মেদ ও মেধ
মেদ, মেধ
---
সেই শব্দটি, যাকে আমরা মেদ হিসেবে জানি, যা মিদ্ ক্রিয়ামূল থেকে জাত। ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় মিদ্ হল সীমায়িতের গতিশীল বা সক্রিয় দান, এবং মেদ হল দিশাগ্রস্ত সীমায়িতের দান যাহাতে। মেদ: √মিদ্ + অ (অচ্) - কর্ত্তৃবাচ্যে।
মেধা শব্দটিকে জানতে মেধ শব্দটিকে জানতে হবে। √মেধ্ ক্রিয়ামূল থেকে জাত শব্দ, ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় মেধা হচ্ছে দিশাগ্রস্ত সীমায়িতের ধারণ যাহাতে।
মেধ: √মেধ্ + অ (ঘঞ্) - অধিকরণবাচ্যে, বঙ্গীয় শব্দকোষ। মেধ এর আধার মেধা।
মানুষকে দৈহিক শ্রম করতে হয়, মানসিক শ্রমও করতে হয়। দৈহিক শ্রমের ফলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম বা নির্য্যাস বের হয় তা হল দেহরস, মানসিক শ্রমের ফলে যে রস নির্গত হয় তা হল মনোরস। দৈহিক শ্রম যদি না করা হয় তবে শরীরের রস বের না হয়ে মেদরূপে সঞ্চিত হয় এবং রোগের সৃষ্টি করে, মেদ হল মানুষের দেহরস। সমাজদেহেও মেদ জমে, যদি সম্পদ (জ্ঞান, ধন) সুষ্ঠুভাবে বিতরণ না হয়ে কেন্দ্রীভূত হয়। কেন্দ্রগুলো তখন ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে উঠে। তখন সমাজের শরীরে মেদ জমলে সামাজিক রোগগুলো দেখা দেয়।
মানুষের মানসিক রস জমে মনের মধ্যে স্থুলতার সৃষ্টি করে। তখন সে নতুন কিছু চিন্তা করতে পারে না।
মেদ জমে মেদামারা রোগ হয়, আর মেধ জমে মাথামোটা চিন্তাভাবনা ছাড়া আর কিছু হয় না।
মেধ এর অর্থ যজ্ঞ, যজ্ঞীয় পশু। মেধ যা কিনা দিশাগ্রস্ত সীমায়িত সত্তা ধারিত যাহাতে, মে হল দিশাগ্রস্ত সীমায়িত সত্তা যা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জ্ঞানরসের কণা; এগুলো ধারিত থাকে যাহাতে তাই মেধ। জ্ঞানরসের ক্ষুদ্রকণাগুলো পুঞ্জীভূত থাকে দক্ষ মানুষের মাথায়, মনোরসে। দক্ষ মনোরসের আধারকে মেধা বলে। ইতিহাসে ছিল তিন প্রকারের দক্ষ প্রজাতি, যথাক্রমে অশ্ব, নৃ, পুরুষ। একালের ভাষায় বিশেষজ্ঞ, দক্ষকর্ম্মী, ও পরিচালক। মেধ বা যজ্ঞের মাধ্যমে মনোরস ঝরিয়ে দেওয়া হয়।
অশ্বমেধ এর কথা আমরা কমবেশী জানি।
যে মেধ-এ অশ্বকে মেধ করা হয়, তাকে বলে অশ্বমেধ। এই অশ্ব যদি সামাজিক অশ্ব হন তবে তিনি বিশেষজ্ঞ এবং অশ্বমেধ দ্বারা তাঁর মেধ ঝরানো হয়।
নৃমেধ হল যে মেধ দ্বারা নর-কে (নৃ) মেধ করা হয়। এই নৃ হলেন দক্ষ কর্ম্মী মানুষেরা, নৃমেধ দ্বারা দক্ষদের মেধ ঝরানো হয়। পুরুষমেধ দ্বারা পুরুষ বা সামাজিক পরিচালকদের মেধ ঝরানো হয়। আমাদের প্রাচীন পূর্ব্বসূরিগণ মেধ ঝরানোর পন্থা হিসেবে অশ্বমেধ, নৃমেধ, পুরুষমেধ প্রভৃতি কর্ম্মযজ্ঞের ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন প্রতীকী আচরণের মাধ্যমে প্রকৃত আচরণকে উপস্থাপন করার রীতি ছিল, তাই বাস্তবে এইসব যজ্ঞাদি চালানোর আগে প্রতিকী যজ্ঞাদির আয়োজন করা হত।
এই যজ্ঞাদির প্রকৃত ইতিহাস ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় পুরাণাদিতে বর্ণিত আছে, যার প্রকৃত মর্ম্ম উদ্ধারে ব্যর্থ ইংরেজ পণ্ডিতেরা ভুল ব্যাখ্যাদি দিয়ে মেধ এর প্রকৃত ইতিহাসকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছেন।
সবশেষে ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুযায়ী বলি, মেদ দিশাগ্রস্ত সীমায়িতের দান থেকে, এবং মেধ দিশাগ্রস্ত সীময়িতের ধারণ থেকে গড়ে উঠে। মেদ এবং মেধ জমলে মানবশরীর ও সমাজশরীর উভয়ের জন্য অহিতকর।
---
সেই শব্দটি, যাকে আমরা মেদ হিসেবে জানি, যা মিদ্ ক্রিয়ামূল থেকে জাত। ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় মিদ্ হল সীমায়িতের গতিশীল বা সক্রিয় দান, এবং মেদ হল দিশাগ্রস্ত সীমায়িতের দান যাহাতে। মেদ: √মিদ্ + অ (অচ্) - কর্ত্তৃবাচ্যে।
মেধা শব্দটিকে জানতে মেধ শব্দটিকে জানতে হবে। √মেধ্ ক্রিয়ামূল থেকে জাত শব্দ, ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় মেধা হচ্ছে দিশাগ্রস্ত সীমায়িতের ধারণ যাহাতে।
মেধ: √মেধ্ + অ (ঘঞ্) - অধিকরণবাচ্যে, বঙ্গীয় শব্দকোষ। মেধ এর আধার মেধা।
মানুষকে দৈহিক শ্রম করতে হয়, মানসিক শ্রমও করতে হয়। দৈহিক শ্রমের ফলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম বা নির্য্যাস বের হয় তা হল দেহরস, মানসিক শ্রমের ফলে যে রস নির্গত হয় তা হল মনোরস। দৈহিক শ্রম যদি না করা হয় তবে শরীরের রস বের না হয়ে মেদরূপে সঞ্চিত হয় এবং রোগের সৃষ্টি করে, মেদ হল মানুষের দেহরস। সমাজদেহেও মেদ জমে, যদি সম্পদ (জ্ঞান, ধন) সুষ্ঠুভাবে বিতরণ না হয়ে কেন্দ্রীভূত হয়। কেন্দ্রগুলো তখন ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে উঠে। তখন সমাজের শরীরে মেদ জমলে সামাজিক রোগগুলো দেখা দেয়।
মানুষের মানসিক রস জমে মনের মধ্যে স্থুলতার সৃষ্টি করে। তখন সে নতুন কিছু চিন্তা করতে পারে না।
মেদ জমে মেদামারা রোগ হয়, আর মেধ জমে মাথামোটা চিন্তাভাবনা ছাড়া আর কিছু হয় না।
মেধ এর অর্থ যজ্ঞ, যজ্ঞীয় পশু। মেধ যা কিনা দিশাগ্রস্ত সীমায়িত সত্তা ধারিত যাহাতে, মে হল দিশাগ্রস্ত সীমায়িত সত্তা যা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জ্ঞানরসের কণা; এগুলো ধারিত থাকে যাহাতে তাই মেধ। জ্ঞানরসের ক্ষুদ্রকণাগুলো পুঞ্জীভূত থাকে দক্ষ মানুষের মাথায়, মনোরসে। দক্ষ মনোরসের আধারকে মেধা বলে। ইতিহাসে ছিল তিন প্রকারের দক্ষ প্রজাতি, যথাক্রমে অশ্ব, নৃ, পুরুষ। একালের ভাষায় বিশেষজ্ঞ, দক্ষকর্ম্মী, ও পরিচালক। মেধ বা যজ্ঞের মাধ্যমে মনোরস ঝরিয়ে দেওয়া হয়।
অশ্বমেধ এর কথা আমরা কমবেশী জানি।
যে মেধ-এ অশ্বকে মেধ করা হয়, তাকে বলে অশ্বমেধ। এই অশ্ব যদি সামাজিক অশ্ব হন তবে তিনি বিশেষজ্ঞ এবং অশ্বমেধ দ্বারা তাঁর মেধ ঝরানো হয়।
নৃমেধ হল যে মেধ দ্বারা নর-কে (নৃ) মেধ করা হয়। এই নৃ হলেন দক্ষ কর্ম্মী মানুষেরা, নৃমেধ দ্বারা দক্ষদের মেধ ঝরানো হয়। পুরুষমেধ দ্বারা পুরুষ বা সামাজিক পরিচালকদের মেধ ঝরানো হয়। আমাদের প্রাচীন পূর্ব্বসূরিগণ মেধ ঝরানোর পন্থা হিসেবে অশ্বমেধ, নৃমেধ, পুরুষমেধ প্রভৃতি কর্ম্মযজ্ঞের ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন প্রতীকী আচরণের মাধ্যমে প্রকৃত আচরণকে উপস্থাপন করার রীতি ছিল, তাই বাস্তবে এইসব যজ্ঞাদি চালানোর আগে প্রতিকী যজ্ঞাদির আয়োজন করা হত।
এই যজ্ঞাদির প্রকৃত ইতিহাস ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় পুরাণাদিতে বর্ণিত আছে, যার প্রকৃত মর্ম্ম উদ্ধারে ব্যর্থ ইংরেজ পণ্ডিতেরা ভুল ব্যাখ্যাদি দিয়ে মেধ এর প্রকৃত ইতিহাসকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছেন।
সবশেষে ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুযায়ী বলি, মেদ দিশাগ্রস্ত সীমায়িতের দান থেকে, এবং মেধ দিশাগ্রস্ত সীময়িতের ধারণ থেকে গড়ে উঠে। মেদ এবং মেধ জমলে মানবশরীর ও সমাজশরীর উভয়ের জন্য অহিতকর।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহাম্মদ মাইনুল ১৬/০৫/২০২১জ্ঞানগর্ভ কথা।
-
হাবিবা বেগম ০২/০৫/২০২১চমৎকার ভাবন্স্য উপকারি লেখা
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৯/০৪/২০২১চিন্তামূলক রচনা।
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৯/০৪/২০২১খুব সুন্দর রচনা
যা ছিলো অজানা!
মেদ করি শেষ
জীবন পাবে বেশ। -
মাহতাব বাঙ্গালী ০৯/০৪/২০২১ব্যাকরণ ভিত্তিক সুন্দর শিক্ষামূলক লিখা
-
এম এম হোসেন ০৯/০৪/২০২১চমৎকার
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৯/০৪/২০২১সুন্দর ব্যাখ্যায় ভাল লেখা