www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অন্তরে অন্তরে

অন্তরে অন্তরে যদি কোন মন্তরে, বোবা এ প্রাণের ব্যাথা বোঝানো যেত গো তারেঃ
---
**
আসলে ভাবাভাবির তেমন কিছু নেই।
ভেবে লাভও বেশি নেই- হচ্ছে,হবে,বেড়েছ
ে,বাড়বে,চলছে,পরিপত্র,নীতিমালা,শোকজ- হরদম এসব শুনে শুনে একেবারে যাকে বলে মাথায় গেঁথে গেছে, এর বাইরে ভাবাভাবির অতটা অবকাশ কই!
প্রায়ই চেষ্টা করি বলতে যে আমরা যথাযোগ্য আসনে অধিষ্টিত নই।না বেতনে,না মর্যাদায়।একদল তেড়ে আসেন,কি বলেন! আগে কত পেতাম এখন কত বেতন পাই - অনেক পাই তো।গুণে শেষ করা যায়না।
তো সবাই পাচ্ছে,আমরাও পাচ্ছি,আনুপাতিকহারে বাজারমূল্য কি বাড়ে নি? থেমে আছে সেই আশির দশকে?
আগে একহাজার টাকা মানে একহাজারটি একটাকা ছিলো।এখন কত? আগের একহাজার টাকার মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের কত টাকা হবে?
আন্তর্জাতিক লেনদেনে আমাদের একশত টাকার মূল্য কত?
আমি সবার মতো চাইনি কখনও, চেয়েছি শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র একটি স্কেল - যাতে মেধাবীরা এই পেশায় আকৃষ্ট হয়।কেউ যাতে কারও সাথে তুলনা না করে শিক্ষকদের সাথে।
**
আমার ফুফু এবং ফুফাতো বোনেরা বেড়াতে এসেছিলো লন্ডন থেকে।আমি একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক জেনে তারা কি পরিমাণ উচ্ছসিত হয়েছিলো দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই।ওরা যতদিন ছিলো এখানে,ওদের কাছে আমি বিশেষ কিছু ছিলাম কারণ লন্ডন শহরে প্রাইমারি হেড টিচার মানে বিশাল কিছু।
আর আমাদের এখানে আপনি যা কিছু পরিচয় দেন আপনি আসনে বসার যোগ্য,যেই বলবেন প্রাইমারির টিচার- মুখ উল্টে বলবে " ও প্রাইমারি!"
এগুলো আমার অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া।
**
একটি প্রাইমারি স্কুলে হুট করে ঢুকে যাওয়ার নিয়ম বন্ধ করতে হবে।বিশ্বের যে কোনও দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার আগে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পারমিশন নিতে হয়।
আর আমাদের এখানে প্রাইমারি হলো লোকজনের টার্গেটের বিষয়।যার যখন খুশি ঢুকে পড়ছে,নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বিদ্যার জাহাজ,টেস্ট করে দেখতে হয় কতটুকু বিদ্যে ওতে জমা আছে।
আমারও তো কত প্রশ্ন আছে,আছে শিক্ষার্থীদের কত প্রশ্ন- কই কেউ তো বলেনা যে তোমরা প্রশ্ন করো, আমি উত্তর দিবো।
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন না করলে উত্তর কই পাবে,কোথা থেকে শিখবে অনুপ্রেরণার গল্পগুলো?
আপনার থেকে তো শুধু ধমক দেয়াটাই শিখবে শিশুরা।
দয়া করে বলুন এখন থেকে- আমাকে প্রশ্ন করো তোমরা।
প্রশ্ন করার ধরণ থেকেই বোঝা যাবে শিক্ষার্থী কেমন চৌকষ।আর শিক্ষক কতটা তার অন্তর্দৃষ্টি খুলতে সাহায্য করেছেন- এটাই সৃজনশীলতা।
পানিপথের যুদ্ধ কবে হয়েছিলো এটা প্রশ্ন করে উত্তর জেনে লাভ কি? ওতো মুখস্ত বিদ্যা।জানা জিনিসও মানুষ অনেক সময় ভুলে যায়।
**
বলার কিছু নেই,বলতে চাইও না।
বুকের ভেতর চাপা কষ্ট রেখে কোথায় কি হয় জানি না।
আর প্রাথমিক শিক্ষায় ভিত তৈরির কাজে যারা নিবেদিত,যারা মনে কষ্ট চাপা দিয়ে কাজ করে যায় নিবেদিত হয়ে,যারা বার বার আশায় বুক বাধে বার বার আবার আশাহত হয়- তাদের ব্যথা বোঝার কেউ কি নেই!
কোথায় আমাদের দশম গ্রেড? কোথায় আমাদের এগারোতম গ্রেড?
হবে,হচ্ছে,চলছে- সবই শোনা যায় অবিরত।
বেলা যে পড়ে এলো- আমার যাবার পালা, আমি কি তবে শূন্য হাতে, রিক্ত হাতে ফিরে যাবো?
আমি কি সচিব বানিয়ে দেইনি?
আমি কি দেশ চালানোর জন্য অসংখ্য কর্মী তৈরি করে দেইনি?
দিয়েছি,নির্দেশিত হয়ে সে অনুযায়ী দিয়েছি।
যদি আমি আমার মতো গড়ার সুযোগ পেতাম?
ভুলে যেতে আমাকে?
**
এদেশের সবচে বড় সরকারি চাকরিজীবী সম্প্রদায় হচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকগণ।
দেশের প্রয়োজনে অকাতরে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তাঁরা।
প্রয়োজনে কাদের না আসতে হয় আমাদের কাছে?
মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে চান?
সবার আগে শিক্ষকদের মন বুঝেন,তাদের আন্তরিক থাকতে সহায়তা করেন।
শুধু ভয় দেখিয়ে কাজ উদ্ধার হবে বটে, তাতে আন্তরিকতা না থাকলে কোনও ফল হবেনা।
আমাদের কষ্টগুলো বোঝার চেষ্টা করুন দয়া করে,আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করে দিন।
আমরা তো কাজ করছি,আরও নিবেদিত হয়ে কাজ করবো- আমাদের কষ্টগুলো দূর করে দিন।
আমাদের নিরাপত্তা দিন,আমাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিন।
কোনও শিক্ষককে কেউ যেন ধমক দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা,সেই ব্যবস্থা করুন।
শিক্ষকের মর্যাদা সুনিশ্চিত হোক।
---০৫/০৫/২০১৯
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৫/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ধৈর্য ধরুন। প্রাইমারির ভাগ্যের চাকা ঘুরবে।
 
Quantcast