তোমার সুরের ধারায়
তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে
---
আমার প্রচণ্ড বিরক্তি লাগছিল এবং সেটা ছিল সজোরে প্রকাশিত।সেই দুপুর থেকে শাড়ি পরে আছি,চেঞ্জ করতে দিচ্ছে না কেউ।কারণ মহামান্য আসবেন,তিনি আসতে চাইছেন না,তাকে ধরে বেধে আনতে দেরি হচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছিলাম না, এই লোক না এলে কি যাবে আসবে,আর আমাকেই এই ভারী শাড়ি কেন পরে থাকতে হবে।
শাড়ি কোনদিন গুছিয়ে পরতে পারি না,আজও পারি না,মানুষ কত সুন্দর করে শাড়ি পরে ঘুরে, আমি সেটা পারলাম না আজও, যদিও শাড়িই আমার অন্যতম পোশাক।
ধীরে ধীরে রাত নামল,ঘুমে আমি কাত,সন্ধ্যা থেকেই ঘুম দিই,কাজেই চোখ খোলা রাখতে সমস্যা হচ্ছে।
তারপরও বসে বসে কয়েক রাউন্ড ঘুমানোর পর দেখি কে যেন হাত দিয়ে ঠেলছে,"ও রুবি আপা, উঠো, তারা আসছেন।"
আমি অসহ্য হয়ে ভারী শাড়িটাতে একটান দিলাম।
ভাবি উৎকণ্ঠিত হয়ে, " না, না এটা কর না দোহাই আপা।"
আমিও জোরে -" কেন? সারদিন ধরে এটা পরে আছি আমার কষ্ট হয় না?"
আম্মার চাপা স্বর" চুপ চুপ আস্তে,খোকনের মা গুছাই দেও, ওদের সামনে যেতে হবে।"
আমার চুল আঁচড়াতে এল খোকনের মা,শাড়ির ভাজ ঠিক করে দিতে এল,হাত দিয়ে ঠেলে দিলাম।
"রাত বাজে দশটা- যাও তোমরা ঘুমাতে পারছি না, কি শুরু করছ?"
কিন্ত না সব প্রতিবাদের মুখে ছাই দিয়ে আমাকে যেতে হল।আমিও - সেই আউলা ঝাউলা শাড়ি পরা, আউলা চুলে বিরাট ঘোমটা টেনে ভাল মানুষের মত গিয়ে সামনে হাজির।
আমার সম্পর্কে শোনা কথা আর আমার শাড়ি পরার স্টাইল আর ঘোমটা দেখে ভদ্রলোক বোধহয় ভিড়মি খেলেন।
নাম জিজ্ঞেস করছেন,মনে মনে বলি রঙ দেখবা, বাছাধন টের পাইবা।
একদম আস্তে করে নাম বলে এমন ভাবে বসে রইলাম ভদ্রলোক আর কথা বলার উৎসাহ পাচ্ছেন না,একেবারে হতাশ হয়ে, " ঠিক আছে যাও। "
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম
।
ঘুম ভাঙল,চা নাস্তা দিতে হবে আমাকে।
গতদিন গতরাতের কথা ভুলে আমিও চললাম, কিসের শাড়ি, কিসের ঘোমটা!
আমাকে দেখে উনি এবার চমকালেন।
গতরাত আর আজকের সকাল,এত পার্থক্য!
দুজন বসা,দুজনই ফর্সা,একজন একটু বেটে একজন একটু লম্বা।
একজন আমার সাথে কথা বলছেন,আমিও চা খেতে খেতে পা দুলিয়ে গল্প করছি,চিনি নাকি ছাই!
তবে ছবি দেখেছিলাম, তাই যিনি কথা বলছেন তিনি যে উনি নয়, সেটা বেশ বুঝছিলাম।
উনি মজা টের পাচ্ছে, টের পাক এই তো চাই।কথা বলার চান্সই পাচ্ছে না বেচারা।
বাড়ির সবাই বলছে থেকে যাও , থেকে যাও।
উনার আফিস তাই চলে যাবেন- ঢং দেখে বাঁচি না।
অবশেষে চলেই গেলেন,আমিও মহানন্দে মুক্তি পেলাম।
হুম,তার ঠিক তিনমাস পর উনার ঘরে নিয়ে এলেন আমাকে,এর মাঝে আমাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না।
আজকের এই দিনে - সেই অবধি উনি রঙিন জগতেই আছে।
প্রতিদিন রঙ ঝলমল একটি পৃথিবী - দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দার সামনে এসে সেই থেকে একসাথে দাড়ায়।
আমাদের স্বভাবে মিল নেই,রুচিতে মিল নেই,পছন্দে মিল নেই- কোনকিছুতে কোনও মিল নেই।
কিন্তু আমরা একসাথে আছি।
উনার কোন ব্যপার আমার অপছ্ন্দের হলেও মেনে নিই,আর আমার কোনও ব্যপারই উনার অপছন্দের নয়।
এরকম একটা মানুষ - যে আমাকে প্রতিনিয়ত হাসিমুখে সাপোর্ট দেয় সব কাজে,আমার ছোট বড় যে কোন কাজকে সম্মান করে,সরাসরি সহযোগিতা হয়ত সে করে না,কিন্তু আমাকে নিয়ে গর্বিত এক স্বামী।
এ বিষয়টা আমাকে প্রচণ্ড অনুপ্রেরণা দেয়।
আমার বিষয়গুলো তার সাথে মোটেও যায় না।
তারপরও তার কোনও বিরূপতা নেই,আছে এক চিলতে আশ্বাসের হাসি।
যে স্বামী তার বউকে এতটা সম্মান দেয়,বউয়ের আনন্দে আনন্দিত হয়, আমি ভেবে দেখেছি আমার হয়ত অনেক অপ্রাপ্তি আছে কিন্তু এ জায়গাটা আমার অনেক দামী,অনেক সমৃদ্ধ।
আমি যে একজন মানুষ,সেই বোধটুকু আমার স্বামী আমাতে জাগিয়ে দিয়েছিল প্রথম।বিয়ের আগে সেই বোধ আমার ছিল না।
আমরা হয়ত হাত ধরে চলি না,তবে পাশাপাশি চলার চেষ্টা করি।আমাদের যুগল ছবি খুব বেশি নেই,উনি ছবি তুলতে চায় না।
খুব সুন্দর রাজপুত্রের মত বর আমি পেয়েছিলাম,বয়সের সাথে হয়ত চেহারা নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু মন নষ্ট হয় না।
আর আমি! সবাই তো বলতো " রুবির বর,যেন এক রাজপুত্র"।
আমি তো ঘুঁটেকুড়ানি।
রাজপুত্রের বউ হয়ে আমি সুখেই আছি।
আমাদের দিনগুলো এভাবেই কাটুক।যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি,দুজনের একই সময়ে মনে পড়ে ঠিক" আমার যে সে আছে।"
মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে থাকুক সে চিরদিন আমার পৃথিবীতে।
আজকের এই দিনে আমাদের দুজনের মধ্যে একসাথে চলার চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল - আজ থেকে বহু বহু যুগ আগে।
--০৬/১২/২০১৯
---
আমার প্রচণ্ড বিরক্তি লাগছিল এবং সেটা ছিল সজোরে প্রকাশিত।সেই দুপুর থেকে শাড়ি পরে আছি,চেঞ্জ করতে দিচ্ছে না কেউ।কারণ মহামান্য আসবেন,তিনি আসতে চাইছেন না,তাকে ধরে বেধে আনতে দেরি হচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছিলাম না, এই লোক না এলে কি যাবে আসবে,আর আমাকেই এই ভারী শাড়ি কেন পরে থাকতে হবে।
শাড়ি কোনদিন গুছিয়ে পরতে পারি না,আজও পারি না,মানুষ কত সুন্দর করে শাড়ি পরে ঘুরে, আমি সেটা পারলাম না আজও, যদিও শাড়িই আমার অন্যতম পোশাক।
ধীরে ধীরে রাত নামল,ঘুমে আমি কাত,সন্ধ্যা থেকেই ঘুম দিই,কাজেই চোখ খোলা রাখতে সমস্যা হচ্ছে।
তারপরও বসে বসে কয়েক রাউন্ড ঘুমানোর পর দেখি কে যেন হাত দিয়ে ঠেলছে,"ও রুবি আপা, উঠো, তারা আসছেন।"
আমি অসহ্য হয়ে ভারী শাড়িটাতে একটান দিলাম।
ভাবি উৎকণ্ঠিত হয়ে, " না, না এটা কর না দোহাই আপা।"
আমিও জোরে -" কেন? সারদিন ধরে এটা পরে আছি আমার কষ্ট হয় না?"
আম্মার চাপা স্বর" চুপ চুপ আস্তে,খোকনের মা গুছাই দেও, ওদের সামনে যেতে হবে।"
আমার চুল আঁচড়াতে এল খোকনের মা,শাড়ির ভাজ ঠিক করে দিতে এল,হাত দিয়ে ঠেলে দিলাম।
"রাত বাজে দশটা- যাও তোমরা ঘুমাতে পারছি না, কি শুরু করছ?"
কিন্ত না সব প্রতিবাদের মুখে ছাই দিয়ে আমাকে যেতে হল।আমিও - সেই আউলা ঝাউলা শাড়ি পরা, আউলা চুলে বিরাট ঘোমটা টেনে ভাল মানুষের মত গিয়ে সামনে হাজির।
আমার সম্পর্কে শোনা কথা আর আমার শাড়ি পরার স্টাইল আর ঘোমটা দেখে ভদ্রলোক বোধহয় ভিড়মি খেলেন।
নাম জিজ্ঞেস করছেন,মনে মনে বলি রঙ দেখবা, বাছাধন টের পাইবা।
একদম আস্তে করে নাম বলে এমন ভাবে বসে রইলাম ভদ্রলোক আর কথা বলার উৎসাহ পাচ্ছেন না,একেবারে হতাশ হয়ে, " ঠিক আছে যাও। "
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম
।
ঘুম ভাঙল,চা নাস্তা দিতে হবে আমাকে।
গতদিন গতরাতের কথা ভুলে আমিও চললাম, কিসের শাড়ি, কিসের ঘোমটা!
আমাকে দেখে উনি এবার চমকালেন।
গতরাত আর আজকের সকাল,এত পার্থক্য!
দুজন বসা,দুজনই ফর্সা,একজন একটু বেটে একজন একটু লম্বা।
একজন আমার সাথে কথা বলছেন,আমিও চা খেতে খেতে পা দুলিয়ে গল্প করছি,চিনি নাকি ছাই!
তবে ছবি দেখেছিলাম, তাই যিনি কথা বলছেন তিনি যে উনি নয়, সেটা বেশ বুঝছিলাম।
উনি মজা টের পাচ্ছে, টের পাক এই তো চাই।কথা বলার চান্সই পাচ্ছে না বেচারা।
বাড়ির সবাই বলছে থেকে যাও , থেকে যাও।
উনার আফিস তাই চলে যাবেন- ঢং দেখে বাঁচি না।
অবশেষে চলেই গেলেন,আমিও মহানন্দে মুক্তি পেলাম।
হুম,তার ঠিক তিনমাস পর উনার ঘরে নিয়ে এলেন আমাকে,এর মাঝে আমাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না।
আজকের এই দিনে - সেই অবধি উনি রঙিন জগতেই আছে।
প্রতিদিন রঙ ঝলমল একটি পৃথিবী - দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দার সামনে এসে সেই থেকে একসাথে দাড়ায়।
আমাদের স্বভাবে মিল নেই,রুচিতে মিল নেই,পছন্দে মিল নেই- কোনকিছুতে কোনও মিল নেই।
কিন্তু আমরা একসাথে আছি।
উনার কোন ব্যপার আমার অপছ্ন্দের হলেও মেনে নিই,আর আমার কোনও ব্যপারই উনার অপছন্দের নয়।
এরকম একটা মানুষ - যে আমাকে প্রতিনিয়ত হাসিমুখে সাপোর্ট দেয় সব কাজে,আমার ছোট বড় যে কোন কাজকে সম্মান করে,সরাসরি সহযোগিতা হয়ত সে করে না,কিন্তু আমাকে নিয়ে গর্বিত এক স্বামী।
এ বিষয়টা আমাকে প্রচণ্ড অনুপ্রেরণা দেয়।
আমার বিষয়গুলো তার সাথে মোটেও যায় না।
তারপরও তার কোনও বিরূপতা নেই,আছে এক চিলতে আশ্বাসের হাসি।
যে স্বামী তার বউকে এতটা সম্মান দেয়,বউয়ের আনন্দে আনন্দিত হয়, আমি ভেবে দেখেছি আমার হয়ত অনেক অপ্রাপ্তি আছে কিন্তু এ জায়গাটা আমার অনেক দামী,অনেক সমৃদ্ধ।
আমি যে একজন মানুষ,সেই বোধটুকু আমার স্বামী আমাতে জাগিয়ে দিয়েছিল প্রথম।বিয়ের আগে সেই বোধ আমার ছিল না।
আমরা হয়ত হাত ধরে চলি না,তবে পাশাপাশি চলার চেষ্টা করি।আমাদের যুগল ছবি খুব বেশি নেই,উনি ছবি তুলতে চায় না।
খুব সুন্দর রাজপুত্রের মত বর আমি পেয়েছিলাম,বয়সের সাথে হয়ত চেহারা নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু মন নষ্ট হয় না।
আর আমি! সবাই তো বলতো " রুবির বর,যেন এক রাজপুত্র"।
আমি তো ঘুঁটেকুড়ানি।
রাজপুত্রের বউ হয়ে আমি সুখেই আছি।
আমাদের দিনগুলো এভাবেই কাটুক।যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি,দুজনের একই সময়ে মনে পড়ে ঠিক" আমার যে সে আছে।"
মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে থাকুক সে চিরদিন আমার পৃথিবীতে।
আজকের এই দিনে আমাদের দুজনের মধ্যে একসাথে চলার চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল - আজ থেকে বহু বহু যুগ আগে।
--০৬/১২/২০১৯
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুল হক ০৮/১২/২০১৯সুন্দরঃ"
-
নুর হোসেন ০৮/১২/২০১৯অসাধারণ কথামালা, প্রিয়জনকে নিয়ে ভালো লিখেছেন।
-
সম্রাট চন্দ্র ময়রা ০৮/১২/২০১৯সুন্দর হয়েছে!!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৮/১২/২০১৯ভালো লাগলো।
-
আরজু নাসরিন পনি ০৮/১২/২০১৯শুভকামনা রইলো।