চার সমাচার
চার সমাচার
---
এক, দুই, তিন চার / বলি চারের সমাচার। চার হলো ৪ অঙ্কটির কথায় লিখিত রূপ।
০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯ এই দশটি চিহ্নকে অঙ্ক বলে। অঙ্ক দিয়ে হিসেব কষি, হিসেব করি সংখ্যায়, অঙ্কের কাজ সোজা কথায় সংখ্যা তৈরি করা।
সংখ্যা তৈরিতে অঙ্ক লাগে, আবার দশমিক বিন্দু, বর্গ, বর্গমূল ইত্যাদিও সংখ্যা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চার / ৪ একটি অঙ্ক, এটি একটি সংখ্যাও বটে। প্রত্যেক অঙ্কই সংখ্যা কিন্তু সব সংখ্যাই অঙ্ক নয়। যেমন মুক্তো থাকে ঝিনুকে, কিন্তু সব ঝিনুকে মুক্তো থাকেনা।
অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস, কাজেই অঙ্ক, সংখ্যা আপাতত থাক।
শুরুতে ছিলাম চার-এ। চার আসে চর থেকে। চর থেকে জাত চার।
তাহলে চর কী?
চর্ ক্রিয়ামূল থেকে জাত শব্দ চর। চর্ = চায়ীর রক্ষণ-ভক্ষণ। চ-বর্ণের অর্থ অনুসারে চায়ী হল ইচ্ছাকারী, ইচ্ছা।
চর: √চর্ + অ (অচ্) - কর্ত্তৃবাচ্যে, বঙ্গীয় শব্দকোষ।
ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুযায়ী, চর হল চায়ী (ইচ্ছাকারী, ইচ্ছা) রহে যাহাতে; অর্থাৎ চরে যে, কিংবা চরে যেখানে।
চর হলো দূত, বাহক, ধারক, দৌড়বাজ, পলাতক এমনকি দালালও চর।
যেভাবেই চরুক না কেন, যে চরে সেই চর।
যেখানেই চরুক না কেন, যেখানে চরে বেড়াবে তাও চর। যে গমনে চয়নের ইচ্ছা ও গ্রহণের ইচ্ছা রহে, তাকে বলে চরা।
চর হতে জাত চার। চর ক্রিয়ার কাজ যেখানে থাকবে সেখানে চার থাকবে, চার-এর এলাকায় চর চরে বেড়ায়। চার অন থাকে চারণ-এ। যেমন গরু চরে বেড়ায় যে ভূমিতে তাকে বলে গোচারণভূমি। যে কবি চরে চরে ঘুরে ঘুরে গান করেন তাঁকে বলে চারণ কবি। এক্ষেত্রে আমরা চারণ কবি মুকুন্দ দাসের কথা স্মরণ করতে পারি। ব্যাকরণগত ভাবে চারণ শব্দের অর্থ স্তুতি পাঠ।
চার এর ক্রিয়া অনির্দিষ্ট। কিন্তু বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়ে চার ক্রিয়াটি তার অনির্দিষ্টতা হারায়, বিশেষত্ব পেয়ে যায়।
( বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ)
চার এর আশ্রয় চারা-তে, চারা-র ভিতর চার থাকে। চারা হল উপায়, যার চারা নেই সে বেচারা। চারা, বেচারা এগুলো ফারসী শব্দ বলে প্রচলিত, কিন্তু এগুলো চর্ শব্দবংশের সদস্য এবং বাংলাভাষীর নিজস্ব উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত।
চার-এর সাথে উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরী হয়। তেমন একটি শব্দ ব্যতিচার।
ব্যতিচার দিয়ে একটি বাক্য--- সৌর ব্যতিচারের কারণে টিভি সম্প্রচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো।
ব্যতিচার শব্দের সরল অর্থ হস্তক্ষেপ, পথিমধ্যে বাধাদান, প্রতিবন্ধক, সঙ্ঘর্ষ।
পদার্থবিজ্ঞানে ব্যতিচার হলো-
"দুটি তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে সৃষ্ট নতুন তরঙ্গের বিস্তারের পর্যায়ক্রমিক হ্রাস বৃদ্ধির ঘটনা।"
ব্যতিচার যে কোনও ধরনের তরঙ্গের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। আলো, শব্দ, বেতার তরঙ্গ,পানির তরঙ্গ। তরঙ্গ হলো ঢেউ।
উপরিপাতন হলো একাধিক তরঙ্গের একটার উপর আরেকটার আপতন।
আপতন বুঝতে হলে একটি শান্ত পুকুরে ঢিল ছুঁড়তে হবে, আপতন, উপরিপাতন দুটোই সরেজমিনে বোঝা যাবে।
আগেই বলেছি চার শব্দটির আগে বিভিন্ন উপসর্গ বা শব্দ যুক্ত হয়ে বিভিন্ন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে।
চার থেকে-
অপচার, অভিচার, আচার, উপচার, প্রচার, অপপ্রচার, বিচার, সঞ্চার, অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার, অজাচার, পাপাচার, কদাচার, সদাচার, পাচার, দুরাচার, অসদাচার, শুদ্ধাচার, ব্যতিচার, সমাচার।
চার থেকে তৈরি হওয়া বিভিন্ন শব্দ নিয়ে একেকটি রচনা তৈরি করা যায় কারণ প্রতিটি শব্দের আছে তার নিজস্ব গল্প।
হ্যাঁ, পর সমাচার হলো মানুষও ব্যতিচারে আক্রান্ত হতে পারে, বাধাগ্রস্ত হতে পারে জীবনের বিভিন্নমুখী তরঙ্গে। তখন মানুষ দিশা হারাতে পারে, হারায়ও বটে।
কৃতজ্ঞতা: বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ
১৯/০৩/২১
---
এক, দুই, তিন চার / বলি চারের সমাচার। চার হলো ৪ অঙ্কটির কথায় লিখিত রূপ।
০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯ এই দশটি চিহ্নকে অঙ্ক বলে। অঙ্ক দিয়ে হিসেব কষি, হিসেব করি সংখ্যায়, অঙ্কের কাজ সোজা কথায় সংখ্যা তৈরি করা।
সংখ্যা তৈরিতে অঙ্ক লাগে, আবার দশমিক বিন্দু, বর্গ, বর্গমূল ইত্যাদিও সংখ্যা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চার / ৪ একটি অঙ্ক, এটি একটি সংখ্যাও বটে। প্রত্যেক অঙ্কই সংখ্যা কিন্তু সব সংখ্যাই অঙ্ক নয়। যেমন মুক্তো থাকে ঝিনুকে, কিন্তু সব ঝিনুকে মুক্তো থাকেনা।
অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস, কাজেই অঙ্ক, সংখ্যা আপাতত থাক।
শুরুতে ছিলাম চার-এ। চার আসে চর থেকে। চর থেকে জাত চার।
তাহলে চর কী?
চর্ ক্রিয়ামূল থেকে জাত শব্দ চর। চর্ = চায়ীর রক্ষণ-ভক্ষণ। চ-বর্ণের অর্থ অনুসারে চায়ী হল ইচ্ছাকারী, ইচ্ছা।
চর: √চর্ + অ (অচ্) - কর্ত্তৃবাচ্যে, বঙ্গীয় শব্দকোষ।
ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুযায়ী, চর হল চায়ী (ইচ্ছাকারী, ইচ্ছা) রহে যাহাতে; অর্থাৎ চরে যে, কিংবা চরে যেখানে।
চর হলো দূত, বাহক, ধারক, দৌড়বাজ, পলাতক এমনকি দালালও চর।
যেভাবেই চরুক না কেন, যে চরে সেই চর।
যেখানেই চরুক না কেন, যেখানে চরে বেড়াবে তাও চর। যে গমনে চয়নের ইচ্ছা ও গ্রহণের ইচ্ছা রহে, তাকে বলে চরা।
চর হতে জাত চার। চর ক্রিয়ার কাজ যেখানে থাকবে সেখানে চার থাকবে, চার-এর এলাকায় চর চরে বেড়ায়। চার অন থাকে চারণ-এ। যেমন গরু চরে বেড়ায় যে ভূমিতে তাকে বলে গোচারণভূমি। যে কবি চরে চরে ঘুরে ঘুরে গান করেন তাঁকে বলে চারণ কবি। এক্ষেত্রে আমরা চারণ কবি মুকুন্দ দাসের কথা স্মরণ করতে পারি। ব্যাকরণগত ভাবে চারণ শব্দের অর্থ স্তুতি পাঠ।
চার এর ক্রিয়া অনির্দিষ্ট। কিন্তু বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়ে চার ক্রিয়াটি তার অনির্দিষ্টতা হারায়, বিশেষত্ব পেয়ে যায়।
( বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ)
চার এর আশ্রয় চারা-তে, চারা-র ভিতর চার থাকে। চারা হল উপায়, যার চারা নেই সে বেচারা। চারা, বেচারা এগুলো ফারসী শব্দ বলে প্রচলিত, কিন্তু এগুলো চর্ শব্দবংশের সদস্য এবং বাংলাভাষীর নিজস্ব উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত।
চার-এর সাথে উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরী হয়। তেমন একটি শব্দ ব্যতিচার।
ব্যতিচার দিয়ে একটি বাক্য--- সৌর ব্যতিচারের কারণে টিভি সম্প্রচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো।
ব্যতিচার শব্দের সরল অর্থ হস্তক্ষেপ, পথিমধ্যে বাধাদান, প্রতিবন্ধক, সঙ্ঘর্ষ।
পদার্থবিজ্ঞানে ব্যতিচার হলো-
"দুটি তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে সৃষ্ট নতুন তরঙ্গের বিস্তারের পর্যায়ক্রমিক হ্রাস বৃদ্ধির ঘটনা।"
ব্যতিচার যে কোনও ধরনের তরঙ্গের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। আলো, শব্দ, বেতার তরঙ্গ,পানির তরঙ্গ। তরঙ্গ হলো ঢেউ।
উপরিপাতন হলো একাধিক তরঙ্গের একটার উপর আরেকটার আপতন।
আপতন বুঝতে হলে একটি শান্ত পুকুরে ঢিল ছুঁড়তে হবে, আপতন, উপরিপাতন দুটোই সরেজমিনে বোঝা যাবে।
আগেই বলেছি চার শব্দটির আগে বিভিন্ন উপসর্গ বা শব্দ যুক্ত হয়ে বিভিন্ন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে।
চার থেকে-
অপচার, অভিচার, আচার, উপচার, প্রচার, অপপ্রচার, বিচার, সঞ্চার, অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার, অজাচার, পাপাচার, কদাচার, সদাচার, পাচার, দুরাচার, অসদাচার, শুদ্ধাচার, ব্যতিচার, সমাচার।
চার থেকে তৈরি হওয়া বিভিন্ন শব্দ নিয়ে একেকটি রচনা তৈরি করা যায় কারণ প্রতিটি শব্দের আছে তার নিজস্ব গল্প।
হ্যাঁ, পর সমাচার হলো মানুষও ব্যতিচারে আক্রান্ত হতে পারে, বাধাগ্রস্ত হতে পারে জীবনের বিভিন্নমুখী তরঙ্গে। তখন মানুষ দিশা হারাতে পারে, হারায়ও বটে।
কৃতজ্ঞতা: বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ
১৯/০৩/২১
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২০/০৩/২০২১excellent work...