আবেদন
একজন পেনশন প্রার্থীর আবেদন পত্র
-
প্রিয় স্বামী
আজ আপনার সংসারে আমার ৫৯ বছর পূর্ণ হইয়াছে।বিধি মোতাবেক ৫৯ বছর হইলে চাকুরী হইতে পেনশন লইবার নিমিত্তে আবেদন করিতে হয়,সেই মোতাবেক আমিও অদ্য আমার পেনশনের নিমিত্তে আপনার বরাবরে আবেদন করিতেছি,আশা করিতেছি হাসিয়া উড়াইয়া না দিয়া গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করিবেন।
আপনি ৫৯ বৎসর পূর্ণ হওয়াতে পাঁচ বৎসর পূর্বেই পেনশন লইয়া শরীরে ফু লাগাইয়া বেড়াইতেছেন,দেখিয়া আমারও হৃদয়-মন পেনশনে যাইতে ব্যকুল হইয়াছে,আশা করি বিফল মনোরথ হইব না।
আপনার স্মৃতিতে পড়িতেছে কি আমাকে এসএসসি ফলাফলের পূর্বেই বিবাহ করিয়াছিলেন? ভালো পাশ করা সত্ত্বেও আপনি আপনার মাতা আমাকে পড়িবার সুযোগ না দিয়া সংসার নামক চাকুরীতে ভর্তি করিয়া দিয়াছিলেন।
আমাকে কখনই আপনি বেতন দিবার আবশ্যক বোধ করেন নাই।
আপনার মাতা রক্তচক্ষু হানিয়া আমাকে সংসারের কাজে দক্ষ করিয়া লইয়া তাহার আত্মীয়- স্বজনসহ যাবতীয় দায়ভার আমাতে প্রত্যর্পণ করিয়া নিশ্চিন্তে পান চাবাইয়া চাবাইয়া নিরীক্ষণ করিতেন,আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়া উঠিত।
অদ্যাবধি বছরান্তে দুইখানা কাপড় ছাড়া আপনি আমাকে কিছুই দিবার প্রবৃত্তি বোধ করেন নাই,গহনা দূরের কথা।
আমার বাবার বাটি হইতে প্রাপ্ত গহনা বিক্রি করিয়া আপনি বাড়ি করিয়াছেন আপনার নামে।তাহাতে দুঃখ নাই,আপনার হইলে তাহা আমারই হইল।
আমার হস্তে কর পড়িয়াছে,কোমরে বেদনা,শরীরে বেদনা,কাজ করিতে কষ্ট হয়, কাজ করিতে প্রবৃত্তি বোধ হয় না।
এইদিকে দিনে দিনে সংসারে কাজের বহর বাড়িতেছে।বৌমাগণ আলাদা বাসায় থাকিয়া মাঝে মাঝে বেড়াইতে আসে,আপনার আত্মীয় স্বজনেরা আসে,ইহার চাপ বহন করা এই বয়সে আমার দ্বারা আর সম্ভব হইতেছে না।
সংসারের ঘানি টানিয়া আপনিও কখনও আমার সহিত দুইদণ্ড কথা বলিবার অবসর পান নাই।
তাই মনস্থ করিয়াছি এইবার আমি পেনশনে যাইয়া আপনাকে লইয়া বেড়াইয়া ঘুরাইয়া সময় কাটাইব গল্প করিয়া।
আমরা চাঁদ দেখিব,পাখি দেখিব,শরৎকালে ছাদে উঠিয়া ঘুড়ি উড়াইব।
কতদিন যাবৎ আমি চক্ষু খুলিয়া, মেলিয়া জগৎ-সংসার দর্শন করি নাই।
জীবনে আফসোস রহিয়া যাইবে।
আমার মনের আশা আপনি ছাড়া আর কে পূর্ণ করিবে?
আবারও স্মরণ করাইয়া দেই আমাকে পেনশন বাবদ কোনো টাকা পয়সা দিতে হইবে না,কেবল সময় দিলেই চলিবে।চিঠির ভাষ্য আমার শাশুড়ী আম্মার নিকট গোপন রাখিবেন,আপনার পাকস্থলীতে জানি কোনো কথা হজম হইতে চাহে না।
আর বিশেষ কিছু লিখিতে পারিতেছি না,কারণ অদ্য বাড়িতে জনা চল্লিশেক মেহমান খাবার খাইবেন।আমি চলিলাম রন্ধনশালায়।
ইতি
আপনার স্ত্রী।
--২১/১১/২০১৯
-
প্রিয় স্বামী
আজ আপনার সংসারে আমার ৫৯ বছর পূর্ণ হইয়াছে।বিধি মোতাবেক ৫৯ বছর হইলে চাকুরী হইতে পেনশন লইবার নিমিত্তে আবেদন করিতে হয়,সেই মোতাবেক আমিও অদ্য আমার পেনশনের নিমিত্তে আপনার বরাবরে আবেদন করিতেছি,আশা করিতেছি হাসিয়া উড়াইয়া না দিয়া গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করিবেন।
আপনি ৫৯ বৎসর পূর্ণ হওয়াতে পাঁচ বৎসর পূর্বেই পেনশন লইয়া শরীরে ফু লাগাইয়া বেড়াইতেছেন,দেখিয়া আমারও হৃদয়-মন পেনশনে যাইতে ব্যকুল হইয়াছে,আশা করি বিফল মনোরথ হইব না।
আপনার স্মৃতিতে পড়িতেছে কি আমাকে এসএসসি ফলাফলের পূর্বেই বিবাহ করিয়াছিলেন? ভালো পাশ করা সত্ত্বেও আপনি আপনার মাতা আমাকে পড়িবার সুযোগ না দিয়া সংসার নামক চাকুরীতে ভর্তি করিয়া দিয়াছিলেন।
আমাকে কখনই আপনি বেতন দিবার আবশ্যক বোধ করেন নাই।
আপনার মাতা রক্তচক্ষু হানিয়া আমাকে সংসারের কাজে দক্ষ করিয়া লইয়া তাহার আত্মীয়- স্বজনসহ যাবতীয় দায়ভার আমাতে প্রত্যর্পণ করিয়া নিশ্চিন্তে পান চাবাইয়া চাবাইয়া নিরীক্ষণ করিতেন,আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়া উঠিত।
অদ্যাবধি বছরান্তে দুইখানা কাপড় ছাড়া আপনি আমাকে কিছুই দিবার প্রবৃত্তি বোধ করেন নাই,গহনা দূরের কথা।
আমার বাবার বাটি হইতে প্রাপ্ত গহনা বিক্রি করিয়া আপনি বাড়ি করিয়াছেন আপনার নামে।তাহাতে দুঃখ নাই,আপনার হইলে তাহা আমারই হইল।
আমার হস্তে কর পড়িয়াছে,কোমরে বেদনা,শরীরে বেদনা,কাজ করিতে কষ্ট হয়, কাজ করিতে প্রবৃত্তি বোধ হয় না।
এইদিকে দিনে দিনে সংসারে কাজের বহর বাড়িতেছে।বৌমাগণ আলাদা বাসায় থাকিয়া মাঝে মাঝে বেড়াইতে আসে,আপনার আত্মীয় স্বজনেরা আসে,ইহার চাপ বহন করা এই বয়সে আমার দ্বারা আর সম্ভব হইতেছে না।
সংসারের ঘানি টানিয়া আপনিও কখনও আমার সহিত দুইদণ্ড কথা বলিবার অবসর পান নাই।
তাই মনস্থ করিয়াছি এইবার আমি পেনশনে যাইয়া আপনাকে লইয়া বেড়াইয়া ঘুরাইয়া সময় কাটাইব গল্প করিয়া।
আমরা চাঁদ দেখিব,পাখি দেখিব,শরৎকালে ছাদে উঠিয়া ঘুড়ি উড়াইব।
কতদিন যাবৎ আমি চক্ষু খুলিয়া, মেলিয়া জগৎ-সংসার দর্শন করি নাই।
জীবনে আফসোস রহিয়া যাইবে।
আমার মনের আশা আপনি ছাড়া আর কে পূর্ণ করিবে?
আবারও স্মরণ করাইয়া দেই আমাকে পেনশন বাবদ কোনো টাকা পয়সা দিতে হইবে না,কেবল সময় দিলেই চলিবে।চিঠির ভাষ্য আমার শাশুড়ী আম্মার নিকট গোপন রাখিবেন,আপনার পাকস্থলীতে জানি কোনো কথা হজম হইতে চাহে না।
আর বিশেষ কিছু লিখিতে পারিতেছি না,কারণ অদ্য বাড়িতে জনা চল্লিশেক মেহমান খাবার খাইবেন।আমি চলিলাম রন্ধনশালায়।
ইতি
আপনার স্ত্রী।
--২১/১১/২০১৯
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ০৫/০৩/২০২০ভালো ।
-
রূপক কুমার রক্ষিত ২৭/১১/২০১৯খুব সুন্দর। শুভকামনা।
-
আরজু নাসরিন পনি ২৫/১১/২০১৯অসাধারণ! সময়ে আমিও পেনশন চাইবো ভাবছি।
-
নুর হোসেন ২২/১১/২০১৯অসাধারন আবেদন!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২২/১১/২০১৯বেশ ইন্টারেস্টিং!
-
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ২২/১১/২০১৯আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। বিশেষ করে যেখানে বড় পরিবার আছে
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২২/১১/২০১৯দারুণ সুন্দর অভিব্যক্তি।