কবি ও কবিরাজ
কবি, কবিরাজ
---
কবি বলতে poet বুঝি, যিনি কবিতা, গান রচনা করেন। বাংলা ভাষায় শব্দটির অতীত পরিচিতি অনেক বিশাল যা মোটেও poet এর সমার্থক নয়। বঙ্গীয় শব্দকোষ কবি শব্দের অর্থ দিয়েছেন সর্ব্বজ্ঞ, ক্রান্তদর্শী, বিদ্বান, নিপুণ, কুশল, বাগ্মী, চিন্তাশীল, ভাবুক, বর্ণয়িতা, রচয়িতা, গাতা, ব্রহ্মা, শুক্রাচার্য্য, মেধাবী, বিবেকী, স্মৃতিকার, পণ্ডিত, প্রাজ্ঞ, ইত্যাদি।
কবি শব্দটি বঙ্গভাষিগণ দু-ভাবে তৈরী করেছিলেন। ১। কবি = √কব্ (বর্ণন) + ই - কর্ত্তৃবাচ্যে (বক বক করে যে)। ২। কবি = √কু + ই + কর্ত্তৃবাচ্যে {কু (শব্দ) করে যে}।
একদল হচ্ছেন বক বক করে বর্ণনাকারী বা কব-ক্রিয়াকারী, এঁরা আবিষ্কৃত ও প্রচলিতকে ধারণ করে পুনরাবৃত্তির চর্চ্চা করেন, অতীতের জ্ঞানকে ধারণ করেন, পালন ও পোষণ করেন, সমস্ত তথ্য ও তত্ত্ব সংকলন ও পুনঃপ্রকাশ করেন। প্রচলিত জ্ঞানপ্রবাহকে সচল রাখার দায়িত্ব তাঁদের। এঁরা রাষ্ট্রশক্তির আশ্রয়ে থেকে জ্ঞানের প্রবাহকে সচল রাখেন। এঁরা দক্ষ এবং প্রকৃতি গুণসম্পন্ন, এবং কবিতা লেখাই ইনাদের একমাত্র কাজ নয়।
আরেকদল হচ্ছেন কু-রবকারী, এঁরা পুরুষ শক্তিসম্পন্ন; কারণ এইশ্রেণীর কবি প্রচলিতের সীমা লঙ্ঘন করে নতুনের ডাক দেন, মানবসভ্যতায় নতুন কিছু যুক্ত করেন। কাজেই ইনারাও কেবল কবিতা বা পদ্য রচনা করেন না, বরং আরও বহুকিছু করেন।
এই দুই ধরণের কবিই প্রয়োজন, একদল পুরনো জ্ঞানের প্রবাহকে সচল রাখবেন, আরেকদল এতে নতুন কিছু যুক্ত করবেন।
বক বক করা বা কুরব করা কেবল কবিতায় নয়; গল্প, উপন্যাস, গান, প্রবন্ধ ফিচার সর্বত্রই করা যায়। অপরদিকে poet কেবল পদকর্ত্তা বা কবিতার রচয়িতাকে বোঝায়। বাংলা কবি শব্দটিকে poet এর সমার্থক ধরে নিলে কবি শব্দের অতীত গৌরবময় পরিচিতি ক্ষুন্ন হয় সম্পূর্ণভাবেই।
কবিরাজ:
বিদ্যা হতে জাত শব্দ বৈদ্য। যার অর্থ ভিষক, চিকিৎসক, কবিরাজ। (রোগহর, বিষহর, শল্যহর, কৃত্যাহর ভেদে বৈদ্য চতুর্ব্বিধ), বঙ্গীয় শব্দকোষ। আয়ুর্ব্বেদ অনুসারে রোগনিরাময় করেন যাঁরা, যাঁরা সনাতনী ওষুধ চর্চ্চা করেন সাধারণ ভাষায় তাদের কবিরাজ বলা হয়।কবিরাজরা সাধারণত বংশ পরম্পরায় সনাতনী ওষুধের চর্চ্চা করে থাকেন।
*কবিরাজরা সনাতনী ওষুধ ব্যবস্থার ধারক, বাহক এবং একে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকিয়ে রাখেন। সাধারণত কবিরাজরা সনাতনী ওষুধ ব্যবস্থায় গাছ-গাছড়া ব্যবহার করে লোকচিকিৎসা দিয়ে থাকে। এছাড়া তারা প্রাণীজ ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দ্রব্য দিয়ে সনাতনী ওষুধ ব্যবস্থায় চিকিৎসা করে থাকেন।
বৈদিক যুগে আয়ুর্ব্বেদে পারদর্শী হয়ে চিকিৎসক হতে পারতেন একমাত্র ব্রাহ্মণরাই, তখন যে-ব্রাহ্মণেরা সর্ব্ববেদ পারদর্শী ছিলেন, তাঁদের বৈদ্য উপাধি দেওয়া হত। বেদ শব্দটি এসেছে বিদ ধাতু থেকে, যার অর্থ জানা। বেদ থেকে বৈদ্য।মহর্ষি শঙ্খ বলেছেন, ‘‘বেদোজ্জাতো হি বৈদ্যঃস্যাৎ’’, অর্থাৎ বেদ থেকে বৈদ্যের উৎপত্তি। আয়ুর্ব্বেদ বেদেরই অংশ, আয়ুর্ব্বেদকে বলা হয়েছে ঋগ্বেদের উপবেদ— ‘‘ঋগ্বেদস্য আয়ুর্বেদ উপবেদঃ’’। বৈদিক যুগে আয়ুর্ব্বেদে পারদর্শী হয়ে চিকিৎসক হতে পারতেন একমাত্র ব্রাহ্মণরাই, তাই বৈদ্যদের বলা হত ত্রিজ।* (উইকিপিডিয়া)।
এই বৈদ্যগণ কবিরাজ নামেও অভিহিত হতেন, কারণ কবিদের মধ্যে অর্থাৎ জ্ঞানের প্রবাহকে যাঁরা ধারণ করে চর্চ্চা ও পুনঃপ্রকাশ করতেন, তাঁদের মধ্যে এঁরাই ছিলেন সেরা।
কৃতজ্ঞতা---
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, বাংলাভাষা: প্রাচ্যের সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ, উইকিপিডিয়া।
---
কবি বলতে poet বুঝি, যিনি কবিতা, গান রচনা করেন। বাংলা ভাষায় শব্দটির অতীত পরিচিতি অনেক বিশাল যা মোটেও poet এর সমার্থক নয়। বঙ্গীয় শব্দকোষ কবি শব্দের অর্থ দিয়েছেন সর্ব্বজ্ঞ, ক্রান্তদর্শী, বিদ্বান, নিপুণ, কুশল, বাগ্মী, চিন্তাশীল, ভাবুক, বর্ণয়িতা, রচয়িতা, গাতা, ব্রহ্মা, শুক্রাচার্য্য, মেধাবী, বিবেকী, স্মৃতিকার, পণ্ডিত, প্রাজ্ঞ, ইত্যাদি।
কবি শব্দটি বঙ্গভাষিগণ দু-ভাবে তৈরী করেছিলেন। ১। কবি = √কব্ (বর্ণন) + ই - কর্ত্তৃবাচ্যে (বক বক করে যে)। ২। কবি = √কু + ই + কর্ত্তৃবাচ্যে {কু (শব্দ) করে যে}।
একদল হচ্ছেন বক বক করে বর্ণনাকারী বা কব-ক্রিয়াকারী, এঁরা আবিষ্কৃত ও প্রচলিতকে ধারণ করে পুনরাবৃত্তির চর্চ্চা করেন, অতীতের জ্ঞানকে ধারণ করেন, পালন ও পোষণ করেন, সমস্ত তথ্য ও তত্ত্ব সংকলন ও পুনঃপ্রকাশ করেন। প্রচলিত জ্ঞানপ্রবাহকে সচল রাখার দায়িত্ব তাঁদের। এঁরা রাষ্ট্রশক্তির আশ্রয়ে থেকে জ্ঞানের প্রবাহকে সচল রাখেন। এঁরা দক্ষ এবং প্রকৃতি গুণসম্পন্ন, এবং কবিতা লেখাই ইনাদের একমাত্র কাজ নয়।
আরেকদল হচ্ছেন কু-রবকারী, এঁরা পুরুষ শক্তিসম্পন্ন; কারণ এইশ্রেণীর কবি প্রচলিতের সীমা লঙ্ঘন করে নতুনের ডাক দেন, মানবসভ্যতায় নতুন কিছু যুক্ত করেন। কাজেই ইনারাও কেবল কবিতা বা পদ্য রচনা করেন না, বরং আরও বহুকিছু করেন।
এই দুই ধরণের কবিই প্রয়োজন, একদল পুরনো জ্ঞানের প্রবাহকে সচল রাখবেন, আরেকদল এতে নতুন কিছু যুক্ত করবেন।
বক বক করা বা কুরব করা কেবল কবিতায় নয়; গল্প, উপন্যাস, গান, প্রবন্ধ ফিচার সর্বত্রই করা যায়। অপরদিকে poet কেবল পদকর্ত্তা বা কবিতার রচয়িতাকে বোঝায়। বাংলা কবি শব্দটিকে poet এর সমার্থক ধরে নিলে কবি শব্দের অতীত গৌরবময় পরিচিতি ক্ষুন্ন হয় সম্পূর্ণভাবেই।
কবিরাজ:
বিদ্যা হতে জাত শব্দ বৈদ্য। যার অর্থ ভিষক, চিকিৎসক, কবিরাজ। (রোগহর, বিষহর, শল্যহর, কৃত্যাহর ভেদে বৈদ্য চতুর্ব্বিধ), বঙ্গীয় শব্দকোষ। আয়ুর্ব্বেদ অনুসারে রোগনিরাময় করেন যাঁরা, যাঁরা সনাতনী ওষুধ চর্চ্চা করেন সাধারণ ভাষায় তাদের কবিরাজ বলা হয়।কবিরাজরা সাধারণত বংশ পরম্পরায় সনাতনী ওষুধের চর্চ্চা করে থাকেন।
*কবিরাজরা সনাতনী ওষুধ ব্যবস্থার ধারক, বাহক এবং একে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকিয়ে রাখেন। সাধারণত কবিরাজরা সনাতনী ওষুধ ব্যবস্থায় গাছ-গাছড়া ব্যবহার করে লোকচিকিৎসা দিয়ে থাকে। এছাড়া তারা প্রাণীজ ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দ্রব্য দিয়ে সনাতনী ওষুধ ব্যবস্থায় চিকিৎসা করে থাকেন।
বৈদিক যুগে আয়ুর্ব্বেদে পারদর্শী হয়ে চিকিৎসক হতে পারতেন একমাত্র ব্রাহ্মণরাই, তখন যে-ব্রাহ্মণেরা সর্ব্ববেদ পারদর্শী ছিলেন, তাঁদের বৈদ্য উপাধি দেওয়া হত। বেদ শব্দটি এসেছে বিদ ধাতু থেকে, যার অর্থ জানা। বেদ থেকে বৈদ্য।মহর্ষি শঙ্খ বলেছেন, ‘‘বেদোজ্জাতো হি বৈদ্যঃস্যাৎ’’, অর্থাৎ বেদ থেকে বৈদ্যের উৎপত্তি। আয়ুর্ব্বেদ বেদেরই অংশ, আয়ুর্ব্বেদকে বলা হয়েছে ঋগ্বেদের উপবেদ— ‘‘ঋগ্বেদস্য আয়ুর্বেদ উপবেদঃ’’। বৈদিক যুগে আয়ুর্ব্বেদে পারদর্শী হয়ে চিকিৎসক হতে পারতেন একমাত্র ব্রাহ্মণরাই, তাই বৈদ্যদের বলা হত ত্রিজ।* (উইকিপিডিয়া)।
এই বৈদ্যগণ কবিরাজ নামেও অভিহিত হতেন, কারণ কবিদের মধ্যে অর্থাৎ জ্ঞানের প্রবাহকে যাঁরা ধারণ করে চর্চ্চা ও পুনঃপ্রকাশ করতেন, তাঁদের মধ্যে এঁরাই ছিলেন সেরা।
কৃতজ্ঞতা---
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, বাংলাভাষা: প্রাচ্যের সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ, উইকিপিডিয়া।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১০/০৪/২০২১ভালো লাগলো।
-
শাহজাদা আল হাবীব ০৬/০৪/২০২১ধন্যবাদ।
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৬/০৪/২০২১তার নাম কবি
আঁকেন মানব ছবি,
বিদ্যান অতুলনীয়
জ্ঞান পাহাড়সম। -
ফয়জুল মহী ০৬/০৪/২০২১Good post