www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সন্ধ্যা

সন্ধ্যা
---
সন্ধ্যা নামে একটি নদী আছে, জানেন তো! আমার এক দিদি ছিলেন সন্ধ্যা নামে। আমাদের গ্রামের স্কুলের সমাবেশে উনি জাতীয় সঙ্গীত গাইতেন। তখন এই অংশটুকুও গাওয়া হত,
"তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥"

---আর গ্রামের বাড়ির যে গরুর রাখাল সে ওই সন্ধ্যাবেলাটাতেই গরুর পাল নিয়ে বাড়ি আসত, গরুগুলোকে বাড়ির ভেতরে আনার পর আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারত না, একেকটা একেক দিকে দৌড়াত, মাগরিবের আজান পড়ত, বাড়ির পুকুর ঘাটে হাত পা ধুয়ে ঘরে যাবার আয়োজন, ঘরে ঘরে হারিকেন বা ল্যাম বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হত। ঘরের বাইরে বের হওয়া সেই সময়টায় নিষেধ, চুল খোলা রাখা নিষেধ। মুরব্বীরা এইসময়ে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেন, বলেন "দুসমা সময়ে বাইরে যেতে হয় না, এসময় বাইরে গেলে ভূতে ধরে"।

যাইহোক, এই যে দুসমা সময় এ নিয়ে আমার প্রচুর কৌতুহল ছিল, কী এই সময়টা, যাকে দু'সমা সময় বলে! আসলে দু'সমা হল দুয়ের সংযোগ। এক যাচ্ছে আরেক আসছে, এই যাওয়া আসার পথে দুয়ের দেখা হল যেখানে, মিলন হল বা সন্ধি হল যেখানে, সেই সময়টাই হল সন্ধিকাল বা সন্ধ্যা।

সন্ধ্যা হল তিনপ্রকার, প্রাতঃসন্ধ্যা, সায়ংসন্ধ্যা, ঠিক মধ্যাহ্নকাল। আমরা বলি সান্ধ্যকালীন আসর। এই সান্ধ্য হল সন্ধ্যাকালীন বা সন্ধ্যা সমন্ধীয়।
সন্ধি হল সংযোগ, দেহের অস্থির জোড় বা সংযোগস্থানকেও সন্ধি বলে, সন্ধি হয় শত্রুতে শত্রুতে, যুদ্ধকালে এমনকি ব্যাকরণেও সন্ধি আছে। সন্ধিচৌর হল সিঁদেল চোর। দিবারাত্রির মিলনকাল হল সন্ধিবেলা। সন্ধ্যামনি ফুল সন্ধ্যাকালে ফোটে।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের ভাষা হল সন্ধ্যাভাষা। কারণ সেটা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য। সন্ধ্যার ভাষা আলো-আঁধারির ভাষা, কতক আলো কতক অন্ধকার; কিছু বোঝা যায়, কিছু বোঝা যায় না। এ যেন,
"ভুবনজোড়া ফাঁদ পেতেছ
কেমনে দিই ফাঁকি
আধেক ধরা পড়েছি গো
আধেক আছে বাকি"।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই ভাষাকেই সন্ধ্যাভাষা বলেছেন।
সান্ধ্যক্ষরও আছে, পাশাপাশি দু'টি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয় সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর।

সন্ধ্যা: সম্ + ধ্যৈ + অ (অঙ্) - ভাববাচ্যে + স্ত্রী আ (টাপ্), সন্ধিস্থানে জন্মায় যে---(বঙ্গীয় শব্দকোষ)। বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ যাকে বলেছেন ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুযায়ী " সমান ধ্যান থাকে যাহাতে; অথবা, সমান ধ্যান করে যে"।
যুগসন্ধ্যা: যুগ পরিমাণের দশমাংশ কাল, অর্থাৎ "সত্যযুগ চারি সহস্র দৈববর্ষ, তাহার
সন্ধ্যা চারি শত দৈববৎসর; ত্রেতা তিন সহস্র দৈববর্ষ, তাহার সন্ধ্যা তিন শত দৈববৎসর; দ্বাপর দুই সহস্র দৈববর্ষ, তাহার সন্ধ্যা দুই শত দৈববর্ষ; কলি এক সহস্র দৈববর্ষ, তাহার সন্ধ্যা এক শত দৈববৎসর---বঙ্গীয় শব্দকোষ"। ( দৈববর্ষ = পৌরাণিক দেবতাদের ১ দিন সমান মানুষ্যের বা সৌরবছরের হিসেবে ৩৬০ দিন)
রাত্রি ও দিনের বা অন্ধকার ও আলোর সমান ধ্যান করে যে, তাকে বলে সন্ধ্যা। দুই রকম পরিস্থিতিতে উভয়ের প্রতি সমান ধ্যানকারী স্থান-কাল-পাত্রকে বলে সন্ধ্যা।

হিন্দীতে সন্ধ্যা বোঝাতে সাম কথাটি ব্যবহার হয়, যা সমান ধ্যানকারী বোঝায়। ইংরেজীতে evening এর even এর অর্থ সমান, কেন সমান সেটি আমরা কখনও ভেবে দেখিনি। আসলে এমনটি কি নয় যে সকল ভাষার আদি উত্তরাধিকার আসলে এক!

কৃতজ্ঞতা: বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, বঙ্গীয় শব্দকোষ, বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪০১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/১১/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast