন প্রশিক্ষনের বিষয়গুলোকে সহজ করার গতিময়তা! সেই যে তরুণ কাল! হ্যা, বাটিক, সেলাই মেডাম।ব্লক, রঙ,তুলি, পানি, মোম, রজন, গাম...জীবন অন্বেষণ।শাড়ির পর শাড়ি, থ্রি পিচের পর থ্রিপিচ ব্লক কর, বাটিক কর ফেব্রিক্সে ব্রাশ ঘষাও।
‘প্রতি শাড়িতে ব্লক করলে বিশ টাকা পাবে আর বাটিক করলে দেড়শত টাকা। করবে কি?’ কেন নয়। সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরুবার দলে। আরও চাই তেল, সবজি; মাংস নাই হলো মাছ, ডিম তো খেতে হয়। সাথে থাকে মুখ হা করা বাসা ভাড়া। বাসা নয় গো ছোট ঘর।পাখির বাসার মতো। ফ্লাটের শেষ সীমায় ছোট ঘরটিতে যেতে একে একে দুটো বেড রুম পার হতে হয়।কেউ শুয়ে থাকে কেউ বসে...গম্ভীর ভারকরা মুখ। কত গান হয়েছিল একসাথে, কত গল্প, হাসি, ঠাট্রা আবেদন নিবেদন। জীবন যখন পড়তির দিকে আপনজনও সে পথ ধরে হাঁটে আগে আগে।
ঘরটির ছোট জানালার সামনে বিশাল আম গাছ। ‘ঝুপ’ করে’ আম পড়ে জানালার সামনে ছোট বেলার কথা চ্যাৎ করে কাঁপিয়ে দেয়। জানালা খোলা রাখলেও কেউ দেখে না শুধু দেখে অভাব আর চেটেপুটে খায় ভালোবাসার গুঞ্জরণ; পরস্পরের আলিঙ্গন থেকে খুলে নেয় আবেগের মোহময় কাল।আর মৌ মক্ষিকা হ’য়ে হুল ফুটায়।
নির্ঝরা ব্লক করে, বাটিক করে...‘রঙের উপরে রঙ মানে ডাবল ব্লক হলে শুধু আঁচল পাড়ে পঞ্চাশ টাকা, মেডাম পাবে দেড়শ টাকা। তা পাক। তার ব্লক, রঙ ও ঘর। দোকানীরা তাকেই কাজ দিয়েছে। দোকানীরা বিক্রি করবে আটশত থেকে এক হাজার টাকা।রঙের মিশ্রণটা শিখে নিলে নির্ঝরা নিজেই করতে পারত এ কাজ । কিন্তু এসব কাজের আদি ইতি শিখতে লাগবে এক হাজার টাকা। বাটিকের আরো বেশি মোম, রজন, গাম, লোহার ব্লক আর শেখার চার্জ পুরো দুই হাজার টাকা।‘কাজ থেকে টাকা কেটে কেটে দিন না মেডাম ব্লক শিখিয়ে।’ মেডাম মাথা নাড়ে। এক হাজার টাকা হাতে দিতে হবে এক সাথে নগদ।না হলে নাকি শেখা হবে না ঠিক মতো। কাজ শেখা সোজা কথা নয়। কাজ তো এক জীবনের সম্বল আরো জীবনও যেতে পারে।নির্ঝরা কাজ করে আর শোনে ফাঁকে ফাঁকে মেডামের ক্লাশ।‘এক চামচ ফিক্চারে চার চামচ নিউটেক্স, দুই চামচ বাইন্ডার, রঙ দাও চোখের আন্দাজ যেমন রঙ তুমি চাও।বাস রঙ রেডি হয়ে গেল।’ রাক্ষুসের প্রাণ ভ্রমর আবিস্কারের মতোই ডালিমের লালের খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে নির্ঝরা। আবার আওড়ায় মিশ্রণ প্রনালীটি। আহা উদ্ধার হয়েছে স্বপ্নের মণিকাঞ্চন।
দ্রুত কাজ শেষ করে চট থেকে রঙ তুলে, ব্রাশ ধুয়ে, সবকিছু ঠিক জায়গায় রেখে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে দুপুরের কড়া রোদ,য্যাম আর যানজটের ভেতর দিয়ে দৌড়ায় নির্ঝরা।আলু, ডিম ও তেল কেনে। আর কেনে সাত টাকা দামে একটা চকবার। মাঝে মাঝে চকবার খেয়ে তার মন থেকে অভাবের অভাবীয় বোধটা সরিয়ে ঘরে ঢোকে। স্বামী ঘুমায়। চশমার আড়ালে চকচক করে শ্যামলকান্তি মুখশ্রী। বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত হ’য়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বইটা বুকের উপর। বই পড়ুক...একদিন লেখক হবে যে...আহা ঘুমন্ত মায়ামুখ। ইচ্ছে করছে একটি চুমু এঁকে দেয়। না নির্ঝরা সামলে নেয় ঘুম ভেঙে যাবে। ঘুমুক; আরামের ঘুম ঘুমিয়ে উঠে লিখুক কিছু। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যাই হোক হাতের কাজ শেষ করে তার কোলে মাথা রেখে শোনে নির্ঝরা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লিখিয়েদের সাথে দেখতে পায় সে প্রিয়মুখ।তাকে লেখক বানাতে আজীবন কাজ করে যাবে একা, সহে যাবে সব বিভেদ আর গ্লানি।
সিঁদেল চোরের মতো খাটের নিচ থেকে এক হাতে মসলাপাতির ছোট ডালা ও অন্য হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে। আবার ঘরে গিয়ে তরকারীর পাতিল ও ছোট একটা বাটিও আনে। এ ফ্লাটের সাবলেট সে নিজের সবকিছু ঘরেই রাখতে হয়।
নির্ঝরার চশমাআঁটা চোখে এখনো খেলে বেড়ায় লাল-সবুজ মাছ। শাড়ির জমিনে কেমন এঁকেবেঁকে যায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সে তরুণী কি সুন্দর মিলে মিশে থাকে ডাবল ব্লকে। ‘নিজের কাজ দেখে নিজেই মুগ্ধ’ মেডামের ঠাট্রা গায়ে মেখে চোখ সরায়। নতুন শাড়ি, ওড়না, থ্রিপিচ। ওড়নার কাজ শেষ হতেই চায় না। মেডাম একটি খাবারের বাটি এগিয়ে দেয়। গতকালের রান্নার ক্লাশে তৈরী করা পেটিস ও পেনকেক।হাত ধরে আসে, শ্বাস পড়ে জোরে।
-দুইশত টাকা হলেই রঙ কিনে প্রাথমিক কাজ করা যাবে? খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকা নির্ঝরার প্রশ্নের উত্তরে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায় মেডাম।চশমার লেন্স ঘোলাট হয়ে আসে মেডামের। তবে কি গোপনে কাজের অর্ডার নিতে শুরু করেছে নির্ঝরা। নিজেই হাতিয়ে নেবে মনোয়ারা বেগমের ব্যবসা।না নির্ঝরাকে আর আসতে দেওয়া হবে না।
গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকে। ভারী বৃষ্টি হবে। মেঘ ডাকলে চঞ্চলা হয়ে যায়। ঝড় হবে শো শো বাতাস। মট মট করে কি যেন পড়ে। ডাল ভাঙলো বুঝি! কারো বা ছাদের উপরের টিন। পা নিসপিস করে দৌড় দিতে। সেই আম বাগান, তাল তলা। ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে কত সকাল বিকাল কাজে ভরে থাকত। তার এ তিন তলা ঘরের চালে টিন লাগানো। ঝমঝম বৃষ্টি শুনবে আর ভেসে যাবে শিশু কালে, কিশোরী কালে, যৌবনের আংশিক বৃষ্টি গেয়েছিল। ডুবতে ডুবতে ভাসতে ভাসতে আঁকড়ে ধরেছিল এক বুড়ো বৃক্ষের শিকড়। সে বৃক্ষটিকে একটি ক্যানভাসে ধরে রেখেছে সে। রঙ ও তুলিতে আটকে থাকুক জীবন গতির মূহুর্তকয়েক।এ ঘরটিতে হাজার ক্যানভাসে জমে আছে জীবনের লক্ষ টুকরো কথা। কখনো ব্যর্থ হয়েছে। অর্ধ বা পোনে অংশ সফলতা ব্যর্থতার রঙিন কালো পোচে মাখামাখি হ’য়ে পড়ে আছে। একরামিন ও তেল রঙে আঁকা এসব জীবনছবি নির্ঝরার একার। এ-ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই কারো। কিংবা কাউকে দেখানোর তাগিদও নেই। কোথাও ঢলে পড়ে আছে বৃক্ষ, কোথাও বাকল, কোথাও ঝরছে জীবন-অশ্রু কোথাও স্নিগ্ধতা।অশ্রু, রক্ত, সুখ-কান্না, প্রতারণার ছোবলমাখা অবিমিশ্র খন্ডায়ন নির্ঝরা তেল রঙে আঁকছে। রঙের গন্ধে যেন শ্বাস। তেলরঙ মানে বেঁচে থাকা, অতীত থেকে স্ফুরণ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। স্মৃতির আমেজে ঠাঁসা তার ছবিগুলো কাউকে দেখায় না সেদিন থেকে যেদিন একজন তার মা ও শিশুর একটা ছবি কিনতে চেয়েছিল।তার মনে হয়েছিল তার প্রাণ কেউ কেটে নিতে চাইছে... আর প্রাণ কেটে টাকা আয়ের আর সময় নেই তার।
তার রুমটি বাদে দোতলার ছাদ তিন তলার উঠোন। সে উঠোনের এক পাশে উপরে ছাদওয়ালা বেশ কিছু জায়গা। সেখানে বসার বেঞ্চিতে বসে বৃষ্টির মাতলামী দেখে।বৃষ্টির উন্মাতালতা তাকে রঙতুলিতে মগ্ন থাকতে দেয় না। ‘নিঝু নিঝু’ প্রিয় কোন ডাক বুকে ছেনীর মতো বিঁধে।
...বিজন বিবশ রাতে কথা বলে কে যে
বুকের পাশটি ছুঁয়ে কার আদৃত চোখের পাতা
কোন কালের গল্পের ভিড় পরান ডাঙার মোড়ে
আজ কার কথা মনে পড়ে!
বৃষ্টিতে ভেজার বয়স এটা নয় নির্ঝরা বোঝে।‘তুমি এত কেন বোঝ মা? বেশি বুঝে বুঝে কষ্ট বাড়াও। ’ ছেলেমেয়েরা প্রায়ই আদরের ধমক দেয়। শিশুবেলার তার ছেলেটার পাকা কথা ‘আমাকে মাছ কাটা শিখিয়ে দাও মা আমি তোমার মেয়েও হবো ছেলেও হবো।’ না ছেলেটা শুধু ছেলেই হ’য়ে রইলো আর মেয়েটাও ছেলে হতে চায়।এ পৃথিবীটাই ছেলে হবার প্রতিযোগীতায় মেতে আছে। ছেলে মানে ক্ষমতা, ছেলে মানে বড়, ছেলে মানে আগেভাগে দৌড়ানোর কৌশল...
নিচে নিজস্ব ঘরে ঘুমুচ্ছে তার বড় হয়ে যাওয়া শিশুরা। সবাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখে গেছে। কাউকে নিয়ে আর রাত জাগার ক্লান্তি নেই। গলার ঘাম মুছে দেবার কসরত কিংবা ফ্যান কমানো বাড়ানোর জন্য উঠানামা নয়তো মশা...
এখন শুধু নিজেকে পাহারা দেয়া আর বাঁচিয়ে রাখার কসরত।সবার দরোজা ভেতর থেকে বন্ধ।শুধু নির্ঝরা খোলা রাখে দরোজা; যদি কেউ খবর নিতে এসে বন্ধ দরোজা দেখে ফেরত চলে যায়!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী ২৯/০৯/২০১৯দুর্দান্ত কাব্যিক রচনা ||
-
অবিরুদ্ধ মাহমুদ ২৯/০৯/২০১৯ভাল লাগল....
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৯/০৯/২০১৯অসাম
-
শফি আহমেদ ২৫/০৯/২০১৯বেশ ভাল।
-
খাতুনে জান্নাত ২২/০৯/২০১৯অনেক ধন্যবাদ তারুণ্য। লেখাটি প্রকাশ করার জন্য