ফুলেরা পোশাক পরে না
ফুলেরা পোশাক পরে না
-
কাব্যগ্রন্থের নাম " ফুলেরা পোশাক পরে না " - চমৎকার ও যুক্তিযুক্ত নাম।
ফুলেরা কেন পোশাক পরবে!
শুধু ফুল কেন! মানুষ ছাড়া আর কোনও জীবই পোশাক পরে না।
জীবকুলের মধ্যে মানুষের ত্বক সংবেদনশীল বেশি, মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা অন্য জীবের মত নয়।মানুষকে অভিযোজিত হতে চর্চা করে করে অভ্যস্ত হতে হয়, অভ্যাস পাল্টাতে হয়।অন্য জীবের দেহে সেই অভিযোজন ক্ষমতা থাকে।মরুভূমির গাছের পাতাগুলো এমন থাকে যেন তা পানি ধারণ করে রাখতে পারে।শত্রু থেকে বাঁচতে অনেক গাছে কাঁটা থাকে।পানি জমিয়ে রাখার জন্য উটের থাকে কুঁজ,পাখির উড়ে যাবার সুবিধার জন্য থাকে বায়ুথলী, মেরু অঞ্চলের প্রাণীদের থাকে শীত থেকে বাঁচার জন্য চর্বির আস্তরণ - অর্থাৎ বোবা প্রাণীদের বা জীবদের প্রকৃতি নিজেই দিয়েছে সুরক্ষা, আর মানুষকে দিয়েছে বুদ্ধি।মানুষকে নিজের বুদ্ধি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী অভিযোজিত করে নিতে হয় নিজেকে।
মাতৃগর্ভে শিশুর জন্য একটি সুন্দর সুরক্ষিত সিস্টেম থাকে, পৃথিবীতে আসার সাথে সাথে ওই সিস্টেম ভেঙে যায়, সে নতুন পরিবেশে আসে, তাকে সেই অনুযায়ী খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়।
পৃথিবীতে আসার পরই তার দেহ আবৃত করা হয় কারণ তাকে শীততাপ থেকে রক্ষা করতে হয়।
মানুষ কি লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক পরা শুরু করেছিল? মোটেও তা নয়, কারণ পোশাক পরার শুরুতে সেই কনসেপ্টটাই ছিল না।মানুষ নিজেকে রোদ, বৃষ্টি শীত ধুলাবালি এসব থেকে রক্ষা করতেই পোশাকের বা বাড়তি আবরণের প্রয়োজন বোধ করে।
আপনি যদি শীত গ্রীষ্মে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে অভ্যস্ত হন, তবে কাঁথা গায়ে না থাকলে আপনি অস্বস্তিতে ভুগবেন, যার ফ্যান ছেড়ে ঘুমানোর অভ্যাস সে ফ্যানের শব্দ ছাড়া ঘুমাতেই পারবে না, সবটাই অভ্যাস।
মানুষ প্রয়োজনে পোশাক পরেছে, পোশাক দিয়েছে বাড়তি অনেক সুরক্ষা।
মানুষকে যে কেবল দেহে পোশাক চড়াতে হয় তা কিন্তু নয়, মানুষের মনেও থাকে পোশাক চড়ানো।নিজের অনেক কিছু লুকোনোর চেষ্টা করে মানুষ।
কেন করে সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
পোশাক পরা কতটুকু জরুরী মানুষের জন্য, এমনকি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নাক মুখ ঢেকে রাখা কতটা জরুরী, করোনা সেই শিক্ষা দিল।
* প্রতিটি বিষয়ের স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা কিছু থেকে অপকৃত হওয়ার আশঙ্কা নেই, তা দূরে রাখে না কেউ। ফুল থেকে যদি সুগন্ধ পাই তবে তা দূরে কেন রাখব? যা কিছু দুর্গন্ধযুক্ত, পচনশীল, পচে পরিবেশ নষ্ট করে, তা আমরা দূরে রাখি, মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখি।
আমার যা পছন্দ নয়, তার সাথে পাশাপাশি থাকার যুক্তি নেই।আমার জন্য যা বিন্দুমাত্র ক্ষতিকর তাই আমার অপছন্দ, কাজেই তা আমি দূরে রাখব বা তার থেকে দূরে থাকবো । তা সে মানুষ হোক, কাজই হোক বা যে কোনও বস্তু।
ভালো লাগে না, ত্যাগ কর। দিনরাত গায়ে মাখবে যা ভালো লাগে না ( যা ভালো লাগে না তাই দুর্গন্ধের মত ) আর কুৎসার গীত গাইবে - সেটা শোভনীয় নয়।
আমার যা ভালো লাগে না, তার ধারে কাছে যাব না - এটাই হবে একজন মানসিকভাবে সৎ মানুষের প্রকৃতি। নয়তো সে প্রচণ্ডরকমের ভুয়া, প্রচণ্ডরকম দ্বৈতনীতিতে বিশ্বাসী।
এরকম দ্বৈতনীতির মানুষে আজকাল ছেয়ে গেছে গোটা সমাজ।
* " তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ "।
কারণ মানুষকে জীবনে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়।
কেন?
যদি প্রচণ্ড শীত পড়ে তবে আপনি কতক্ষণ টিকে থাকবেন উষ্ণতা ছাড়া!
টিকতে হলে আপনাকে সুরক্ষা নিতে হবে।
তাই বলে অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেন সেটা নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদও খাপ খাওয়ানোর একটা চেষ্টা , কারণ এতে পরিবর্তন আসে বিরাজিত অব্যবস্থার।
কিন্তু যে মালা নিজে সেধে সাধ করে গলায় পরেছেন, ছেঁড়ার সাধ্যি নেই - অহেতুক সেই মালার বিরুদ্ধাচরণ মানায় না। হয় মালাটিকে ভালো করে পরতে হবে, নয় ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে ত্রিসীমার বাইরে।
০২/০৫/২০
-
কাব্যগ্রন্থের নাম " ফুলেরা পোশাক পরে না " - চমৎকার ও যুক্তিযুক্ত নাম।
ফুলেরা কেন পোশাক পরবে!
শুধু ফুল কেন! মানুষ ছাড়া আর কোনও জীবই পোশাক পরে না।
জীবকুলের মধ্যে মানুষের ত্বক সংবেদনশীল বেশি, মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা অন্য জীবের মত নয়।মানুষকে অভিযোজিত হতে চর্চা করে করে অভ্যস্ত হতে হয়, অভ্যাস পাল্টাতে হয়।অন্য জীবের দেহে সেই অভিযোজন ক্ষমতা থাকে।মরুভূমির গাছের পাতাগুলো এমন থাকে যেন তা পানি ধারণ করে রাখতে পারে।শত্রু থেকে বাঁচতে অনেক গাছে কাঁটা থাকে।পানি জমিয়ে রাখার জন্য উটের থাকে কুঁজ,পাখির উড়ে যাবার সুবিধার জন্য থাকে বায়ুথলী, মেরু অঞ্চলের প্রাণীদের থাকে শীত থেকে বাঁচার জন্য চর্বির আস্তরণ - অর্থাৎ বোবা প্রাণীদের বা জীবদের প্রকৃতি নিজেই দিয়েছে সুরক্ষা, আর মানুষকে দিয়েছে বুদ্ধি।মানুষকে নিজের বুদ্ধি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী অভিযোজিত করে নিতে হয় নিজেকে।
মাতৃগর্ভে শিশুর জন্য একটি সুন্দর সুরক্ষিত সিস্টেম থাকে, পৃথিবীতে আসার সাথে সাথে ওই সিস্টেম ভেঙে যায়, সে নতুন পরিবেশে আসে, তাকে সেই অনুযায়ী খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়।
পৃথিবীতে আসার পরই তার দেহ আবৃত করা হয় কারণ তাকে শীততাপ থেকে রক্ষা করতে হয়।
মানুষ কি লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক পরা শুরু করেছিল? মোটেও তা নয়, কারণ পোশাক পরার শুরুতে সেই কনসেপ্টটাই ছিল না।মানুষ নিজেকে রোদ, বৃষ্টি শীত ধুলাবালি এসব থেকে রক্ষা করতেই পোশাকের বা বাড়তি আবরণের প্রয়োজন বোধ করে।
আপনি যদি শীত গ্রীষ্মে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে অভ্যস্ত হন, তবে কাঁথা গায়ে না থাকলে আপনি অস্বস্তিতে ভুগবেন, যার ফ্যান ছেড়ে ঘুমানোর অভ্যাস সে ফ্যানের শব্দ ছাড়া ঘুমাতেই পারবে না, সবটাই অভ্যাস।
মানুষ প্রয়োজনে পোশাক পরেছে, পোশাক দিয়েছে বাড়তি অনেক সুরক্ষা।
মানুষকে যে কেবল দেহে পোশাক চড়াতে হয় তা কিন্তু নয়, মানুষের মনেও থাকে পোশাক চড়ানো।নিজের অনেক কিছু লুকোনোর চেষ্টা করে মানুষ।
কেন করে সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
পোশাক পরা কতটুকু জরুরী মানুষের জন্য, এমনকি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নাক মুখ ঢেকে রাখা কতটা জরুরী, করোনা সেই শিক্ষা দিল।
* প্রতিটি বিষয়ের স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা কিছু থেকে অপকৃত হওয়ার আশঙ্কা নেই, তা দূরে রাখে না কেউ। ফুল থেকে যদি সুগন্ধ পাই তবে তা দূরে কেন রাখব? যা কিছু দুর্গন্ধযুক্ত, পচনশীল, পচে পরিবেশ নষ্ট করে, তা আমরা দূরে রাখি, মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখি।
আমার যা পছন্দ নয়, তার সাথে পাশাপাশি থাকার যুক্তি নেই।আমার জন্য যা বিন্দুমাত্র ক্ষতিকর তাই আমার অপছন্দ, কাজেই তা আমি দূরে রাখব বা তার থেকে দূরে থাকবো । তা সে মানুষ হোক, কাজই হোক বা যে কোনও বস্তু।
ভালো লাগে না, ত্যাগ কর। দিনরাত গায়ে মাখবে যা ভালো লাগে না ( যা ভালো লাগে না তাই দুর্গন্ধের মত ) আর কুৎসার গীত গাইবে - সেটা শোভনীয় নয়।
আমার যা ভালো লাগে না, তার ধারে কাছে যাব না - এটাই হবে একজন মানসিকভাবে সৎ মানুষের প্রকৃতি। নয়তো সে প্রচণ্ডরকমের ভুয়া, প্রচণ্ডরকম দ্বৈতনীতিতে বিশ্বাসী।
এরকম দ্বৈতনীতির মানুষে আজকাল ছেয়ে গেছে গোটা সমাজ।
* " তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ "।
কারণ মানুষকে জীবনে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়।
কেন?
যদি প্রচণ্ড শীত পড়ে তবে আপনি কতক্ষণ টিকে থাকবেন উষ্ণতা ছাড়া!
টিকতে হলে আপনাকে সুরক্ষা নিতে হবে।
তাই বলে অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেন সেটা নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদও খাপ খাওয়ানোর একটা চেষ্টা , কারণ এতে পরিবর্তন আসে বিরাজিত অব্যবস্থার।
কিন্তু যে মালা নিজে সেধে সাধ করে গলায় পরেছেন, ছেঁড়ার সাধ্যি নেই - অহেতুক সেই মালার বিরুদ্ধাচরণ মানায় না। হয় মালাটিকে ভালো করে পরতে হবে, নয় ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে ত্রিসীমার বাইরে।
০২/০৫/২০
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ০৯/০৪/২০২১সুন্দর।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৫/০৮/২০২০দারুন
-
Md. Rayhan Kazi ২৪/০৭/২০২০অনন্য লেখনশৈলী
-
রেদোয়ান আহমেদ ২১/০৬/২০২০এক কথায় দারুণ...!
-
Md. Rayhan Kazi ২০/০৬/২০২০মুগ্ধতা একরাশ
-
জানবক্স খান ২০/০৬/২০২০পোশাক পরা ফুল কেমন লাগে দেখতে তাই ভাবি
মনে মনে!
ব্যতিক্রম একটি লেখা। -
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ১১/০৬/২০২০ফুল এমনিই সুন্দর।
-
আব্দুল হক ১১/০৬/২০২০রোমান্টিক!
-
গোলাম কিবরিয়া সৌখিন ১১/০৬/২০২০বাহ্, ভালো লাগা রেখে গেলাম।
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ১১/০৬/২০২০সুন্দর চিন্তনের উপস্থাপনাটি বেশ ভালো লাগলো প্রিয় কবি।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১০/০৬/২০২০অনবদ্য চিন্তাভাবনা।
-
ফয়জুল মহী ১০/০৬/২০২০সুন্দর লেখনী ।
-
গাজী মোহাম্মদ শাহাদাত ১০/০৬/২০২০সুন্দর চিন্তাধারা।
ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন। -
সাইয়িদ রফিকুল হক ১০/০৬/২০২০ভালো লাগলো।