www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পিয়াইন নদী

পিয়াইন নদী
--
যদিও নদী আমার ভাল লাগে তবু আমি কখনই এর আগে পিয়াইন নদী দেখতে যাই নি।গোয়াইনঘাট বিছনাকান্দি আর পিয়াইন নদীর গল্প আমি অনেক শুনেছিলাম যেখানে আকাশ পাহাড় আর নদী মিলে একাকার।
এমন একটা জায়গা দেখতে যেতে কার না ইচ্ছে করবে! আমারও ইচ্ছে হত খুব কিন্তু যাওয়ার সুযোগটা ছিল না কোনমতেই।সেবার আমার হাজব্যান্ডের অফিস থেকে আয়োজনটা ছিল কিন্তু শেষতক যাওয়া হয় নি কারণ রাস্তা নাকি সুবিধার ছিল না,অবশেষে গিয়েছি আমাদের আইসিটিপ্রেমি শিক্ষকদের বদৌলতে শিক্ষক দিবস - ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে।
গোয়াইনঘাট থেকে ইঞ্জিন বোটে করে বিছনাকান্দি যেতে হয়,যে নদীর পানি কেটে বোট এগিয়ে যায় তারই নাম পিয়াইন।
পিয়াইন নদী শান্ত নদী,স্বচ্ছ তার জল,একপাশে পাহাড় আরেক পাশে সমতল।অদ্ভূত শান্ত তার পরিবেশ।
এরই মাঝে ইঞ্জিন নৌকা তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে।
নদীতীরের সৌন্দর্য, জলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বোট যখন বিছনাকান্দি পৌঁছালো,বেলা বেশ।সাথে খাবারের প্যাকেট ছিল,আমরা খেয়ে নিলাম।
বিছনাকান্দিতে প্রচুর মানুষজন।
কত বিচিত্র বরণের, গড়নের, মনোভাবের কত মানুষ এখানে এসেছে শুধু একটি জায়গায় সবার মিল,সে হল সবাই বিছনাকান্দি দেখতে এসেছে।
আমার সন্তানেরা জানতে পেরেছে আমি এখানে,ঘন ঘন ফোন দিচ্ছে- আম্মু তুমি পানিতে নামবে না,স্রোত প্রচুর।
আমি বলি চিন্তা কর না,আমি স্রোতে নামব না।
মাঝে মাঝে এমন হয় দলের সাথে থেকেও আমি দলছুট হয়ে পড়ি।
হয়ত একসাথেই যাত্রা শুরু করি,আমি হয় সবার আগে নয় একদম সবার পিছে থাকি,কেন যেন মাঝামাঝি স্থানটিতে আমি স্থান করে নিতে পারি না।
এক্ষেত্রেও সবার আগে আমি জলের ধারায় পৌঁছে গেলাম পাথর পাথর, ছোট বড় পাথর ডিঙিয়ে আমার মত করে।
ওপাশে ভারত, ভারতের পাহাড় আর এপাশে সমতল বাংলাদেশ।
পাহাড়েই থাকে খনি,ওদের খনি আমরা দেখি আর আফসোস করি কেন পাহাড়গুলো আমাদের হল না।
ইন্ডিয়ার পাহাড় ছুঁয়ে ঝর্ণার পানি গড়িয়ে আসছে,শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে আমি হাঁটছি অতি সাবধানে।যতদূর স্রোত নেই আমি ততদূরই গেলাম,কানে ছেলেমেয়ের সাবধান বাণী,পানিতে নেমো না।
সামনে বেশ স্রোত,পাথরও বেশ পিচ্ছিল,আর এগুনো যাবে না,সামনে আমার চারপাশে প্রচুর মানুষজন,যে যার মত সময় কাটাচ্ছে।
আমি বড় একটা পাথর দেখে বসে পড়লাম,আশপাশ দেখছি,ভাবছি অনেক কিছু।
আমার হাঁটু অবধি ভেজা,ছড়ার পানিতে আমার জামা কাপড় ভিজে গেছে।অনেকক্ষণ জলে হাত দিয়ে বসে থাকলাম,মুখচোখে জল ছিটালাম।তারপর ফিরে এলাম নদীর পারে যেখানে অনেকগুলো সারিবদ্ধ দোকান।দোকানে ইন্ডিয়ার জিনিস বিক্রি করছে।টুকটাক কিনে আমি ওখানে একটা হোটেল আছে সেখানে গিয়ে চেয়ার পেতে বসলাম।
লোকজন খাচ্ছে,দেশি বিভিন্ন পদ,হাঁসের মাংস,পিয়াইন নদীর মাছ দিয়ে খাচ্ছে।
পিয়াইন নদীর মাছ শুনে আমার খেতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু আমাদের দুপুরের খাবার খাওয়া তো শেষ।বড় আফসোস হল,আহা যদি এখানে খেতাম তবে বেশ হত।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলছি,পিয়াইন নদীর গল্প শুনলাম।
আর যে জায়গাটাতে আমি বসে আছি তার নাম সাত পাহাড়ের মোহনা,খুব সুন্দর নাম।
এত গরম,তারপরও পিয়াইনের উপর দিয়ে বয়ে আাসা শীতল হাওয়া প্রাণ জুড়িয়ে দিল।
এক ভদ্রলোক ভাত খাচ্ছিলেন, পরিবারসহ এসেছেন বেড়াতে।আমি চা নিলাম,ভদ্রলোক আমার চা'র দাম পরিশোধ করলেন না জানিয়ে।চেনা নেই জানা নেই,অপরিচিত একজন মানুষ আমাকে চা খাইয়ে ঋণী করে গেলেন।
ভদ্রমহিলার দুই মেয়ে আর স্বামী ঝর্ণায় সাঁতার কাটছেন,আর উনি আমার পাশে বসলেন।বাড়ি দিনাজপুর,প্যাকেজে ট্যুর করতে এসেছেন সিলেটে।
উনাদের দলে সাতাশজন আছে।
মানুষ আজকাল দল বেঁধে ঘুরায়,প্রকৃতি দেখতে যায়।
চারপাশে যত মানুষ প্রায় সবাই প্যাকেজে ট্যুর করছে।
মহিলার সাথে প্রচুর গল্প হল,দিনাজপুরের গল্প।
একটা সময় উনি উঠে চলে গেলেন।আমি আবার দূর নদীর জলে চোখ রেখে ভাবছি এই পিয়াইন নদী একসময় হয়ত পাথর আর মাছে পূর্ণ ছিল।
যায় দিন ভাল যায়, আসে দিন নয়।
ভাবনার হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে প্রায় বিকেল।হঠাৎ খেয়াল হল আমার সঙ্গীসাথীদের কথা।কাউকে দেখি না,ওরা কী তবে আমায় ফেলে চলে গেল?
সাঁতার কেটে ওরা ভিজে শরীরে যখন ফিরে এল তখন প্রায় সন্ধ্যা।পিয়াইন নদীতে সূর্য অস্ত গেছে।
আমরা ফেরার পথ ধরলাম।বিছনাকান্দি পিছনে ফেলে বোট এগিয়ে চলেছে গোয়াইনঘাটের দিকে।
জীবনের ঘাটগুলোও এমন,ক্রমাগত ঘাট বদলে বদলে আমরা পৌঁছে যাই শেষের ঘাটে।
ঘাটের সামনে নদী থাকে,নদী পার হতে কড়ি লাগে,পাড়ানি লাগে।
আমার কি কড়ি আছে? পাড়ানি কি বসে আছে আমার অপেক্ষায়,আমায় পার করে দেবে!!!!
--১৯/১১/২০১৯
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৪৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/১১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast